ফিওদর দস্তইয়েভ্স্কি | |
---|---|
জন্ম | ফিওদর মিখাইলোভিচ দস্তইয়েভ্স্কি ১১ নভেম্বর ১৮২১ মস্কো, মস্কো গভর্নরেট (বর্তমান মস্কো ওব্লাস্ট), রুশ সাম্রাজ্য |
মৃত্যু | ৯ ফেব্রুয়ারি ১৮৮১ সেন্ট পিটার্সবার্গ, রুশ সাম্রাজ্য | (বয়স ৫৯)
পেশা | |
জাতীয়তা | রুশ |
শিক্ষা | মিলিটারি ইঞ্জিনিয়ারিং-টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, সেন্ট পিটার্সবার্গ |
ধরন |
|
বিষয় |
|
সাহিত্য আন্দোলন | বাস্তবতাবাদ |
উল্লেখযোগ্য রচনাবলি |
|
সক্রিয় বছর | ১৮৪৬–১৮৮০ |
দাম্পত্যসঙ্গী |
|
সন্তান |
|
স্বাক্ষর |
ফিওদর দস্তইয়েভ্স্কি ( ত্রুটি: {{Lang-xx}}: text has italic markup (সাহায্য)) (১১ নভেম্বর ১৮২১ - ৯ ফেব্রুয়ারি ১৮৮১[১]) ছিলেন একজন রুশ ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক, ও দার্শনিক। তার অনেক রচনাই বিশ্বসাহিত্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে।[২] তার প্রধান সাহিত্যকর্মের মধ্যে অপরাধ ও শাস্তি (Crime and Punishment), মৃত্যুপুরী (The House of the Dead), দি ইডিয়ট (The Idiot), ভূতলবাসীর আত্মকথা (Notes from Underground or Letters from the Underworld) উল্লেখযোগ্য। দস্তইয়েভ্স্কির রচিত নোটস ফ্রম আন্ডারগ্রাউন্ড (The Notes from Underground) অস্তিত্ববাদী দর্শনের ভিত্তি গড়তে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ।
দস্তইয়েভ্স্কি একাধিক দার্শনিক ও লেখকদের দ্বারা প্রভাবিত, তন্মধ্যে রয়েছেন পুশকিন, গোগল, অগাস্তিন, শেকসপিয়ার, ডিকেন্স, বালজাক, লের্মন্তফ, হুগো, পো, প্লেটো, থের্ভান্তেস, হের্জেন, কান্ট, বেলিন্স্কি, হেগেল, শিলার, সলোভিয়ভ, বাকুনিক, স্যান্ড, হফম্যান ও মিকিয়েভিৎজ। তার লেখনী রাশিয়ায় এবং রাশিয়ার বাইরে ব্যাপক হারে পঠিত এবং তার পরবর্তী একাধিক লেখককে প্রভাবিত করেছে, তন্মধ্যে রয়েছেন রুশ লেখক আলেকসান্দ্র সলঝেনিৎসিন ও আন্তন চেখভ এবং দার্শনিক ফ্রিডরিখ নিৎশে, জঁ-পল সার্ত্র্। তার বইগুলি ১৭০টির অধিক ভাষায় অনূদিত হয়েছে।
ফিওদোর দস্তয়েভ্স্কি ১৮২১ সালের ১১ই নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ডক্টর মিখাইল দস্তয়েভ্স্কি ও মাতা মারিয়া দস্তয়েভ্স্কায়া (জন্মনাম: নেচায়েভা)। ফিওদোর দরিদ্রদের জন্য নির্মিত মারিন্স্কি হাসপাতাল এলাকায় তার পারিবারিক বাড়িতে বেড়ে ওঠেন, এটি ছিল মস্কোর সীমান্তবর্তী নিম্নবিত্ত শ্রেণির জেলা।[৩] হাসপাতালের মাঠে খেলার সময় হাসপাতালে আগন্তুক রোগীদের সাথে তার সাক্ষাৎ হত, যারা ছিল রুশ সামাজিক স্তরের সর্বনিম্ন শ্রেণির জনগণ।[৪]
দস্তয়েভ্স্কি শৈশবেই সাহিত্যের সাথে পরিচিত হন। তিন বছর বয়স থেকে তার দাত্রী আলেনা ফ্রোলভ্না তাকে বীরত্বপূর্ণ গাঁথা, রূপকথার গল্প ও কিংবদন্তির গল্প পড়ে শুনাতেন। আলেনা তার লালনপালন ও কল্পকাহিনির প্রতি ভালোবাসা অর্জনে প্রভাব রেখেছিলেন।[৫] তার যখন চার বছর বয়স তার মাতা তাকে পড়া ও লেখা শিক্ষা দিতে বাইবেল ব্যবহার করতেন। তার পিতামাতা তাকে বিপুল পরিমাণ সাহিত্যের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন, তন্মধ্যে রয়েছে রুশ লেখক কারামজিন, আলেক্সান্দ্র পুশকিন, ও দেরঝাভিন; গথিক কল্পকাহিনি যেমন অ্যান র্যাডক্লিফ; শিলার ও গ্যোটের প্রণয়ধর্মী কর্মসমূহ; সের্ভান্তিস ও ওয়াল্টার স্কটের বীরত্বপূর্ণ গাঁথা; এবং হোমারের মহাকাব্য।[৬][৭] যদিও শিক্ষার ব্যাপারে তার পিতা কঠোর ছিলেন,[৮] তবে দস্তয়েভ্স্কি বলেন যে তার পিতামাতার রাতে তাকে গল্প পড়ে শুনানো তার চিন্তাশক্তি বৃদ্ধি করেছিল।[৪]
দস্তয়েভ্স্কির মাতা যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৮৩৭ সালের ২৭শে সেপ্টেম্বর মারা যান। এর পূর্বের মে মাসে তার পিতামাতা তাকে ও তার ভাইকে সাংক্ত পিতেরবুর্গের (সেন্ট পিটার্সবার্গ) নিকলায়েভ মিলিটারি ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে ভর্তি করান, যা তারা দুই ভাইকে শিক্ষায়তনিক অধ্যয়ন ত্যাগ করে সামরিক কর্মজীবন শুরু করতে বাধ্য করে। দস্তয়েভ্স্কি ১৮৩৮ সালের জানুয়ারি মাসে তার পরিবারের সদস্যদের সহায়তায় একাডেমিতে প্রবেশ করেন। স্বাস্থ্যগত কারণে মিখাইলকে সেখানে ভর্তি করা হয়নি এবং তাকে এস্তোনিয়ার রেভালের একাডেমিতে পাঠানো হয়।[৯][১০]
১৮৩৮ সালের ৯ই আগস্ট ভাইকে লেখা চিঠিতে জানালেন যে শেকসপিয়র এবং প্যাস্কেলের সব সাহিত্যকর্ম, বালজাকের অধিকাংশ, গ্যোটে রচিত ফাউস্ট এবং ভিক্টর হুগোর প্রায় সব রচনা পড়ে শেষ করেছেন। ১৮৩৯ সালের ১৬ই জুন দস্তয়েভ্স্কির পিতার মৃত্যু তাকে প্রবল ভাবে প্রভাবিত করে। তার পিতার মৃত্যুর খবর শুনে তার প্রথম মৃগী রোগের লক্ষণ দেখা দেয়।[১১] তার পিতার মৃত্যুর কারণ ছিল হঠাৎ উত্তেজিত হওয়ার ফলে পক্ষাঘাত, কিন্তু পাভেল খতিয়াইন্তসেভ নামে একজন প্রতিবেশী জানান যে তিনি তার অধীনস্থ ভূমিদাসদের হাতে নিহত হন। ভূমিদাসরা তুলায় এক এজহারে বেকসুর খালাস লাভ করে, কিন্তু দস্তয়েভ্স্কির ভাই আন্দ্রেই গল্পটিকে বাঁচিয়ে রাখে।[১২] পিতার মৃত্যুর পর দস্তয়েভ্স্কি তার অধ্যয়ন চালিয়ে যান, পরীক্ষায় পাস করেন এবং প্রকৌশলী ক্যাডেট পদ অধিকার করে একাডেমি ত্যাগ করেন। তিনি রেভালে তার ভাই মিখাইলের সাথে দেখা করতে চান এবং প্রায়ই কনসার্ট, অপেরা, মঞ্চনাটক ও ব্যালে উপভোগ করতে যেতেন। এই সময়ে তার দুই বন্ধু তাকে জুয়া খেলার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।[১৩][১৪]
১৮৪১ সালে তিনি সামরিক কলেজে কমিশন লাভ করেন। পরের বছর ১৮৪২ সালে তিনি লেফটেন্যান্ট পদ লাভ করেন। ১৮৪৩ সালের ১২ আগস্ট তিনি সামরিক বাহিনীর প্রকৌশল বিভাগে সেনা হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। তিনি মিখাইলের বন্ধু ডক্টর রিজেনকাম্ফের একটি অ্যাপার্টমেন্টে আডলফ তোৎলেবেনের সাথে থাকতেন। রিজেনকাম্ফ তার সম্পর্কে বলেন যে তিনি "তার ভাইয়ের চেয়ে কোন অংশে কম ভালো ও ভদ্র নয়; কিন্তু যখন তার মনের ভাব খারাপ থাকে তিনি প্রায়ই সবকিছু তিক্তভাবে দেখেন, উত্ত্যক্ত হয়ে যান, সদাচার ভুলে যান এবং আত্ম-সচেতনতা ভুলে যান।"[১৫] বালজাকের ইউজিনি গ্রঁদে উপন্যাসের অনুবাদ তার প্রথম পূর্ণাঙ্গ সাহিত্যকর্ম হিসেবে প্রকাশিত হয়। এটি ১৮৪৩ সালের জুন ও জুলাই মাসে রেপার্তোয়ার অ্যান্ড পান্থেয়ন সাময়িকীর ষষ্ঠ ও সপ্তম সংখ্যায় প্রকাশিত হয়।[১৬][১৭] পরবর্তী কালে তার আরও কয়েকটি অনুবাদ প্রকাশিত হয়, যার কোনটিই সফল হয়নি, এবং তিনি তার আর্থিক সংকটের জন্য একটি উপন্যাস লিখতে বাধ্য হন।[১৮][১৪]
১৮৪৫ সালের মে মাসে তিনি তার প্রথম উপন্যাস পুওর ফোক লেখা শেষ করেন। তার বন্ধু দিমিত্রি গ্রিগরভিচ পাণ্ডুলিপিটি কবি নিকলাই নেক্রাসভের কাছে নিয়ে যান। নেক্রাসভ এটি প্রখ্যাত ও প্রভাবশালী সাহিত্য সমালোচক ভিসারিয়ন বেলিন্স্কিকে দেখান। বেলিন্স্কি এটিকে রাশিয়ার প্রথম "সামাজিক উপন্যাস" বলে অভিহিত করেন।[১৯] ১৮৪৬ সালের ১৫ই জানুয়ারি সাংক্ত পিতেরবুর্গ কালেকশন থেকে পুওর ফোক উপন্যাসটি প্রকাশিত হয় এবং ব্যবসায়িকভাবে সফলতা লাভ করে।[২০][২১] এই উপন্যাসের মধ্য দিয়ে তিনি সাহিত্য জগতে পুরোপুরি প্রবেশ এবং সমালোচকরা তাকে গোগলের যোগ্য উত্তরসূরী হিসেবে অভিহিত করেন।
দস্তয়েভ্স্কি মনে করতে থাকেন যে তার সামরিক কর্মজীবন হয়ত তার প্রসারমান সাহিত্য জীবন হুমকি হতে পারে। দস্তয়েভ্স্কি সামরিক বাহিনী থেকে পদত্যাগের চিঠি লিখেন এবং পুরোদমে সাহিত্য রচনায় মন দেন। কিছুদিন পর তিনি তার দ্বিতীয় উপন্যাস দ্য ডাবল রচনা করেন। এটি ১৮৪৬ সালের ৩০শে জানুয়ারি নোটস অব দ্য ফাদারল্যান্ড সাময়িকীতে প্রকাশিত হয় এবং পরে ফেব্রুয়ারি মাসে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। একই সময়ে তিনি ফরাসি চিন্তাবিদ ফুরিয়ে, কাবে, প্রুধোঁ ও সাঁ-সিমোঁর লেখনীর মাধ্যমে সমাজতন্ত্র সম্পর্কে জানতে পারেন। বেলিন্স্কির সাথে তার সম্পর্কের ফলে তিনি সমাজতন্ত্রের দর্শন সম্পর্কে বিস্তৃত জ্ঞান লাভ করেন। তিনি এর যুক্তি, ন্যায়বিচারের জ্ঞান ও নিঃস্ব ও অভাবগ্রন্তদের পুনঃপেশায় যোগদানের দর্শনে আকৃষ্ট হন। তবে বেলিন্স্কির সাথে তার সম্পর্কে ফাটল ধরতে থাকে কারণ বেলিন্স্কির নাস্তিক্য ও ধর্ম অপছন্দ দস্তয়েভ্স্কির রুশ গোঁড়াবাদী বিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক হয়ে পড়ে। দস্তয়েভ্স্কি অচিরেই বেলিন্স্কি এবং তার সহযোগীদের থেকে আলাদা হয়ে যান।[২২][২৩]
১৮৪৯ সালে অ্যানালস্ অব দ্য ফাদারল্যান্ড সাময়িকীতে নেতচ্কা নেজভানভা উপন্যাসের প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হয়। দস্তয়েভ্স্কি ১৮৪৬ সাল থেকে এই বইটির লেখার পরিকল্পনা করছিলেন। প্রথম খণ্ড প্রকাশের পর নিষিদ্ধ ঘোষিত হলে দস্তয়েভ্স্কি আর বাকি লেখা শেষ করেননি।[২৪]
কাউন্ট এ. অরলভ ও জার প্রথম নিকলাস রাশিয়ায় ১৮২৫ সালের ডিসেম্বরের বিদ্রোহ ও ইউরোপে ১৮৪৮ সালের বিপ্লবের মত বিপ্লব সংগঠিত হওয়ার ভয় পান। তাদের অনুরোধে ইউটোপীয় সমাজবাদী চিন্তাবিদদের সাথে যোগ দেয়ার অপরাধে ১৮৪৯ সালের ২৩শে এপ্রিল তাকে ও তার সহযোগী ষড়যন্ত্রকারীদের গ্রেফতার করা হয়। তাদেরকে পিটার অ্যান্ড পল দুর্গে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে সে সময়ের সবচেয়ে দুর্ধর্ষ আসামীদের রাখা হত।[২৫][২৬][২৭]
জারের নেতৃত্বাধীন তদন্তকারী কমিশন অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল ইভান নাবকভ, সিনেটর প্রিন্স পাভেল গাগারিন, প্রিন্স ভালিসি দলগরুকভ, জেনারেক ইয়াকভ রস্তভৎসেভ এবং গুপ্ত পুলিশের প্রধান জেনারেল লেওন্তি দুবেলতের সাথে চার মাস এই মামলাটি নিয়ে আলোচনা করে। তারা তাদের ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুদণ্ডের ঘোষণা দেয় এবং বন্দীদের ১৮৪৯ সালের ২৩শে ডিসেম্বর সাংকত পিতেরবুর্গের সেমিয়নভে নিয়ে যাওয়া হয় ও তিন জনের দলে ভাগ করা হয়। দস্তয়েভ্স্কি ছিলেন দ্বিতীয় সারির তৃতীয় ব্যক্তি; তার পাশে ছিলেন প্লেশচেয়েভ ও দুরভ। শেষ মূহুর্তে জারের নিকট থেকে একটি চিঠি আসলে তাদের দণ্ড রদ করা হয়।
দস্তয়েভ্স্কি নতুন দণ্ড ছিল সাইবেরিয়ার ওম্স্কে ৪ বছরের সশ্রম নির্বাসন এবং এই সময়ের পরে বাধ্যতামূলক সামরিক কর্মজীবন। স্লেজ গাড়িতে ১৪ দিনের সফর শেষে কারাবন্দীরা তবল্স্কে পৌঁছে। এমন পরিস্থিতির পরও দস্তয়েভ্স্কি অন্যান্য কারাবন্দীদের সান্ত্বনা দেন, তন্মধ্যে পেত্রাশেভিস্ত ইভান যাস্ত্রঝেম্বস্কি দস্তয়েভ্স্কির দয়ালু মনোভাবের জন্য বিস্মিত হন এবং আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত বাতিল করেন। তবল্স্কে বন্দীরা ডিসেম্বরিস্ট নারীদের নিকট থেকে খাদ্য ও কাপড় গ্রহণ করেন এবং নতুন নিয়মের কয়েকটি অনুলিপি ও প্রতিটি অনুলিপির ভিতর দশ রুবল ব্যাংক নোট পান। ১১ দিন পর দস্তয়েভ্স্কি ওম্স্কে পৌঁছান।[২৬][২৮] তখন তার সাথে পেত্রাশেভ্স্কি চক্রের শুধু একজন সদস্য ছিলেন, তিনি হলেন কবি সের্গেই দুরভ।[২৯]
দস্তয়েভ্স্কি ১৮৫৪ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি কারামুক্তি লাভ করেন। মুক্তি লাভের পর তিনি মিখাইলকে তাকে আর্থিকভাবে সাহায্যের জন্য বলেন এবং তাকে ভিকো, গিজো, রাংকা, হেগেল ও কান্টের বই পাঠাতে বলেন।[৩০]
সেমিপালাতিন্স্কে দস্তয়েভ্স্কি কয়েকজন বিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থীকে পড়াতেন এবং কয়েকটি উচ্চ-বিত্ত পরিবারের সাথে পরিচিত হন, তন্মধ্যে রয়েছে লেফটেন্যান্ট-কর্নেল বেলিখভ, যিনি তাকে সংবাদপত্র ও পত্রিকা থেকে নিবন্ধ পড়ার আমন্ত্রণ জানাতেন। বেলিখভের বাড়িতে যাতাযাতকালে দস্তয়েভ্স্কি আলেকসান্দর ইভানোভিচ ইসায়েভ ও মারিয়া দিমিত্রিয়েভ্না ইসায়েভার পরিবারের সাথে পরিচিত হন। তিনি মারিয়ার প্রেমে পড়েন। আলেকসান্দর ইসায়েভ কুজনেৎস্কে নতুন পদে যোগদান করেন এবং সেখানে ১৮৫৫ সালের আগস্টে মারা যান। মারিয়া ও তার পুত্র দস্তয়েভ্স্কির সাথে বার্নাউলে চলে আসেন। ১৮৫৬ সালে দস্তয়েভ্স্কি র্যাংগেলের মাধ্যমে জেনারেল এদুয়ার্দ তোতলবেনের কাছে কয়েকটি ইউটোপিয়ান চক্রের সাথে তার কার্যক্রমের জন্য ক্ষমা চেয়ে চিঠি লিখেন। ফলে তিনি বই প্রকাশ ও বিয়ে করার অনুমতি লাভ করেন, যদিও তিনি তার পরবর্তী সারা জীবন পুলিশের নজরদারীতে ছিলেন। ১৮৫৭ সালের ৭ই ফেব্রুয়ারি দস্তয়েভ্স্কি সেমিপালাতিন্স্কে মারিয়ার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। মারিয়া শুরুতে বিয়ের প্রস্তাবে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেছিলেন তারা একে অপরের জন্য নয়। পারিবারিক জীবনে তার অসুখী ছিলেন এবং মারিয়ার জন্য তার সাথে মানিয়ে নেওয়া কষ্টসাধ্য ছিল। ফলে তারা অধিকাংশ সময় আলাদা থাকতেন।[৩১] ১৮৫৯ সালে তার স্বাস্থ্যের অবনতির জন্য তাকে সামরিক কাজ থেকে অব্যহতি দেয়া হয় এবং রাশিয়া ফিরে যাওয়ার অনুমতি প্রদান করা হয়। তিনি প্রথম তিভের যান এবং সেখানে দশ বছর পর তার ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ করেন। পরে তিনি সাংকত পিতেরবুর্গে যান।[৩২][৩৩]
১৮৬১ সালে ভ্রেমিয়া সাময়িকীতে তার কারাভোগের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে রচিত হাউস অফ দ্য ডেড প্রকাশ পায়। এটি রুশ কারাগার নিয়ে প্রকাশিত প্রথম উপন্যাস।[৩৪] ১৮৬২ সালে দস্তয়েভ্স্কি প্রথমবারের মত পশ্চিম ইউরোপ সফরে বের হন। তিনি কলগ্নে, বার্লিন, ড্রেসডেন, ভিসবাডেন, বেলজিয়াম ও প্যারিস ভ্রমণ করেন। লন্ডনে তিনি হের্জেনের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং ক্রিস্টাল প্যালেসে বেড়াতে যান। তিনি নিকলাই স্ত্রাখভের সাথে সুইজারল্যান্ড ও কয়েকটি উত্তর ইতালীয় শহর, তথা তুরিন, লিভোর্নো, ও ফ্লোরেন্স ভ্রমণ করেন। তিনি এই ভ্রমণকালে স্ত্রাখভের সাথে আলোচিত ধারণাসমূহ উইন্টার নোটস অন সামার ইমপ্রেশন্স-এ নথিভুক্ত করেন। এতে তিনি পুঁজিবাদ, সামাজিক আধুনিকতা, বস্তুবাদ, ক্যাথলিকবাদ ও প্রোটেস্ট্যান্ট মতবাদের সমালোচনা করেন।[৩৫][৩৬]
১৮৬৬ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে পাক্ষিক দ্য রাশিয়ান মেসেঞ্জার-এ অপরাধ ও শাস্তি বইটির প্রথম দুই খণ্ড প্রকাশিত হয়। বইটি প্রকাশের পর পত্রিকাটির কমপক্ষে ৫০০ নতুন পাঠক বৃদ্ধি পায়।[৩৭]
১৮৬৭ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি দস্তয়েভ্স্কি সাংকত পিতেরবুর্গের ট্রিনিটি ক্যাথিড্রালে আন্না গ্রিগরিয়েভ্না স্নিৎকিনাকে বিয়ে করেন। অপরাধ ও শাস্তি বইটির বিক্রি থেকে অর্জিত ৭,০০০ রুবলও তাদের দেনা শোধ করতে না পারায় আন্না তার মূল্যবান বস্তুসমূহ বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন। ১৮৬৭ সালের ১৪ই এপ্রিল তারা এই বস্তুগুলোর বিক্রীত অর্থ দিয়ে জার্মানিতে মধুচন্দ্রিমায় যান। তারা বার্লিনে অবস্থান করেন এবং ড্রেসডেনে গেমাল্ডেগালেরি আল্টে মেইস্টারে যান, সেখানে তিনি তার নতুন লেখনীর অনুপ্রেরণা খুঁজে পান। তারা জার্মানি সফর চালিয়ে যান এবং ফ্রাঙ্কফুর্ট, ডার্মস্টাট, হাইডেলবার্গ ও কার্লসরুয়ে ভ্রমণ করেন। তারা বাডেন-বাডেনে পাঁচ সপ্তাহ কাটান, সেখানে দস্তয়েভ্স্কি ইভান তুর্গেনেভের সাথে ঝগড়া করেন এবং রুলেট টেবিলে বিপুল পরিমাণ অর্থ হারান।[৩৮]
১৮৬৮ সালের সেপ্টেম্বরে দস্তয়েভ্স্কি দ্য ইডিয়ট রচনা শুরু করেন এবং দীর্ঘ পরিকল্পনার পর তিনি মাত্র ২৩ দিনে প্রথম ১০০ পৃষ্ঠা লেখা সম্পন্ন করেন। বইটি দ্য রাশিয়ান মেসেঞ্জার-এ ১৮৬৮ সালের জানুয়ারি থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হতে থাকে।
১৮৭১ সালের জুলাই মাসে রাশিয়ায় ফিরে আসার পর তাদের পরিবার আর্থিক সংকটে পড়ে এবং তারা তাদের বাকি সম্পত্তি বিক্রয় করতে বাধ্য হয়। তাদের পুত্র ফিওদোর ১৬ই জুলাই জন্মগ্রহণ করেন এবং তারা অল্প কিছুদিন পরই সেন্ট পিটার্সবার্গ ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির নিকটবর্তী একটি অ্যাপার্টমেন্টে স্থানান্তরিত হন। তারা আশা করেছিল তাদের পেস্কির বাড়ির বাসা ভাড়া দিয়ে তাদের ঋণ পরিশোধ করতে পারবে, কিন্তু ভাড়া নিয়ে সমস্যার সৃষ্টি হলে তারা তুলনামূলক অল্প দামে তাদের বাড়িটি বিক্রি করে দেয়, তবুও তাদের পাওনাদারদের সাথে সমস্যা চলতেই থাকে। আন্না তার স্বামীর বইয়ের স্বত্ব দিয়ে অর্থ লাভের প্রস্তাব দেন এবং পাওনাদারদের কিস্তিতে ঋণ পরিশোধ করবেন বলে আপোস করেন।[৩৯][৪০]
দস্তয়েভ্স্কি মায়কভ ও স্ত্রাকভের সাথে তার বন্ধুত্ব পুনরুজ্জীবিত করেন এবং আরও কিছু নতুন বন্ধুদের সাথে পরিচিত হন, তারা হলেন গির্জার রাজনীতিবিদ তের্তি ফিলিপভ, এবং ভসেভলদ ও ভ্লাদিমির সলোভিওভ ভ্রাতৃদ্বয়। দস্তয়েভ্স্কির রাজনৈতিক অগ্রগমণ সংরক্ষণশীলতায় পরিবর্তনে কনস্তান্তিন পবেদোনস্তসেভের প্রভাব ছিল। কনস্তান্তিন পরবর্তী কালে মোস্ট হলি সাইনডের ইম্পেরিয়াল হাই কমিশনার হয়েছিলেন। ১৮৭২ সালের শুরুতে দস্তয়েভ্স্কি পরিবার স্ত্রারায়া রুসাতে কয়েক মাস কাটান। ইতোমধ্যে টাইফাস বা ম্যালেরিয়ায় ১৮৭২ সালের ১লা মে আন্নার বোন মারিয়া সভাৎকভ্স্কায়ার মৃত্যু হলে[৪১] এবং আন্নার গলায় ফোঁড়া হলে দস্তয়েভ্স্কির কাজে বিলম্ব ঘটে।[৩৯][৪২]
তারা সেপ্টেম্বর মাসে সেন্ট পিটার্সবার্গে ফিরে আসেন। ১৮৭২ সালের ২৬শে নভেম্বর ডিমনস লেখা সমাপ্ত হয় এবং ১৮৭৩ সালের জানুয়ারি মাসে দস্তয়েভ্স্কি ও তার স্ত্রীর প্রতিষ্ঠিত দস্তয়েভ্স্কি পাবলিশিং কোম্পানি থেকে বইটি প্রকাশিত হয়। যদিও তারা শুধু নগদ অর্থ গ্রহণ করতেন এবং বইয়ের দোকান ছিল তাদের নিজেদের অ্যাপার্টমেন্ট, তাদের ব্যবসা সফল হয় এবং তারা ডিমনস বইটির প্রায় ৩,০০০ কপি বিক্রি করে। আন্না অর্থের ব্যবস্থা করেন। দস্তয়েভ্স্কি আ রাইটার্স ডায়েরি নামে একটি নতুন পাক্ষিক প্রকাশের প্রস্তাব দেন, যেখানে প্রবন্ধ সংকলন প্রকাশিত হবে, কিন্তু অর্থের অভাবে তা সম্ভব হয়নি। ডায়েরি ১লা জানুয়ারি থেকে ভ্লাদিমির মেশচেরস্কির দ্য সিটিজেন-এ প্রকাশিত হতে থাকে এবং তিনি প্রতি বছর ৩,০০০ রুবল পারিশ্রমিক লাভ করেন। ১৮৭৩ সালের গ্রীষ্মে আন্না সন্তানদের নিয়ে স্ত্রারায়া রুসায় ফিরে যান, অন্যদিকে দস্তয়েভ্স্কি ডায়েরি প্রকাশের কাজে সেন্ট পিটার্সবার্গে থেকে যান।[৪৩][৪৪]
১৮৭৬ সালের শুরুতে দস্তয়েভ্স্কি তার ডায়েরি-এর কাজ চালিয়ে যান। এই বইয়ে সমাজ, ধর্ম, রাজনীতি ও নৈতিকতা নিয়ে অসংখ্য প্রবন্ধ ও কয়েকটি ছোটগল্প অন্তর্ভুক্ত ছিল। তার পূর্ববর্তী বইগুলি থেকেও এই সংকলনটির দ্বিগুণ কপি বিক্রি হয়। দস্তয়েভ্স্কি তার পাঠকদের নিকট থেকে পূর্বের থেকে অধিক চিঠি পান এবং সকল বয়স ও পেশার পাঠক তার সাথে দেখা করতে আসেন। আন্নার ভাইয়ের সহযোগিতায় তারা স্ত্রারায়া রুসায় একটি মৌসুমী নিবাস বা দাচা ক্রয় করেন। ১৮৭৬ সালের গ্রীষ্মে দস্তয়েভ্স্কি পুনরায় হাঁপানিতে ভোগতে শুরু করেন। তিনি তৃতীয়বারের মত এমসের শরণাপন্ন হন এবং তাকে বলা হয় যদি তিনি কোন স্বাস্থ্যকর আবহাওয়ায় বসবাস করতে পারেন তবে তিনি আরও ১৫ বছর বাঁচতে পারবেন। রাশিয়ায় প্রত্যাবর্তনের পর জার দ্বিতীয় আলেকসান্দর দস্তয়েভ্স্কিকে তার প্রসাদে গিয়ে তার সাথে সাক্ষাৎ করে ডায়েরি পেশ করতে আদেশ দেন এবং তার পুত্র সের্গেই ও পলকে পড়াতে বলেন। এই সাক্ষাতের ফলে দস্তয়েভ্স্কির পরিচিতদের চক্র আরও বৃদ্ধি পায়। তিনি প্রায়ই সেন্ট পিটার্সবার্গের কয়েকটি সালুনে অতিথি হিসেবে নিমন্ত্রণ পেতেন এবং অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিদের সাথে পরিচিত হন, তন্মধ্যে রয়েছে কাউন্টেস সোফিয়া তলস্তায়া, ইয়াকভ পোলন্স্কি, সের্গেই উইট, আলেক্সেই সুভরিন, আন্তন রুবিনস্তেইন, ও ইলিয়া রেপিন।[৪৫][৪৬]
এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |