ফেজ (তুর্কি: fes, উসমানীয় তুর্কি: فس)[১] বা তারবুস (আরবি: طربوش, প্রতিবর্ণীকৃত: ṭarbūš[২] ফার্সি শব্দ, ফার্সি: سرپوش, প্রতিবর্ণীকৃত: sarpuš, অনুবাদ 'টুপি') হলো একটি নরম নলাকার টুপি, যা সাধারণত লাল রঙের হয় এবং কখনো কখনো একটি রেশমের থোবা এর উপরে লাগানো থাকে। “ফেজ” নামটি মরক্কোর ফেজ শহরকে নির্দেশ করে যেখানে ক্রিমসেম ব্যারি ফল থেকে এই টুপিগুলো রং করার রঞ্জক পর্দার্থ পাওয়া যায়।[৩] ফেজ অতীতে উসমানীয় সাম্রাজ্যে এই টুপিগুলো খুবই জনপ্রিয় ছিল, যা বর্তমানেও এর জনপ্রিয়তার কারণ।[৪][৫]
১৯শ শতাব্দীতে ফেজ উসমানীয় সাম্রাজ্যের প্রতীকে পরিণত হয়। ১৮২৭ সালে, দ্বিতীয় মাহমুদ তার সেনা বাহিনী, আসকির-ই-মানসুর-ই-মুহাম্মদি এর জন্য এই টুপি পরিধান করা বাধ্যতামূলক করেন। এই সিদ্ধান্তটি আসমীয় নৌবাহিনীর প্রধানের অনুপ্রেরণায় নেওয়া হয়, যিনি মাগরেব থেকে ফিরে এসে এর ধরনটি সমর্থন করেন। ১৮২৯ সালে, একটি নতুন আইন তৈরির মাধ্যমে মাহমুদ এই টুপিগুলো সকল সরকারি এবং ধর্মীয় কর্মকর্তার পরিধান করা বাধ্যতামূলক করেন।[৬][৭] ১৯২৫ সালে, আতাতার্ক পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে এ টুপিগুলোকে অবৈধ বলে ঘোষণা করা হয়।
মরক্কোর ফেজ শহরের নামানুসারে তুরস্কের ফেজের নামকরণ করা হয়, যা টুপিগুলো রং করতে এক সময়ে ব্যবহৃত ক্রিমসেম ব্যারি ফলের উৎস ছিলো।[৮][৯][১০] টুপিটি গ্রিস,[৮][৯] মরক্কো[১১] বা তুরস্ক থেকে এসেছে।[১০][১২] এ টুপিগুলো উসমানীয় সাম্রাজ্যের পরবর্তীকালে জনপ্রিয় ছিল এবং সমগ্র সাম্রাজ্য জুড়ে এর ব্যবহার ছড়িয়ে পড়ে।[১৩][১০][১৪]
ইতিহাসবিদ জেরেমি সিল এর মতে, ফেজ তুরস্ক থেকেই উদ্ভূত এবং দ্বিতীয় মাহমুদের নির্দেশে সেটি মুসলিম পুরুষদের প্রার্থনার সময়ে ব্যবহৃত পাগড়ির একটি আধূনিক বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়।[১২]
১৭ শতাব্দীর তুর্কি ইতিহাসবিদ, ইভলিয়া সেলেবি আলজেরিয়ার পুরুষদের ফেজ পরিধানের কথা উল্লেখ করেছেন।[১১][সন্দেহপূর্ণ ]
প্রথমদিকে, ফেজ একটি প্রান্তহীন লাল, সাদা বা কালো রঙের বোনেট ছিল, যার উপর পাগড়ি পরিধান করা হতো। পরবর্তীতে পাগড়িটি ছড়িয়ে দেওয়া হয়, বোনেটটি ছোট এর রং হিসেবে লাল রং নির্দিষ্ট করা হয়। মুসলিমদের প্রাত্যহিক প্রার্থনা, সালাতের সময়ে তাদের মাথা মাটিকে ঠেকাতে হয়, তাই প্রান্তযুক্ত কোনো টুপির পরিবর্তে ফেজ পরে প্রার্থণা করা তাদের জন্য সহজতর ছিল।[১৫]
১৮২৬ সালে, উসমানীয় সাম্রাজ্যের সুলতান দ্বিতীয় মাহমুদ জ্যানিসারিরদের দমন করেন এবং সামরিক বাহিনীর পুনর্গঠন আটকে দেন। তুরস্কের আধূনিক সামরিক বাহিনীতে পশ্চিমাদের মতো পোশাক গ্রহণ করা হয়েছে এবং টুপি হিসেবে একটি কাপড় পেচানো ফেজ নির্বাচন করা হয়েছে। ১৮২৭ সালে, তিউনিস থেকে সুলতানের বাহিনীর জন্য ৫০,০০০ ফেজ ক্রয় করা হয়।[১৬] ১৮২৯ সালে, সুলতান তার সরকারি কর্মচারীদের পাগড়ি ছাড়া ফেজ পরিধান করার নির্দেশ প্রদান করেন, পাগড়ি নিষিদ্ধ করা হয়।[১৭] এর উদ্দেশ্য ছিল জনগণকে ফেজ ফেজ পরিধান করতে বাধ্য করা, যা সফল হয়। এটি একটি আমূল সমতাবাদী পদক্ষেপ ছিল, যা ব্যয়নিয়ন্ত্রক আইন বর্ধিত করে এবং মর্যাদা, ধর্ম এবং দখলের সংকেত প্রদান করার সাথে তানযিমাত পুনর্গঠনের পূর্বাভাস দেয়।ব্যাবসায়ী এবং কারিগরেরা প্রত্যাখ্যান করলেও, ফেজ পূর্বাঞ্চলের নিকটবর্তী অঞ্চলগুলোর আধূনিকতার প্রতীকে পরিণত হয়।[১৮] এটি থেকে অনুপ্রেরিত হয়ে অন্যান্য দেশেও একই ধরনের আইন তৈরি হয় (যেমন: ১৮৭৩ সালে ইরানে)।[১৭]
বর্ধিত চাহিদার কারণে ফেজ প্রস্তুতকারকরা তিউনিসিয়া থেকে ইস্তাম্বুল চলে যেতে শুরু করেন এবং সেখানেে এয়ুপ এ কারখানা স্থাপন করা হয়।[১৬] বিভিন্ন নতুন আকৃতি, উচ্চতা, রঙ এবং কাঁচামাল দিয়ে তৈরি হতো। ফেজ এর টকটকে এবং গাঢ় লাল রং প্রথমদিকে কর্নেল ফল থেকে তৈরি করা হতো। কম দামী কৃত্রিম কাপড়ের আবিষ্কারের ফলে, চেক প্রজাতন্ত্রের (তখন অস্ট্রিয়ান সাম্রাজ্যে অন্তর্ভূক্ত) স্ট্রাকোনিসের কারখানাগুলোতে ফেত তৈরি শুরু হয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
১৯০৮ সালে, অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি সাম্রাজ্য বসনিয়া দখল করলে অস্ট্রিয়ান পণ্য বর্জন করা শুরু হয়, যা সে সময়ে অস্ট্রিয়ানরা ফেজ তৈরির ক্ষেত্রে অন্যতম থাকা এটি বর্জন নামেও পরিচিত হয়। ফেজ এর অস্তিত্ব রক্ষা পেলেও, এ আন্দোলনের ফলে তা সার্বজনীনতা হারায় এবং অন্যান্য ধরনের টুপি সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
ফেজ শুধুমাত্র উসমানীয় সাম্রাজ্যের অন্তর্ভূক্তির প্রতীকই নয়, বরং ইসলামের প্রতি আনুগত্যের প্রতীক হিসেবেও ব্যবহার হয়েছে।[১৯] এটি উসমানীয় সাম্রজ্যের জনগন এবং ইহুদিদেরও প্রধান টুপি ছিল। ইহুদি পুরুষেরা ফেজ পরিধান করত এবং সেটিকে তার আরবি নাম “তারবুস” বলে অভিহিত করত (বিশেষ করে আরবের ইহুদিরা, যাদের অধিকাংশই ছিল ফিলিস্তিন, মিশরীয় এবং সিরিয়ান)।[২০][২১][২২] উসমানীয় সাম্রাজ্যের সাথে সম্পর্কের কারণে দক্ষিণ এশিয়ায় ফেজ গৃহীত হয়।
১৯ এবং ২০ শতকে বলকান অঞ্চলের মুসলিম এবং খ্রিষ্টানদের কাছে ফেজ ছিল পছন্দীয় টুপি, যাদের অধিকাংশ উসমানীয় সাম্রাজ্যের অধীন ছিল। বলকান রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ফেজ এর বিভিন্ন প্রকারভেদ ছিল, যা মূলত টুপির সামনে ধর্মের চিহ্ন যোগের ক্ষেত্রে ছিল। উসমানীয় সাম্রাজ্যের অধীনে থাকা অর্ধ-স্বাধীন সম্পূর্ণ স্বায়ত্তশাসিত মন্টিনিগ্রো এর অর্থোডক্স নাগরিকরা সামনে গ্রিক ক্রসের চিহ্ন যুক্ত ফেজ পরিধান করত। ইলিরিয়ান আন্দোলনের সমর্থকরা তাদের ধর্ম নির্বিশেষে সামনে তারা এবং অর্ধচন্দ্র যুক্ত ফেজ পরিধান করত, যে প্রতীকগুলো তাদের বিশ্বাস অনুসারে বলকানে ইসলাম আসার পূর্বেও ছিল। ১৮৫০ সালে, নতুন স্বায়ত্তশাসিত সার্বিয়ার মন্ত্রণালয়েল কর্মীদের পোষাকের অংশ হিসেবে সার্বিয়ার জাতীয় মর্যাদাবাহী নকশা যুক্ত লাল রঙের ফেজ ছিল।[২৩]
সময়ের সাথে ফেজ একটি প্রাচ্যতাত্ত্বিক সাংস্কৃতিক পরিচিতিতে পরিনত হয়। ফেজকে পশ্চিমা দেশগুলোতে নতুন এবং রোমান্টিক বলে মনে করা হয়। যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রে ২০ শতাব্দির দিকে এটি পুরুষের ধূমপানের পোষাকে পরিণত হয়। ফেজ এতটাই প্রতীকী ঐতিহ্য হয়ে উঠেছিল যে ১৯২৫ সালে, মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক এর আধূনিকতা পুনর্গঠনে একটি অংশ হিসেবে তুরস্ক থেকে এটি নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়।[২৪]
ফেজ বর্তমানেও অনেক বিখ্যাত, বিশেষ করে মরক্কোতে।[১৯] ২০ শতাব্দিতে ফরাসি আধিপত্যের বিরুেদ্ধে এটি আরও বিখ্যাত সাংস্কৃতিক প্রতীকে পরিণত হয়। রাজসভায় এখনো ফেজকে গুরুত্ব দেওয়া হয়।[১৯]
১৪০০-১৭০০ সাল পর্যন্ত একটি মাথা রক্ষাকারী ধাতব বর্ম (একটি গোলাকার ধাতব আবরণ বা মাথার খুলি-টুপি যাকে ঘিরে গলা এবং কাধ রক্ষা করতে আরেকটি আবরণ ঝুলত), আর্মিং ক্যাপ হিসেবে এক ধরনের ফেজ ব্যবহার করা হয়। ১৯১০ সালে, সূর্য শিরস্ত্রাণ এবং খাকি উর্দি গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত নীল থোবরা যুক্ত লাল রঙের ফেজ তুরস্কের সেনা বাহিনীর সাধারণ সামরিক পোষাকের অংশ ছিল। তবে কিছু অশ্বারোহী এবং কামান বাহিনী উপরে রঙিন কাপড় যুক্ত ভেড়ার চামড়ার টুপি পরিধান করত।[২৫] আলবেনীয় সেনা বাহিনী সাদা রঙের ফেজ পরিধান করত, যা তাদের ঐতিহ্য, কেলেসকে উপস্থাপন করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে নৌবাহিনীর কিছু সংরক্ষিত বাহিনী এবং দায়িত্বের বাহিরে থাকা সেনারা অনেক সময়ে পরিধান করত।[২৬] ১৮৩৭ সাল থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পর্যন্ত গ্রিসের সেনাদল (ছোট পদাতিক বাহিনী), ইভজোনস তাদের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন ফেজ পরিধান করত। এটি এখন অ্যাথেন্সে রাষ্ট্রপতির রক্ষিবাহিনীর পযযাত্রার পোষাকের অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
১৯ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকেই পৃথিবীর বিভিন্ন ঔপনিবেশিক সামরিক বাহিনীর মধ্যে স্থানীয় মধ্যে থেকে নিযুক্ত করা “স্থানীয়” বাহিনীর টুপি হিসেবে ফেজ ব্যবহৃত হয়। ফরাসি উত্তর আফ্রিকান সেনাদল (টিহাইয়িয়র, জুয়াভ এবং স্পায়ি) বিভিন্ন রঙের থোবরা যুক্ত লাল রঙের ফেজ পরিধান করত। এই থোবরা টুপি থেকে খোলা এবং লাগানো যেত। জুয়েভ সেনাদলের কাছ থেকে জানা যায় যে, দায়িত্বের বাহিরে থাকাকালীন সময়ে তারা বিভিন্নভাবে ফেজ পরিধান করত। উত্তর আফ্রিকান বাহিনীর সেনা দলগুলোর ফরাশি অফিসাররা তাদের পদবির প্রতীক যুক্ত একই ধরনের ফেজ পরিধান করত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গৃহযুদ্ধের সময়ে অনেক জুয়েভ সেনাদলের সদস্য ফরাশি উত্তর আফ্রিকায় প্রচলিত ফেজ পরিধান করত। ইতালী ঔপনিবেশিক বাহিনীর লিবিয় ব্যাটালিয়ন এবং স্কোয়াড্রন এর সদস্যরা মাথার খুলি-টুপির সাথে নিচু লাল রঙের ফেজ পরিধান করত। ইতালির অধীনে থাকা সোমালি এবং এরিত্রিয় সেনাদলের সদস্যরা উচু রঙিন কাপড় যুক্ত ফেজ লাল ফেজ পরিধান করত। সেনাদলগুলোর মধ্যে কাপড়টির রঙের পার্থক্য ছিল। প্রায় সকল উপলক্ষেই জার্মান আসকারী সদস্যরা খাকি আবরণ যুক্ত ফেজ পরিধান করত।
ফরাশি টিহাইয়িয়র, সেনেগালাইস এবং পর্তুগিজ কম্পনিয়াস ইন্ডিজিনেজ এর মতো বেলজিয়ামের ফোর্স পাবলিক কঙ্গোতে একটি বড় এবং ফ্লোপি লাল ফেজ পরিধান করত। ব্রিটিশ কিং’স আফ্রিকান রাইফেল (পূর্ব আফ্রিকায় গঠিত) এর সদস্যরা সমান-পাশ্বীয় ফেজ লাল বা সাদা ফেজ পরিধান করত এবং দ্য ওয়েস্ট আফ্রিকান ফ্রন্টিয়ার ফোর্স এর সদস্যরা একটি নিচু লাল রঙের ফেজ পরিধান করত।[২৭] ১৯৫০ সাল পর্যন্ত মিশরীয় সেনাবাহিনী তুরস্কে প্রচলিত ফেজ পরিধান করত।১৯২৮ সালে বিযুক্ত হয়ে যাওয়া পর্যন্ত ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর পশ্চিম ভারতীয় সেনাদল তাদের জুয়াভে সেনাদলের মতো উর্দির অংশ হিসেবে ফেজ পরিধান করত। বারবাডোস সেনাদলের ব্যান্ড এর সদস্যরা সম্পূর্ণ পোষাকের অংশ হিসেবে, পাগড়ি যুক্ত ফেজ পরিধান করেন।
ফেজ রঙিন এবং মনোরম হলেও, এটি অনেক ক্ষেত্রেই অবাস্তবসম্মত একটি টুপি। কম গাঢ় রঙের কোনো আবরণ না পরিধান করলে, এটি শত্রুদের জন্য সহজ লক্ষ্যে পরিণত হয় এবং সূর্য থেকেও এটি খুব অল্প পরিমাণে রক্ষা করে। ফলস্বরূপ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে এটি শুধু পদযাত্রা এবং সৈন্যদের দায়িত্বে না থাকাকালীন সময়ে পরিধান করার জন্য ব্যবহৃত হতো। ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত ফ্রান্সের টিহাইয়িয়র একটি খাকি রঙের আবরণ সহ ফেজ পরিধান করত। ঔপনেবিশিক শাসনের শেষ পর্যায়ে, ফেজকে শুধুমাত্র ফরাশি, স্পেনীয়, ব্রিটিশ এবং পর্তুগিজ আফ্রিকান সেনাদলের পূর্ণ পোষাকের অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হতো এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে, বড় প্রান্ত যুক্ত টুপি বা ফরেজ ক্যাপ দ্বারা ফেজ প্রতিস্থাপিত হয়।
আফ্রিকার স্বাধীনতা পরবর্তী সেনাবাহিনীগুলো ফেজকে ঔপনেবেশিক অবশেষ হিসেবে বিবেচনা করে প্রত্যাখ্যান করে। এটি এখনো সেনেগালের গার্ডে রোগ এর সদস্যরা তাদের স্পায়ি বাহিনীর মতো পোষাকের অংশ হিসেবে এবং ইতালির বারসাগ্লিয়েরি এর সদস্যরা বিশেষ ধরনের পোষাক হিসেবে পরিধান করেন। ইতালির বারসাগ্লিয়ে সেনাদল ফরাশি জুয়েভা সেনাদলের প্রভাবের কারণে ফেজ গ্রহণ করেছে, যাদের সাথে তারা ক্রিমিয়ার যুদ্ধে এক দল হিসেবে লড়াই করেছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ইতালির আরদিতি সেনাদলের সদস্যর কালো ফেজ পরিধান করত, যা পরবর্তীতে মুসোলিনি এর ফ্যাসিবাদী বাহিনীর পোষাকে পরিণত হয়।[২৮] দক্ষিণ আফ্রিকার কুয়েতা এবং মানিলার ছিটমহলে অবস্থানরত স্পেনীয় (পূর্বে মুরিশ) রেগুরালেস, তাবোর বাহিনীর পোষাকের অংশ হিসেবে ফেজ এবং সাদা চাদর রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রথমদিকে সেখানে গঠিত ফিলিপিনো সেনাদলগুলোতে কালো ফেজ পরিধান করার নীতি ছিল এবং ফিলিপাইনের আঞ্চলিক বাহিনীর সাথে নিযুক্ত অফিসাররা ১৯০৯ সালে ফেজ পরিধানের অনুমতি লাভ করেন।[২৯] লিবারিয়ান ফ্রন্টিয়ার ফোর্স কোনো ঔপনিবেশিক বাহিনী না হলেও তাদের সদস্যরাও ১৯৪০ এর দশকে ফেজ পরিধান করত।
অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি সাম্রাজ্যে অধীনে থাকা বসনিয়ার পদাতিক বাহিনীগুলো প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার সময় পর্যন্ত ফেজ পরিধান করত। তারা নিজস্ব বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন এক ধরনের ধূসর এবং হালকা নীল রঙের পোষাক পরিধান করত, যার সাথে একটি ফিতা ছিল যাতে বমনিয়াক জাতির প্রতীক, (একটি ঢালের মধ্যে একটি শমশের এবং বাহু) থাকত।[৩০] দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে, বসনিয়ায় গঠিত মুসলিম সংখ্যগরিষ্ঠ্য, এসএস. হ্যান্ডচার এর ১৩ তম ওয়াফেন মাউন্টেইন ডিভিশনের সদস্যরা একটি লাল বা ধূসর রঙের ফেজ পরিধান করত।
ব্রিটিশ শাসনের অধীনে থাকা ভারতীয় সেনাবাহিনীর দুটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ্য অঞ্চল থেকে গঠিত সেনাদল ফেজ পরিধান করত (যদিও হিন্দু এবং মুসলিম সিপাহী এবং সোয়ার্স প্রায় সবাই পাগড়ি পরিধান করত)। ১৯৬০ এর দশক পর্যন্ত পাকিস্তানের ভাওয়ালপুর ল্যান্সারের সদস্যরা সবুজ রঙের ফেজ পরিধান করেন।[৩১]
মনে করা হয় যে, চেচিয়া উজবেকিস্তানে প্রথম তৈরি হয়। ফেজ এর তুলনায় এটি ছোট এবং নমনীয় পদার্থ দিয়ে তৈরি হওয়ায় বেশি নমনীয় এবং নরম। ১৭ শতকের মধ্যে চেচিয়া প্রস্তুতকারকরা তিউনিসিয়ার রাজধানী তিউনিসে চলে আসেন। ২১ শতক পর্যন্ত চেচিয়া তৈরির পদ্ধতি একই থাকলেও প্রস্তুতকারকের সংখ্য হ্রাস পেয়েছে। দক্ষিণ এক-চাউচিন এর বাজারে সর্বোচ্চ ৩০,০০০ চাউচি (চেচিন প্রস্তুতকারক) ছিলেন, ২০১০ এর দশকে সেই সংখ্য হ্রাস পেয়ে প্রায় ২০ জনে দাড়িয়েছে, যারা তাদের ব্যবসা বাঁচিয়ে রাখতে সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। আধূনিক চেচিয়া ব্যবসায় প্রায় ২০০০ জনের কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে এবং অন্যান্যরা লিবিয়া, নাইজেরিয়া এবং নাইজার সহ অন্যান্য দেশে চলে গেছেন। দেশ অনুযায়ী চেচিয়ার রং এর বিভিন্নতা দেখা যায়। তিউনেসিয়ায় এটি লাল রঙের হয় এবং সাথে কোনো থোবা থাকে না। লিবিয়ায় সাধারণত কালো রঙের চেচিয়া পাওয়া যায়, তবে বেনগাজিতে “চেন্না” নামে অভিহিত এক ধরনের চেচিয়া প্রচলিত যা সাধারণত লাল রঙের হয় এবং সাথে একটি থোবা থাকে। মরক্কো এবং তিউনেসিয়ার কিছু অঞ্চলে সাদা বা ধূসর রঙের চেচিয়া পাওয়া যায়।[৩২]
নিজাম এর শাসনামলে, তিনি ফেজ পরিধান করে রোমে ভ্রমণ করেন। এটি পরিধানের কারণ ছিলে এই, নিজাম ওসামা আলী খান এর উচ্চতা মাত্র ৫ ফুট ছিল। তিনি বিশেষ উপলক্ষে অন্যান্য দেশের প্রতিনিধিদের সাথে সাক্ষাতের সময়ে একটি রুমি টুপি পরিধান করতেন। তার বংশধর, হেমায়েত আলী মির্জা এর মতে, তিনি মূল্যবান কাপড় পরিধান করতেন না, কিন্তু তার উচ্চতা গোপন করতে রুমি টুপি ব্যবহার করতেন এবং তার পুত্র, মোয়াজ্জেম জাহ এর প্রতি রুমি টুপি পরিধান করার উপদেশ দেন।[৩৩]
ফেজকে “রুমি টুপি” নামেও পরিচিত, যার অর্থ “রোমান টুপি” (বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় উসমানীয় সাম্রাজ্য পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যের উত্তরসূরী রাষ্ট্র)। দক্ষিণ এশিয়ার অভিজাতন্ত্রের কিছু অঞ্চলে এ ফেজ পরিধান করা হতো। এটি খিলাফত আন্দোলনে ব্রিটিশ ভারতীয় সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে উসমানীয় সাম্রাজ্যের প্রতি সমর্থনের একটি প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পরবর্তীতে, এটি মুসলিম লীগের সাথে সম্পর্কিত হয়ে পড়ে, যে রাজনৈতিক দলের কারণে পাকিস্তানের সৃষ্টি হয়। পাকিস্তানের রাজনীতিবিদ, নবাবজাদা নসরুল্লাহ খান ২০০৩ সালে, তার মৃত্যু পর্যন্ত ফেজ পরিধান করেন।
শ্রীলঙ্কায় স্থানীয় মুর জনগোষ্ঠীতে ফেজ পরিধানের প্রচলন আছে। ফেজ জনপ্রিয়তা কমে যাওয়ার পরেও, ঐতিহ্যবাহী বিয়ের অনুষ্ঠানে এখনও এর ব্যবহার আছে। এটি এখনও “কাদেরিয়াতুন নবনিয়া” (সুফি অনুসারীরা) পরিধান করেন।
১৯ শতকে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এক ধরনের ফেজ পরিধান করা হতো, যা দক্ষিণ এশিযার মুসলিমদের দ্বারা প্রচলিত হয়েছিল। মালয়েশিয়ায় সংকোক এবং ইন্দোনেশিয়ায় পেচি নামে পরিচিত এই টুপিগুলো সাধারণত কালো রঙের আরো বৃত্তাকার আকারের হয় এবং কখনো কখনো এর উপর কারুকার্য করা থাকে। ফিলিপাইনে রঙিন এবং আরো সজ্জিত এক ধরনের ফেজ এর প্রচলন আছে।
ভাতৃত্বমূলক সংগঠনের সদস্যরা অনেক সময়ে ফেজ পরিধান করেন।[৩৪] শ্রাইনারদের অনেক সময়ে লাল ফেজ পরিধানরত অবস্থায় চিত্রিত করা হয়েছে। ১৮৭২ সাল থেকে এই টুপিটি শ্রাইনারদের জন্য আনুষ্ঠানিক করা হয়।[৩৫] আন্তর্জাতিক আলহামব্রা সংস্থার সদস্যরা সাদা ফেজ পরিধান করেন। মিস্টিক অর্ডার অব ভেইলড প্রোফেটস এর সদস্যরা কালো ফেজ পরিধান করেন। দ্য নাইটস অব পিটার ক্লেভার এর সদস্যরা নীল ফেজ পরিধান করেন এবং এনসেন্ট মিস্টিক অর্ডার অব সেমেটারিয়ানস এর সদস্যরা তাদের পদবীর ভিত্তিতে বিভিন্ন রঙের ফেজ পরিধান করেন। দ্য নাইটস অব খোরাসান এর সদস্যরা আকাশি রঙের এবং ইমপ্রুভড ভেনেভ্যাল্যান্ট এন্ড প্রটেক্টিভ অর্ডার অব অ্যালকস অব দ্য ওর্য়াল্ড এর সদস্যরা তার পদবীর ভিত্তিত বিভিন্ন রঙের ফেজ পরিধান করেন। দ্য রোয়াল অর্ডার অব মুজেজ সেকেন্ড ডিগ্রি বোডি এবং দ্য মুজ লেজিওন এর সদস্যরা বেগুনী রঙের ফেজ পরিধান করেন। লোরেল এবং হার্ডি এর “সনস অব দ্য ডেজার্ট” চলচিত্রে কাল্পনীক দলটির সদস্যরা লরেল এন্ড হার্ডি ইন্টারন্যাশনাল অ্যাপ্রেসিয়েশন সোসাইটি এর সদস্যের মতো ফেজ পরিধান করত।
ব্রিটিশ কৌতুক অভিনেতা, টমি কুপার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে মিশরে অবস্থানকালীন তার কৌতুক অভিনয়ে ফেজ এর ব্যবহার করেন। সেই টুপিটি তার হলমার্কে এবং ২০ শতাব্দির কৌতুক অভিনয়ের প্রতীকে পরিণত হয়।[৩৬] ডক্টর হু টেলিভিশন অনুষ্ঠানে অভিনয় করা ১১তম ডাক্তারের চরিত্রে অভিনয় করার সময়ে ম্যাট স্মিথ ফেজ ব্যবহার করেন। পরবর্তীতে পর্বগুলোতে অন্যান্য ডাক্তাররা এর পুনরাবৃত্তি ঘটায়।[৩৭]
FEZ. (From Fez in Morocco). Of Turkish origin.
The fez used to be common headwear in Mediterranean countries and originated from Morocco.
The origin of the fez is disputed. One historian, Jeremy Seal, says the hat originated in Turkey where the Sultan Mahmoud II sought to replace the cloth turban with a modern headpiece. The fez bore no brim to enable good Muslims to press their heads to the ground in prayer, according to Seal's "A Fez of the Heart," a history of the hat. Others say the hat got its name from the city in Morocco from which the red-berry dye originates.
The Turkish fez