জর্জ ক্লুনি | |
---|---|
জন্ম | জর্জ টিমথি ক্লুনি মে ৬, ১৯৬১ |
পেশা | অভিনেতা, পরিচালক, প্রযোজক, চিত্রনাট্যকার |
কর্মজীবন | ১৯৭৮–বর্তমান |
দাম্পত্য সঙ্গী | তালিয়া বালসাম (বি. ১৯৮৯; বিচ্ছেদ. ১৯৯৩) আমাল ক্লুনি (বি. ২০২৪) |
পিতা-মাতা | নিক ক্লুনি (পিতা) নিনা ব্রুস (মাতা) |
আত্মীয় | |
পুরস্কার | পূর্ণ তালিকা |
জর্জ টিমথি ক্লুনি (জন্ম: ৬ মে, ১৯৬১) হলেন একজন মার্কিন অভিনেতা, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও সমাজকর্মী। তিনি অভিনেতা হিসেবে তিনবার গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার লাভ করেন এবং অভিনেতা হিসেবে সিরিয়ানা চলচ্চিত্রের জন্য একবার ও সহ-প্রযোজক হিসেবে আর্গো চলচ্চিত্রের জন্য একবার করে মোট দুইবার একাডেমি পুরস্কার লাভ করেছেন।
ক্লুনির অভিনয় জীবন শুরু হয় ১৯৭৮ সালে টেলিভিশনে অভিনয়ের মাধ্যমে। পরে তিনি ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত প্রচারিত মেডিকেল নাটক ইআর-এ ডগ রস চরিত্রে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। এই নাটকে অভিনয়ের জন্য তিনি দুইবার প্রাইমটাইম এমি পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। ইআর নাটকে অভিনয়ের সময় তিনি কয়েকটি চলচ্চিত্রের প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন। সুপারহিরো চলচ্চিত্র ব্যাটম্যান অ্যান্ড রবিন (১৯৯৭), অপরাধ-কমেডি চলচ্চিত্র আউট অফ সাইট (১৯৯৮), এবং থ্রি কিংস এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
২০০১ সালে ক্লুনির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায় তার কমেডি চলচ্চিত্র ওশান্স ইলেভেন ব্যবসা সফলতা লাভ করলে। পরের বছর জীবনীমূলক গোয়েন্দা চলচ্চিত্র কনফেশন অব আ ডেঞ্জারাস মাইন্ড চলচ্চিত্র দিয়ে তিনি পরিচালনায় আসেন। পরবর্তীতে তিনি ঐতিহাসিক নাট্যধর্মী গুড নাইট, অ্যান্ড গুড লাক (২০০৫), স্পোর্টস কমেডি লেদারহেডস্ (২০০৮), রাজনৈতিক নাট্যধর্মী দি আইডিজ অব মার্চ (২০১১), এবং যুদ্ধ-নাট্যধর্মী দ্য মনুমেন্ট্স মেন (২০১৪) পরিচালনা করেন।
ক্লুনি ২০০৫ সালে মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে নির্মিত থ্রিলার চলচ্চিত্র সিরিয়ানায় অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা বিভাগে একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন এবং গুড নাইট, অ্যান্ড গুড লাক চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ পরিচালক ও শ্রেষ্ঠ মৌলিক চিত্রনাট্যের জন্য একাডেমি পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। পরে ২০০৭ সালে থ্রিলারধর্মী মাইকেল ক্লেটন, ২০০৯ সালে হাস্যরসাত্মক-নাট্যধর্মী আপ ইন দ্য এয়ার, ও ২০১১ সালে দ্য ডিসেন্ডেন্ট্স চলচ্চিত্রের অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে এবং ২০১১ সালে দি আইডিজ অফ মার্চ চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ উপযোগকৃত চিত্রনাট্য বিভাগে একাডেমি পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। ২০১২ সালে তিনি রাজনৈতিক থ্রিলারধর্মী আর্গো চলচ্চিত্রের জন্য সহ-প্রযোজক হিসেবে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের জন্য একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। তিনি একমাত্র ব্যক্তি যিনি ছয়টি ভিন্ন বিভাগে একাডেমি পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেছেন।[১]
২০০৯ সালে টাইম ম্যাগাজিন প্রকাশিত টাইম ১০০ তালিকায় "বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি"দের একজন হিসেবে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।[২] তিনি তার রাজনৈতিক কর্মকান্ডের জন্য প্রসিদ্ধ। তিনি ২০০৮ সালের ৩১ জানুয়ারি থেকে জাতিসংঘের শান্তি দূত হিসেবে নিয়োজিত।[৩][৪][৫]
ক্লুনি ১৯৬১ সালের ৬ই মে কেন্টাকির লেক্সিনটনে জন্মগ্রহণ করেন।[৬][৭] তার মাতা নিনা ব্রুস (ওয়ারেন; জন্ম ১৯৩৯) সিটি কাউন্সিল এর একজন সুন্দরী ছিলেন। তার পিতা নিক ক্লুনি (জন্ম ১৯৩৪) ছিলেন একজন সংবাদ উপস্থাপক ও গেম শো উপস্থাপক। তিনি এএমসি চ্যানেলে ১৯৯০ এর দশকের শেষের দিকে পাঁচ বছর উপস্থাপনা করেন।[৮] ক্লুনির পূর্বপুরুষগণ আইরিশ, জার্মান ও ইংরেজ ছিলেন।[৯] তার প্র-প্র-প্র-প্র-পিতামহী ম্যারি অ্যান স্প্যারো ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি আব্রাহাম লিংকনের মাতা ন্যান্সি লিংকনের সৎ বোন।[১০][১১][১২] ক্লুনির বড় বোনের নাম অ্যাডা।[১৩] তার ফুফু রোজামেরি ক্লুনি ছিলেন নামকরা কাবারে গায়িকা ও অভিনেত্রী।[১৪] রোজামেরির বিয়ে হয়েছিল ডেবি বুনের সাথে এবং তাদের সন্তানেরা হলেন অভিনেতা মিগুয়েল ফেরার, রাফায়েল ফেরার, এবং গ্যাব্রিয়েল ফেরার।[১৫]
ক্লুনি জেমস এ. মিশেনার রচিত সেন্টেনিয়াল উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত একই নামের টেলিভিশন মিনি ধারাবাহিকে অতিরিক্ত হিসেবে প্রথম কাজ করেন। ধারাবাহিকটির কিছু অংশ ক্লুনির নিজ শহর কেন্টাকির অগাস্টাতে চিত্রায়িত হয়।[১৬][১৭] ক্লুনির প্রথম প্রধান ভূমিকায় কাজ হল ১৯৮৪ সালে স্বল্পদৈর্ঘ্য সিটকম ই/আর। তিনি দ্য ফ্যাক্টস অব লাইফ ধারাবাহিকে হ্যান্ডিম্যান এবং দ্য গোল্ডেন গার্লস এর একটি পর্বে একজন গোয়েন্দা ভূমিকায় অভিনয় করেন। তার প্রথম প্রসিদ্ধ কাজ হল সিটকম রোজিঅ্যান টিভি ধারাবাহিকে অনিয়মিত পার্শ্ব ভূমিকায় রোজিঅ্যান বারের তদারককারী বুকার ব্রুকস চরিত্রে এবং পরবর্তীতে তিনি বেবি টক ধারাবাহিকে নির্মাণ কর্মী, সিবিএস চ্যানেলের নাট্যধর্মী বডিজ অব এভিডেন্স ধারাবাহিকে গোয়েন্দা কর্মকর্তা রায়ান ওয়াকার চরিত্রে সহ-অভিনেতা, এবং সিস্টার্স ধারাবাহিকে গোয়েন্দা কর্মকর্তা জেমস ফ্যালকনার চরিত্রে অভিনয় করেন। ১৯৮৮ সালে ক্লুনি হাস্যরসাত্মক ভীতিপ্রদ চলচ্চিত্র রিটার্ন অব দ্য কিলার টম্যাটোস এ অভিনয় করেন।[১৮] ১৯৯০ সালে তিনি এবিসি চ্যানেলের পুলিশি নাট্যধর্মী সানসেট বিট স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে প্রধান ভূমিকায় অভিনয় করেন।[১৯] এই সময়ে ক্লুনি বেভার্লি হিলস প্লেহাউজের একজন শিক্ষার্থী ছিলেন এবং সেখানে পাঁচ বছর অভিনয় বিষয়ে পাঠ গ্রহণ করেন।[২০]
ক্লুনি ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত অ্যান্থনি এডওয়ার্ডস, জুলিঅ্যানা মার্গুলিস ও নোয়াহ ওয়াইলের সাথে এনবিসি টেলিভিশনের মেডিকেল নাট্যধর্মী ইআর ধারাবাহিকে ডক্টর ডগ রস চরিত্রে অভিনয় করে পরিচিতি লাভ করেন। ১৯৯৯ সালে এই ধারাবাহিক ছেড়ে যাওয়ার পর তিনি এর ষষ্ঠ মৌসুমে ক্ষণিক চরিত্রে অভিনয় করেন এবং শেষ মৌসুমে অতিথি চরিত্রে অভিনয় করেন।[২১] এই ধারাবাহিকে অভিনয়ের জন্য তিনি ১৯৯৫ ও ১৯৯৬ সালে শ্রেষ্ঠ প্রধান চরিত্রে অভিনেতার জন্য দুইবার প্রাইমটাইম এমি পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন।[২২][২৩] এছাড়া তিনি ১৯৯৫,[২৪] ১৯৯৬[২৫] ও ১৯৯৭[২৬] সালে তিনবার নাট্য টিভি ধারাবাহিক অভিনেতার জন্য গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন।
ইআর ধারাবাহিক অভিনয় করাকালীন ক্লুনি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেন। তার প্রথম বড় হলিউড চরিত্র ছিল ভীতিপ্রদ হাস্যরসাত্মক অপরাধ থ্রিলারধর্মী ফ্রম ডাস্ক টিল ডন। এটি পরিচালনা করেন রবার্ট রদ্রিগেজ এবং তার সাথে অভিনয় করেন হার্ভি কেইটেল। এই চলচ্চিত্রের সাফল্যের পর তিনি মিশেল ফেইফারের বিপরীতে প্রণয়ধর্মী হাস্যরসাত্মক ওয়ান ফাইন ডে এবং নিকোল কিডম্যানের বিপরীতে মারপিঠ-থ্রিলারধর্মী দ্য পিসমেকার চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। পরবর্তীতে ক্লুনি ব্যাটম্যান অ্যান্ড রবিন চলচ্চিত্রে ব্যাটম্যান চরিত্রে অভিনয় করনে। ছবিটি বক্স অফিসে অল্প পরিমাণ আয় করে, কিন্তু নেতিবাচক সমালোচনা লাভ করে এবং ক্লুনি নিজেই ছবিটিকে "অর্থের অপচয়" বলে উল্লেখ করেন।[২৭] ১৯৯৮ সালে তিনি জেনিফার লোপেজের বিপরীতে অপরাধ-হাসরসাত্মক চলচ্চিত্র আউট অফ সাইট-এ অভিনয় করেন। এটি পরিচালনা করেন স্টিভেন সোডারবার্গ, যার পরিচালনায় ক্লুনি পরবর্তীতে আরও বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।[২৮] এছাড়া তিনি তার ইআর ধারাবাহিকের চুক্তির শেষ সপ্তাহে থ্রি কিংস চলচ্চিত্রে মূল ভূমিকায় অভিনয় করেন।[২৯]
ইআর ধারাবাহিক শেষ হওয়ার পর ক্লুনি বিপর্যয়ধর্মী নাট্য চলচ্চিত্র দ্য পারফেক্ট স্ট্রর্ম (২০০০), কোয়েন ভ্রাতৃদ্বয় পরিচালিত রোমাঞ্চকর হাস্যরসাত্মক চলচ্চিত্র ও ব্রাদার, হোয়ার আর্ট দো? (২০০০)-এ কেন্দ্রীয় ভূমিকায় অভিনয় করেন। ছবি দুটি ব্যবসাসফল হয়। ২০০১ সালে তিনি স্টিভেন সোডারবার্গের পরিচালনায় ওশান্স ইলেভেন চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এটি ১৯৬০ সালের একই নামের চলচ্চিত্রের পুনর্নির্মাণ। ক্লুনি এই ছবিতে ফ্রাঙ্ক সিনাত্রার করা ড্যানি ওশান চরিত্রে অভিনয় করেন। এটি ক্লুনির কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করা চলচ্চিত্রের মধ্যে সর্বোচ্চ আয়কারী চলচ্চিত্র। ছবিটি বিশ্বব্যাপী ৪৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করে।[৩১] এই ছবির সফলতায় এর আরও দুটি অনুবর্তী পর্ব ওশান্স টুয়েলভ (২০০৪)[৩২] ও ওশান্স থার্টিন (২০০৭)[৩৩] নির্মিত হয়।
২০০৫ সালে ক্লুনি সিরিয়ানা চলচ্চিত্রে শ্রেষ্ঠাংশে অভিনয় করেন। এটি সাবেক সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির এজেন্ট রবার্ট বেয়ারের মধ্য প্রাচ্যে তার কর্মজীবনের আত্মকথা অবলম্বনে নির্মিত। ক্লুনি এই চলচ্চিত্রের সেটে দুর্ঘটনার স্বীকার হন এবং মস্তিকে আঘাত পান।[৩৪] একই বছর তিনি গুড নাইট, অ্যান্ড গুড লাক চলচ্চিত্র পরিচালনা ও প্রযোজনা করেন এবং এতে অভিনয় করেন। ছবিটি ১৯৫০-এর দশকে সিনেটর জোসেফ ম্যাকার্থির সাথে টেলিভিশন সাংবাদিক এডওয়ার্ড আর. মুরোর যুদ্ধের কথোপকথনের উপর ভিত্তি করে নির্মিত। ২০০৬ সালে একাডেমি পুরস্কার আয়োজনে ক্লুনি সিরিয়ানা ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা বিভাগে একাডেমি পুরস্কার অর্জন করেন এবং গুড নাইট, অ্যান্ড গুড লাক ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ পরিচালনা ও শ্রেষ্ঠ মৌলিক চিত্রনাট্য বিভাগে একাডেমি পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন।