অরিনোকো নদী Río Orinoco | |
---|---|
অবস্থান | |
দেশ | |
অঞ্চল | দক্ষিণ আমেরিকা |
প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য | |
উৎস | উতস |
• অবস্থান | সেরো-ডেলগাদো-চালবাড, পারিমা পর্বত, ভেনেজুয়েলা |
• স্থানাঙ্ক | ২°১৯′০৫″ উত্তর ৬৩°২১′৪২″ পশ্চিম / ২.৩১৮০৬° উত্তর ৬৩.৩৬১৬৭° পশ্চিম |
• উচ্চতা | ১,০৪৭ মি (৩,৪৩৫ ফু) |
২য় উৎস | ভৌগোলিক উতস |
• অবস্থান | রিও সরেন্টো, পারামো দে সুমাপাজ, মেটা, কলম্বিয়া |
• স্থানাঙ্ক | ৩°৩৪′২″ উত্তর ৭৪°৩১′২৩″ পশ্চিম / ৩.৫৬৭২২° উত্তর ৭৪.৫২৩০৬° পশ্চিম (approximately) |
• উচ্চতা | ৩,৫৩০ মি (১১,৫৮০ ফু) (approximately) |
মোহনা | আমাকুরো বদ্বীপ |
• অবস্থান | আটলান্টিক মহাসাগর, ভেনেজুয়েলা |
• স্থানাঙ্ক | ৮°৩৭′ উত্তর ৬২°১৫′ পশ্চিম / ৮.৬১৭° উত্তর ৬২.২৫০° পশ্চিম[১] |
• উচ্চতা | ০ মি (০ ফু) |
দৈর্ঘ্য | ২,২৫০ কিমি (১,৪০০ মা) |
অববাহিকার আকার | ৮,৮০,০০০ কিমি২ (৩,৪০,০০০ মা২) |
নিষ্কাশন | |
• গড় | ৩৭,০০০ মি৩/সে (১৩,০০,০০০ ঘনফুট/সে) |
• সর্বনিম্ন | ২১,০০০ মি৩/সে (৭,৪০,০০০ ঘনফুট/সে) |
• সর্বোচ্চ | ৫৪,০০০ মি৩/সে (১৯,০০,০০০ ঘনফুট/সে) |
অরিনোকো নদী ( স্পেনীয় উচ্চারণ: ) দক্ষিণ আমেরিকার দীর্ঘতম নদীগুলির মধ্যে অন্যতম। এটি ২,২৫০ কিলোমিটার (১,৪০০ মা) দীর্ঘ। নদীটির অববাহিকা, যা কখনও কখনও অরিনোকিয়া নামেও অভিহিত করা হয়ে থাকে, [তথ্যসূত্র প্রয়োজন] প্রায় ৮,৮০,০০০ কিমি২ (৩,৪০,০০০ মা২) অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত; অববাহিকার ৭৬% রয়েছে ভেনেজুয়েলার মধ্যে এবং কলম্বিয়ার মধ্যে রয়েছে বাকী অংশ। জল নিষ্কাশনের পরিমাণ অনুযায়ী এটি বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম নদী। অরিনোকো নদী এবং এর উপনদীগুলি ভেনেজুয়েলার পূর্ব ও অভ্যন্তরভাগে এবং কলম্বিয়ার ল্যানোসগুলির জন্য প্রধান পরিবহন ব্যবস্থা। অরিনোকোর অববাহিকায় পরিবেশ অত্যন্ত বৈচিত্র্যময়; এখানে বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ এবং প্রাণীজগতের দেখা পাওয়া যায়।
নদীর নামটি সম্ভবত ওয়ারাও ভাষা থেকে এসেছে। ওয়ারাও ভাষায় 'গুইরি' বা güiri (প্যাডেল) এবং 'নোকো' বাnoko (স্থান) শব্দদ্বয় থেকে নদীর নামটি উদ্ভূত বলে মনে করা হয়। শব্দদুটির আক্ষরিক অর্থ হল "প্যাডেল করার একটি জায়গা" অর্থাত একটি নাব্য জায়গা। [২][৩]
১৪৯৮ সালের আগস্ট মাসে কলম্বাসের তৃতীয় সমুদ্রযাত্রার সময় আটলান্টিক মহাসাগরে অরিনোকো নদীর মোহনাটি নথিভুক্ত করা হয়েছিল। যদিও অরিনোকো নদীর উৎসটি খুঁজে পেতে লেগে গিয়েছিল প্রায় ৪৫৩ বছর; ১৯৫১ সালে পারিমা পর্বতমালার সেরো-ডেলগাদো-চালবাডে নদীর উতসমুখটি আবিষ্কৃত হয়। ১৯৫১ সালে একটি যৌথ ফরাসি-ভেনেজুয়েলার অভিযান দ্বারা ভেনেজুয়েলা– ব্রাজিলিয়ান সীমান্তের কাছে, সমুদ্রতল থেকে ১,০৪৭ মিটার (৩,৪৩৫ ফু) উপরে ( ২°১৯′০৫″ উত্তর ৬৩°২১′৪২″ পশ্চিম / ২.৩১৮০৬° উত্তর ৬৩.৩৬১৬৭° পশ্চিম ), নদীর উতসমুখটি চিহ্নিত করা হয়।
অরিনোকোর গতিপথটি ভেনেজুয়েলার গায়ানা শিল্ডকে ঘিরে একটি প্রশস্ত উপবৃত্তাকার চাপ তৈরি করে। অন্যান্য দীর্ঘ নদীর মতই, এটিও অসম দৈর্ঘ্যের চারটি জোনে বিভক্তঃ
মোহনার কাছাকাছি, অরিনোকো নদী একটি বিস্তৃত ব-দ্বীপ তৈরি করেছে যা শত শত নদী এবং জলপথের ধাত্রীভূমি। এটি প্রায় ৪১,০০০ কিমি২ (১৬,০০০ মা২) জলাভূমির মধ্যে বিস্তৃত। বর্ষাকালে, অরিনোকো নদী প্রায় ২২ কিলোমিটার (১৪ মা) চওড়া হতে পারে এবং ১০০ মিটার (৩৩০ ফু) গভীর হতে পারে।
ভেনেজুয়েলার বেশিরভাগ গুরুত্বপূর্ণ নদী অরিনোকো নদীর উপনদী, এদের মধ্যে বৃহত্তম হচ্ছে ক্যারোনি, যা পুয়ের্তো ওরদাজ় এর কাছে অরিনোকোর সাথে মিলিত হয়। অরিনোকো নদী ব্যবস্থার একটি অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য হল ক্যাসিকিয়ের খাল, যা অরিনোকোর একটি শাখা হিসাবে শুরু হয় এবং এটি অ্যামাজনের একটি শাখা রিও নেগ্রোতে মিলিত হয়; এইভাবে অরিনোকো এবং আমাজনের মধ্যে একটি 'প্রাকৃতিক খাল' সৃষ্টি হয়।
বোটো এবং দৈত্যাকৃতি ভোঁদড় অরিনোকো নদীতে বাস করে। [৫] অরিনোকোর কুমির পৃথিবীর অন্যতম বিরল সরীসৃপ। অরিনোকো কুমির মোটামুটি মধ্য এবং নিম্ন অরিনোকো নদীর অববাহিকায় পাওয়া যায়। [৬]
১০০০ টিরও বেশি মাছের প্রজাতি নদী অববাহিকায় রেকর্ড করা হয়েছে এবং প্রায় ১৫% মাছ স্থানীয় প্রকৃতির। [৭] নদীর মাছগুলির মধ্যে অরিনোকো মোহনায় ব্র্যাকিশ বা নুনের পানিতে পাওয়া প্রজাতি রয়েছে, তবে তাজা মিঠা জলেরও বেশ কিছু মাছ রয়েছে। সবথকে বেশি প্রচলিত মিঠা জলের মাছ হল ক্যারাসিফর্মস আর সিরলুরিফর্মস; এই দুই প্রজাতির মাছি অরিনোকোর মিঠা জলের মাছের ৮০% দখল করে আছে। [৮] আরও কিছু বিখ্যাত মাছ হল ব্ল্যাক স্পট পিরানহা এবং কার্ডিনাল টেট্রা । অ্যাকোয়ারিয়াম শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ এই মাছগুলি রিও নিগ্রোতেও পাওয়া যায় যা ক্যাসিকিয়ের খালের মাধ্যমে অরিনোকোর সাথে যুক্ত। [৯]
নদীটির বেশিরভাগ অংশই নাব্য এবং নৌ চলাচল করে; ড্রেজিং-য়ের মাধ্যমে সমুদ্রের জাহাজগুলি কারোনে নদীর মোহনা সিওদাদ বলিভার পর্যন্ত ৪৩৫ কিলোমিটার (২৭০ মা) উজানে প্রবেশ করতে পারে। রিভার স্টিমারগুলি পোর্তো আয়াকুচো এবং অ্যাট্রেস র্যাপিডস পর্যন্ত পণ্যসম্ভার বহন করে।
১৯২৬ সালে, ভেনেজুয়েলার খনির পরিদর্শক সান ফেলিক্স শহরের দক্ষিণে এল ফ্লোরোরো নামে একটি পাহাড়ে অরিনোকো বদ্বীপের নিকটে একটি সমৃদ্ধ লৌহখনিরসন্ধান পেয়েছিলেন । ভেনেজুয়েলার সংস্থাগুলি এবং মার্কিন ইস্পাত সংস্থাগুলির একত্রিত হয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে এই খনি থেকে লৌহ আকরিক উত্তোলনের কাজ শুরু হয়েছিল। ১৯৫০ এর দশকের গোড়ার দিকে, প্রতিদিন প্রায় ১০০০০ টন আকরিক বহনকারী মাটি উত্তোলন করা হত। [১০]
অরিনোকো নদীর অববাহিকায় অরিনোকো তৈল খনি বেল্টে, প্রচুর পরিমাণে আলকাতরা সঞ্চিত রয়েছে, যা ভবিষ্যতে তেল উৎপাদনের উৎস হতে পারে। [১১]
অ্যানজোটেগুয়ে-গুয়ারিকো এবং মোনাগাস রাজ্যগুলিকে ঘিরে, অভ্যন্তরীণ সীমা অববাহিকার উত্তর সীমানা এবং গায়ানা শিল্ড অববাহিকার দক্ষিণ সীমানা গঠন করে [১২]:১৫৫ । এছাড়া মাতুরিন নদী পূর্বদিকের উপ-অববাহিকা গঠন করে এবং গুয়ারিকো নদী পশ্চিমদিকের উপ-অববাহিকার গঠন করে:১৫৬। এল ফুরিয়াল তৈলখনিটি ১৯৭৮ সালে আবিষ্কৃত হয়েছিল যেখানে ওলিগসিন অগভীর সামুদ্রিক বেলেপাথর স্তর থেকে তৈল উত্তোলিত হয়।:১৫৫
১৯৭৩ সাল থেকে, সিভিল এসোসিয়েশন নুয়েস্ট্রস রিওস সন ন্যাভিগেবলস আন্তর্জাতিক্স্তরে নুয়েস্ত্রস রিওস সন ন্যাভিগেবল নৌপরিচালনা আয়োজন করে। এটিতে অরিনোকো, মেটা এবং আপর নদীর মধ্যে দিয়ে ১২০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হ্য। এটিই পৃথিবীর দীর্ঘতম নৌযাত্রা। নৌকাগুলি প্রতি ঘণ্টা গড়ে ১২০ মাইল গতিবেগে নৌচালনা করে। সিউদাদ বলিভার বা সান ফার্নান্দো দে অপুর থেকে শুরু করে, তিনটি নদীপথ অতিক্রম করে আবার এই অংশে ফিরে আসতে হয়। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা থেকে এই নৌচালনায় অংশ নিতে এবং পরিদর্শন করতে লোকজন আসেন।