আমির খসরু | |
---|---|
প্রাথমিক তথ্য | |
জন্মনাম | আবুল হাসান ইয়ামিন উদ-দিন খসরু |
উপনাম | তুতিয়ে রাসুল, মালিকুশ শুআরা, তুতিয়ে হিন্দ, শামসুল আশেকীন, বুরহানুল মাসাকীন, রূহে রাসুল, আশেকে সাদেক, সওতুল হিন্দ |
জন্ম | ১২৫৩ পাতিয়ালা, ভারত |
উদ্ভব | ভারতীয় |
মৃত্যু | ১৩২৫ দিল্লি |
ধরন | গজল, খেয়াল, কাওয়ালি |
পেশা | লেখক, কবি, গায়ক[১] |
পরিচিতির কারণ | দিবান-ই-আমির-খসরু |
আবুল হাসান ইয়ামিন উদ-দিন খসরু (১২৫৩ - ১৩২৫) (হিন্দি: अमीर खुसरो, উর্দু: ابوالحسن یمینالدین خسرو); একজন সুফি কবি। তিনি ফার্সি ও উর্দু দুই ভাষায় লিখেছিলেন। তিনি ছিলেন নিজামুদ্দিন আউলিয়ার আধ্যাত্মিক শিষ্য। তিনি কেবল কবি ছিলেন না, ছিলেন এক অনন্য গায়ক, তিনি প্রাচীনতম জ্ঞাত মুদ্রিত অভিধান ( খালীক-ই-বারি ) লিখেছিলেন। তাকে "কাওয়ালির জনক" বলে গণ্য করা হয়। তিনি প্রথম ভারত ও পাকিস্তানে গজল গানের প্রথা চালু করেন। তা আজও চলে আসছে।[২][৩] তিনি ফার্সি, আরবি এবং তুর্কি উপাদান অন্তর্ভুক্ত করে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতকে সমৃদ্ধ করে তোলেন। খসরুকে কখনও কখনও "ভারতের কণ্ঠস্বর" বা "ভারতের তোতাপাখি" (তুতই-ই হিন্দ) এবং "উর্দু সাহিত্যের জনক" বলা হয়।[৪][৫][৬][৭]
তিনি উত্তর প্রদেশের পাতিয়ালায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ছিল আমির সাইফ উদ-দিন মাহমুদ, একজন তুর্কি। তার মা ছিলেন এক রাজপুত কন্যা। তিনি আট বছর বয়েসে প্রথম কবিতা লেখেন। ১২৭১ সালে তার দিদা ১১৩ বছর বয়েসে মারা যাবার পর তিনি দুঃখ ভারাক্রান্ত হয়ে পড়েন। ১২৯৮ সালে তার মা ও ভাই মারা যান। এই ধাক্কাটি তার উপর বিভীষিকার মতো আছড়ে পড়ে। বলা হয় যে তাকে সঙ্গীত এই অবস্থা থেকে বেরোতে সাহায্য করে। তিনি সুলতান বলবানের সৈনিক হিসেবে যোগদান করেন। অত্যন্ত সম্মানিত রয়েল কোর্টের বিধানসভার আশ্রয়ে তিনি তার কবিতার দিকে মনোযোগ করেন। বলবানের পুত্র বুঘ্র খান তার গান শুনে মুগ্ধ হয়ে তাকে অসংখ্য সোনার মুদ্রা দিয়ে পুরস্কৃত করেন। তাকে তিনি বাংলার শাসনকর্তা বানান কিন্তু তিনি দিল্লিতে ফিরে আসেন। জালালুদ্দিন খিলজি ক্ষমতায় আসার পর তাকে "আমারত" উপাধিতে সম্মানিত করেন। তখন থেকেই তার নাম হয় " আমির খসরু "। পরে তিনি আলাউদ্দিন খিলজি ও তার পুত্রের জন্য বেশ কিছু কবিতা ও গান লেখেন।
১) তুতিয়ে রাসুল বা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের তোতা।
২)আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি-সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র ও অন্যতম প্রধান খলিফা। তাকে 'ভারতের তোতা ' উপাধি দেয়া হয়েছিল।
৩) মালিকুশ শুআরা (কবিদের বাদশা)। তিনি প্রায় চার লক্ষ পঙক্তি লিখেছেন। এখনও সেসবের প্রায় এক লক্ষ উপলভ্য আছে। তিনি কবিতা, পন্দ, কোতা, শের, মাসনুবী, লতীফা, ধাঁধাঁ, সঙ্গীতবিদ্যা, রাগ, বন্দনা, নাচ, ভাষাতত্ত্ব, যুদ্ধবিদ্যা রাজনীতি, দর্শন, ধর্মতত্ত্বসহ আরো অনেক শাস্ত্রে পারদর্শীতায় পূর্ণতার স্বাক্ষর রেখে গিয়েছেন।
৪) শামসুল আশেকীন (প্রেমিকগণের সূর্য)
৫) বুরহানুল মাসাকীন (অসহায়দের সহায়সম্বল)
৬) রূহে রাসূল
৭) আশেকে সাদেক ( সত্যিকার প্রেমিক)
৮) তরজুমানে সুলতানুল মাশায়েখ
৯) সুলতানে মানাবী
দিল্লির সুলতানরা সাধারণ মানুষদের সাথে যোগাযোগের জন্য তাকে একটি ভাষা তৈরি করতে বলেন। তারই ফল আজকের উর্দু ভাষা। ফার্সি, আরবি, তুর্কি ও সংস্কৃত ভাষায় পটু খসরু এই ভাষাগুলির সাথে খারিবলি ভাষা মিশিয়ে তৈরি করেন এই ভাষা। ফার্সি, আরবি, তুর্কির সাথে উর্দু ভাষাতেও তিনি প্রচুর লিখতেন।
তিনি ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে 'ধ্রুপদ' রীতি থেকে আলাদা 'খেয়াল' রীতির প্রবর্তন করেন। এছাড়া অনেক শাস্ত্রীয় নতুন রাগ রাগিণীর উদ্ভাবন করেন। তিনি তারানার উদ্ভাবন করেন। তিনি সঙ্গীতে এমন কিছু বস্তু যুক্ত করেছেন যেগুলো ব্যাতিত সঙ্গীতকে অসম্পূর্ণ মনে করা হয়।
৹ আমির খসরু তবলা ও সেতার আবিষ্কার করেন। শোনা যায় তিনি ভারতীয় বীণার থেকে সেতার তৈরিতে অনুপ্রাণিত হন।
৹ আমির খসরু ভারতীয় ও ইরানীয় সুরের সংমিশ্রণে কাওয়ালি গানের সূচনা করেন।
৹ তিনি বেশ কিছু শাস্ত্রীয় রাগের প্রবর্তক। যথাঃ রাগ ইয়ামান, রাগ বাহার, রাগ কাফী, রাগ শাহগড়ী, রাগ সাহানাসহ আরো অনেক।
~ হে খসরু, ভালোবাসার নদী ছুটছে অদ্ভুত দিকে। যে এতে ঝাঁপ দেয় সে ডুবে যায়, আর যে ডুবে যায়, সে পার হয়ে যায়।
~ প্রেমের পথে যে দুঃখ-কষ্ট তা সহ্য না করা পর্যন্ত দর্শনপ্রাপ্তি হয় না।[৮]
মাহবুবে এলাহী নিজামুদ্দীন আওলিয়ার মহাপ্রয়াণের মুহুর্তে তিনি সাম্রাজ্যের কাজে দিল্লির বাইরে ছিলেন। তিনি পীরের মহাপ্রয়াণের সংবাদ শ্রবণ করে চরম শোকে আহত হন। পীরের কবরে এসে ধুলায় গড়াগড়ি খেয়ে বিলাপ করতে থাকেন। নিজের সর্বস্ব ধন-সম্পদ গরিবদের দান করে দেন। পীরের কবরের পাশে দিবারাত্র যাপন করে আহাজারি করতে থাকেন। এইরূপে শোকে অধীর হয়ে তিনি নিজ পীরের ছয়মাস পর পরলোক গমন করেন। প্রতি বছর হিজরী বর্ষের শাওয়াল মাসের ১৮ তারিখ তার ওরশ মোবারক পালিত হয়।