অং সান সূ চী | |
---|---|
အောင်ဆန်းစုကြည် | |
মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা | |
কাজের মেয়াদ ৬ এপ্রিল ২০১৬ – ১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ | |
রাষ্ট্রপতি | তিন চও উইন মিন্ট |
পূর্বসূরী | থিন সিন (প্রধানমন্ত্রী, ২০১১) |
উত্তরসূরী | জেনারেল মিন অং হ্লাইং (মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় কাউন্সিলের চেয়ারম্যান, ২০২১) |
পররাষ্ট্র মন্ত্রী | |
কাজের মেয়াদ ৩০ মার্চ ২০১৬ – ১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ | |
রাষ্ট্রপতি | তিন চও |
ডেপুটি | তিন চও |
পূর্বসূরী | ওয়ানা মং লুইন |
উত্তরসূরী | পদশুণ্য |
রাষ্ট্রপতি কার্যালয়ের মন্ত্রী | |
কাজের মেয়াদ ৩০ মার্চ ২০১৬ – ১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ | |
রাষ্ট্রপতি | তিন চও উইন মিন্ট |
পূর্বসূরী | অং মিন হ্লা তুন শো মং শো থিন থিন নুন্ত |
উত্তরসূরী | পদশুণ্য |
ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসির সভানেত্রী | |
দায়িত্বাধীন | |
অধিকৃত কার্যালয় ১৮ নভেম্বর ২০১১ | |
পূর্বসূরী | অং শ্বে |
বিরোধীদলীয় নেত্রী | |
কাজের মেয়াদ ২ মে ২০১২ – ২৯ জানুয়ারি ২০১৬ | |
রাষ্ট্রপতি | থিন সিন |
পূর্বসূরী | সাই লা চও |
ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসির সাধারণ সম্পাদক | |
কাজের মেয়াদ ২৭ সেপ্টেম্বর ১৯৮৮ – ১৮ নভেম্বর ২০১১ | |
পূর্বসূরী | পদ প্রতিষ্ঠিত |
উত্তরসূরী | পদ অবলুপ্ত |
মিয়ানমার হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টেটিভের সদস্য কৌমু আসনে | |
কাজের মেয়াদ ২ মে ২০১২ – ৩০ মার্চ ২০১৬ | |
পূর্বসূরী | শো তিন্ট |
উত্তরসূরী | পদশুণ্য |
সংখ্যাগরিষ্ঠ | ৪৬,৭৩ (৭১.৩৮%) |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | রেঙ্গুন, ব্রিটিশ বর্মা (বর্তমানে ইয়াঙ্গুন, মিয়ানমার) | ১৯ জুন ১৯৪৫
রাজনৈতিক দল | ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসি |
দাম্পত্য সঙ্গী | মাইকেল অ্যারিস (বি. ১৯৭২; মৃ. ১৯৯৯) |
সন্তান | ২, আলেকজান্ডার অ্যারিসসহ |
পিতামাতা | অং সান (বাবা) খিন চি (mother) |
বাসস্থান | ৫৪ ইউনিভার্সিটি এভিনিউ |
প্রাক্তন শিক্ষার্থী | দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় সেন্ট হাগস কলেজ, অক্সফোর্ড সোয়াস, লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় |
পুরস্কার | রাফটো পুরস্কার শাখারভ পুরস্কার নোবেল শান্তি পুরস্কার জওহরলাল নেহরু পুরস্কার আন্তর্জাতিক সাইমন বলিভার পুরস্কার ওলফ পালমে পুরস্কার ভগবান মহাবীর বিশ্বশান্তি পুরস্কার কংগ্রেসনাল গোল্ড মেডেল |
স্বাক্ষর | |
ওয়েবসাইট | দলীয় ওয়েবসাইট |
অং সান সু চি (বর্মী: အောင်ဆန်းစုကြည်, উচ্চারিত: ঔঁ(অ) সাঁ সূ চী; জন্ম ১৯ জুন ১৯৪৫) একজন বর্মী রাজনীতিবিদ, কূটনীতিক, এবং লেখিকা যিনি মিয়ানমারের প্রথম রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা (প্রধানমন্ত্রীর সমমান) হিসেবে ২০১৬ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া তিনি ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসির প্রধান নেত্রী। মিয়ানমারের দে ফ্যাক্তো তথা অনানুষ্ঠানিক প্রধান হিসেবেই তিনি ব্যাপকভাবে পরিচিত ছিলেন।[২] এছাড়াও প্রথম নারী হিসেবে তিনি মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রী, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের মন্ত্রী, বিদ্যুৎশক্তি ও ক্ষমতা বিষয়ক মন্ত্রী, এবং শিক্ষা মন্ত্রী হিসেবে প্রেসিডেন্ট তিন চওয়ের কেবিনেটে কাজ করেন; আর ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত তিনি মিয়ানমারের হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস তথা নিম্নকক্ষে কৌমু টাউনশিপের এমপি ছিলেন।
আধুনিক মিয়ানমারের জাতির জনক অং সান এবং খিন চী এর কন্যা সু চি এর জন্ম হয় ব্রিটিশ বার্মার রেঙ্গুনে। ১৯৬৪ সালে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় ও ১৯৬৮-তে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় হতে স্নাতক অর্জন করার পর তিনি জাতিসংঘে তিন বছর কাজ করেন। ১৯৭২ সালে মাইকেল অ্যারিসকে বিয়ে করেন এবং তাদের দুই ছেলে হয়। ১৯৮৮-র গণ আন্দোলনের সময় সু চি সবার নজর কাড়েন এবং ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) সাধারণ সম্পাদক হন; সেসময় সদ্যগঠিত দলটির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সামরিক জান্তার বিরোধী অবসরপ্রাপ্ত কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা। ১৯৯০ সালের নির্বাচনে এনএলডি সংসদের ৮১% আসন পেলেও সেনাবাহিনী ক্ষমতা হস্তান্তরে অস্বীকৃতি জানায় যা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে হৈ চৈ ফেলে দেয়। এদিকে নির্বাচনের আগে থেকেই সু চি-কে গৃহবন্দী করে রাখা হয়। ১৯৮৯ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ২১ বছরের মধ্যে ১৫ বছরই তাকে গৃহবন্দী অবস্থায় কাটাতে হয়; ততদিনে তিনি বিশ্বের সবচেয়ে প্রখ্যাত রাজবন্দীদের একজন হয়ে উঠেছেন।
সু চির দল ২০১০ সালের নির্বাচন বয়কট করে, যা সেনাসমর্থিত ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টিকে তাৎপর্যপূর্ণ বিজয় এনে দেয়। ২০১২ সালের উপনির্বাচনে সু চি সংসদের নিম্নকক্ষের এমপি হন এবং তার দল ৪৫টি ফাঁকা আসনের মধ্যে ৪৩টিতে জয়লাভ করে। ২০১৫ সালের জাতীয় নির্বাচনে তার দল ভূমিধ্বস বিজয় অর্জন করে, অ্যাসেমব্লি অফ দ্য ইউনিয়নের (সংসদ) ৮৬% আসন অর্জন করে; যদিও প্রেসিডেনশিয়াল ইলেকটোরাল কলেজে তাদের প্রার্থীকে রাষ্ট্রপতি ও দ্বিতীয় উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচনের জন্য ৬৭% সংখ্যাগরিষ্ঠতাই যথেষ্ট ছিল। সু চি-র প্রয়াত স্বামী ও সন্তানেরা বিদেশি নাগরিক হওয়ায় সংবিধান অনুসারে তিনি রাষ্ট্রপতি হতে পারবেন না; তাই তিনি নবপ্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা পদটি গ্রহণ করেন যা কিনা মিয়ানমারের প্রধানমন্ত্রী বা সরকারপ্রধানের সমান।
গণতন্ত্র ও মানবতার পক্ষে সংগ্রামের জন্য তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কার (১৯৯১) সহ আরো অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করেছেন, যদিও রোহিঙ্গা সংকট প্রসঙ্গে তার ভূমিকা তীব্রভাবে সমালোচিত। এছাড়াও ২০২০ সালে মিয়ানমারের সংসদীয় নির্বাচনে তিনি ও তার দলের অধিকাংশ নেতার প্রতি ভোটচুরি ও অনিয়মের অভিযোগ আনে দেশটির সামরিক বাহিনী তাতমাডো।
২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারিতে এক সামরিক অভ্যুত্থানের পর বর্তমানে তিনি ও তার দলের অধিকাংশ নেতা গৃহবন্দী অবস্থায় আছেন। তার মুক্তির দাবিতে মিয়ানমারসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আন্দোলন শুরু হয়েছে।
"অং সান সু চি" (ঔঁ সাঁ সু চি) নামটাতে আর সব বর্মী নামগুলোর মতোই কোনো ডাকনাম নেই, কেবল ব্যক্তিগত নাম। তার নামটা এসেছে তিন স্বজনের থেকে: বাবার নাম থেকে "অং সান", দাদীর নাম থেকে "সু", আর মায়ের নাম থেকে "চি"।[৩]
বর্মীরা তাকে ডাকে ডও অং সান সু চি। ডও, আক্ষরিক অর্থে "চাচী", কিন্তু প্রবীণ ও সম্মানিত বর্মী নারীদেরকে ডও বলা হয় "শ্রীমতি" বা "ম্যাডাম" অর্থে।[৪] বর্মীরা তাকে অনেকসময় ডও সু বা আমায় সু ("আম্মা/মা সু") বলেও অভিহিত করে।[৫][৬][৭][৮][৯][১০][১১][১২]
অং সান সু চি ১৯৪৫ সালের ১৯শে জুন ব্রিটিশ বার্মার রেঙ্গুনে (বর্তমান ইয়াঙ্গুন) জন্মগ্রহণ করেন। পিটার পপহ্যামের বর্ণনানুসারে, তিনি রেঙ্গুনের বাইরে হামওয়ে সাউং নামক একটি ছোটো গ্রামে জন্ম নেন।[১৩] তার বাবা অং সান সেসময় আধুনিক বর্মী সেনাবাহিনী গঠন করেন এবং আলাপ-আলোচনা করে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের থেকে বার্মাকে স্বাধীন করেন; কিন্তু ঐ বছরই তিনি বিপক্ষদের গুপ্তহত্যার শিকার হন। সু চি তার মা খিন চি এবং দুই ভাই অং সান লিন ও অং সান ও-এর সাথে রেঙ্গুনে বড়ো হন। অং সান লিন আট বছর বয়সে বাড়ির শোভাবর্ধক হ্রদে ডুবে গিয়ে মারা যায়।[৩] অং সান ও পরে আমেরিকার নাগরিকত্ব নিয়ে ক্যালিফোর্নিয়ার সান ডিয়েগোতে প্রবাসী হন।[৩] অং সান লিনের মৃত্যুর পর তাদের পরিবার বাসাবদল করে ইনয়া লেকের কাছে ৫৪ ইউনিভার্সিটি এভিনিউয়ের এক বাড়িতে চলে আসে; সু চি এখানে এসে বহুরকম অভিজ্ঞতাসম্পন্ন, রাজনৈতিক মতাদর্শী ও ধর্মানুসারীদের সাথে পরিচিত হন।[১৪] বার্মার শৈশব জীবনে তিনি মেথডিস্ট ইংলিশ হাইস্কুলেই (এখন বেসিক এডুকেশন হাইস্কুল নং ১ ডাগন) বেশি সময় পড়েছেন; সেখানে বিভিন্ন ভাষা শেখার দক্ষতার কারণে তিনি সুপরিচিত ছিলেন।[১৫] তিনি চারটি ভাষায় কথা বলতে পারেন: বর্মী, ইংরেজি, ফরাসী ও জাপানি।[১৬] ধর্মীয় বিশ্বাসে তিনি থেরবাদী বৌদ্ধ।
সু চির মা খিন চি নবগঠিত বর্মী সরকারে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠেন। ১৯৬০ সালে তাকে ভারত ও নেপালে বর্মী রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব দেয়া হয়, সু চিকেও তিনি সাথে নিয়ে যান। নয়াদিল্লিতে কনভেন্ট অফ জেসাস অ্যান্ড মেরি স্কুলে সু চি পড়াশোনা করেন, পরে ১৯৬৪ সালে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে লেডী শ্রী রাম কলেজ থেকে রাজনীতি বিষয়ে ডিগ্রি পাশ করেন।[১৭][১৮] এরপর ১৯৬৭-তে অক্সফোর্ডের সেন্ট হাগস কলেজ থেকে দর্শন, রাজনীতি ও অর্থনীতি বিষয়ে বি.এ. ডিগ্রি নেন;[১৯] এবং তার তৃতীয়[২০][২১][২২] ডিগ্রি এম.এ. অর্জন করেন রাজনীতি বিষয়ে। স্নাতক পাশের পর তিনি নিউ ইয়র্কে তাদের পারিবারিক বন্ধু ও একসময়ের জনপ্রিয় বর্মী পপ-গায়িকা মা থান ইয়ের সাথে বসবাস করতে থাকেন।[২৩] এসময় তিন বছর তিনি জাতিসংঘে কাজ করেন, প্রধানত বাজেট ক্ষেত্রে এবং তার ভবিষ্যত স্বামী ড. মাইকেল অ্যারিসকে নিয়মিত চিঠি লিখতেন।[২৪] ১৯৭২ সালের ১লা জুনে সু চি এবং অ্যারিস, ভুটানে বসবাসরত তিব্বতি সংস্কৃতি বিষয়ের পণ্ডিত গবেষক, বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।[১৭][২৫] পরবর্তী বছর লন্ডনে তাদের প্রথম সন্তান আলেকজান্ডার অ্যারিসের জন্ম হয়; দ্বিতীয় সন্তান কিম জন্ম নেয় ১৯৭৭ সালে। ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৭ সালের মধ্যে সু চি বর্মী সাহিত্য বিষয়ে এমফিল ডিগ্রি নেয়ার জন্য লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজে (SOAS/সোয়াস) গবেষণা শিক্ষার্থী হিসেবে পড়াশোনা করছিলেন।[২৬][২৭] ১৯৯০ সালে তিনি সোয়াস-এর একজন অনারারি ফেলো হিসেবে নির্বাচিত হন।[১৭] দুবছরের জন্য তিনি ভারতের শিমলায় অবস্থিত ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ অ্যাডভান্সড স্টাডিজের (IIAS) ফেলোও ছিলেন। এছাড়া ইউনিয়ন অফ বার্মা সরকারের জন্যও তিনি কাজ করেছেন।
১৯৮৮ সালে সু চি বার্মায় ফেরেন, প্রথমত তার অসুস্থ মায়ের দেখাশোনার জন্য, তবে এরপরে গণতন্ত্রের পক্ষে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়ার উদ্দেশ্যে। ১৯৯৫-এর ক্রিসমাসে অ্যারিস বার্মায় গেলে তাদের শেষবারের মতো দেখা হয়, কারণ সু চি বার্মাতেই থেকে যান কিন্তু বর্মী স্বৈরশাসকেরা অ্যারিসকে আর কখনো বার্মায় প্রবেশের ভিসা দেয়নি।[১৭] ১৯৯৭ সালে অ্যারিসের প্রোস্টেট ক্যান্সার ধরা পড়ে এবং তা ছিল চূড়ান্ত পর্যায়ে। যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনান এবং পোপ দ্বিতীয় জন পলসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও সংস্থার আবেদন ও অনুরোধের পরও বর্মী সরকার অ্যারিসকে ভিসা দেয়নি; বরং বলে যে, অ্যারিসকে নিয়ে চিন্তিত হবার দায় সরকারের নয়, অং সান সু চিরই উচিত তাকে দেখতে বিদেশে যাওয়া। সেসময় সু চি গৃহবন্দিত্ব থেকে সাময়িক ছাড়া পেলেও দেশত্যাগ করতে রাজি হননি, কারণ তার আশঙ্কা ছিল একবার দেশ ছেড়ে গেলে সামরিক জান্তা তাকে আর ফিরতে দেবে না; তারা এই ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি ও আশ্বাস দিলেও তিনি সেগুলো বিশ্বাস করেননি।[২৮]
১৯৯৯ সালের ২৭শে মার্চ অ্যারিস তার ৫৩তম জন্মদিনে মৃত্যুবরণ করেন। ১৯৮৯ সালে তার স্ত্রী গৃহবন্দী হবার পর থেকে তাদের মাত্র পাঁচবার দেখা হয়েছে, শেষবার ১৯৯৫-এর ক্রিসমাসে। সু চি তার সন্তানদের থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে যান, তারা তখন যুক্তরাজ্যে থাকতো; তবে ২০১১ সাল থেকে তারা মায়ানমারে এসে মায়ের সাথে দেখা করে যায়।[২৯]
২০০৮ সালের ২রা মে মায়ানমারে ঘূর্ণিঝড় নার্গিস আঘাত হানালে ঝড়ো হাওয়ায় সু চির হ্রদ-তীরবর্তী ভাঙাচোরা বাড়ির ছাদ উড়ে যায় এবং বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় প্রায় অন্ধকারের মধ্যে তাকে থাকতে হয়। রাতের বেলায় তিনি মোমবাতি ব্যবহার করতেন কারণ তাকে কোনো জেনারেটর দেয়া হয়নি।[৩০] ২০০৯-এর আগস্টে বাড়িটা মেরামত ও সংস্কার করার পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়।[৩১] অবশেষে ১৩ই নভেম্বর ২০১০ তারিখে সু চি গৃহবন্দিত্ব থেকে মুক্তি পান।[৩২]
কিছু অ্যাকটিভিস্ট ২০১২ সালে রাখাইন রাজ্যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রসঙ্গে অং সান সু চির নীরবতার সমালোচনা করেন[৩৩] (২০১৫ সালের রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটের ক্ষেত্রেও তার পুনরাবৃত্তি ঘটে), এবং মায়ানমারের নিপীড়িত সংখ্যালঘু মুসলিম জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের পলায়নও সু চি ইচ্ছাকৃতভাবে উপেক্ষা করেন।[৩৪][৩৫] ২০১২ সালে তিনি রিপোর্টারদের বলেন যে রোহিঙ্গাদেরকে বার্মার নাগরিক বলে ভাবা যাবে কি না তা তিনি জানেন না।[৩৬] ২০১৩ সালে বিবিসির মিশাল হুসাইনের সাথে এক সাক্ষাৎকারে সু চি রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতার নিন্দা করেননি এবং মায়ানমারে মুসলিমদের জাতিগত নির্মূল হতে থাকার কথা অস্বীকার করেন, বরং জোর দিয়ে বলেন যে "বৈশ্বিক মুসলিম শক্তি অনেক গ্রেট - এই বিশ্বব্যাপী কল্পিত ধারণা"র কারণে সৃষ্ট "আতঙ্কের আবহে"ই সেখানে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। তিনি সাক্ষাৎকারে "যেকোনো ধরনের ঘৃণা"রই নিন্দা করেন।[৩৭] পিটার পপহ্যামের মতে, সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী মুসলমান ছিলেন বলে সাক্ষাৎকারের পরে সু চি রাগ প্রকাশ করেন।[৩৮] সু চি দাবি করেছিলেন যে দুপক্ষেই সহিংসতা হচ্ছে, তখন হুসাইন তাকে চ্যালেঞ্জ করেন যে সহিংসতার প্রায় সব প্রভাব কেন শুধু রোহিঙ্গাদের ওপরই পড়ছে। পিটার পপহ্যাম সু চির এরূপ অবস্থানকে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দ্ব্যর্থবোধক অবস্থান বলে মন্তব্য করেন।[৩৯] ২০১৩ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের সাথে আলাপকালে তিনি রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি হিসেবে অভিহিত করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে যা ২০১৯ সালে ডেভিড ক্যামেরনের ২০১০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার বিভিন্ন ঘটনা ও স্মৃতি নিয়ে ২০১৯ সালে প্রকাশিত একটি বইয়ে তিনি উল্লেখ করেন।[৪০]
যাইহোক, সু চি বলেন যে তিনি সমঝোতার জন্য কাজ করতে ইচ্ছুক এবং তিনি কোনো পক্ষে যাবেন না, কারণ দুপক্ষই সহিংসতায় জড়িত।[৪১] দ্য ইকোনোমিস্ট পত্রিকার মতানুসারে, তার "রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের পক্ষে তিনি স্পষ্ট অবস্থান নিতে ব্যর্থ হওয়ায় তার জ্যোতির্ময় মহিমা বিদেশি মানবাধিকার লবিস্টদের সামনে পদস্খলিত হয়েছে।" অবশ্য সু চি "বাংলাদেশী সীমান্তের নিকটে রোহিঙ্গা পরিবারগুলোতে দুইয়ের বেশি সন্তান নেয়া নিষিদ্ধ করার" বিরোধিতা করেছেন।[৪২]
২০১৫ সালে একটি বিবিসি নিউজ আর্টিকেলে রিপোর্টার জোনাহ ফিশার তার ধারণা উপস্থাপন করেন যে, রোহিঙ্গা ইস্যুতে অং সান সু চির নীরবতা আসলে আসন্ন ২০১৫ সালের জাতীয় নির্বাচনে সংখ্যাগুরু বামারদের সমর্থন পাবার আশায়।[৪৩] ২০১৫ সালের মে মাসে চতুর্দশ দালাই লামা রোহিঙ্গাদের সাহায্য করার জন্য সু চির প্রতি আহ্বান জানান এবং দাবি করেন যে তিনি এর আগে দুবার ব্যক্তিগত সাক্ষাতে সু চিকে রোহিঙ্গাদের সম্পর্কে ভাবার জন্য বললেও সু চি তা কানে তোলেননি।[৪৪] ২০১৬র মে মাসে সু চি মায়ানমারে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত স্কট মার্সিয়েলকে বলেন যে রোহিঙ্গাদের "রোহিঙ্গা" নামে উল্লেখ করা যাবে না, তারা 'মুসলিম সংখ্যালঘু'।[৪৫] বামাররা তখন মার্সিয়েলের "রোহিঙ্গা" শব্দ ব্যবহারের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করে।[৪৬]
২০১৬-১৭ সালের নির্যাতনের সময় রোহিঙ্গা মুসলিমদের রক্ষা করতে ব্যর্থতা হওয়ায় সু চি অভিযুক্ত হন।[৪৭] লন্ডনের কুইন মেরী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেট ক্রাইম এক্সপার্টরা সতর্কবার্তা দিয়েছেন যে, সু চি মায়ানমারের "গণহত্যাকে আইনসম্মত" হিসেবে দেখাচ্ছেন।[৪৮] ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন চলতে থাকলেও, "সেনাবাহিনীর সুপ্রমাণিত ধর্ষণ, খুন ও রোহিঙ্গা গ্রাম ধ্বংসের অভিযান বন্ধ করা তো দূরের কথা, সু চি সেসব স্বীকারই করছেন না।"[৪৯] ৪ঠা সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে মায়ানমারে মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত ইয়াংঘি লী রাখাইনের "বাস্তবিকই মারাত্মক" পরিস্থিতি নিয়ে সু চির প্রতিক্রিয়ার সমালোচনা করেন; তিনি বলেন: "আইনের আওতায় সবাইকে সুরক্ষা দিতে এই ডি ফ্যাক্টো নেত্রীর পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন - যেটা আমরা যেকোনো সরকারের কাছেই আশা করি।"[৫০] বিবিসি রিপোর্ট করেছে যে "তার মন্তব্য এমন সময়ে এলো যখন বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের সংখ্যা জাতিসংঘের হিসাবে ৮৭০০০-এ পৌঁছেছে", এছাড়াও, "তার সেন্টিমেন্ট প্রতিধ্বনিত হয়েছে শান্তিতে নোবেলজয়ী মালালা ইউসুফজাইয়ের কণ্ঠে, তিনি বলেছেন যে তিনি মিস সু চির মুখ খোলার অপেক্ষায় আছেন যিনি কিনা এই সংকট সৃস্টির পর কোনো মন্তব্য করেননি।"[৫০] পরদিন জর্জ মনবিও দ্যা গার্ডিয়ানে তার লেখায় সু চির নোবেল পুরস্কার ফিরিয়ে নেয়ার জন্য চেঞ্জ ডট অর্গে একটি পিটিশনে সই করতে পাঠকদেরকে আহবান জানান এবং বলেন যে, "পক্ষপাতিত্বই হোক বা ভয়েই হোক, সু চি অন্যদের স্বাধীনতার অধিকার অস্বীকার করছেন, যে স্বাধীনতা তিনি একসময় নিজের জন্যে চেয়েছিলেন। তার সরকার বাধা দিচ্ছে এবং কখনোবা নীরব থাকছে সেই অ্যাকটিভিস্টদের ব্যাপারে যারা তার নিজের অধিকার আদায় করতে সাহায্য করেছিলেন।[৫১] শান্তিতে আরেক নোবেলজয়ী আর্চবিশপ ডেসমন্ড টুটুও সু চির নীরবতার সমালোচনা করেছেন; সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এক খোলা চিঠিতে তিনি বলেন: "হে আমার বোন, মায়ানমারের রাজনৈতিক ক্ষমতার শিখরে পৌঁছানোই যদি তোমার নীরবতার কারণ হয়ে থাকে, তার জন্য সত্যিই বড়ো বেশি দাম দিতে হচ্ছে ... ন্যায়পরায়ণতার প্রতীক হয়ে ওঠা একজনের জন্য এমন একটি দেশের নেতৃত্ব দেওয়া বেমানান।"[৫২] ১৩ই সেপ্টেম্বর জানা যায় যে, পরের সপ্তাহে এই মানবিক সংকট নিয়ে অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বিতর্কে অং সান সু চি অংশ নেবেন না; মায়ানমার সরকারের এক মুখপাত্র বলেন "হতে পারে তার আরো জরুরি কোনো কাজ আছে।"[৫৩]
লুক বেসনের দ্য লেডি (২০১১) চলচ্চিত্রে সু চি ও তার স্বামী মাইকেল অ্যারিসের জীবনকাহিনী দেখানো হয়েছে এবং তাদের দুজনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন মিচেল ইয়ো এবং ডেভিড টুলেস। ২০১১র নভেম্বরে চলচ্চিত্রটি মুক্তি পাবার আগে ইয়ো সু চির সাথে দেখা করেন।[৫৪] জন বুরম্যানের বিয়ন্ড রেঙ্গুন (১৯৯৫) চলচ্চিত্রে সু চির চরিত্রে অভিনয় করেন অ্যাডেল লাট্জ।[৫৫]
২০০৯ সাল থেকে,[৫৬] ভারতীয় অভিনেত্রী এবং ভারতনাট্যম নৃত্যশিল্পী রুক্ষ্মিণী বিজয়াকুমার দ্য লেডী অপ বার্মা নামক একাঙ্কিকা নাটকে সু চির চরিত্রে অভিনয় করে যাচ্ছেন; নাট্য-পরিচালক হলেন প্রকাশ বেলোয়াড়ি,[৫৭][৫৮] এবং রচয়িতা রিচার্ড শ্যানন।[৫৯]
ইউটু-এর বোনো সু চির প্রতি ট্রিবিউট হিসেবে "ওয়াক অন" গানটি লেখেন এবং ২০০৯-১১ ইউটু থ্রিসিক্সটি ডিগ্রি ট্যুরে (U2 360° Tour) তার অভিযাত্রা প্রচার করেন। স্যাক্সোফোন-বাদক ওয়েইন শর্টার "অং সান সু চি" শিরোনামে একটি গান সুর করেছেন। তার অ্যালবাম ওয়ান প্লাস ওয়ান (1+1)-এ গানটি প্রকাশিত হয় (সাথে ছিলেন পিয়ানোবাদক হেরবি হ্যানকক এবং ফুটপ্রিন্টস লাইভ)।[৬০]
গৃহবন্দী থাকাকালে ২০০৩ সালের সেপ্টেম্বরে তার গাইনী অবস্থার কারণে একটি অস্ত্রোপচার করা হয়, এশিয়া রয়্যাল হসপিটালে।[৬১] ২০১৩-এর ডিসেম্বরে তার পায়ে ছোটো একটি অস্ত্রোপচার করা হয়, এবং চোখের অস্ত্রোপচার হয় ২০১৬-র এপ্রিলে।[৬২] সু চির ব্যক্তিগত চিকিৎসক বলেছেন যে, তার সিরিয়াস কোনো শারীরিক সমস্যা নেই তবে ওজন মাত্র ৪৮ কেজি, রক্তচাপ নিম্ন (low blood pressure) এবং সহজেই তিনি দুর্বল হয়ে পড়েন।[৬৩]
Suu Kyi unsettled Western diplomats (who not long ago used unequivocally to adore her) when she asked the new American ambassador not to refer to a persecuted Muslim minority by their name, the Rohingyas. Burman chauvinists had demonstrated in Yangon and Mandalay against the new ambassador’s use of the word, which in their eyes graces the Rohingyas with the dignity of citizenship which they wish to deny to them.