প্যানজিয়া বা মহাভূখণ্ড (রোমান হরফ: Pangea) প্রাগৈতিহাসিক পৃথিবীর একটি অতিমহাদেশ। এটি প্যান্থালাসা (Panthalassa) নামক একটিমাত্র মহাসাগর দ্বারা বেষ্টিত ছিল।
আজ থেকে ১১০ কোটি বছর পূর্বেও পৃথিবীতে একটিমাত্রই মহাদেশ ছিল, যার নাম রোডিনিয়া। ৭৫ কোটি বছর পূর্বে এটি ভেঙে যায় এবং কিছু অংশ দক্ষিণ গোলার্ধে চলে আসে। মহাদেশগুলো টেকটোনিক প্লেটের উপর অবস্থিত যারা চলমান। এই গতিই রোডিনিয়ার ভগ্নাংশগুলোকে আবার একত্র করে প্রায় ৩০ কোটি বছর পূর্বে গঠন করেছিল প্যানজিয়া, তবে এটি পুরোপুরি গঠিত হয় আনুমানিক ২৭ কোটি বছর পূর্বে।[১] ২০ কোটি বছর পূর্বে অবশ্য প্যানজিয়া ভেঙে উত্তরে লরেশিয়া ও দক্ষিণে গন্ডোয়ানা নামের দুটি অতিমহাদেশ গঠিত হয়। ১৮ কোটি বছর পূর্বে জুরাসিক যুগের শুরুর দিকেই গন্ডোয়ানার পূর্বাংশ আলাদা হয়ে যায়, যার অন্তর্ভুক্ত ছিল বর্তমান মাদাগাস্কার, ভারতীয় উপমহাদেশ, অস্ট্রেলিয়া ও অ্যান্টার্কটিকা। ১৩ কোটি বছর আগে পশ্চিম গন্ডোয়ানাও আবার দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়- এবার পূর্বের অংশটি হয় আফ্রিকা আর পশ্চিমেরটি দক্ষিণ আমেরিকা। এরপর ৯ কোটি বছর পূর্বে মাদাগাস্কার ভারতকেও ছেড়ে দেয়, হয়ে ওঠে একটি স্বাধীন দ্বীপ। মাদাগাস্কারের বন্ধন থেকে মুক্তি পেয়ে ভারত এশিয়ার দিকে এগোতে শুরু করে।[২]
"প্যাঞ্জিয়া" নামটি প্রাচীন গ্রীক শব্দ "প্যান" (πᾶν, সমস্ত, পুরো, সবকিছু) এবং "গাইয়া" (Γαῖα, মা এর মৃত্তিকা, জমি, পৃথিবী) থেকে উদ্ভূত। "পেনজিয়া" শব্দটির নিখুঁত বাংলা অনুবাদ করলে এর অর্থ দাঁড়াবে "মহাভূখণ্ড"। ১৫৯৬ সালে আব্রাহাম অর্টেলিয়াস সম্ভবত প্রথমে প্রস্তাব দেন যে মহাদেশগুলি একসময় ছিল একত্রিত এবং পরে পৃথক হয়ে গেছে। মহাদেশগুলি একসময় একটি সংলগ্ন স্থলভাগ গঠন করেছিল এই ধারণাটি কন্টিনেন্টাল ড্রিফটের বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের উৎপাদক আলফ্রেড ওয়েগনার কর্তৃক ১৯১২ সালের জার্মান ভাষায় লিখিত তিনটি একাডেমিক জার্নাল নিবন্ধ "ডাই এন্টস্টেহুং ডের কনটিনেন্টে" (মহাদেশের উৎপত্তি) শিরোনামে প্রমাণ সহকারে অনুমান করা হয়েছিল। তিনি ১৯১৫ সালে একই শিরোনামের তার বইটিতে তার এই অনুমানের উপর আরও বিস্তারিত আলোচনা করেন, যেখানে তিনি মত দেন যে, ভেঙে গিয়ে বর্তমান অবস্থানে চলে যাওয়ার আগে সমস্ত মহাদেশ একটিমাত্র মহাস্থলভাগ গঠন করেছিল, যাকে তিনি "আরকন্টিনেন্ট" বলে অভিহিত করেন। এরও আরো অনেক আগে ৬০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে পবিত্র কুরআনের কয়েকটি আয়াতে এই ঘটনা সম্পর্কে সর্বপ্রথম ধারণা পাওয়া যায়।[৩]
প্যাঞ্জিয়া সম্পর্কিত পবিত্র কুরআনের উদ্ধৃতি সমূহ:
"তিনিই (আল্লাহ) ভূমিকে ছড়িয়ে দিয়েছেন, অতঃপর তাতে পাহাড় ও পর্বতমালা সৃষ্টি করেছেন এবং তা হতে নদ-নদী স্থাপন করেছেন এবং প্রত্যেক ফলের মধ্যে জোড়া সৃষ্টি করে রেখেছেন। তিনি দিনকে রাত্রি দ্বারা আবৃত করেন। আর এগুলোতে তাদের জন্যে নিদর্শণ বা সিগন্যাল রয়েছে, যারা চিন্তা ও গবেষণা করে।"
"আমি ভু-পৃষ্ঠকে বিস্তৃত করেছি, অতঃপর তার উপর পর্বতমালা স্থাপন করেছি এবং তাতে প্রত্যেক বস্তু সুপরিমিতভাবে উৎপন্ন করেছি।"
"আমিই রোডিনিয়া বা মহাভূখণ্ডকে (Pangaea) আলাদা আলাদা মহাদেশে বিভক্ত করেছি অতঃপর তাতে পর্বতমালার ভার স্থাপন করেছি এবং তাতে সর্বপ্রকার নয়নাভিরাম উদ্ভিদ উদগত করেছি।"
"এবং আমার ওপর অবিশ্বাসকারীরা কি পাহাড়ের দিকে লক্ষ্য করে না যে, তা কিভাবে স্থাপন করা হয়েছে?"
"এবং তারা কি পৃথিবীর দিকে লক্ষ্য করে না যে, তা কিভাবে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে?"