অ্যাংলো-স্যাক্সন পৌত্তলিক ধর্ম (ইংরেজি: Anglo-Saxon paganism, অ্যাংলো-স্যাক্সন প্যাগানইজম ; অথবা Anglo-Saxon heathenism, অ্যাংলো-স্যাক্সন হিদনইজম) বলতে খ্রিস্টীয় পঞ্চম থেকে অষ্টম শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে, অর্থাৎ, আদি মধ্যযুগীয় ইংল্যান্ডের প্রারম্ভিক পর্যায়ে অ্যাংলো-স্যাক্সন জাতিগোষ্ঠীর ধর্মবিশ্বাস এবং সেই যুগের ইংল্যান্ডে প্রচলিত প্রথা ও রীতিনীতিগুলিকে বোঝায়। এই ধর্মবিশ্বাসটি অ্যাংলো-স্যাক্সন প্রাক্-খ্রিস্টীয় ধর্ম (ইংরেজি: Anglo-Saxon pre-Christian religion, অ্যাংলো-স্যাক্সন প্রি-খ্রিশ্চান রিলিজিয়ন) অথবা অ্যাংলো-স্যাক্সন ঐতিহ্যবাহী ধর্ম (ইংরেজি: Anglo-Saxon traditional religion, অ্যাংলো-স্যাক্সন ট্র্যাডিশনাল রিলিজিয়ন) নামেও পরিচিত। জার্মানীয় পৌত্তলিক ধর্মের একটি প্রকারভেদ বহুবিধ আঞ্চলিক রূপভেদ সহ উত্তর-পশ্চিম ইউরোপের অধিকাংশ অঞ্চল জুড়ে প্রসার লাভ করেছিল। সেই ধর্মের বিভিন্ন ধরনের মতবিশ্বাস ও কাল্ট-প্রথা নিয়ে গড়ে উঠেছিল অ্যাংলো-স্যাক্সন জাতির পৌত্তলিক ধর্মবিশ্বাস।
অ্যাংলো-স্যাক্সন পৌত্তলিক ধর্মের উৎপত্তি মহাদেশীয় উত্তর ইউরোপের আদি লৌহযুগীয় ধর্ম থেকে। খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতাব্দীর মধ্যভাগে অ্যাংলো-স্যাক্সন অনুপ্রবেশের পর এই ধর্ম প্রবেশ করে ব্রিটেনে। এরপর খ্রিস্টীয় সপ্তম ও অষ্টম শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে সেই দেশের অন্তর্গত রাজ্যগুলির খ্রিস্টীয়করণের পূর্বাবধি ইংল্যান্ডের জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই ছিল অ্যাংলো-স্যাক্সন পৌত্তলিক ধর্মের অনুগামী। ক্রমে এই ধর্মের মধ্যে মিশে গিয়েছিল কিছু লোককথাও। খ্রিস্টান অ্যাংলো-স্যাক্সনরাই প্রথম এই ধর্মটিকে নিন্দাসূচক প্যাগানিজম ও হিদনিজম (ইংরেজি: paganism ও heathenism; দু’টি শব্দেরই আক্ষরিক অর্থ পৌত্তলিকতা ধর্ম বা বিধর্মীদের ধর্মবিশ্বাস) শব্দদ্বয় দ্বারা অভিহিত করে। সমসাময়িক গবেষকেরা অনুমান করেন, এই পৌত্তলিক ধর্মের অনুগামীরা তাদের ধর্মকে কোনও নির্দিষ্ট নাম প্রদান করেনি। সেই জন্য এখনও এই ধর্মকে উক্ত দুই খ্রিস্টীয় পরিভাষায় চিহ্নিত করার যথার্থতা নিয়ে তাঁদের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে। অ্যাংলো-স্যাক্সনদের পৌত্তলিক ধর্ম সম্পর্কে বর্তমানে যা কিছু জানা যায়, তার সূত্র-উপাদান প্রধানত তিনটি: বিড ও অল্ডহেম প্রমুখ খ্রিস্টান অ্যাংলো-স্যাক্সন রচিত সাহিত্যকর্ম, স্থাননাম-সংক্রান্ত প্রমাণ এবং কাল্ট-প্রথাগুলির প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ। এছাড়া নর্স ইত্যাদি প্রতিবেশী জাতিগোষ্ঠীগুলির অধিকতর সুপ্রত্যয়িত প্রাক্খ্রিস্টীয় ধর্মবিশ্বাসের সঙ্গে তুলনার মাধ্যমেও অ্যাংলো-স্যাক্সন পৌত্তলিক ধর্মের প্রকৃতি সম্পর্কে কিছু কিছু ধারণা পাওয়া গিয়েছে।
অ্যাংলো-স্যাক্সন পৌত্তলিক ধর্ম ছিল একটি বহুদেববাদী ধর্মবিশ্বাস। এই ধর্মের কেন্দ্রে ছিল ése (একবচনে ós) নামে পরিচিত এক দেবমণ্ডলীতে বিশ্বাস। এই দেবদেবীদের মধ্যে সর্বপ্রধান ছিলেন সম্ভবত ওয়াডেন। এছাড়া থুনোর ও টিউ ছিলেন অন্য দুই গুরুত্বপূর্ণ দেবতা। সেই সঙ্গে অ্যাংলো-স্যাক্সনেরা প্রাকৃতিক পরিবেশে বসবাসকারী এলফ, নেক ও ড্রাগন সহ অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের অলৌকিক সত্ত্বাতেও বিশ্বাস করত। কাল্ট-প্রথাগুলির কেন্দ্রে থাকত বিভিন্ন ভক্তিমূলক আচার-অনুষ্ঠান এবং সেই ধরনের অনুষ্ঠানের অন্যতম ছিল দেবদেবীদের উদ্দেশ্যে দ্রব্যসামগ্রী উৎসর্গীকরণ ও পশুবলি। বাৎসরিক ধর্মীয় উৎসবেও বলিদানের আয়োজন করা হত। কাষ্ঠনির্মিত মন্দিরের অস্তিত্বেরও প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। অবশ্য অন্যান্য কাল্ট-অনুষ্ঠান আয়োজিত হত খোলা আকাশের নিচেই। এই ধরনের অনুষ্ঠানের অঙ্গ ছিল কাল্ট-সংক্রান্ত গাছপালা ও বিভিন্ন বৃহদাকার প্রস্তরখণ্ড। পৌত্তলিক ধর্মে বিশ্বাসী অ্যাংলো-স্যাক্সনদের পরকাল-সংক্রান্ত ধ্যানধারণার কথা বিশেষ জানা যায় না। তবে পরকাল-বিশ্বাস সম্ভবত তাদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার প্রক্রিয়াগুলিকে প্রভাবিত করেছিল। অ্যাংলো-স্যাক্সন সমাজে মৃতদেহ সমাধিস্থ অথবা দাহ করা হত। সাধারণত নির্বাচিত কিছু সামগ্রী অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় ব্যবহৃত হত। সম্ভবত জাদু ও ডাকিনীবিদ্যা-সংক্রান্ত ধারণা এবং শামানবাদের শ্রেণিভুক্ত করা যায় এমন কিছু উপাদানও এই ধর্মবিশ্বাসের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।
অ্যাংলো-স্যাক্সন পৌত্তলিক ধর্মের দেবদেবীদের নামগুলি ইংরেজি ভাষায় সপ্তাহের বারের নামগুলির উৎস। এই ধর্ম এবং এটির সঙ্গে সম্পৃক্ত পুরাণকথা সম্পর্কে যা জানা যায়, তা সাহিত্য ও আধুনিক পৌত্তলিকতাবাদ উভয়কেই প্রভাবিত করেছে।
অ্যাংলো-স্যাক্সন ইংল্যান্ডে খ্রিস্টানেরা অখ্রিস্টানদের নির্দেশ করত লাতিন pagan শব্দটির দ্বারা।[১] অ্যাংলো-স্যাক্সন ইংল্যান্ডের দেশীয় ভাষা প্রাচীন ইংরেজিতে উক্ত শব্দটির সমার্থক hæðen (আধুনিক ইংরেজিতে "heathen") শব্দটি ছিল প্রাচীন নর্স heiðinn শব্দের সমজ শব্দ। এই দু’টি শব্দই সম্ভবত উদ্ভূত হয়েছিল গথিক haiþno শব্দটি থেকে।[২] ইংরেজিতে pagan ও heathen দুই শব্দই নিন্দাসূচক ব্যঞ্জনার্থ বহন করত।[৩] পরবর্তীকালের অ্যাংলো-স্যাক্সন সাহিত্যে অপরাধী এবং যাদের আচরণ খ্রিস্টীয় শিক্ষানুসারী নয় বলে গণ্য করা হত, তাদের বোঝাতেও hæðen শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে।[৪] খ্রিস্টানরা পৌত্তলিকতাবাদ অর্থে "paganism" শব্দটি ব্যবহার করত অন্যকরণের একটি কৌশল হিসাবে।[৫] প্রত্নতত্ত্ববিদ নেইল প্রাইসের মতে, অ্যাংলো-স্যাক্সন সংস্কৃতির বর্ণনা প্রসঙ্গে "প্যাগানিজম" হল "প্রধানত শূন্য ধারণা যার অর্থ হল যা (খ্রিস্টধর্ম) নয়"।[৬]
অ্যাংলো-স্যাক্সন ইংল্যান্ডে বসবাসকারী কেউ নিজেদের "প্যাগান" নামে অভিহিত করত অথবা খ্রিস্টধর্মের একক বিকল্প হিসাবে "প্যাগানবাদ" নামে কোনও একটি মাত্র ধর্মকে বুঝত – এমন কোনও প্রমাণ পাওয়া যায় না।[৫] এই জাতীয় পৌত্তলিকতাবাদী মতবিশ্বাসগুলি দৈনন্দিন জীবনের অন্যান্য অংশের থেকে অবিচ্ছেদ্য হওয়াই সঙ্গত ছিল।[৭] প্রত্নতত্ত্ববিদ মার্টিন কার্ভার, অ্যালেক্স স্যানমার্ক ও সারা সেম্পলের মতে, অ্যাংলো-স্যাক্সন পৌত্তলিকতাবাদ বৃহদাঞ্চলীয় নিয়ম বা প্রতিষ্ঠানবদ্ধ কোনও ধর্ম নয়; এটি হল বিভিন্ন ধরনের স্থানীয় বৌদ্ধিক জগৎ-ধারণাকে বর্ণনাকারী একটি শিথিল পরিভাষা।"[৮] কার্ভার বেশ জোর দিয়েই বলেন যে, অ্যাংলো-স্যাক্সন ইংল্যান্ডে পৌত্তলিকতাবাদ বা খ্রিস্টধর্ম কোনওটিই "সমধর্মী বৌদ্ধিক অবস্থান অথবা প্রামাণ্য শাস্ত্র ও আচার-অনুষ্ঠান" দ্বারা উপস্থাপিত হয়নি; বরং দুইয়ের মধ্যে "যথেষ্ট আন্তঃসংযোগ" বিদ্যমান ছিল।[৯] ধারণা হিসাবে এই ধর্মবিশ্বাসের মধ্যে কোনও ধরনের আপাত নিয়মনীতি বা সামঞ্জস্যের অভাব ছিল। সেই সঙ্গে এটি আঞ্চলিক ও কালপঞ্জিগত ক্ষেত্রে বৈচিত্র্যের নিদর্শন রেখে যায়।[৬] প্রত্নতত্ত্ববিদ অ্যালেক্স প্লুস্কৌস্কির মতে, এটিকে "বহুশাখাবিশিষ্ট অ্যাংলো-স্যাক্সন 'পৌত্তলিকতাবাদসমূহ'" হিসাবেও উল্লেখ করা চলে।[৭]
ধর্মের সমাজতাত্ত্বিক ম্যাক্স ওয়েবারের পরিভাষা অবলম্বন করে ইতিহাসবিদ মেরিলিন ডান অ্যাংলো-স্যাক্সন পৌত্তলিকতাবাদকে বর্ণনা করেছেন একটি "বিশ্বগ্রাহ্যকারী" ধর্ম হিসাবে; অর্থাৎ এই ধর্ম ছিল এমন একটি ধর্ম যা "যুগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিল" এবং সেই সঙ্গে পারিপার্শ্বিক ক্ষেত্রে পরিবারের সুরক্ষা, অগ্রগতি এবং খরা ও দুর্ভিক্ষ এড়িয়ে চলার মতো বিষয়গুলি কথা স্মরণে রেখে চলত।[১০] এতদ্ব্যতীত গুস্তাভ মেনশিং কৃত শ্রেণিবিন্যাস অবলম্বন করে ডান অ্যাংলো-স্যাক্সন ধর্মকে বর্ণনা করেন একটি "লৌকিক ধর্ম" হিসাবেও; যে ধর্মের অনুগামীরা জগতে টিকে থাকা ও উন্নতিবিধানের প্রতি পূর্ণ মনোযোগ দিত।[১০]
অ্যাংলো-স্যাক্সন ইংল্যান্ডের প্রাক্-খ্রিস্টীয় ধর্মবিশ্বাসগুলিকে নিয়ে আলোচনার সময় "প্যাগানিজম" বা "হিদনিজম" শব্দগুলির ব্যবহার সমস্যাসঙ্কুল।[৫] ঐতিহাসিকভাবে অ্যাংলো-স্যাক্সন যুগের অনেক প্রাচীন পণ্ডিত খ্রিস্টীয় সপ্তম শতাব্দীতে খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরণের পূর্ববর্তী ইংল্যান্ডের ধর্মবিশ্বাসকে বর্ণনা করার জন্য এই শব্দগুলি ব্যবহার করেছেন।[৫] পরবর্তীকালের একাধিক গবেষক এই জাতীয় শব্দপ্রয়োগের সমালোচনা করেছেন।[৫] উদাহরণস্বরূপ, ইতিহাসবিদ ইয়ান এন. উড বলেছেন, অ্যাংলো-স্যাক্সন জাতির কথা আলোচনাকালে "প্যাগান" শব্দের ব্যবহার করার ফলে গবেষকেরা "আদি মধ্যযুগীয় ধর্মপ্রচারকদের সাংস্কৃতিক নির্মাণ ও মূল্যবিচারকে" অবলম্বন করতে বাধ্য হন এবং তার ফলে তথাকথিত প্যাগানদের নিজস্ব ধ্যানধারণা সম্পর্কে গবেষকসুলভ চিন্তাভাবনার স্বচ্ছতা হ্রাস পায়।[১১]
বর্তমানে কিছু অ্যাংলো-স্যাক্সনপন্থী গবেষক আদি অ্যাংলো-স্যাক্সন যুগের কথা আলোচনার সময় "প্যাগানিজম" বা "প্যাগান" শব্দটির ব্যবহার পরিত্যাগ করেছেন। কিন্তু অন্যান্যেরা খ্রিস্টান নয় অথচ একটি শনাক্তকরণযোগ্য ধর্মকে চিহ্নিত করার ব্যবহারযোগ্য উপায় হিসাবে এই শব্দগুলিকে ব্যবহার করেন।[৫] ইতিহাসবিদ জন হাইন্স অপেক্ষাকৃত ভালো বিকল্প হিসাবে "ঐতিহ্যবাহী ধর্ম" শব্দবন্ধটি ব্যবহারের প্রস্তাব করেন।[৫] যদিও এই শব্দবন্ধ প্রয়োগের ব্যাপারে সাবধান করে কার্ভার বলেন যে, খ্রিস্টীয় পঞ্চম থেকে অষ্টম শতাব্দী পর্যন্ত ব্রিটেন নতুন ধারণায় পরিপূর্ণ ছিল। তাই সেই যুগের ধর্মবিশ্বাসকে ঠিক "ঐতিহ্যবাহী" বলা চলে না।[১২] "প্রাক্-খ্রিস্টীয়" ধর্ম শব্দবন্ধটিও ব্যবহৃত হয়; তবে এই শব্দবন্ধের মাধ্যমে "প্যাগানইজম" ও "হিদনিজম" শব্দ দু’টির নিন্দাসূচক দ্যোতনা পরিহার করা সম্ভব হলেও তা সব ক্ষেত্রে কালপঞ্জিগত দিক থেকে যথাযথ হয় না।[১৩]
অ্যাংলো-স্যাক্সন ইংল্যান্ডের প্রাক্-খ্রিস্টীয় সমাজ ছিল নিরক্ষর।[১৪] তাই অ্যাংলো-স্যাক্সন পৌত্তলিকবাদীরা সমসাময়িক কালের কোনও লিখিত প্রমাণ রেখে যায়নি।[১৫] পরিবর্তে প্রাথমিক সাহিত্যিক সূত্র-উপাদান হিসাবে পাওয়া যায় পরবর্তীকালের লেখকদের রচনা। এঁদের অন্যতম হলেন বিড এবং লাইফ অফ সেন্ট উইলফ্রিড গ্রন্থের অজ্ঞাতনামা রচয়িতা, যিনি প্রাচীন ইংরেজির পরিবর্তে লাতিনে গ্রন্থরচনা করেছিলেন।[১৬] এই লেখকবৃন্দ অ্যাংলো-স্যাক্সনদের প্রাক্-খ্রিস্টীয় মতবিশ্বাসের পূর্ণাঙ্গ চিত্র অঙ্কনে আগ্রহী ছিলেন না। সেই কারণে তাঁদের রচনায় এই ধর্মবিশ্বাসের উল্লেখ অসম্পূর্ণ ও পরিমাণে অত্যল্প।[১৭] এতদ্ব্যতীত মহাদেশীয় ইউরোপের পৌত্তলিক সমাজগুলিকে ধর্মান্তরণের কাজে সক্রিয় খ্রিস্টান অ্যাংলো-স্যাক্সন ধর্মপ্রচারকদের লেখালিখিগুলিও সম্ভবত মূল্যবান উপাদান। এগুলির মধ্যে যেমন রয়েছে উইলিব্রোর্ড ও বনিফেসের রচনাবলি,[১৮] তেমনই রয়েছে খ্রিস্টীয় প্রথম শতাব্দীর রোমান লেখক ট্যাকিটাসের রচনাও। উল্লেখ্য, ট্যাকিটাস মহাদেশীয় ইউরোপে অ্যাংলো-স্যাক্সনদের পূর্বপুরুষগণের আচরিত পৌত্তলিক ধর্মগুলির উপর টীকা রচনা করেছিলেন।[১৯] ইতিহাসবিদ ফ্র্যাঙ্ক স্টেন্টন বলেছেন, লভ্য গ্রন্থগুলি থেকে অ্যাংলো-স্যাক্সন ইংল্যান্ডের পৌত্তলিক ধর্ম সম্পর্কে আমরা শুধু "একটি অস্পষ্ট আভাস"ই পেতে পারি।[২০] একই ভাবে প্রত্নতত্ত্ববিদ ডেভিড উইলসনও লিখেছেন যে, লিখিত সূত্রগুলিকে "সাবধানে ব্যবহার করা উচিত এবং চূড়ান্ত কিছু ধরে না নিয়ে শুধুমাত্র ইঙ্গিত হিসাবেই দেখা উচিত"।[২১]
নিকটবর্তী আয়ারল্যান্ড, ফ্রান্সিয়া বা স্ক্যান্ডিনেভিয়ার প্রাক্-খ্রিস্টীয় মতবিশ্বাসের তুলনায় অ্যাংলো-স্যাক্সন পৌত্তলিকতাবাদ সম্পর্কে আলোচনা খুবই অল্প সংখ্যক নথিবদ্ধ রচনায় পাওয়া যায়।[২২] ধ্রুপদি পুরাণ ও নর্স পুরাণের ক্ষেত্রে যেমন পরিচ্ছন্ন ও প্রণালীবদ্ধ বিবরণ পাওয়া যায়, অ্যাংলো-স্যাক্সন পৌত্তলিক ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে তেমন কিছুই পাওয়া যায় না।[২৩] অনেক গবেষক প্রাক্-খ্রিস্টীয় অ্যাংলো-স্যাক্সন ইংল্যান্ডের মতবিশ্বাসগুলিকে বোঝার জন্য নর্স পুরাণকে সহায়িকা হিসাবে ব্যবহার করলেও, এই উদ্যোগের উপযোগিতা নিয়েও সতর্কীকরণও করা হয়ে থাকে।[২৪] স্টেন্টনের অনুমান, অ্যাংলো-স্যাক্সন ও স্ক্যান্ডিনেভীয় পৌত্তলিকতাবাদের মধ্যে যোগাযোগটি ঘটেছিল "অতীতে যা ইতিমধ্যেই সুদূর অতীতে পরিণত হয়েছিল"।[২৫] তিনি দাবি করেন যে, স্ক্যান্ডিনেভিয়ার প্রাক্-খ্রিস্টীয় মতবিশ্বাসগুলিতেও স্পষ্ট বৈচিত্র্য ছিল, যার ফলে ইংল্যান্ডের মতটিকে বুঝতে স্ক্যান্ডিনেভীয় উপাদান ব্যবহার করলে আরও বেশি জটিলতা সৃষ্টি হয়।[২৬] কিন্তু এই বক্তব্যের বিপরীতে ইতিহাসবিদ ব্রায়ান ব্র্যান্সটন বলেন যে, প্রাচীন নর্স উৎসসূত্র ব্যবহার করলে অ্যাংলো-স্যাক্সন পৌত্তলিক মতবিশ্বাসগুলিকে আরও ভালোভাবে বোঝা সম্ভব; কারণ, এই দুই জাতির পুরাণগত সাদৃশ্য তাদের একই পূর্বপুরুষদের ধর্মবিশ্বাসের মধ্যে নিহিত ছিল।[২৭]
প্রাচীন ইংরেজি স্থাননামগুলি অ্যাংলো-স্যাক্সন ইংল্যান্ডের প্রাক্-খ্রিস্টীয় ধর্মবিশ্বাস ও আচার-অনুষ্ঠান সম্পর্কে কিছু অন্তর্জ্ঞান প্রদান করে।[২৮] এই স্থাননামগুলির কয়েকটি নির্দিষ্ট দেবদেবীদের নামের সঙ্গে সম্পর্কিত; অন্যদিকে অন্যান্য নামগুলির সঙ্গে এমন কিছু শব্দ যুক্ত যেগুলি সেই স্থানে অনুশীলিত কাল্ট-আচারগুলিকে নির্দেশ করে।[২৯] স্ক্যান্ডিনেভিয়ায় কোনও কোনও স্থাননাম উভয় প্রকার বৈশিষ্ট্য বহন করলেও ইংল্যান্ডে এই দুই শ্রেণি পৃথকই রয়ে গিয়েছে।[৩০] যে সকল স্থাননাম সম্ভাব্য পৌত্তলিক যোগসূত্র বহন করছে, সেগুলি কেন্দ্রীভূত হয়েছে প্রধানত মধ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডে।[৩১] অন্যদিকে নরদামব্রিয়া বা পূর্ব অ্যাংলিয়া থেকে কোনও নিশ্চিত উদাহরণ পাওয়া যায় না।[৩২] দেশের কোনও কোনও অংশে কেন এই জাতীয় নাম দুর্লভ বা অস্তিত্বহীন তা স্পষ্ট নয়। সম্ভবত পরবর্তী অ্যাংলো-স্যাক্সন যুগে স্ক্যান্ডিনেভীয় জনবসতির আনীত নামকরণপ্রথার পরিবর্তন অথবা পরবর্তীকালে খ্রিস্টান কর্তৃপক্ষের ধর্মান্তরণের প্রয়াস এর জন্য দায়ী।[৩৩] ১৯৪১ সালে স্টেন্টন বলেন যে, "পঞ্চাশ থেকে ষাটটি পৌত্তলিক উপাসনাস্থল"কে স্থাননামের প্রমাণ দ্বারা চিহ্নিত করা যায়।[৩৪] যদিও ১৯৬১ সালে স্থাননাম বিশেষজ্ঞ মার্গারেট গেলিং এই বিষয়ে সতর্কীকরণ করে বলেন যে, মাত্র পঁয়তাল্লিশটি নাম এই ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য।[৩৫] সাহিত্য বিশেষজ্ঞ ফিলিপ এ শ যদিও সাবধান করে বলেছেন, এই স্থানগুলির অনেকগুলির নামই সম্ভবত পৌত্তলিকদের দেওয়া নয়। পরবর্তীকালে খ্রিস্টান অ্যাংলো-স্যাক্সনরা এই নামগুলি রেখেছিলেন। এই নামগুলি খ্রিস্টান দৃষ্টিকোণ থেকে বিধর্মীদের স্থান হিসাবে ইঙ্গিতকৃত স্থানের পরিচায়ক।[৩৬]
"লিখিত সূত্র ও স্থাননাম থেকে অ্যাংলো-স্যাক্সন প্রাক্-খ্রিস্টীয় ধর্ম সম্পর্কে আমাদের লব্ধ জ্ঞান আংশিক ও অত্যল্প হলেও প্রত্নতত্ত্ব আরও কিছু প্রকাশ করতে শুরু করেছে।"
— প্রত্নতত্ত্ববিদ মার্টিন ওয়েলশ, ২০১১।[৩৭]
উইলসনের মতে, প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ "প্রচুর পরিমাণে লভ্য এবং সেই কারণে পৌত্তলিকতাবাদ চর্চার ক্ষেত্রে সম্ভাব্যরূপে তা সর্বাপেক্ষা অধিক প্রয়োজনীয়"।[৩৮] প্রত্নতত্ত্বের দিক থেকে ধর্ম, আচার-অনুষ্ঠান ও জাদুবিদ্যার জগৎ তখনই চিহ্নিত করা সম্ভব, যখন তা বাস্তব সংস্কৃতিকে প্রভাবিত করে।[৩৯] যেমন, অ্যাংলো-স্যাক্সন ইংল্যান্ডের প্রাক্-খ্রিস্টীয় ধর্ম সম্পর্কে গবেষণা প্রধানত সমৃদ্ধ সমাধিস্থল ও স্মারক স্থাপত্যগুলির উপর নির্ভরশীল, যেগুলি যতটা ধর্মীয় উদ্দেশ্যকে প্রদর্শন করে, ততটাই দেখিয়ে দেয় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যটিকেও।[৩৯] ধাতু নিরূপক যন্ত্রবিদেরা যে ধাতুদ্রব্যগুলি আবিষ্কার করেছেন, সেগুলিও অ্যাংলো-স্যাক্সন পৌত্তলিকতাবাদের ব্যাখ্যায় বিশেষ অবদান রেখেছে।[৪০] প্রাক্-খ্রিস্টীয় অ্যাংলো-স্যাক্সনদের বিশ্ববোধ দৈনন্দিন জীবনের সকল দিককে স্পর্শ করেছিল। সেই জন্য অ্যাংলো-স্যাক্সনদের আচারগত ক্রিয়াকাণ্ডগুলিকে দৈনন্দিন জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রগুলির থেকে পৃথক হিসাবে দর্শনো আধুনিক গবেষকদের কাছে বিশেষভাবে কঠিন একটি কাজ।[৪১] এই জাতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানের অধিকাংশই এমন এক যুগের যখন পৌত্তলিক ধর্মবিশ্বাসগুলি খ্রিস্টধর্ম কর্তৃক অপসারিত হচ্ছিল। সেই জন্য অ্যাংলো-স্যাক্সন পৌত্তলিকতাবাদ সম্পর্কে যে কোনও আলোচনাই ধর্মান্তরণের প্রত্নতত্ত্বের দ্বিমুখী দিক থেকে দেখতে হয়।[৪২]
লভ্য প্রমাণের ভিত্তিতে ইতিহাসবিদ জন ব্লেয়ার বলেছেন যে, অ্যাংলো-স্যাক্সন ইংল্যান্ডের প্রাক্-খ্রিস্টীয় ধর্মের সঙ্গে অনেকাংশে মিল পাওয়া যায় "রোমান শাসনাধীন ব্রিটনদের পৌত্তলিক ধর্মমতের... অন্তত বাহ্যিক আকারে"।[৪৩] যদিও প্রত্নতত্ত্ববিদ অড্রে মিনি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, "অ্যাংলো-স্যাক্সন পৌত্তলিকতাবাদের নিশ্চিত প্রমাণ অতি অল্প এবং এই ধর্মের সংগঠন ও দর্শনের সার বৈশিষ্ট্যগুলির অনেকগুলি সম্পর্কেই আমরা অজ্ঞই রয়ে গিয়েছি"।[৪৪] একই ভাবে প্রাচীন ইংরেজি বিশেষজ্ঞ রয় পেজ এই মত প্রকাশ করেছেন যে, অ্যাংলো-স্যাক্সন পৌত্তলিকতাবাদকে ভালো ভাবে বোঝার ক্ষেত্রে প্রাপ্ত প্রমাণগুলি "অত্যন্ত বিরল ও অতিবিক্ষিপ্ত"।[৪৫]
খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতাব্দীর অধিকাংশ সময় জুড়ে ব্রিটেনের অধিকাংশ অঞ্চলই ছিল রোমান সাম্রাজ্যের অংশ। ৩৮০ খ্রিস্টাব্দের থেসালোনিকার অধ্যাদেশ বলে সেই সাম্রাজ্যের সরকারি ধর্ম ছিল খ্রিস্টধর্ম।[৪৬] যদিও ব্রিটেনে খ্রিস্টধর্ম তখনও সম্ভবত সংখ্যালঘু ধর্ম, যা মূলত নগরাঞ্চল এবং সেগুলির পশ্চাদভূমিতে সীমাবদ্ধ ছিল।[৪৬] গ্রামাঞ্চলে এই ধর্মের কিছু প্রভাব থাকলেও অনুমিত হয় যে, স্থানীয় পরবর্তী লৌহযুগীয় বহুদেববাদী ধর্মবিশ্বাসগুলি তখন ছিল বহুল-আচরিত।[৪৬] ওয়েলশ মার্চেস, ওয়েলসের অধিকাংশ এলাকা (গেওয়েন্ট বাদে), ল্যাঙ্কাশায়ার ও দক্ষিণ-পশ্চিম উপদ্বীপের মতো কিছু এলাকায় এই যুগে খ্রিস্টধর্মের অস্তিত্বের প্রমাণ কিছুই পাওয়া যায় না।[৪৬]
ব্রিটনরা যখন এই অঞ্চলে অ্যাংলো-স্যাক্সন অভিজাতদের প্রাধান্য দেখেই সম্ভবত অ্যাংলো-স্যাক্সনদের পৌত্তলিকতাবাদী ধর্ম গ্রহণ করেছিল আত্মোন্নতিসাধনের সহায়ক হিসাবে। ঠিক যেমন তারা অ্যাংলো-স্যাক্সন সংস্কৃতির অন্যান্য দিকগুলিকে গ্রহণ করেছিল।[৪৭] যে ব্রিটনরা খ্রিস্টধর্ম গ্রহণের পরিবর্তে স্থানীয় বহুদেববাদী ধর্ম অনুশীলন করত, তাদের পক্ষে সেটাই ছিল সহজতর।[৪৭] স্থানে স্থানে এই পরবর্তী লৌহযুগীয় বহুদেববাদ প্রথাবিরুদ্ধভাবে মিশে গিয়েছিল আসন্ন অ্যাংলো-স্যাক্সন ধর্মের সঙ্গে।[৪৮] বিপরীতপক্ষে অ্যাংলো-স্যাক্সন যুগে রোমান খ্রিস্টধর্মের সীমিত অস্তিত্বের সম্ভাব্য কিছু প্রমাণও রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, নরফোকের দু’টি স্থানে ও কেন্টের একলেসে স্থাননাম হিসাবে একলেস (লাতিন: ecclēs, অর্থাৎ ‘চার্চ’) শব্দটির অস্তিত্বের কথা উল্লেখ করা যায়।[৪৭] যদিও ব্লেয়ারের মতে, অ্যাংলো-স্যাক্সন অঞ্চলগুলিতে রোমান খ্রিস্টধর্ম এক প্রকার "ভুতুড়ে-জীবন"ই যাপন করত।[৪৭] যে ব্রিটনেরা খ্রিস্টধর্ম অনুশীলন চালিয়ে যায়, তাদের সম্ভবত দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসাবে গণ্য করা হত এবং পৌত্তলিক রাজন্য ও অভিজাত বর্গ, যারা সেই সময় অ্যাংলো-স্যাক্সন সংস্কৃতির উপর গুরুত্ব আরোপ করত এবং সেটিকে ব্রিটিশ সংস্কৃতির বিরোধী মনে করত, তাদের উপর খ্রিস্টান ব্রিটনদের প্রভাব যৎসামান্য হওয়াই স্বাভাবিক।[৪৯] ব্রিটিশ খ্রিস্টানরা যদি কোনও অ্যাংলো-স্যাক্সন অভিজাত বিজয়ীকে ধর্মান্তরিত করতে সমর্থ হয়েও থাকেন, তবে তা হয়েছিল একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর মধ্যেই। কারণ, খ্রিস্টীয় সপ্তম শতাব্দীতে অ্যাংলো-স্যাক্সন খ্রিস্টধর্মের পরবর্তীকালীন প্রতিষ্ঠার উপরেও ব্রিটিশ খ্রিস্টধর্মের প্রভাব ছিল অল্পই।[৫০]
পূর্ববর্তী গবেষকেদের মধ্যে অ্যাংলো-স্যাক্সন পৌত্তলিকতাবাদকে একটি প্রাচীনতর জার্মানীয় পৌত্তলিকতাবাদের থেকে ক্রমবিকাশের ফলে উদ্ভূত ধর্মবিশ্বাস হিসাবে দেখার ঝোঁক ছিল। এই ধারণা সম্পর্কে সাবধানতা অবলম্বন করতে বলে গবেষক মাইকেল বিন্টলি উল্লেখ করেন যে, এই "'জার্মানীয়ের পৌত্তলিকতাবাদ" কোনও দিনই একক "ur"-আকৃতির ছিল না", যা থেকে পরবর্তীকালে এর বিভিন্ন রূপভেদের উদ্ভব ঘটেছিল।[৫১]
অ্যাংলো-স্যাক্সন পৌত্তলিকতাবাদের অস্তিত্ব অপেক্ষাকৃত অল্প সময়ের মধ্যেই ছিল, খ্রিস্টীয় পঞ্চম থেকে অষ্টম শতাব্দীর মধ্যবর্তী কালে।[৪২] পৌত্তলিকতাবাদীরা নিরক্ষর ছিল বলে খ্রিস্টীয়করণের প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানা যায় খ্রিস্টীয় পুথিগত উৎস থেকেই।[৫২] ৫৯৬ খ্রিস্টাব্দে পোপ প্রথম গ্রেগরি অ্যাংলো-স্যাক্সনদের ধর্মান্তরিত করে রোমান ক্যাথলিক সম্প্রদায়ভুক্ত করতে একটি গ্রেগরিয়ান মিশন প্রেরণের আদেশ দেন।[৫৩] সেই মিশনের নেতা অগাস্টিন সম্ভবত ৫৯৭ খ্রিস্টাব্দে তদনীন্তন কেন্ট রাজ্যের অন্তর্গত থ্যানেটে অবতরণ করেন।[৫৩] খ্রিস্টধর্ম প্রথম দিকে কেন্টের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু আনুমানিক ৬২৫ থেকে ৬৪২ খ্রিস্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে এই ধর্মের "অধিক গুরুত্বপূর্ণ ও সুদূরপ্রসারী সম্প্রসারণ" ঘটে। সেই সময় পলিনাসের নেতৃত্বে নরদামব্রিয়ানদের নিকট প্রেরিত একটি মিশনের পৃষ্ঠপোষকতা করেন কেন্টিশ রাজা এয়াডবল্ড; নরদামব্রিয়ান রাজা অসওয়াল্ড আইরিশ সন্ন্যাসীদের থেকে একটি খ্রিস্টধর্ম-প্রচারক দলকে আমন্ত্রণ জানান; এবং সেই সঙ্গে মহাদেশীয় ধর্মপ্রচারক বারগেন্ডীয় ফেলিক্স ও ইতালীয় বিরিনাস পূর্ব অ্যাংলিয়ান ও গেউইসের রাজসভাকে ধর্মান্তরিত করেন।[৫৪] ধর্মান্তরকরণের পরবর্তী পর্বটি ছিল আনুমানিক ৬৫৩ থেকে ৬৬৪ খ্রিস্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়। এই সময় নরদামব্রিয়ানরা পূর্ব স্যাক্সন, মধ্য অ্যাংলিয়ান ও মার্সিয়ানদের ধর্মান্তরকরণ অভিযানের পৃষ্ঠপোষকতা করে।[৫৪] ধর্মান্তরকরণের শেষ পর্যাটি ছিল ৬৭০-এর দশক ও ৬৮০-এর দশক। এই সময় পৌত্তলিকতাবাদী শাসকদের দ্বারা শাসিত শেষ দুই রাজ্য সাসেক্স ও উইট দ্বীপের শাসকেরা খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত হন।[৫৪]
ইউরোপের অন্যান্য অঞ্চলে খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরকরণ সহজসাধ্য হয়েছিল অভিজাতবর্গের সহযোগিতায়।[৫৫] এই শাসকবর্গ সম্ভবত মহাদেশীয় ইউরোপের খ্রিস্টান রাজ্যগুলির বিপরীতে নিজেদের পৌত্তলিকতাবাদী এক অচল ধারণার বাহক মনে করেছিলেন।[৫৬] অ্যাংলো-স্যাক্সন ইংল্যান্ডের খ্রিস্টীয়করণের অগ্রগতির হার বিভিন্ন প্রকারের ছিল।[৪২] সরকারিভাবে ধর্মান্তরকরণ সম্পূর্ণ হতে সময় লেগেছিল প্রায় ৯০ বছর।[৫৭] অধিকাংশ অ্যাংলো-স্যাক্সন রাজ্যই সেখানকার প্রথম ধর্মান্তরিত রাজার মৃত্যুর পর পৌত্তলিক ধর্মে প্রত্যাবর্তন করেছিল।[৪২] যদিও ৬৮০-এর দশকের শেষের দিকে সমগ্র অ্যাংলো-স্যাক্সন জাতিই অন্ততপক্ষে নামমাত্র খ্রিস্টান হয়ে গিয়েছিল।[৫৪] ব্লেয়ার বলেছেন যে, অধিকাংশ অ্যাংলো-স্যাক্সনের কাছে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণের মাধ্যমে তাদের মনিবকে অনুসরণ করার "নৈতিক ও ব্যবহারিক অত্যাবশ্যকতা" ছিল একটি "শক্তিশালী উদ্দীপক"।[৫৮]
খ্রিস্টীয় সপ্তম শতাব্দীর পরবর্তী সময়ে অ্যাংলো-স্যাক্সনদের মধ্যে প্রাক্-খ্রিস্টীয় মতবিশ্বাসগুলি কতটা জনপ্রিয়তা বজায় রেখেছিল, তা নির্ধারণ করা কঠিন।[৫৯] থিওডোর’স পেনিটেনশিয়াল এবং ৬৯৫ খ্রিস্টাব্দে কেন্টের উইটরেড কর্তৃক জারি করা আইনে বলা হয়েছিল, যারা "দৈত্যদের" উদ্দেশ্যে পূজা উৎসর্গ করবে তারা শাস্তি পাবে।[২২] যদিও দুই অথবা তিন দশক পরেই বিড এমনভাবে লেখেন যেন অ্যাংলো-স্যাক্সন ইংল্যান্ড থেকে পৌত্তলিকতাবাদ নির্মূল হয়ে গিয়েছে।[৬০] এই পরবর্তী পর্যায়ে অন্যান্য গির্জা-অনুশাসনেও পৌত্তলিক কাল্টগুলির নিন্দাবাদ করা হয়নি। যা থেকে অনুমিত হয় যে, চার্চ-কর্তৃপক্ষ আর বজায় থাকা পৌত্তলিকতাবাদকে সমস্যা বলে মনে করত না।[৬০]
|তারিখ=
(সাহায্য)