কৃষ্ণমৃত্তিকা | |
---|---|
চেরনোজেম | |
ব্যবহার | ডব্লিউআরবি, অন্যান্য |
ডব্লিউআরবি কোড | সিএইচ |
পরিলেখ | এএইচবিসি |
উৎস উপাদান | লোয়েস |
জলবায়ু | মহাদেশীয় আর্দ্র |
কৃষ্ণমৃত্তিকা (চেরনোজেম, অর্থ: "কালো মাটি")[১] এক ধরনের উর্বর কালো রঙের মাটি যা প্রচুর পরিমাণে হিউমাস[২] (৪% থেকে ১৬%) এবং উচ্চ মাত্রায় ফসফরিক এসিড, ফসফরাস ও অ্যামোনিয়া ধারণ করে। কৃষ্ণমৃত্তিকা খুব উর্বর এবং এর উচ্চ আর্দ্রতা সংরক্ষণের ক্ষমতা কৃষিক্ষেত্রে উচ্চ ফলনে সহায়ক। কৃষ্ণমৃত্তিকা ওয়ার্ল্ড রেফারেন্স বেইস অফ সয়েল রিসোর্সেস (ডব্লিউআরবি) এর একটি তালিকাভুক্ত মৃত্তিকা শ্রেণি।
"চেরনোজেম" শব্দটি রাশিয়ান শব্দ "চেরনায়া" (অর্থ: কালো) এবং "জেমলিয়া" (অর্থ: মাটি) থেকে উদ্ভূত। জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ হওয়ায় এই মাটির রং কালো। কৃষ্ণমৃত্তিকার উপরের স্তর হিউমাসসমৃদ্ধ, এর নিচের স্তরের মাটিতে রয়েছে ফসফরিক এসিড, অ্যামোনিয়া ও ক্যালসিয়াম আয়ন। এধরনের মাটি খুবই উর্বর, সাধারণত এতে লম্বা স্টেপি ঘাস বেশি জন্মে। ১৮৮৩ সালে ইউরোপীয় রাশিয়ায় লম্বা ঘাসে আচ্ছাদিত প্রান্তর ও বিস্তীর্ণ তৃণভূমিতে রাশিয়ান ভূতাত্ত্বিক ভ্যাসিলে ডুকোচেভ প্রথম কৃষ্ণমৃত্তিকা শনাক্ত করেন।
খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) এর শ্রেণিবিন্যাসে অন্তর্ভুক্ত ৩০টি মৃত্তিকা শ্রেণির মধ্যে কৃষ্ণমৃত্তিকা বা চেরনোজেম অন্যতম। সংস্থাটির তথ্যমতে, বিশ্বের প্রায় ১.৮ শতাংশ ভূমি কৃষ্ণমৃত্তিকায় গঠিত। এধরনের মাটি প্রায় ২৩০ মিলিয়ন হেক্টর জমি জুড়ে রয়েছে। বিশ্বে দুটি প্রধান "চেরনোজেম বেল্ট" বিদ্যমান। প্রথমটি হলো ইউরেশীয় প্রান্তর, যা পূর্ব ক্রোয়েশিয়া (স্ল্যাভোনিয়া) থেকে দানিউব (উত্তর সার্বিয়া, উত্তর বুলগেরিয়া (দানিউবিয়ান সমভূমি), দক্ষিণ রোমানিয়া (ওয়ালেচিয়ান সমভূমি) এবং মলদোভিয়া) বরাবর উত্তরপূর্বে ইউক্রেন হয়ে মধ্য রাশিয়া ও দক্ষিণে সাইবেরিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত। মধ্য রাশিয়ার যে অঞ্চলটিতে কৃষ্ণমৃত্তিকার আধিক্য দেখা যায় সে অঞ্চলটির নামকরণ করা হয়েছে "কেন্দ্রীয় কালো মৃত্তিকা অঞ্চল"। কৃষ্ণমৃত্তিকার দ্বিতীয় বেল্টটি ম্যানিটোবার কানাডিয়ান প্রান্তর থেকে আমেরিকার মহা সমভূমির (গ্রেট প্লেইনস) মধ্য দিয়ে দক্ষিণে কানসাস পর্যন্ত বিস্তৃত।[৩] টেক্সাস ও হাঙ্গেরিতেও এই ধরনের মাটি দেখা যায়। কৃষ্ণমৃত্তিকা স্তরের পুরুত্বে ব্যাপক ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়, এর পুরুত্ব কয়েক সেন্টিমিটার থেকে ইউক্রেনে ১.৫ মিটার (৬০ ইঞ্চি) পর্যন্ত হতে পারে।[৪] উত্তর আমেরিকা এবং কানাডার লোহিত নদী উপত্যকায়ও (প্রাগৈতিহাসিক আগাসিজ হ্রদের অবস্থান) এই ধরনের মাটি পাওয়া যায়।
কৃষ্ণমৃত্তিকা বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় অল্প পরিমাণেও পাওয়া যেতে পারে (উদাহরণস্বরূপ, পোল্যান্ডের ১% অংশে)। এটি উত্তর-পূর্ব চীনের হারবিনের নিকটবর্তী অঞ্চলে দেখা যায়। অস্ট্রেলিয়ায় প্রকৃত কৃষ্ণমৃত্তিকা একমাত্র নিমিটাবেল ও এর আশেপাশের এলাকায় পাওয়া যায়। এখানে কয়েক ধরনের সমৃদ্ধ মৃত্তিকা শ্রেণি রয়েছে।[৫]
পূর্বে ইউক্রেনে কৃষ্ণমৃত্তিকা ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য কালোবাজারিদের অপতৎপরতা ছিল, সেখানে এটি "চোর্নোজেম" নামে পরিচিত। ১৯৯২ সাল থেকে ইউক্রেনে কৃষিজমি বিক্রি বেআইনি ছিল, তবে সম্প্রতি ২০২০ সালে এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়।[৬] প্রত্যাহারের আগে ট্রাকের মাধ্যমে কৃষ্ণমৃত্তিকা পরিবহন করা হতো, এরপর তা কালোবাজারে ক্রয়-বিক্রয় করা হতো। খারকিভ ভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা "গ্রিন ফ্রন্ট" এর দেওয়া তথ্যমতে, ২০১১ সালে ইউক্রেনে অবৈধভাবে সংগৃহীত কৃষ্ণমৃত্তিকার ব্যবসার মাধ্যমে কালোবাজারে প্রতি বছরে প্রায় ৯০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্জনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়।[৭]
কৃষ্ণমৃত্তিকা কানাডিয়ান সিস্টেম অফ সয়েল ক্লাসিফিকেশন এবং ওয়ার্ল্ড রেফারেন্স বেইস ফর সয়েল রিসোর্সেস (ডব্লিউআরবি) এর তালিকাভুক্ত মৃত্তিকা শ্রেণি।
কানাডা, ডব্লিউআরবি এবং যুক্তরাষ্ট্র মৃত্তিকা শ্রেণিবিন্যাসকরণ অনুসারে কৃষ্ণমৃত্তিকার সমতুল্য মৃত্তিকা শ্রেণি: | ||
কানাডিয়ান | ডব্লিউআরবি | যুক্তরাষ্ট্র |
---|---|---|
চেরনোজেমিক | কাস্তানোজেম, কৃষ্ণমৃত্তিকা, ফিওজেম | বোরোলস |
বাদামি কৃষ্ণমৃত্তিকা | কাস্তানোজেম (শুষ্ক) | শুষ্ক বোরোল উপশ্রেণিসমূহ |
গাঢ় বাদামি কৃষ্ণমৃত্তিকা | হ্যাপ্লিক কাস্তানোজেম | টাইপিক বোরোল উপশ্রেণিসমূহ |
কালো কৃষ্ণমৃত্তিকা | কৃষ্ণমৃত্তিকা | ইউডিক বোরোল উপশ্রেণি |
গাঢ় ধূসর কৃষ্ণমৃত্তিকা | ধূসর ফিওজেম | বোরালফিক বোরোল উপশ্রেণিসমূহ, অ্যালবোল্স |
উৎস: Pedosphere.com ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে. |
কৃষ্ণমৃত্তিকার উৎপত্তি সম্পর্কে বহু তত্ত্ব প্রচলিত রয়েছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
These data challenge the common paradigm that chernozems are zonal soils with climate, parent material and bioturbation dominating soil formation, and introduce fire as a novel, important factor in the formation of these soils
It is now an open question as to whether Neolithic settlers did indeed prefer to grow crops where Chernozems occurred or if Neolithic burning formed the chernozemic soils.