ইন্দোনেশিয়া প্রদেশে বিভক্ত (ইন্দোনেশীয়: প্রভিনসি)। প্রদেশগুলি রিজেন্সি এবং শহর নিয়ে গঠিত। প্রদেশ, রিজেন্সি এবং শহরের নিজস্ব স্থানীয় সরকার এবং সংসদীয় সংস্থা রয়েছে।
স্থানীয় সরকারে ১৯৯৯ সালের ২২ নম্বর আইন কার্যকর করার পরে[১] (আইনটি ২০০৪ সালের ৩২ নং আইন অনুসারে সংশোধিত হয়েছিল[২]), স্থানীয় সরকারগুলি এখন তাদের নিজস্ব অঞ্চল পরিচালনায় বৃহত্তর ভূমিকা পালন করে। তবে বৈদেশিক নীতি, প্রতিরক্ষা (সশস্ত্র বাহিনী এবং জাতীয় পুলিশ সহ), আইন ব্যবস্থা, এবং আর্থিক নীতি জাতীয় সরকারের এক্তিয়ারে থাকে। ২০০৫ সাল থেকে স্থানীয় সরকার প্রধানগণ (গভর্নর, রিজেন্ট এবং মেয়র) জনগণের সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে থাকেন।[৩]
প্রদেশের প্রধান হলেন একজন গভর্নর (গুবের্নুর)। প্রতিটি প্রদেশের দেওয়ান পেরওয়াকিলান রাকিয়াত দেরাহ (ডিপিআরডি, আক্ষরিক অর্থে "আঞ্চলিক গণপ্রতিনিধি প্রতিনিধি সংসদ") নামে নিজস্ব আঞ্চলিক সংসদ রয়েছে। গভর্নর এবং প্রতিনিধি সদস্যরা পাঁচ বছরের মেয়াদে জনগনের সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হন।
ইন্দোনেশিয়া ৩৪ টি প্রদেশে বিভক্ত।[৪] ২০০০ সাল থেকে আটটি প্রদেশ তৈরি করা হয়েছে। পাঁচটি প্রদেশের বিশেষ মর্যাদা রয়েছে:
আচেহ: স্থানীয় সরকারে আচেহ এর বৃহত্তর ভূমিকা রয়েছে, এর নিজস্ব ইসলামী শরিয়া আইন (মুসলিম নাগরিকদের জন্য), পতাকা এবং প্রাদেশিক সংগীত রয়েছে, স্থানীয় রাজনৈতিক দলগুলিকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে এবং কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্ত বা আইন যা আচেহ প্রশাসনের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে তা অবশ্যই স্থানীয় সরকার বা আইনসভার উপর আরোপ করা হয়।[৫]
ইউগিয়াকার্তা বিশেষ অঞ্চল: ইউগিয়াকার্তার সুলতান হলেন কার্যত এবং বিধিসম্মত ইউগিয়াকার্তার গভর্নর তাই গভর্নর নির্বাচন করার সময় তাঁকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। বহু শতাব্দী ধরে ইউগিয়াকার্তার সুলতান অঞ্চলটিতে রাজত্ব করছেন।[৬] তবে ২০০০-এর দশকে কেন্দ্রীয় সরকার একটি আইন প্রস্তাব করেছিল যেখানে গভর্নর অন্যান্য প্রদেশের মতো জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হওয়া প্রয়োজন, যদিও সুলতানকে উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। ৩১ আগস্ট ২০১২ সাল থেকে ইউগিয়াকার্তা বিশেষ অঞ্চলের বিশেষ মর্যাদার বিষয়ে ২০১২ সালের ১৩ নং আইনটি কেন্দ্রীয় সরকার অনুমোদন দেয় এবং এই আইন অনুসারে ইউগিয়াকার্তা একটি প্রদেশ নয়, তবে প্রদেশ স্তরের অঞ্চল হিসাবে বিবেচিত হবে।[৭][৮][৯] ইউগিয়াকার্তা বিশেষ অঞ্চলে পাকুয়ালামানও অবস্থিত। পাকুয়ালামানের রাজপুত্রেরও বংশানুক্রম পদমর্যাদা রয়েছে এবং ইউগিয়াকার্তার উপ-গভর্নর হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
পাপুয়া: ২০০১ সাল থেকে স্থানীয় সরকারে বৃহত্তর ভূমিকা পালন করছে। গভর্নরকে অবশ্যই পাপুয়ান জাতির লোক হতে হবে।[১০]
পশ্চিম পাপুয়া: ২০০৩ সালে পাপুয়া কে বিভক্ত করে পশ্চিম পাপুয়া প্রদেশ তৈরি করা হয়। জাতীয় সরকার ২০০৮ সালের একটি প্রবিধান দ্বারা নিশ্চিত করেছে যে পাপুয়ায় যে বিশেষ স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থা বিদ্যমান তা পশ্চিম পাপুয়ার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।[১১]
জাকার্তা বিশেষ রাজধানী অঞ্চল: জাকার্তা ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী। জাকার্তার গভর্নর এই অঞ্চলের মেয়র এবং রিজেন্ট নিয়োগ ও বরখাস্ত করার ক্ষমতা রাখেন। স্থানীয় সরকারকে অন্যান্য দেশের অন্যান্য শহরগুলির সাথে সহযোগিতা করার অনুমতি দেওয়া হয়।[১২]
রিজেন্সি (কাবুপাতেন) এবং শহর (কোতা), যা সম্মিলিতভাবে বিতীয় দায়েরাহ তিংকাত নামে পরিচিত,[১৩] এটি প্রাদেশিক স্তরের নীচের স্থানীয় সরকার স্তর। তবে তারা প্রাদেশিক সংস্থার চেয়ে বড় আকারের বিকেন্দ্রীকরণ সুবিধা ভোগ করে যেমন পাবলিক স্কুল এবং জনস্বাস্থ্য সুবিধার ব্যবস্থা করা। ২০১৯ সালের হিসাব মতে ইন্দোনেশিয়ায় ৫১৪ টি দ্বিতীয় দায়েরাহ তিংকাত (কাপুপাতেন + কোতা) আছে।
রিজেন্সি এবং শহর উভয়ই একই স্তরের, যার নিজস্ব স্থানীয় সরকার এবং আইনসভা রয়েছে। রিজেন্সি এবং শহরের মধ্যে জনমিতি, আকার এবং অর্থনীতিতে পার্থক্য রয়েছে।
সাধারণত রিজেন্সি শহরের চেয়ে বৃহত্তর অঞ্চল নিয়ে গঠিত হয়ে থাকে এবং শহরে অকৃষি অর্থনৈতিক কার্যক্রম হয়ে থাকে। রিজেন্সিটির প্রধান হলেন রিজেন্ট (বুপাতি), আর শহরের প্রধান হচ্ছেন মেয়র (ওয়ালি কোতা)। রিজেন্ট বা মেয়র এবং প্রতিনিধি পরিষদের সদস্যরা জনগণের ভোটের মাধ্যমে ৫ বছরের জন্য নির্বাচিত হন।
রিজেন্সি এবং শহরকে জেলায় বিভক্ত করা হয়েছে, যার বিভিন্ন প্রকরণ রয়েছে:
কেকামাতান এর প্রধান হচ্ছে কামাত। কামাত হচ্ছে একজন সরকারি কর্মচারী এবং রিজেন্ট (রিজেন্সিতে) বা মেয়রের (শহরে) কাছে দায়বদ্ধ থাকে। কেকামাতান ইন্দোনেশিয়ার বেশিরভাগ অংশে পাওয়া যায়।[১৪]
ডিস্ট্রিক এর নেতৃত্বে থাকেন কেপালা ডিস্ট্রিক। ডিস্ট্রিক কেবলমাত্র পাপুয়া এবং পশ্চিম পাপুয়া প্রদেশে পাওয়া যায় এবং এটি ইন্দোনেশিয়ার অন্যান্য অংশের কেকামাতানের সমতুল্য।[১৫]
কাপানেউন (রিজেন্সির উপ-বিভাগ) এর প্রধান হলেন পানেয়ু এবং কেমানত্রেন (শহরের উপবিভাগ) এর প্রধান হলেন মান্ত্রি পামং প্রজা।[১৬][১৭] এই পদগুলি ইউগিয়াকার্তা বিশেষ অঞ্চলে ব্যবহৃত হয়, এবং এটি ইন্দোনেশিয়ার অন্যান্য অংশের কেকামাতানের সমতুল্য।
জেলাগুলি আবার দেসা (গ্রাম) বা কেলুরাহান (নগর সম্প্রদায়) এ বিভক্ত। দেসা এবং কেলুরাহান উভয়ই একই বিভাগীয় স্তরের, তবে দেসাকেলুরাহানের চেয়ে স্থানীয় বিষয়ে বেশি ক্ষমতা ভোগ করে। তবে আচেহ প্রদেশে এর ব্যতিক্রম দেখা যায়, সেখানে জেলাকে প্রথমে মুকিম এ বিভক্ত করা হয়েছে তারপর এক গ্যাম্পুং এ বিভক্ত করা হয়েছে।
দেসা
ইন্দোনেশীয় ভাষায় ইংরেজির মতো একটি গ্রামে (দেসা) গ্রামীণ সংজ্ঞা রয়েছে। প্রশাসনিক বিভাগগুলির প্রসঙ্গে দেসাকে এমন একটি সংস্থা হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা যায় যা এলাকার স্বীকৃত স্থানীয় ঐতিহ্য অনুসারে স্থানীয় মানুষের উপর অধিকার রয়েছে। দেসার প্রধান হলেন "গ্রামের প্রধান" (ইন্দোনেশীয়: কেপালা দেসা), যিনি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন।
বেশিরভাগ ইন্দোনেশীয় গ্রামগুলি "দেসা" শব্দটি ব্যবহার করে তবে কিছু অঞ্চলে অন্যান্য শব্দ ব্যবহার করা হয়:
ল্যাম্পুং (কেন্দ্রীয় ল্যাম্পুং, মেসুজি, তুলাং বাওয়াং, ওয়ে কানান এবং পশ্চিম তুলাংবাওয়াং রিজেন্সিগুলিতে)
পূর্ব কালিমন্তান (বেরু এবং পশ্চিম কুতাই রিজেন্সিতে)
পাপুয়া
পশ্চিম পাপুয়া
প্রিংসেউ তে পেকোন, তাঙ্গামুস এবং পশ্চিম ল্যাম্পুং রিজেন্সি (ল্যাম্পুং)
বালিতে "দেসা" এর দুটি রূপ রয়েছে যথা দেসা দিনাস (সেবা গ্রাম) এবং দেসা আদাত (সাংস্কৃতিক গ্রাম)। দেসা দিনাস প্রশাসনিক কার্যাদি পরিচালনা করে, অন্যদিকে দেসা আদাত ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ক্রিয়াকলাপ নিয়ে কাজ করে।
তোরাজা ও উত্তর তোরাজা অঞ্চলের লেম্বাং (দক্ষিণ সুলাওয়েসি)
যদিও দেসা এবং কেলুরাহান জেলার অন্তর্ভুক্ত, তবে কেলুরাহান দেসার চেয়ে কম স্বায়ত্তশাসন ভোগ করে। কেলুরাহানের প্রধান হলেন লুরাহ। লুরাহ সরকারী কর্মচারী, তারা সরাসরি কামাত এর নিকট দায়বদ্ধ থাকে।
পরিসংখ্যান
নিচের সারণীতে ইন্দোনেশিয়ার বর্তমান প্রদেশ, রিজেন্সি এবং শহরের সংখ্যা দেওয়া হয়েছে।
↑"The Governing of Aceh"। Jaringan Komunitas Masyarajat adat Aceh (pdf)। USAID। আগস্ট ১, ২০০৬। Chapter IV, Article 8। ৭ আগস্ট ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ ডিসেম্বর ২০১৯।
↑"Perubahan Nomenklatur Kelembagaan Kabupaten/Kota di DIY" (ইন্দোনেশীয় ভাষায়)। Pemerintah Daerah Istimewa Yogyakarta (Regional Government of the Special Region of Yogyakarta)। ২ ডিসেম্বর ২০১৯। ২০ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ জানুয়ারি ২০২০।