ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের অপসারণ, যা সংক্ষেপে ব্রেক্সিট (ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বের হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তথা এক্সিট বোঝাতে ব্রেক্সিট শব্দটি ব্যবহার করা হয়) নামে পরিচিত।[১][২]
ব্রিটেন ১৯৭৩ সালে ইউরোপিয়ান ইকোনমিক কমিউনিটির সঙ্গে সংযুক্ত হয়। এর লক্ষ্য ছিল সুলভ মূল্যে ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য ও অভিন্ন বাজারসুবিধা। ১৯৯৩ সালে ইইউ নিজস্ব মুদ্রা, নীতিমালা, নাগরিকদের জন্য সীমানামুক্ত বিচরণসহ যুক্ত করাসহ অনেকগুলো পরিবর্তন আনে। কিন্তু অনেক ব্রিটিশ নাগরিক ব্রিটেনের ইইউ'র বিধি-নিষেধ মেনে চলা নিয়ে বেশ নাখোশ।[৩]
তাই ইইউ থেকে ব্রিটিশ জনগণের থেকে বেরিয়ে যাওয়ার বা ব্রেক্সিট নিয়ে ২০১৬ সালের ২৩ জুন এক গণভোট অনুষ্ঠিত হয়।
যুক্তরাজ্যে অভিবাসীদের আধিক্য দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে এ নিয়ে ব্রিটিশ নাগরিকদের মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি রয়েছে। ইইউ'র নিয়ম অনুযায়ী ইইউভুক্ত ২৮টি দেশের নাগরিক ভিসা ছাড়াই এক দেশ থেকে আরেক দেশে প্রবেশ করার অধিকার রাখে। আর সে কারণে ডেভিড ক্যামেরন সরকার তার প্রথম মেয়াদে ইইউ'র বাইরের দেশ থেকে আসা অভিবাসীদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে আনতে সক্ষম হলেও ইইউভুক্ত নাগরিকদের প্রবেশ ঠেকাতে পারেনি। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দ্বিতীয় মেয়াদে ইইউভুক্ত দেশের নাগরিকদের যুক্তরাজ্যে প্রবেশ নিরুৎসাহিত করতে চার বছরের জন্য সুবিধা ভাতা বন্ধ রাখার প্রস্তাব দেন ক্যামেরন। এতে খুশি হতে পারেননি ইইউভুক্ত দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা। তারা সদস্য দেশের নাগরিকদের সুবিধা ভাতা প্রদানে বৈষম্য করা হলে তা হবে ইইউর প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্যের সাথে সাংঘর্ষিক হবে বলে দাবি তোলেন। আর এ কারণেই যুক্তরাজ্যকে ইইউতে রাখা না রাখার ব্যাপারে প্রশ্ন তৈরি হয়।[৪]
ব্রেক্সিট প্রশ্নে ইইউভুক্ত নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিয়ে অভিবাসীদের সুবিধা সীমিত করাসহ চারটি সংস্কার প্রস্তাব দেন ক্যামেরন এবং পরবর্তীতে সে প্রস্তাব নিয়ে ক্যামেরনের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছান ইইউ নেতারা। ইইউ’র সঙ্গে সমঝোতার পর দেশে ফিরে ব্রেক্সিটের জন্য গণভোটের তারিখ ঘোষণা করেন ক্যামেরন এবং ২০১৬ সালের ২৩ জুন গণভোটে অনুষ্ঠিত হয়। ব্রিটেনের ইইউতে থাকা না থাকার প্রশ্নে দেশটির জনগণই ঐ গণভোটে চূড়ান্ত রায় দেন।
ইইউতে যুক্তরাজ্যের থাকার বিপক্ষে ৫২ শতাংশ ও পক্ষে ৪৮ শতাংশ ভোট পড়ে। ইইউতে থাকার পক্ষে লন্ডন ও স্কটল্যান্ড শক্তিশালী অবস্থান নিয়েছে। এই দুই অঞ্চলে ৬০ শতাংশের বেশি ভোট ইউরোপের পক্ষে। তবে ইংল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলে ইইউতে থাকার বিপক্ষে ভোট বেশি পড়েছে। এই গণভোটে ব্যাপক হারে ভোট দিয়েছেন ভোটাররা। এমনকি ব্রিটেনের ২০১৫ সালের সাধারণ নির্বাচনেও এত ভোট পড়েনি।[৫]
গণভোটে ইইউ এর সাথে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদের রায় পাওয়ার পর একই বছরের ২৪ জুন প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন ডেভিড ক্যামেরুন। ক্যামেরুনের পদত্যাগের পর যুক্তরাজ্যের ৭৬তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন টেরেসা মে।