এমিল ডুর্খেইম | |
---|---|
Emile Durkheim | |
জন্ম | এপিনাল, ফ্রান্স | ১৫ এপ্রিল ১৮৫৮
মৃত্যু | নভেম্বর ১৫, ১৯১৭ | (বয়স ৫৯)
শিক্ষা | ইকোলি নরম্যালি সুপিরিয়র |
পরিচিতির কারণ | সমাজবিজ্ঞান বিধিবদ্ধকরণ |
দাম্পত্য সঙ্গী | ডুর্খেইম লুই ড্রাইফ্রাস |
সন্তান | মেরী, আঁন্দ্রে |
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন | |
কর্মক্ষেত্র | দর্শন, সমাজবিজ্ঞান, শিক্ষা, নৃবিজ্ঞান, ধর্মবিদ্যা |
প্রতিষ্ঠানসমূহ | প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়, বোঁরদা বিশ্ববিদ্যালয়, সোঁরবো বিশ্ববিদ্যালয় |
এমিল ডুর্খেইম (ফরাসি: Émile Durkheim; ১৫ এপ্রিল ১৮৫৮ – ১৫ নভেম্বর ১৯১৭) ছিলেন একজন ফরাসি সমাজবিজ্ঞানী। তিনি সমাজবিজ্ঞানকে একটি রৌপ উচ্চশিক্ষায়তনিক বিষয় হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। এমিল ডুর্খেইম, ম্যাক্স ওয়েবার ও কার্ল মার্ক্সকে একত্রে সামাজিক বিজ্ঞানের মূল স্থপতি ও সমাজবিজ্ঞানের জনক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।[১][২]
এমিল ডুর্খেইম উত্তর-পূর্ব ফ্রান্সের লোরেইন প্রদেশের অন্তর্গত 'এপিনাল' নামক একটি গ্রামে এক ইহুদি পরিবারে ১৮৫৮ সালের ১৫ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা একজন ইহুদি রাব্বী ছিলেন। রাব্বী পরিবারের সন্তান হওয়ায় তিনি অল্প বয়সেই রাব্বী হয়ে যান। যখন তাঁর বয়স মাত্র তেরো, তখনই তিনি পুরোপুরি ইহুদি ধর্মের অনুগামী হন। এ সময় একজন ক্যাথলিক মহিলা শিক্ষিকার সংস্পর্শে এসে অতিন্দ্রীয়বাদী প্রভাবে সাময়িকভাবে ক্যাথলিক ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হন। তবে অনতিবিলম্বে তিনি সবরকম ধর্মীয় সংযোগ সম্পর্ক থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন এবং পারিবারিক ঐতিহ্য প্রত্যাখ্যান করে একজন অজ্ঞেয়বাদীতে (Agnotic) পরিণত হন। এরপর ডুর্খেইম আজীবন ধর্ম সম্পর্কিত শিক্ষার প্রতি আগ্রহশীল ছিলেন বটে, কিন্তু ধার্মিক হিসেবে নয়। অর্থাৎ, অধিবিদ্যাগত নয়, একাডেমিক। সমকালীন ফ্রান্সের স্বনামধন্য উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান 'ইকোলি নরম্যালি সুপিরিয়র (Ecoleormale superieure) থেকে দর্শনশাস্ত্রে ডিগ্রি লাভ করেন। ১৮৮২ থেকে ১৮৮৭ সাল পর্যন্ত তিনি প্যারিসের বিভিন্ন প্রাদেশিক স্কুলে দর্শন বিষয়ে শিক্ষকতা করেন। এ সময়ে জার্মান ভাষাভাষী বিভিন্ন সমাজতত্ত্ববিদদের কাজকর্মের উপর বেশ কিছু সমালোচনামূলক প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। এর ফলে তিনি সামাজিক দার্শনিক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। ১৮৮৭ সালে তিনি বোঁরদো বিশ্ববিদ্যালয়ের (University of Bordeaux) অধ্যাপক পদে যোগদান করেন। ১৯০২ সালে বোঁরদো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্যারিসের সোঁরবো (Sorbonne) বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমে 'Charge de course' হিসেবে নিযুক্ত হন। তারপর ১৯০৬ সালে সমাজতত্ত্ব ও শিক্ষা বিজ্ঞানের অধ্যাপক পদে নিযুক্ত হন। ১৯১৩ সালে তাঁর পদটি কেবল সমাজতত্ত্বের অধ্যাপকের পদ হিসেবে চিহ্নিত হয়। তিনি আমৃত্যু সেখানে অধ্যাপনা করেন।
বোঁরদো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পদে নিযুক্ত হওয়ার কিছুকালের মধ্যেই ডুর্খেইম লুই ড্রাইফ্রাস (Louise Dreyfus) নামে ঐতিহ্যবাদী এক ইহুদি পরিবারের মহিলাকে বিয়ে করেন। ডুর্খেইমের পারিবারিক জীবন সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায় না। তবে তাঁর দুই সন্তান ছিল নাম- মেরী (Marie) ও আঁন্দ্রে (Andre)। তাঁর একমাত্র পুত্র আঁদ্রে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে মারাত্মকভাবে আহত হয়ে বুলগেরিয়ার একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। এই চরম দুঃসংবাদটি ডুর্খেইম জ্ঞাত হন ১৯১৫ সালের বড়দিনের ঠিক আগে। পুত্রের এই চিরবিয়োগ ব্যাথা এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তাঁর অনেক মেধাবী ছাত্র, সহকর্মী ও বন্ধু-বান্ধব এবং আত্মীয়-পরিজনের প্রাণ হারানোর শোক তাঁকে মানসিক যন্ত্রণায় হতাশাগ্রস্ত করে তোলে। এর বছর দু'য়ের মধ্যেই ঊনষাট বছর বয়সে ১৯১৭ সালের ১৫ নভেম্বর এমিল ডুর্খেইম পরলোক গমন করেন।
ফরাসি দার্শনিক অগাস্ট কোঁৎ সমাজবিজ্ঞানের জন্মদাতা, কিন্তু এমিল ডুর্খেইম ফরাসি সমাজবিজ্ঞানের জনক বলে অভিহিত। ব্যক্তিগত জীবনে এমিল ডুর্খেইম ছিলেন একজন দর্শনশাস্ত্রের অধ্যাপক। সমকালীন ইউরোপের ঘটনাবলির দ্বারা তিনি বিশেষভাবে প্রভাবিত হন এবং সমাজব্যবস্থার উন্নতি সাধনের উদ্দেশ্যে সমাজতাত্ত্বিক আলোচনায় আত্মনিয়োগ করেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল সমাজব্যবস্থার সামগ্রিক উন্নতি সাধন। এ ফরাসি সমাজবিজ্ঞানীর কাছে সমাজতত্ত্ব উন্নত মূল্যবোধের উৎস হিসেবে প্রতিপন্ন হয়েছে। এই দৃষ্টবাদী চিন্তাবিদ বিশ্বাস করতেন যে, তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি ও পন্থা- পদ্ধতির মাধ্যমে এ সত্য উদঘাটিত হয়েছে যে, সবকিছুই সমাজের মধ্যে বর্তমান। সমাজতাত্ত্বিক বিষয়াদিতে এ ফরাসি সমাজবিজ্ঞানীর গবেষণা ও মতামতের মধ্যেই তাঁর মনীষা ও বিচক্ষণতার পরিচয় নিহিত আছে। সমাজতত্ত্বের অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর গবেষণা ও ধ্যান-ধারণার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর বিচক্ষণতার ব্যাপ্তি ও গভীরতা সম্পর্কে সহজেই অনুমান করা যায়। আধুনিক সমাজবিজ্ঞানের আলোচনায় তাঁর অবদান বহুমুখী ও মৌলিক প্রকৃতির।
মৃত্যুর পর প্রকাশিত: