এডমন্ড পার্সিভাল হিলারি KG ONZ KBE | |
---|---|
জন্ম | Edmund Percival Hillary ২০ জুলাই ১৯১৯ |
মৃত্যু | ১১ জানুয়ারি ২০০৮ | (বয়স ৮৮)
মৃত্যুর কারণ | হৃৎপেশীর রক্তাভাবজনিত মৃত্যু |
দাম্পত্য সঙ্গী | লুই মেরি রোজ (বি. ১৯৫৩–১৯৭৫) জিন মালগ্রিউ (বি. ১৯৮৯–২০০৮) |
সন্তান | পিটার (জ. ১৯৫৪) সারাহ (জ. ১৯৫৫) বেলিন্ডা (১৯৫৯-১৯৭৫) |
পিতা-মাতা | পার্সিভাল অগস্টাস হিলারি গার্ট্রুড হিলারি |
স্বাক্ষর | |
স্যার এডমন্ড পার্সিভাল হিলারি (জন্ম জুলাই ২০, ১৯১৯; মৃত্যু: জানুয়ারি ১১- ২০০৮) নিউজিল্যান্ডের একজন পর্বতারোহী এবং অভিযাত্রী ছিলেন। ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৯শে মে তিনি ব্রিটিশ অভিযাত্রী দলের অংশ হিসেবে নেপালী পর্বতারোহী শেরপা তেনজিং নোরগের সাথে এভারেস্ট পর্বত শৃঙ্গ আরোহণ করেন।
বিদ্যালয়ে শিক্ষালাভের সময় থেকেই পর্বতারোহণে উৎসাহী হিলারি ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দে মাউন্ট অলিভিয়ার শৃঙ্গে আরোহণের মাধ্যমে তার প্রথম উল্লেখযোগ্য শৃঙ্গজয় করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি রয়্যাল নিউজিল্যান্ড এয়ার ফোর্সে যোগদান করেন। ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দের ব্রিটিশদের এভারেস্ট পর্বত অভিযানের পূর্বে তিনি ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে চো ওইয়ু শৃঙ্গে আরোহণের প্রচেষ্টা করে ব্যর্থ হন। কমনওয়েলথ ট্রান্স-অ্যাটলান্টিক অভিযানের অংশ হিসেবে তিনি ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে দক্ষিণ মেরু পৌঁছন। পরবর্তীকালে তিনি উত্তর মেরু অভিযান করলে বিশ্বের প্রথম ব্যক্তি হিসেবে পৃথিবীর দুই মেরু ও সর্বোচ্চ শৃঙ্গে পদার্পণের দুর্লভ কৃতিত্ব অর্জন করেন।
এভারেস্ট আরোহণের পর হিলারি নেপালের শেরপাদের উন্নতিকল্পে তার জীবনের অধিকাংশ সময় অতিবাহিত করেন। তিনি হিমালয়ান ট্রাস্ট নামক একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করে তাদের জন্য বিদ্যালয় ও হাসপাতাল নির্মাণ করেন।
এডমন্ড হিলারি ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দের ২০শে জুলাই নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ছিল পার্সিভাল অগস্টাস হিলারি ও মাতার নাম ছিল গার্ট্রুড ক্লার্ক।[১] হিলারির পিতামহ ও মাতামহ ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে ইংল্যান্ডের ইয়র্কশায়ার থেকে এসে নিউজিল্যান্ডের ওয়াইরোয়া নদী তীরে বসতি স্থাপন করেন।[২] গ্যালিপলির যুদ্ধে অংশগ্রহণের কারণে পার্সিভালকে টুয়াকাউ অঞ্চলে জমিদান করা হলে তারা সপরিবারে সেখানে চলে আসেন।[৩]
হিলারি টুয়াকাউ প্রাথমিক বিদ্যালয় ও অকল্যান্ড গ্রামার স্কুল থেকে শিক্ষালাভ করেন।[৩][৪] ষোল বছর বয়সে বিদ্যালয় থেকে মাউন্ট রুয়াপেহু পর্বতে ভ্রমণের সময় তিনি পর্বতারোহণের প্রতি উৎসাহিত হন।[৫] তিনি অকল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অঙ্ক ও বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক হন। ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি দক্ষিণ আল্পস পর্বতমালার মাউন্ট অলিভিয়ার পর্বতশৃঙ্গে আরোহণ করার মাধ্যমে তার জীবনের প্রথম শৃঙ্গজয় করেন।[৩]
তার ভ্রাতা রেক্সের সাথে হিলারি গ্রীষ্মকালে মৌমাছি পালক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন[১][৬], যার ফলে শীতকালে তিনি পর্বতারোহণের জন্য প্রয়োজনীয় সময় অতিবাহিত করতে পারেন।[৭] তার মৌমাছি পালনে আগ্রহের ফলে তিনি মাইকেল অ্যারিটনকে মৌচাকের আকৃতির একটি স্বর্ণাভ ভাস্কর্য্য নির্মাণের অনুরোধ করেন, যা পরবর্তীকালে তার বাগানে স্থাপন করা হলে মৌমাছিরা এই ভাস্কর্য্যটিকে মৌচাক হিসেবে ব্যবহার শুরু করে।[৮] হিলারি এই সময় রেডিয়ান্ট লিভিং ট্র্যাম্পিং ক্লাব নামক একটি সংস্থায় যোগ দেওয়ার পর এই ক্লাবের সাথে উইটাকার পর্বতমালায় ভ্রমণের আনন্দ উপভোগ করতেন।[৯]
১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দের ৩০শে জানুয়ারি হ্যারি এয়ার্স ও মিক সুলিভানের নেতৃত্বে হিলারি ও রুথ অ্যাডামস নিউজিল্যান্ডের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ আওরাকি আরোহণ করেন।[১০] এছাড়া ১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দে এরিক শিপটনের নেতৃত্বে ব্রিটিশদের সন্ধানী এভারেস্ট অভিযানেও হিলারি অংশগ্রহণ করেন। ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে এরিক শিপটনের নেতৃত্বে চো ওইয়ু শৃঙ্গ অভিযানে হিলারি অংশগ্রহণ করেন।[১১] নেপাল থেকে রাস্তা না পাওয়ার কারণে হিলারি ও জর্জ লো নুপ গিরিবর্ত্ম পেরিয়ে তিব্বত প্রবেশ করে উত্তর দিক থেকে দ্বিতীয় শিবির পৌঁছন।[১২]
১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে জন হান্টের নেতৃত্বে ব্রিটিশদের এভারেস্ট পর্বত অভিযানে হিলারি অংশগ্রহণ করেন। এই অভিযানে দশ হাজার পাউন্ড মাল বহন করার জন্য ৩৬২ জন মালবাহক ও ২০ জন শেরপা সহ চার শতাধিক মানুষ অংশ গ্রহণ করেছিলেন।[১৩] মার্চ মাসে বেস ক্যাম্প তৈরী করে ধীরে ধীরে দলটি ৭,৮৯০ মিটার (২৫,৮৮৬ ফু) উচ্চতায় আরোহণ করে সাউথ কলে তাদের অন্তিম শিবির স্থাপন করেন। ২৬শে মে টম বুর্দিলঁ ও চার্লস ইভান্স শৃঙ্গজয়ের প্রচেষ্টা করে কিন্তু ইভান্সের অক্সিজেন সরবরাহকারী ব্যবস্থায় গোলোযোগ দেখা দিলে তারা শৃঙ্গ থেকে ৩০০ ফুট নিচে থেকে ফিরে আসতে বাধ্য হয়।[১৪] এরপর দলপতি হান্ট তেনজিং নোরগে ও এডমন্ড হিলারিকে শৃঙ্গজয়ের চেষ্টা করতে নির্দেশ দেন। ২৮শে মে তারা আং ন্যিমা, আলফ্রেড গ্রেগরি ও জর্জ লোর সহায়তায় তারা ৮,৫০০ মিটার (২৭,৮৮৭ ফু) উচ্চতায় তাদের শিবির স্থাপন করলে ন্যিমা, গ্রেগরি ও লো নিচে ফিরে যান। হিলারির জুতো সারা রাত তাঁবুর বাইরে থাকায় পরদিন সকালে সেগুলি জমে গেলে দুই ঘণ্টা ধরে দুইজনে মিলে চেষ্টা করে সেগুলিকে পূর্বাবস্থায় নিয়ে আসেন ও ত্রিশ পাউন্ড ওজনের সরঞ্জাম নিয়ে তারা শৃঙ্গ আরোহণের চেষ্টা শুরু করেন।[১৫] শৃঙ্গের ঠিক নিচে চল্লিশ ফুটের খাড়া একটি পাথরের দেওয়ালে একটি খাঁজ ধরে এডমন্ড হিলারি ও তাকে অনুসরণ করে তেনজিং আরোহণ করে সকাল ১১:৩০ মিনিটে এভারেস্ট পর্বত শৃঙ্গ জয় করেন।[১৬][১৭] পর্বতশৃঙ্গে তারা পনেরো মিনিট ছিলেন। এই সময় হিলারি তেনজিংয়ের আলোকচিত্র তোলেন[১৮][১৯]। এই আলোকচিত্রে তেনজিংকে তার বরফ-কুঠার তুলে ধরে থাকতে দেখা যায়। তার বরফ-কুঠারে জাতিসংঘ, ইংল্যান্ড, নেপাল ও ভারতের পতাকা লাগানো ছিল। তেনজিংয়ের বর্ণনা অনুসারে হিলারি কোন কারণে নিজের আলোকচিত্র তোলাতে অস্বীকৃত হন।[২০][২১][২২] তাদের শৃঙ্গজয়ের প্রমাণস্বরূপ শৃঙ্গ থেকে তারা নিচের পর্বতগাত্রের আলোকচিত্রও তোলেন।[১৯] শৃঙ্গজয়ের ফলশ্রুতিতে পরবর্তীকালে তাদের দুইজনকে ঘিরে নেপাল ও ভারতে জনমানসে প্রচণ্ড উচ্ছাস তৈরী হয়। হিলারি ও হান্ট নাইট উপাধিতে ভূষিত হন[২৩] এবং তেনজিংকে জর্জ পদক প্রদান করা হয়।[২৪][২৫][২৬]
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়; time
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়; natlgeo
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি