এই নিবন্ধের উদাহরণ এবং দৃষ্টিভঙ্গিসমূহ সম্ভবত বিষয়বস্তুটিকে বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে উপস্থাপন করছে না। (December 2017) |
নারীবাদ |
---|
ধারাবাহিকের একটি অংশ |
নারীবাদী যৌন যুদ্ধ লেসবিয়ান যৌনযুদ্ধ নামে পরিচিত, বা কেবল যৌনযুদ্ধ বা পর্ন-যুদ্ধ নামেও পরিচিত। নারীর যৌনতা এবং যৌন কার্যকলাপ সম্পর্কিত বিস্তৃত পরিসরে নারীবাদীদের মধ্যে চলে আসা বিতর্ককে এই শব্দগুলোর দ্বারা প্রকাশ করা হয়। নারীবাদীদের মধ্যে যৌনতা ও যৌনক্রিয়া বিষয়ক মতামতের পার্থক্যগুলো ১৯৭০ এর দশকের শেষ দিকে এবং ১৯৮০ এর দশকের প্রথমদিকে নারীবাদী আন্দোলনকে গভীরভাবে মেরুকরণ করেছে। এই বিতর্ক নারীবাদী চিন্তাবিদদের কর্মপন্থা ঠিক করে দিয়েছে এবং আজ পর্যন্ত এই বিতর্ক নারীবাদীদের মধ্যে বিতর্ককে প্রভাবিত করে।[১]
এই যৌনযুদ্ধের এক দিকে ছিল পর্ন-বিরোধী নারীবাদী দল এবং অন্যদিকে ছিলে যৌন-ইতিবাচক নারীবাদী দল। তারা পর্নোগ্রাফি, ইরোটিকা, পতিতাবৃত্তি, লেসবিয়ান যৌন অভ্যাস, ট্রান্স মহিলাদের ভূমিকা, ধর্ষকাম-মর্ষকাম এবং যৌনতার সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য বিষয় নিয়ে বিতর্ক করে। এই বিতর্কের কারণে নারীবাদী আন্দোলন গভীরভাবে দুইভাগে বিভক্ত ছিল।[২][৩][৪][৫][৬] অনেক ঐতিহাসিকের মতে নারীবাদী যৌনযুদ্ধের কারণে নারীবাদের দ্বিতীয় তরঙ্গের (যা আনু. ১৯৬৩ সালে শুরু হয়) সমাপ্তি ঘটে এবং নারীবাদের তৃতীয় তরঙ্গের (যা ১৯৯০ এর দশকের প্রথম দিকে শুরু হয়েছিল) সূচনা হয়।[৭]
বিতর্কের দুই পক্ষের একটিকে পর্নোগ্রাফি বিরোধী নারীবাদী হিসেবে এবং অন্যটিকে যৌন-ইতিবাচক নারীবাদী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
১৯৭৬ সালে এন্ড্রিয়া ডোয়ার্কিন নিউ ইয়র্কে স্নাফ নামক চলচ্চিত্রের অশিষ্টতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সংগঠিত করেন, কিন্তু এই উদ্দেশ্যে তিনি পর্নোগ্রাফি বিরোধী প্রচারণা চালিয়ে যাওয়ার জন্য একটি সংগঠন শুরু করার চেষ্টা করলে সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। লস এঞ্জেলেসে পর্নোগ্রাফি-বিরোধী নারীবাদীগণ সফলতা অর্জন করেন। সেখানে ১৯৭৬ সালে অশিষ্টতার বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া হিসেবে উইমেন এগেইনস্ট ভায়োলেন্স এগেইনস্ট উইমেন নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করা হয়। তারা রোলিং স্টোনসের ১৯৭৬ সালের অ্যালবাম ব্ল্যাক অ্যান্ড ব্লুয়ের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালায়।[১০] ১৯৭৬ সালে স্থানীয় নারী বিষয়ক কেন্দ্রগুলোতে নারী নির্যাতন নিয়ে একটি সম্মেলনের পর ১৯৭৭ সালে সান ফ্রান্সিসকোতে উইমেন এগেইনস্ট ভায়োলেন্স ইন পর্নোগ্রাফি এন্ড মিডিয়া (WAVPM) প্রতিষ্ঠার মধ্যে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পর্নোগ্রাফি বিরোধী আন্দোলন আরও শক্তিশালী হয়। এই প্রতিষ্ঠানের প্রথম দিককার সদস্য ছিলেন সুজান গ্রিফিন, ক্যাথলিন বেরি এবং লরা লেডারার।
WAVPM ১৯৭৮ সালে সান ফ্রান্সিসকোতে পর্নোগ্রাফির প্রথম জাতীয় সম্মেলন আয়োজন করে, এবন প্রথম টেক ব্যাক দ্য নাইট মার্চ এই সম্মেলনের সূচীর অন্তর্ভুক্ত ছিল।[১১] এই সম্মেলনের মাধ্যমেই পরে ১৯৭৯ সালে নিউইয়র্কে উইমেন এগেইনস্ট পর্নোগ্রাফি (WAP)[১২] এর ব্যানারে পর্নোগ্রাফি বিরোধী নারীবাদীরা সংগঠিত হন, এবং সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে একই রকম সংগঠন তৈরির প্রচেষ্টা দেখা যায়। ১৯৮৩ সালে WAVPM এবং WAP এর এককালীন সদস্য পেজ মেলিশ ফেমিনিস্ট ফাইটিং পর্নোগ্রাফি নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। এর লক্ষ্য ছিল পর্ন শিল্প বা পর্ন ইন্ডাস্ট্রিকে সীমাবদ্ধ করার জন্য আইনি পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে রাজনৈতিক সক্রিয়তায় মনোনিবেশ করা। এন্ড্রিয়া ডোয়ার্কিন এবং ক্যাথারিন ম্যাককিনন পর্নোগ্রাফিকে সীমিত করার জন্য নাগরিক আইন দাবি করেন এবং এর ফলে এন্টিপর্নোগ্রাফি সিভিল রাইটস অর্ডিনেন্স বা পর্নোগ্রাফি বিরোধী নাগরিক অধিকার অধ্যাদেশর খসরা তৈরি হয়,[১৩] একে ডোয়ার্কিন-ম্যাককিনন অধ্যাদেশও বলা হয়।
১৯৭৯ সাল থেকে নারীবাদী সাংবাদিক এলেন উইলিস ছিলেন পর্নোগ্রাফি বিরোধী নারীবাদীদেরকে সমালোচনা করার প্রথম সক্রিয় ব্যক্তিদের মধ্যে একজন। তিনি এর বিরুদ্ধে সক্রিয়তায় অংশ নেন কারণ এন্টি পর্নোগ্রাফি নারীবাদকে তিনি যৌন শুদ্ধতাবাদ, নৈতিক স্বৈরাচার এবং বাকস্বাধীনতার উপর হুমকি হিসেবে দেখেন। তিনি ১৯৮১ সালে Lust Horizons: Is the Women's Movement Pro-Sex? (কাম দিগন্ত: নারী আন্দোলন কি যৌনতার পক্ষে" নামে একটি রচনা লেখেন। এই শিরোনাম থেকেই "প্রো-সেক্স ফেমিনিজম" বা "যৌনতার স্বপক্ষের নারীবাদ" শব্দের উৎপত্তি।[১৪] পর্নোগ্রাফি বিরোধী নারীবাদের প্রতিক্রিয়ায় যৌন ইতিবাচক নারীবাদীগণ যৌনতাকে নারীর সন্তুষ্টি ও আনন্দের একটি উপায় হিসেবে প্রচার করেন। তারা পর্নোগ্রাফি বিরোধী অবস্থানকে রাজনৈতিক দক্ষিণপন্থীদের বিনোদনমূলক যৌনতা ও পর্নগ্রাফি এর বিরুদ্ধে যুদ্ধের সাথে একই কাতারে ফেলেন।[১৫] প্রথম দিকের যৌন ইতিবাচক সংগঠনগুলোর মধ্যে একটি হল ১৯৭৮ সালে সান ফ্রান্সিসকোতে প্রতিষ্ঠিত সামোইস, যার প্রথম দিকের সদস্যদের মধ্যে গেইল রুবিন এবং প্যাট ক্যালিফিয়া ছিলেন। এরকম আরেকটি যৌন ইতিবাচক সংগঠন হচ্ছে লেসবিয়ান সেক্স মাফিয়া যা ১৯৮১ সালে নিউ ইয়র্কে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্যগণ হচ্ছেন ডরোথি এলিসন এবং জো আরনোন।[১৬] ডোয়ার্কিন-ম্যাককিনন অধ্যাদেশের প্রতিক্রিয়ায় এলেন উইলিস ১৯৮৪ সালে ফেমিনিস্টস এন্টি-সেন্সরশিপ টাস্কফোর্স (FACT) প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।[১৭] ১৯৮৯ সালে যুক্তরাজ্যে ফেমিনিস্টস এগেইনস্ট সেন্সরশিপ প্রতিষ্ঠিত হয় যেখানে এভেডন ক্যারল একজন সদস্যা ছিলেন। ১৯৯২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফেমিনিস্টস ফর ফ্রি এক্সপ্রেশন প্রতিষ্ঠিত হয়। এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের মধ্যে ভেরোনিকা ভেরা এবং ক্যানডিডা রয়ালে ছিলেন।
১৯৮০ সালের অক্টোবরে ন্যাশনাল অরগানাইজেশন ফর উইমেন "বালকপ্রীতি, পর্নোগ্রাফি, ধর্ষকাম-মর্ষকাম এবং প্রকাশ্য যৌনতা" এই "বিগ ফোর"-কে "যৌন পক্ষপাত ও যৌন অভিমুখিতা" নয়, বরং "শোষণ ও গোপনীয়তার উপর জবরদস্তি ও আক্রমণ" হিসেবে চিহ্নিত করে।[১৮] যৌনতার নিয়ে ১৯৮২ সালে আয়োজিত বার্নার্ড কনফারেন্স অন সেক্সুয়ালিটিতে প্রো-সেক্স ও এন্টি-পর্ন নারীবাদীদের মধ্যে সংঘাতটি স্মরণীয়। পর্নোগ্রাফি বিরোধী নারীবাদীদেরকে এই আয়োজনের পরিকল্পনা কমিটি থেকে বাদ দিয়ে দেয়া হয়, কাজেই তারা তাদের প্রতি অবজ্ঞার প্রতিবাদে এই সম্মেলনের বাইরে সমাবেশ করেন।[১৯]
নারীবাদী যৌন যুদ্ধের দুটো পরষ্পরবিরোধী দল বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিতর্কে লিপ্ত হয়েছিল, আর সেই বিতর্কগুলো ব্যক্তিগতভাবে ও বিভিন্ন মাধ্যমে সংগঠিত হয়।
১৯৭০ এর দশকের শেষের দিকে, নারীবাদী আলোচনার বেশিরভাগই লেসবিয়ান নারীবাদ থেকে সরে গিয়ে নতুন বিষয়বস্তু যৌনতায় সরে গিয়েছিল। যৌনতা নিয়ে প্রাথমিক উদ্বেগগুলোর একটি হল পর্নোগ্রাফি, যা নারীবাদীদের মধ্যে বিশাল বিভেদ তৈরি করে। এই বিতর্কের দুটো স্বীকৃত পক্ষ হচ্ছে পর্নোগ্রাফি বিরোধী নারীবাদ এবং "যৌনতার স্বপক্ষের" নারীবাদ।[২০] পর্নোগ্রাফি বিরোধী নারীবাদের উপর যেসব বিষয়বস্তুর সর্বাধিক প্রভাব ছিল তাদের মধ্যে একটি হচ্ছে এর পূর্বতন লেসবিয়ান নারীবাদ।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] পর্নোগ্রাফি বিরোধী আন্দোলনসমূহের বিকাশ ঘটেছিল লেসবিয়ানবাদের মৌলিক যুক্তিগুলো থেকে, যেমন পিতৃতান্ত্রিক যৌন সম্পর্কের ধারণা।[২০] এলেন উইলিস এই সম্পর্কগুলোকে "শক্তিমত্তার উপর দাঁড়িয়ে থাকা পুরুষের ক্ষমতা-ভিত্তিক" হিসেবে বর্ণনা করেন।[২১] এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে পর্নোগ্রাফি বিরোধী নারীবাদীগণ পর্নোগ্রাফিকে কেবলমাত্র পুরুষের জন্য পুরুষের দ্বারা তৈরি পুরুষের কর্তৃত্বে থাকা একটি যৌনতা সম্পর্কিত প্যারাডাইম হিসেবে দেখেন।[২০] লেসবিয়ান নারীবাদ থেকে পর্নোগ্রাফি বিরোধী নারীবাদ আরেকটি ধারণা গ্রহণ করেছিল। সেই ধারণা অনুসারে যৌনতা সম্পূর্ণ শারীরিক বিষয় নয়, বরং যৌনতা হচ্ছে কোন ব্যক্তির সাথে দরদী বন্ধন তৈরি এবং তার সাথে স্থায়ী সম্পর্ক।[২২]
এন্ড্রিয়া ডোয়ার্কিন তার গ্রন্থ, পর্নোগ্রাফি: মেন পোজেসিং উইমেন-এ বলেন, পর্নোগ্রাফি এর মূলভাব হচ্ছে পুরুষ কর্তৃত্ব, এবং এর ফল নারী ও তাদের হিতের জন্য সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিকর। ডোয়ার্কিন মনে করতেন, পর্নোগ্রাফি কেবল তার উৎপাদনের ক্ষেত্রেই ক্ষতিকারক নয়, এই পণ্যের ব্যবহারও ক্ষতিকারক, কেননা পর্নোগ্রাফির দর্শকগণ পর্নোগ্রাফি দেখার মাধ্যমে এখানকার নারীদের নারীবিদ্বেষী চিত্র মানষিকভাবে গ্রহণ করে।[২০] রবিন মরগান পর্নোগ্রাফি বিরোধী নারীবাদীদের দৃষ্টিভঙ্গিকে সারমর্ম তৈরি করেন তার একটি উক্তির সাহায্যে যেখানে পর্নোগ্রাফি ও নারী নির্যাতনকে এক সূত্রে বাঁধা হয়। সেই উক্তিটি হচ্ছে "পর্নোগ্রাফি হচ্ছে তত্ত্ব, ধর্ষণ হচ্ছে তার চর্চা"।[২৩]
যৌন-ইতিবাচক নারীবাদীগণ পর্নোগ্রাফি বিরোধী আন্দোলনকে যৌনতার অবদমন এবং সেন্সরশিপের জন্য সমালোচনা করেন।[২০] গেইল রুবিন তার প্রবন্ধ থিংকিং সেক্স: নোটস ফর আ রেডিক্যাল থিওরি অফ দ্য পলিটিক্স অফ সেক্সুয়ালিটি-তে যৌন স্বাধীনতাকে একটি নারীবাদী লক্ষ্য হিসেবে উপস্থাপন করেছেন এবং পর্নোগ্রাফি বিরোধী নারীবাদীদের ধারণাগুলো প্রত্যাখ্যান করেছেন।[২৪] এক্সএক্সএক্স: আ উইম্যানস রাইট টু পর্নোগ্রাফি-তে ওয়েন্ডি ম্যাকএলরয় সারমর্ম টেনে বলেন "নারীর জন্য পর্নোগ্রাফি এর উপকারিতা এর অপকারিতার চেয়ে অনেক বেশি"।[২৫]
বিভিন্ন মাধ্যমে পুরুষ যৌনতার সাথে সম্পর্কিত করে নারী যৌনতাকে দেখানোর উপরে আমূল সংস্কারবাদী (রেডিক্যাল) ও উদারবাদী (লিবারটারিয়ান) নারীবাদীদের মধ্যকার বিতর্ক কেন্দ্রীভূত হয়।[২৬] আমূল সংস্কারবাদী নারীবাদীগণ এখানে জোড় দেন যে, পর্নোগ্রাফিতে নির্দিষ্ট কিছু কার্যকে উপস্থাপন করে যৌন নির্যাতনকে স্বাভাবিকীকরণ করা হয়।[২৬] অন্যদিকে উদারবাদী নারীবাদীগণ যৌন সংখ্যালঘুদের (নারী অন্তর্ভুক্ত) উপরে কালিমালেপন এবং তাদের যৌন ইচ্ছা চর্চার সীমিত অধিকার নিয়ে উদ্বিগ্ন হন, পর্নোগ্রাফি না থাকলে এই যৌন সংখ্যালঘুদের অবস্থা আরও খারাপ হয়।[২৬]
ধর্ষকাম-মর্ষকাম ও অন্যান্য বিডিএসএম চর্চা নিয়ে নারীবাদী যৌন যুদ্ধ শুরু হয় সান ফ্রান্সিস্কোতে। ১৯৭৭ সালে উইমেন এগেইনস্ট ভায়োলেন্স ইন পর্নোগ্রাফি এন্ড মিডিয়া নামক সংগঠনটি স্থাপিত হয়। সংগঠনটির প্রথম রাজনৈতিক কার্যক্রম ছিল একটি স্ট্রিপ ক্লাবে চলা একটি লাইভ শো এর বিরুদ্ধে ধর্মঘট করা। সেই লাইভ শোতে নারীদের একে অপরের উপর ধর্ষকামী-মর্ষকামী আচরণ করতে দেখা যায়। সংগঠনটির একটি উদ্দেশ্য ছিল নারীদেরকে বিভিন্ন মাধ্যমে "যৌন উদ্দীপনা ও যৌন সন্তুষ্টির জন্য বন্দী, ধর্ষিত, নিপীড়িত, খুন ও অবমানিত" হতে দেখানো বন্ধ করা।[২৭] পর্নোগ্রাফির বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাবার সাথে সাথে সংগঠনটি বিডিএসএম এর বিরুদ্ধেও প্রচারণা চালাতে থাকে, কেননা তারা বিডিএসএমকে নারীদের উপর নিয়মতান্ত্রিক নির্যাতন হিসেবে দেখে এবং লেসবিয়ান সম্প্রদায়ের মধ্যেও বিডিএসএম চর্চার বিরোধিতা করে।[২৮] ১৯৭৮ সালে সামোইস (SAMOIS) নামক সংগঠনটি গঠিত হয়। এই সংগঠনটি হল বিডিএসএম সম্প্রদায়ের একটি সংগঠন যা তাদের যৌনচর্চাকে নারীবাদী নীতিসমূহের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে করে।[২৯] বিভিন্ন কৃষ্ণাঙ্গ লেসবিয়ান নারীবাদীগণ এই বিষয়ে লিখেছেন যাদের মধ্যে অদ্রে লর্ডে, এলিস ওয়াকার, ডারলেনে পাগানো, ক্যারেন সিমস এবং রোস ম্যাসোন রয়েছেন। এরা ধর্ষকাম-মর্ষকামকে প্রায়ই বর্ণবাদী চর্চা, এবং কৃষ্ণাঙ্গ নারীর অভিজ্ঞতা অনুসারে সংবেদনশূন্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন। [৩০][৩১]
নারীবাদী যৌন যুদ্ধ নিয়ে আরেকটি বিতর্ক হয় পতিতাবৃত্তিকে ঘিরে। পর্নোগ্রাফি বিরোধী নারীবাদীদের শিবিরের নারীরা পতিতাবৃত্তির বিরুদ্ধে কথা বলেন। তারা দাবি করেন পতিতাবৃত্তি হছে নারীদের উপর চাপিয়ে দেয়া একটি বিষয় যখন নারীদের আর কোন বিকল্প থাকে না। অন্যদিকে যৌন-ইতিবাচক নারীবাদীগণ বলেন, পর্নোগ্রাফি বিরোধী নারীবাদীদের এই অবস্থান তাদেরকে অগ্রাহ্য করেছে যারা স্বেচ্ছায় যৌনকর্মকে নিজেদের পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। তারা বলেন, পতিতাবৃত্তি সম্পূর্ণরূপে নারীর উপর নির্যাতন নয়। ক্যারল লেই উল্লেখ করেন, "১৯৭০ এর দশকের প্রথম দিকে নারী আন্দোলন থেকে সরাসরি পতিতাবৃত্তি অধিকার আন্দোলন জন্মলাভ করে"। কিন্তু তিনি এও বলেন, "যুক্তরাষ্ট্রে নারী আন্দোলন পতিতাদের নিয়ে বরাবরই দ্বিমুখী ছিল"।[৩২] পতিতাবৃত্তি নিয়ে নারীবাদীদের এই মেরুকৃত দৃষ্টিভঙ্গি মানব পাচার নিয়ে তাদের অবস্থানকেও প্রভাবিত করেছে, যেখানে মানব পাচার বারবার যৌন শোষণের উদ্দেশ্যেই ঘটে। এখানে পতিতাবৃত্তি বিরোধী নারীবাদীগণ উচ্ছেদবাদী অবস্থান (মানব পাচারের সম্পূর্ণ বিলোপ বা উচ্ছেদ চান) এবং যৌন-ইতিবাচক নারীবাদীগণ নিয়ন্ত্রণবাদী অবস্থান গ্রহণ করেন।[৩৩]
এই অনুচ্ছেদটি সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন। (June 2014) |
যৌন যুদ্ধের সময় নারীবাদী মতাদর্শের মধ্যকার এই মেরুকরণ বিভিন্ন বিষয়ে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, লিউ (২০১১) এর মতে, "মানব পাচার এর সংজ্ঞা এবং ব্যাখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তির কারণ ছিল পতিতাবৃত্তি নিয়ে বিরোধপূর্ণ নারীবাদী দৃষ্টিভঙ্গিসমূহের উপস্থিতি।"[৩৩]
তৃতীয় তরঙ্গ নারীবাদী রচনাসমূহে যৌন যুদ্ধের সময়কার লিঙ্গ-সম্পর্কিত বিষয়ে যেমন পতিতাবৃত্তি, পর্নোগ্রাফি এবং ধর্ষকাম-মর্ষকাম বিষয়ে ব্যক্তিগত, ব্যক্তিস্বাতন্ত্রী দৃষ্টিভঙ্গিকে উৎসাহিত করে। বিশেষ করে পর্নোগ্রাফি বিষয়ক তৃতীয় তরঙ্গ দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে, কোন বিষয়ে কর্মী ও ভোক্তাগণ যে অর্থ দান করেন, সেই বিষয়ে তার চেয়ে বড় কোন অর্থ থাকতে পারে না।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] যৌন সামগ্রী এবং পর্নোগ্রাফির মত পণ্যগুলো পূর্বে কিছু দ্বিতীয় তরঙ্গ নারীবাদীগণ নারীর উপর নির্যাতনমূলক সামগ্রী হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। কিন্তু বর্তমানে সেগুলোকে কেবল পুরুষ নয়, নারীরাও ব্যবহার ও ভোগ করেন।[৩৪] নারীবাদী সমালোচনাকারী টেরেসা ডে লরেটিস নারীবাদী যৌন যুদ্ধকে দুটো মেরুকৃত অংশ হিসেবে দেখেন না, বরং তৃতীয় তরঙ্গ নারীবাদের একটি ছায়া হিসেবে দেখেন যেখানে বিভিন্ন বিষয়ে ভিন্নতা অঙ্গীভূত ছিল, যার মধ্যে দ্বান্দ্বিক এবং প্রতিযোগী তাড়ণা কাজ করেছে।[৩৫][৩৬] অন্যদিকে সমালোচনাকারী জানা সাউইকি উভয় মেরুকৃত অবস্থানকেই প্রত্যাখান করেন। তিনি একটি তৃতীয় পন্থার সন্ধান করেন যা না নৈতিকভাবে গোঁড়া, না সম্পূর্ণভাবে উদারবাদী।[৩৫]