ঔষধ বা ড্রাগ হলো এমন রাসায়নিক দ্রব্য যা প্রয়োগে প্রাণিদেহের স্বাভাবিক ক্রিয়া প্রভাবান্বিত হয়[১] এবং যা দ্বারা রোগ নাশ হয় বা প্রতিকার হয়, বা পীড়া ও ক্লেশ নিবারণ হয়; ভেষজ দাওয়াই এর অন্তর্ভুক্ত।[২] ঔষধ মূলত দুই প্রকার: থেরাপিউটিক (রোগনিরাময়কারী) এবং প্রোফাইলেকটিক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (FDA) সংজ্ঞার্থ অনুসারে: "দ্রব্যসমূহ যা রোগ নির্ণয়ে, আরোগ্যে (cure), উপশমে (mitigation), প্রতিকারে (treatment), অথবা প্রতিরোধে (prevention) ব্যবহার করা হয়" এবং "দ্রব্যসমূহ (খাদ্য বাদে) যা মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীর শারীরিক গঠন বা ক্রিয়াকলাপকে প্রভাবিত করতে পারে" তাদের ঔষুধ বলা হয়।[৩] তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ওষুধের সংজ্ঞা এমন কঠোরভাবে আরোপ করে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুসারে: "ঔষধ" শব্দটির বিভিন্ন রকম ব্যবহার হতে পারে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে ঔষধ এমন দ্রব্য যার আরোগ্য (cure) এবং প্রতিরোধের (prevention) ক্ষমতা আছে অথবা যা শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা বজায় রাখতে সহায়তা করে। আবার ফার্মাকোলজিতে ঔষধ এমন রাসায়নিক দ্রব্য যা প্রাণিদেহের অথবা কলার জৈবরাসায়নিক এবং শারীরিক প্রক্রিয়াকে পরিবর্তন করতে সক্ষম। আবার সাধারণের মুখে ড্রাগ শব্দটির অর্থ অবৈধ দ্রব্য।[৪] যেমন: হেরোইন, ফেনসিডিল, মারিজুয়ানা, ইত্যাদি।
রোগের প্রতিষেধক ও প্রতিরোধককেই সচরাচর ঔষধ হিসাবে অভিহিত করা হলেও প্রচলিত আইনে এর অর্থ ব্যাপকতর। যেমন, ব্রিটিশ আমলে প্রণীত এবং অদ্যাবধি বাংলাদেশে কার্যকর ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দের ড্রাগ অ্যাক্ট বা ঔষধ আইন [৫] অনুযায়ী ঔষধের আইনগত সংজ্ঞার্থ নিম্নরূপ:[৬][৭]
Drug শব্দটি প্রাচীন ফরাসি শব্দ "drogue" থেকে উদ্ভূত বলে অনুমান করা হয়। কারণ এই শব্দটি থেকে পরবর্তীতে ওলন্দাজ ভাষায় "droge-vate" শব্দটি আসে। এ শব্দটির অর্থ 'শুকনো পাত্র' যেখানে ঔষধি গাছ সংরক্ষিত থাকে।[৮]
বাংলা ঔষধ শব্দটি সংস্কৃত ভাষা থেকে আগত। অর্থাৎ এটি তৎসম শব্দ। ঔষধ শব্দটিকে বিশ্লেষণ করলে দাঁড়ায়: ওষধি+অ(অণ্)। তবে ওষধি শব্দটির অর্থ যে গাছ একবার ফল দিয়েই মারা যায়।[২] তবে সংস্কৃতে শব্দটি প্রচলিত অর্থেই ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। যেমন যজুর্বেদের মাধ্যন্দিন শাখার ১২ অধ্যায়ের ৮০ সংখ্যক সূক্তটিতে তার প্রমাণ মেলে:
"ওষধয়ঃ সমবদন্ত সোমেন সহ রাজ্ঞা।
যস্মৈ কৃনোতি ব্রাহ্মণস্তং রাজানং পারয়ামাসি"— যজুর্বেদ[৯]
যে উদ্দেশ্যেই ব্যবহৃত হোক না কেন, ঔষধ সাধারণত শরীরের নির্দিষ্ট কিছু স্থানে দেয়া হয়ে থাকে। এগুলোকে ঔষধের রুট অফ অ্যাডমিনিস্ট্রেশান (routes of administration) বলা হয়। কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রুট হল:[৭][১০]
ঔষধ জীবদেহের উপর কী ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে সে সম্পর্কে বিজ্ঞানের বিশেষ শাখা ফার্মাকোলজি আলোচনা করে। এখানে দেখানো হয়: বিভিন্ন মাত্রায় (dose) ঔষধ একাধারে রোগনিরাময়কারী (therapeutic) আবার বিষাক্তও (toxic) হতে পারে। ফার্মাকোলজির দুইটি শাখা:
রাসায়নিক দিক থেকে ঔষধ একটি ক্রিয়াশীল পদার্থ। তাই বলা হয়, নির্দিষ্ট মাত্রায় ও নির্দিষ্ট রোগে ব্যবহৃত না হলে ঔষধ পরিণত হয় বিষে। তা কেড়ে নিতে পারে একাধিক জীবন। ঔষধের যৌক্তিক ব্যবহার তাই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে।[৭]
ঔষধ যদি কোনো রোগ নির্ণয়ে (diagnosis), আরোগ্যে (cure), প্রতিকারে (treatment), অথবা প্রতিরোধে (prevention) নির্দিষ্ট ডোসেজ ফরমে (dosage form) ব্যবহার করা হয় তখন তাকে বলা হয় পথ্য (medicine/medication)।[১৩][১৪]
ঔষধের বিনোদনমূলক ব্যবহার (recreational drug use) বলতে বোঝায়, ঔষধকে বিনোদনের উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যবহার করা। কোনো নিয়ন্ত্রিত দ্রব্যকে (controlled substance) কারো মানসিক অবস্থা পরিবর্তনের জন্য ডাক্তারের পরামর্শ বা পর্যবেক্ষণ ছাড়া ব্যবহার করা হলে সেটি তার বিনোদনমূলক ব্যবহার হবে।[১৫] সাধারণত অ্যালকোহল, নিকোটিন (তামাক), ক্যাফেইন (চা, কফি) এবং জাতিসংঘের সিংগেল কনভেনশন অফ নারকোটিক ড্রাগস এবং কনভেনশন অফ সাইকোট্রপিক সাবস্টানসেস অর্ন্তগত ঔষধসমূহের বিনোদনমূলক ব্যবহার রয়েছে।[১৬] সাইকোফার্মাকলোজিস্ট রোনাল্ড কিথ সিয়েগেল অবশ্য একে তুলনা করেন মানুষের অপর তিনটি উদ্যমের সাথে: ক্ষুধা, তৃষ্ণা এবং আশ্রয়। তাই, তার মতে, এই ঔষধসমূহের প্রতি তীব্র এবং স্থায়ী আসক্তি এগুলোকে ব্যবহারকারীর কাছে খাদ্য, পানি এবং আবাসস্থলের মতো গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।[১৭]
|origmonth=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)
|আইএসবিএন=
এর মান পরীক্ষা করুন: invalid prefix (সাহায্য)। অজানা প্যারামিটার |origmonth=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)
|origmonth=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)
|আইএসবিএন=
এর মান পরীক্ষা করুন: length (সাহায্য)। অজানা প্যারামিটার |origmonth=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)