জীববিজ্ঞানে, জীবগোষ্ঠী, জনসংখ্যা (পপুলেশন) হল একই গোষ্ঠী বা প্রজাতির সমস্ত জীব, যারা একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক অঞ্চলে বাস করে এবং প্রজনন করতে সক্ষম।[১][২] একটি যৌন জনসংখ্যার ক্ষেত্র হল এমন ক্ষেত্র যেখানে কোনও যুগলের মধ্যে অন্তঃ-প্রজনন সম্ভব এবং অন্যান্য অঞ্চলের প্রজাতির সাথে আন্তঃ-প্রজননের চেয়ে বেশি সম্ভাব্য।[৩]
সমাজবিজ্ঞানে, জনসংখ্যা (পপুলেশন) বলতে মানুষের সংকলনকে বোঝায়। জনসংখ্যাতত্ত্ব হ'ল একটি সামাজিক বিজ্ঞান যেখানে জনসংখ্যার পরিসংখ্যানগত অধ্যয়ন জড়িত। সহজ ভাষায়, জনসংখ্যা বলতে একটি শহর, অঞ্চল, দেশ বা বিশ্বের লোক সংখ্যাকে বোঝায়; জনসংখ্যা সাধারণত আদমশুমারি নামক একটি প্রক্রিয়া দ্বারা নির্ধারিত হয় (তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ, সংকলন এবং প্রকাশের প্রক্রিয়া)।
জনসংখ্যা বংশাণুবিজ্ঞানে যৌন জনসংখ্যা হ'ল জীবের একটি ঝাঁক যেখানে কোনও যুগল সদস্য একসাথে প্রজনন করতে পারে। এর অর্থ হ'ল তারা নিয়মিত জননকোষ বিনিময় করে সাধারণত উর্বর বংশধর উৎপাদন করতে পারে, এবং এই জাতীয় একটি প্রজনন গোষ্ঠী গ্যামোডেম (জনন কোষ বা 'গ্যামেট' থেকে কথাটি এসেছে) নামে পরিচিত। এতে আরও বোঝায় যে সমস্ত সদস্য একই প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত।[৪] যদি কোন গ্যামোডেম খুব বড় হয় (তাত্ত্বিকভাবে, সীমাহীনের কাছাকাছি), এবং এদের মধ্যে থাকা জনন কোষগুলিতে বংশানুর বৈকল্পিক রূপগুলি অভিন্ন ভাবে বিস্তৃত থাকে, সেই গ্যামোডেমকে প্যানমিকটিক বলা হয়। এই অবস্থায়, বংশানুর (গ্যামেট) পুনরাবৃত্তির হার কে জিনোটাইপ (জাইগোট বা আদি কোষ) পুনরাবৃত্তির হারে পরিবর্তিত করা যেতে পারে, উপযুক্ত দ্বিঘাত সমীকরণ প্রসারিত করে। স্যার রোনাল্ড ফিশার তাঁর পরিমাণগত বংশবিদ্যায় এটি দেখিয়েছেন।[৫]
এই ঘটনা প্রকৃতিতে কদাচিৎ ঘটে: স্থানীয়ভাবে গ্যামেট বিনিময় - ছড়িয়ে পড়ার সীমাবদ্ধতা, পছন্দসই মিলন, বিপর্যয় বা অন্যান্য কারণে– প্রকৃতপক্ষে ছোট ছোট গ্যামোডেম তৈরি করে। তারা নিজেদের মধ্যে মোটামুটি সমানভাবে গ্যামেটগুলি বিনিময় করে কিন্তু কার্যত তারা তাদের প্রতিবেশী গ্যামোডেম থেকে আলাদা হয়ে গেছে। তবে এই প্রতিবেশীদের সাথে খুব কম সংখ্যায় হলেও গ্যামেট বিনিময় হতে পারে। এটিকে বৃহত যৌন জনগোষ্ঠী (প্যানমিকটিক) থেকে ছোট ছোট অধিক্রমণশীল (ওভারল্যাপিং) যৌন জনগোষ্ঠীর মধ্যে ভাঙ্গন হিসাবে দেখা যেতে পারে। প্যানমিক্সিয়া (যথেচ্ছভাবে মিলন বা র্যান্ডম মিলন) না হওয়ার জন্য সামগ্রিক জনসংখ্যার কাঠামোয় দুটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন দেখা যায়: (১) ছোট গ্যামোডেমগুলির মধ্যে বংশানুর পুনরাবৃত্তির হার পরিবর্তিত হয় (গ্যামেটের বিশ্লেষণ করে)। এটি দেখা গেছে নিজেদের মধ্যে এবং তত্ত্বগত ভাবে মূল প্যানমিকটিকের সঙ্গে তুলনা করে। একে বলা হয় ছড়িয়ে যাওয়া এবং এটি বিশদভাবে অনুমান করা যায় যথাযথ দ্বিপদী সমীকরণ সম্প্রসারণ করে; এবং (২) সমস্ত গ্যামোডেমগুলিতে হোমোজাইগোসিটির ( একটি বিশেষ জিনে দুটি একই রকম বংশানু থাকা) স্তর বৃদ্ধি পায়। প্রজনন সহগ (এফ f বা ফাই φ) দিয়ে হোমোজাইগোসিটির মোট বৃদ্ধির পরিমাপ করা হয়। সমস্ত হোমোজিগোটগুলির পুনরাবৃত্তির হার বৃদ্ধি পায়, এরমধ্যে ক্ষয়কারী এবং আকাঙ্ক্ষিত উভয়ই থাকে। ছোট গ্যামোডেমদের গড় ফেনোটাইপ (পর্যবেক্ষণযোগ্য বৈশিষ্ট্য) প্যানমিকটিক মূলের চেয়ে কম হয়– একে বলা হয় প্রজনন মন্দা। তবে এটি লক্ষণীয় যে কিছু পরিবর্তন মূল প্যানমিকটিক এর চেয়ে ভালো হয়, কিছু কিছু একই থাকে এবং কিছু নিকৃষ্ট হয়। প্রত্যেকের সম্ভাব্যতা দ্বিপদী সমীকরণ থেকে অনুমান করা যায়। উদ্ভিদ এবং প্রাণীজ প্রজননে, ইচ্ছাকৃতভাবে ছড়িয়ে পড়ার প্রভাবগুলি ব্যবহার করে পদ্ধতিগুলির বিকাশ করা হয়েছে (যেমন লাইন প্রজনন- ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত লাইনের মধ্যে মিলন ঘটিয়ে কাঙ্ক্ষিত বৈশিষ্ট্যের জন্য প্রাণীর বাছাই করা প্রজনন, খাঁটি-লাইন প্রজনন- খাঁটি লাইন নির্বাচনের মধ্যে বেশ কয়েকটি প্রজন্মের জন্য উচ্চতর জীব থেকে বংশজাত বাছাই এবং প্রজনন জড়িত থাকে যতক্ষণ না কেবলমাত্র কাঙ্ক্ষিত বৈশিষ্ট্যযুক্ত জীবের খাঁটি লাইন প্রতিষ্ঠিত হয়, ব্যাকক্রসিং- পিতা বা মাতা অথবা একই রকম জিনগত বৈশিষ্ট্যযুক্ত কোনও জীবের সাথে প্রজনন)। এটি দেখানো যেতে পারে যে ছড়িয়ে পড়া-সহায়ক নির্বাচনটি সর্বাধিক জন্ম সম্বন্ধীয় অগ্রগতি নিয়ে আসে (ΔG=ফেনোটাইপে গড় পরিবর্তন), এবং পরিচারক বিচ্ছিন্নতা ছাড়া নির্বাচনের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। এটি অ্যালোগ্যামাস (এলোমেলোভাবে নিষিক্তকরণ)[৬] এবং অটোগ্যামাস (স্ব-গর্ভাধান) গ্যামোডেম, অভয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। [৭]
পরিবেশ বিজ্ঞানে, কোনও নির্দিষ্ট অঞ্চলে একটি নির্দিষ্ট প্রজাতির জনসংখ্যা লিংকন ইনডেক্স ব্যবহার করে অনুমান করা যায়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আদমশুমারি ব্যুরো অনুসারে ২০১৯ সালে বিশ্বের জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৭৫৫ কোটি (৭.৫৫ বিলিয়ন)[৮] এবং ৭০০ কোটি সংখ্যাটি ছাড়িয়েছিল ১২ই মার্চ ২০১২ সালে। জাতিসংঘের পৃথক অনুমান অনুসারে, ২০১১ সালের অক্টোবরেই পৃথিবীর জনসংখ্যা সাতশো কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছিল। ইউএনএফপিএ এর মতে এটি এমন একটি মাইলফলক যা সমগ্র মানবতার কাছে নজিরবিহীন পরীক্ষা এবং একই সঙ্গে সুযোগ এনে দিয়েছে।[৯]
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আদমশুমারি ব্যুরো প্রকাশিত কাগজপত্র অনুসারে, ২৪শে ফেব্রুয়ারি ২০০৬ সালে বিশ্বের জনসংখ্যা ৬৫০ কোটিতে পৌঁছেছিল। জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিল ১২ই অক্টোবর ১৯৯৯ দিনটিকে ঠিক করেছিল আনুমানিক দিন হিসাবে, যেদিন বিশ্বের জনসংখ্যা ৬০০ কোটিতে পৌঁছোবে। ১৯৮৭ সালে বিশ্বের জনসংখ্যা ৫০০ কোটিতে পৌঁছানোর প্রায় ১২ বছর পরে এবং বিশ্ব জনসংখ্যা ৫৫০ কোটিতে পৌঁছোনোর প্রায় ছয় বছর পরের দিন ছিল এটি। নাইজেরিয়ার মতো কিছু দেশের জনসংখ্যা সম্বন্ধে কিছুই জানা ছিলনা।[১০] সুতরাং এই জাতীয় অনুমানগুলিতে ত্রুটির যথেষ্ট সম্ভাবনা ছিল।[১১]
গবেষক কার্ল হাউব গণনা করেছেন যে বিগত ২০০০ বছরে সম্ভবত মোট ১০০ বিলিয়নের (১০০০ কোটি) বেশি মানুষ জন্মগ্রহণ করেছেন।[১২]
১৭০০ সালে শিল্প বিপ্লবের পর থেকে জনসংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।[১৩]চিকিৎসা ক্ষেত্রে অগ্রগতি এবং কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির কারণে, গত ৫০ বছরে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার আরও দ্রুত হয়েছে[১৩], বিশেষত ১৯৬০ এর দশকে সবুজ বিপ্লব হওয়ার পর।[১৪][১৫] ২০১৭ সালে জাতিসংঘের জনসংখ্যা বিভাগ অনুমান করেছে যে বিশ্বের জনসংখ্যা ২০৫০ সালে প্রায় ৯৮০ কোটি এবং ২১০০ সালের মধ্যে ১,১২০ কোটিতে পৌঁছে যাবে।[১৬]
অনুমান করা হচ্ছে, ভবিষ্যতে, বিশ্বের জনসংখ্যা শিখরে পৌঁছোবে,[১৭] তার পরে এটি অর্থনৈতিক কারণ, স্বাস্থ্য উদ্বেগ, ভূমির অভাব এবং পরিবেশগত ঝুঁকির কারণে কমতে থাকবে। প্রতিবেদন অনুসারে, খুব সম্ভবত যে একবিংশ শতাব্দীর শেষ হবার আগেই বিশ্বের জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধ হবে। আরও, এমন কিছু সম্ভাবনা রয়েছে যা থেকে মনে হয় ২১০০ সালের আগেই জনসংখ্যা কমতে শুরু করবে।[১৮][১৯] বাল্টিক রাষ্ট্রসমূহ, স্বাধীন রাষ্ট্রের রাষ্ট্রমণ্ডল এবং পূর্ব ইউরোপে গত এক দশকের মধ্যে জনসংখ্যা ইতিমধ্যেই হ্রাস পেয়েছে।[২০]
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বিশ্বের স্বল্প-উন্নত অঞ্চলের দেশগুলিতে জন্মহার ধীরে ধীরে হ্রাস হচ্ছে। মৃত্যুর হার কমার পর থেকে এটি শুরু হয়েছে।[২১] উচ্চ জন্ম ও মৃত্যুর হার থেকে কম জন্ম ও মৃত্যুর হারে এই রূপান্তরকে প্রায়শই জনসংখ্যার রূপান্তর হিসাবে চিহ্নিত করা হয়।[২১]
মানব জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ হল মানুষের জনসংখ্যার বৃদ্ধির হারকে পরিবর্তন করার অনুশীলন। ঐতিহাসিকভাবে, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার সীমাবদ্ধ করার লক্ষ্যে মানব জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কার্যকর করা হয়েছে। ১৯৫০ থেকে ১৯৮০র দশকের সময়কালে, বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়ে উদ্বেগ এবং দারিদ্র্যের উপর এর প্রভাব, পরিবেশগত অবক্ষয় এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারকে কমানোর প্রচেষ্টা হয়েছিল। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে এমন কিছু বিষয় জড়িত রাখা যেতে পারে যাতে মানুষের জীবন উন্নত করে তাদের প্রজননের ওপর আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। অনেক দেশে বিভিন্ন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, বিশেষত উল্লেখযোগ্যভাবে, পরিবারে বাধ্যতামূলকভাবে এক-শিশু- এই নীতি অনুসারে চীনা সরকার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
১৯৭০ এর দশকে, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের সমর্থক এবং মহিলা স্বাস্থ্য কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। এই স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রজননের অধিকারকে মানবাধিকার বলে চিহ্নিত করে আন্দোলন করেছিলেন।[২২] ১৯৮০ এর দশকের গোড়ার দিকে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের কেন্দ্রবিন্দু সংকীর্ণ হয়ে আসে, যার ফলে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ নীতিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনা হয়।[২৩]
a community of animals, plants, or humans among whose members interbreeding occurs
reproductive rights.
reproductive rights.