জাপানের বৈদেশিক সম্পর্ক (日本の国際関係, নিহোন নো কোকুসাই কাংকেই?) নিয়ন্ত্রণ করে জাপানের বিদেশ বিষয়ক মন্ত্রক।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আত্মসমর্পণ ও সান ফ্রান্সিস্কো চুক্তির পর থেকে জাপানের বিদেশনীতির মূল ভিত্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা এবং জাতিসংঘ প্রভৃতি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে যোগদানের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার আবহ নির্মাণ ও বজায় রাখা। ঠাণ্ডা যুদ্ধের সময় জাপান সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে পাশ্চাত্য দুনিয়ার সংঘর্ষে অংশ নেয়। ১৯৬০ ও ৭০ এর দশকে দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নের ফলে জাপান তার হৃত প্রতিপত্তি পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয় এবং পুনরায় বিশ্বের অন্যতম মহাশক্তির আসন দখল করে। অবশ্য, বিশেষত দুটি দেশ জাপানের প্রভাবকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখে: চীন ও দক্ষিণ কোরিয়া।[১]
ঠাণ্ডা যুদ্ধের সময় জাপানের বিদেশনীতি ছিল নিচু সুরে বাঁধা এবং স্বদেশের আর্থিক উন্নয়নের অভিমুখী। অবশ্য ঠাণ্ডা যুদ্ধের অবসান এবং উপসাগরীয় যুদ্ধের তিক্ত অভিজ্ঞতার পর ক্রমে এই নীতির প্রকৃতি বদলে যায়। জাপান সরকার জাতিসংঘের শান্তিরক্ষার কাজে সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং ১৯৯০ ও ২০০০ এর দশকে কম্বোডিয়া, মোজাম্বিক, গোলান মালভূমি ও পূর্ব তিমুরে সেনা পাঠায়।[২] ২০০১ এর ১১ই সেপ্টেম্বরের হামলার পর থেকে জাপানি নৌসেনা ভারত মহাসাগরে নজর রাখতে শুরু করেছে। জাপান ভূ-আত্মরক্ষা বাহিনী দক্ষিণ ইরাকেও পরিকাঠামো পুনর্নির্মাণের জন্য সেনা পাঠিয়েছে।
সম্প্রতি জাপান তার উন্নত অর্থনীতিতে বলীয়ান হয়ে নিকট প্রতিবেশীদের সীমা ছাড়িয়ে অবশিষ্ট বিশ্বেও অপেক্ষাকৃত সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। জাতীয় ডায়েটে নীতিসংক্রান্ত এক বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী য়াসুও ফুকুদা নীতি পরিবর্তনের উপর জোর দিয়ে বলেন, "জাপান শান্তিরক্ষার ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরও বাড়ানোর জন্য মানবসম্পদ উন্নয়ন, গবেষণা ও বৌদ্ধিক কার্যকলাপের কেন্দ্র হয়ে উঠতে চায়।"[৩] এই বক্তৃতা প্রেক্ষাপট ছিল ১৯৯৮ খ্রিঃ কম্বোডিয়ার জাতীয় নির্বাচনে জাপান কর্তৃক প্রস্তাবিত শান্তিরক্ষা নীতির সাফল্য।
জাপান বার বার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন আগ্রাসন ও যুদ্ধাপরাধের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছে, কিন্তু চীন, উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ার[৪] মত প্রতিবেশীদের মতে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ক্ষেত্রে আর কোনও ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়নি। এই দেশগুলির মতে জাপান এখনও বিংশ শতাব্দীর অপরাধের জন্য যথেষ্ট অনুশোচনা দেখায়নি,[৫] যদিও প্রধানমন্ত্রী হোসোকাওয়া মোরিহিরো[৬] ও মুরায়ামা তোমিইচি[৭] কয়েকটি আনুষ্ঠানিক অনুশোচনামূলক বিবৃতি দিয়েছেন। জাপানের অবস্থান হল এই যে, উত্তর কোরিয়া ছাড়া সমস্ত দেশে অনুষ্ঠিত যুদ্ধাপরাধের সংশোধনী পদক্ষেপ নেওয়া হয়ে গেছে। বিতর্কিত য়াকুসুনি তীর্থে জাপানের লিবারাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতাদের ব্যক্তিগত সফর ও জাপানি স্কুলপাঠ্য ইতিহাস বইতে নির্দিষ্ট কিছু ঘটনার সাধারণীকরণের বিরুদ্ধেও আন্তর্জাতিক ক্ষোভ আছে।
২০০৪ খ্রিঃ চীন, উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়া ইরাকে জাপানের সেনা পাঠানোর সিদ্ধান্তের সমালোচনাপূর্বক জাপান আবার সামরিকীকরণের পথে হাঁটছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে। জাপান সরকার এই আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে বলে তারা কেবল পুনর্গঠন ও শুশ্রূষা ইত্যাদি কাজই করবে।
এই সমস্ত বিতর্ক অবশ্য অনমনীয় নয়। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া সফলভাবে ২০০২ ফিফা বিশ্বকাপ আয়োজন করে। এই ঘটনা দুই দেশের সহযোগিতার এক নিদর্শন। জাপানে দক্ষিণ কোরীয় অভিনেতা বে ইয়ং-জুনের জনপ্রিয়তাও একটি ইতিবাচক নমুনা।
কয়েকটি নিকটবর্তী দ্বীপের অধিকার নিয়ে জাপানের সাথে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর বিরোধ আছে।
জাপান ১৯৪৫ খ্রিঃ সোভিয়েত অধিকৃত দক্ষিণ কুরিল দ্বীপপুঞ্জে বর্তমান রাশিয়ার অধিকারের বিরোধিতা করে।[৮] তাকেশিমা দ্বীপমালার উপর দক্ষিণ কোরিয়ার দাবি জাপান অস্বীকার করে।[৯] সেন্কাকু দ্বীপপুঞ্জের অধিকারের ব্যাপারে জাপানের সঙ্গে চীন ও তাইওয়ানের সম্পর্ক তিক্ত। ওকিনোতোরিশিমা দ্বীপও চীন ও জাপানের বিরোধের আরেকটি পটভূমি।[১০][১১]