ইউটিসি সময় | ?? |
---|---|
তারিখ * | ১৭ জানুয়ারি ১৯৯৫[[Category:EQ articles using 'date' or 'time'(deprecated)]] |
মূল সময় * | ০৫:৪৬:৫৩[১] |
মাত্রা | ৬.৯ Mw[১] |
গভীরতা | ১৭.৬ কিমি (১০.৯ মা)[১] |
ভূকম্পন বিন্দু | ৩৪°৩৫′ উত্তর ১৩৫°০৪′ পূর্ব / ৩৪.৫৯° উত্তর ১৩৫.০৭° পূর্ব[১] |
ধরন | প্রকম্পিত[২] |
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা | জাপান |
মোট ক্ষয়ক্ষতি | $২০০ বিলিয়ন ইউএসডি[৩] |
সর্বোচ্চ তীব্রতা | শিন্ডো ৭ |
শৃঙ্গ ত্বরণ | ০.৮ g |
হতাহত | ৫,৫০২–৬,৪৩৪জন নিহত[২] ৩৬,৮৯৬–৪৪,৭৯২জন আহত[২] ২,৫১,৩০১–৩,১০,০০০ বাস্তুচ্যুত[২] |
* Deprecated | See documentation. |
মহা হানশিন ভূমিকম্প (阪神・淡路大震災 Hanshin Awaji daishinsai), বা কৌবে ভূমিকম্প , ১৯৯৫ সালের ১৭ জানুয়ারি ০৫:৪৬:৫৩ ঘটিকায় (জানুয়ারি ১৬ ২০:৪৬:৫৩ ইউটিসি) হানশিন নামে পরিচিত জাপানের দক্ষিণাঞ্চলীয় হিয়োগো অঞ্চলে সংঘটিত হয়। এর মাত্রা ছিল ৬.৯ এবং শিন্দো তীব্রতা স্কেলে ৭ জেএমএ ছিল।[৪] ভূকম্পনটির স্থায়িত্ব প্রায় ২০ সেকেন্ডের মতো ছিল। কৌবে শহর থেকে ২০কিমি দূরে আওয়াজি দ্বীপের উত্তরপ্রান্তে ১৭ কিমি ভূগর্ভে ভূমিকম্পটির কেন্দ্রস্থল ছিল।
ভূমিকম্পের ফলে ৬,৪৩৪ জন লোক প্রাণ হারায়; যার প্রায় ৪৬০০ জন কবে অঞ্চলের বাসিন্দা ছিল।[৫] প্রধান শহরগুলোর মধ্যে, ১৫কোটি জনসংখ্যা সহ উপকেন্দ্রের নিকটস্থ শহর কোবেতে সবথেকে শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। ১৯২৩ সালে গ্রেট কান্টো ভূমিকম্পের পর ২০শতকের মধ্যকার সময়ে এটি জাপানের সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প ছিল, যার ফলে ১,০৫,০০০ এরও বেশি মানুষ মারা গিয়েছিল।
জাপানের সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্পসমূহ ফিলিপাইন সাগরীয় পাত বা প্রশান্ত মহাসাগরীয় পাত অনুরণন দ্বারা সৃষ্টি হয়ে থাকে, যা অনুরণন প্লেটে শক্তি উদ্গিরন বা পাতের মধ্যে হঠাৎ চাপ হ্রাস হওয়ার ফলে সংঘটিত হয়। উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় জাপানের উপকূলীয় অঞ্চলে এই ধরনের ভূমিকম্প বিশেষত ঘনঘন হয়।[৬]
মহা হানশিন ভূমিকম্প একটি তৃতীয় প্রকারের ভূমিকম্প, যেটাকে অন্তর্দেশীয় অগভীর ভূমিকম্প বলা হয়।[৭] সক্রিয় স্থানচ্যুতি এলাকায় এধরনের ভূমিকম্প হয়ে থাকে। খুব কম মাত্রার ক্ষেত্রেও এধরনের ভূমিকম্প অনেক ধ্বংসাত্মক হতে পারে কেননা এ দুর্ঘটনা জনবহুল এলাকার নিকটবর্তী এবং ভূপৃষ্ঠের ২০ কিলোমিটারের কম উপকেন্দ্রে সংঘটিত হয় বলে। মহা হানশিন ভূমিকম্প আওয়াজি দ্বীপের উত্তরে অনুভূত হয়, যা কোবে অঞ্চলের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত। এটি দক্ষিণপশ্চিম দিকে আওয়াজির নজিমা স্থানচ্যুতি বরাবর এবং উত্তরপূর্ব দিকে সুমা ও সুয়্যামা স্থানচ্যুতি বরাবর ছড়িয়ে পড়ে, যা কৌবের কেন্দ্র দিয়ে চলে গেছে।[৮] এই স্থানচ্যুতির বিকৃতির পর্যবেক্ষণসমূহ পূর্বাভাস দেয় যে এই অঞ্চলটি পূর্ব-পশ্চিম সংকোচন দ্বারা পরিচালিত হয়, যা পূর্বের পরিচিত ভূত্বকের আন্দোলনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।[৯] পশ্চিম জাপানে ১৮৯১ এবং ১৯৪৮ সালের মাঝামাঝি সময়ের ভূমিকম্পের মতো ১৯৯৫ সালের ভূমিকম্পের ফলে প্রকম্পিত প্রক্রিয়াটি পূর্ব-পশ্চিমে ইউরেশীয় পাতের সংকোচনের ফলে মধ্য হোনশুতে ফিলিপাইন সাগরীয় পাতের সাথে সংঘর্ষের কারণে সৃষ্টি হয়েছিল।[১০]
১৭ জানুয়ারী, ১৯৯৫-এর সকাল ০৫:৪৬ জেএসটির সময় এমজে ৭.৩ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। এটি ২০ সেকেন্ড স্থায়ী ছিল। এই সময় নোয়জিমা ফল্টের দক্ষিণ পার্শ্ব ডানদিকে ১.৫ মিটার এবং নিচের দিকে ১.২ মিটার সরে যায়। আগের দিনে ১৮:২৮ ঘটিকায় শুরু হয়ে সর্বোচ্চ (এমজে ৩.৭) চারটি প্রকম্পন অনুভূত হয়েছিল।
এটি জাপান আবহাওয়া সংস্থা (জেএমএ) এর ভূতাত্ত্বিক তীব্রতা (জাপানি ভাষায় শিন্ডো) স্কেলে সর্বোচ্চ ৭ মাত্রার একটি ভূমিকম্প ছিল যেটি প্রথমবারের মত সরকারিভাবে পরিমাপ করা হয়েছিল। এই ভূমিকম্পের পরে, জাপানে ভূমিকম্পের তীব্রতা পর্যবেক্ষণ সম্পূর্ণরূপে যান্ত্রিক করে তুলা হয়েছিল (এপ্রিল ১৯৯৬ থেকে) এবং জেএমএ সিসমিক তীব্রতার স্তর ৫ এবং ৬ প্রতিটিকে দুটি স্তরে (অক্টোবর ১৯৯৬ সালে) ভাগ করা হয়।
জেএমএ-এর ঘটনাস্থল সংক্রান্ত অনুসন্ধানে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে ভূমিকম্পের ফলে উত্তর আওয়াজী দ্বীপের (বর্তমান আওয়াজি শহর) বিশেষ কিছু এলাকা এবং কৌবে, আশিয়া, নিশিনোমিয়া এবং টাকারাজুক শহরগুলিতে ভূমিকম্পের তীব্রতা ছিল ৭।[১১]
কানসাই, চুউগোকু, শিকোকু এবং চুউবু অঞ্চলের পর্যবেক্ষণ বিন্দুতে ভূমিকম্পের তীব্রতা ছিল ৪ থেকে ৬ মাত্রার:[১১]
ক্ষয়ক্ষতি অত্যন্ত ব্যাপক এবং গুরুতর ছিল। ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্ট ভূকম্পনে প্রায় ৪,০০,০০০ ভবন,[৩][১২] অসংখ্য উবু সড়ক ও রেল সেতু, এবং কোবে বন্দরের ১৫০ কিলোমিটারের মধ্যে ১২০টি অবতরণস্থল অমেরামতযোগ্য হয়ে পড়ে। ভূমিকম্পটি ৩০০টি অগ্ন্যুৎপাতের সৃষ্টি করে,[৩] যা শহরের বেশির ভাগ অংশে দেখা যায়।[১৩] পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহে বাধার সম্মুখীন হওয়া খুবই সাধারণ ব্যাপার ছিল। তাছাড়া, নগরবাসীরা বেশ কয়েক দিন ধরে ভূমকম্পনের (অনুভূত ৭৪টি ভূমকম্পন যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল) ফলে বাড়ি ফিরতে ভয় পাচ্ছিল।
অধিকাংশ মৃত্যু হিয়োগো প্রশাসনিক অঞ্চলের শহরগুলি ও শহরতলিতে হয়েছিল, যার সংখ্যা ছিল ৪,০০০-এরও বেশি। ১৮ বছরের কম বয়সী ৬৮ শিশু অনাথ হয়েছিল, যেখানে আরো ৩৩২ শিশু তাদের বাবা বা মায়ের মধ্যে একজনকে হারিয়েছে।[১৪]
সবচেয়ে গুরুতরভাবে আঘাতপ্রাপ্ত এলাকার পাঁচটি ভবনের মধ্যে একটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে পড়েছিল (বা বসবাসের অনুপযোগী ছিল)। কোবেের মধ্যাঞ্চলীয় ব্যবসায়িক জেলার প্রায় ২২% কার্যালয় ধ্বংস হয়ে যায় এবং সেই এলাকার অর্ধেকেরও বেশি বাড়িঘর অযোগ্য বলে বিবেচিত হয়। অধুনা ১৯৮১ ভবন কোড অনুসারে নির্মিত বহুতল বাসাবাড়ী কম ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়; যাইহোক, যেসব স্থাপনা এই মানদণ্ড অনুসরণ না করে নির্মিত হয়েছিল সেগুলো গুরুতর অবকাঠামোগত ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
বেশিরভাগ পুরোনো ঐতিহ্যবাহী বাসাবাড়িতে ভারী টালি ছাদ ছিল, যা ওজনে প্রায় দুই টনের মতো হত, যার ফলে এগুলোর পুনঃপুন টাইফুনকে প্রতিহত করার প্রবণতা ছিল, তবে এগুলো শুধুমাত্র হালকা কাষ্ঠ-সমর্থক ফ্রেম দ্বারা আটকানো থাকতো। যখন কাঠের সমর্থন খুলে পড়ত, তখন উপরের ছাদটি দেয়াল এবং অভ্যন্তরীণ ছাঁদ থেকে খসে পড়ত। নতুন ঘরবাড়িতে এ সমস্যা এড়ানোর জন্য দেয়াল এবং হালকা ছাদগুলিকে শক্ত করে লাগানো হত, তবে এগুলো টাইফুনের জন্য অপ্রতিরোধ্য ছিল না।
মহাসড়ক ও সুড়ঙ্গসড়কের ছবিতে ভূমিকম্পের সবচেয়ে স্পষ্ট চিত্র ফুটে উঠেছিল, এবং ভেঙ্গেপড়া উড়াল হানশিন এক্সপ্রেসওয়ের ছবি বিশ্বব্যাপী সংবাদপত্রগুলোর প্রথম পাতায় স্থান করে নিয়েছিল। জাপানের বেশিরভাগ মানুষ ধারণা করেছিল যে ইস্পাত-নির্মিত কংক্রিটের ডিজাইনকৃত কাঠামোসমূহ ভূমিকম্পটির ক্ষতির তুলনায় অপেক্ষাকৃত নিরাপদ ছিল। যদিও নির্মাণ-সম্বন্ধীয় প্রাথমিক ধারণাটি প্রায় অহেতুক ছিল, বরং পরবর্তীতে দেখানো হয়েছিল যে বেশিরভাগ পতিত অবকাঠামোসমূহ ১৯৬০-এর দশকের বিল্ডিং কোড অনুযায়ী ঠিকঠাকভাবে নির্মিত হয়েছিল। যাইহোক, ১৯৬০-এর বিধানগুলি ইতোমধ্যে ইস্পাত-দৃঢ় নমুনাবিশেষকে অপর্যাপ্ত বলে আবিষ্কৃত হয়েছে এবং বেশ কয়েকবার সংশোধিত হয়েছে, যেটির সর্বশেষ সংশোধনীটি ১৯৮১ সালে কার্যকরী প্রমাণিত হলেও শুধুমাত্র নতুন কাঠামোর জন্য প্রয়োগ করা যেত।
কোবে ও নিশিনোমিয়ায় তিনটি স্থানে 'হানশিন এক্সপ্রেসওয়ে রুট ৪৩' এর দশটি স্প্যান চাপা পড়ে যায়, যা ওসাকা-কোবে সড়কের ৪০ শতাংশ যানবাহন চলাচলে ব্যবহৃত হয়। উড়াল এক্সপ্রেসওয়েেটির জেটির অর্ধেক কোন কোন স্থানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল এবং সমগ্র রুটটি ১৯৯৬ সালের ৩০ সেপ্টেম্বরের আগ পর্যন্ত খোলা যায় নি।
কম ভারী ব্যবহৃত রুট ২য়ে তিনটি সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, তবে রুট ৪৩-এর দিকে মহাসড়কে পুনরায় খুলে দেওয়া হয়েছিল এবং একটি সময়ে এটিকে প্রধান আন্তঃসড়ক হিসেবে সংযোগ করে ব্যবহার করা হয়েছিল। শুধুমাত্র মেইশিন এক্সপ্রেসওয়েটি সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, তবে ১৭ই ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত এটি বন্ধ রাখা হয়েছিল যাতে জরুরি যানবাহন সহজেই পশ্চিমের গুরুত্বর-আঘাতপ্রাপ্ত এলাকায় প্রবেশ করতে পারে। ২৯ জুলাইয়ের আগ পর্যন্ত চারটি লেনকে একসঙ্গে যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়নি।[১৫] উচ্চ ধারণক্ষমতাসম্পন্ন মহাসড়কের পতনের কারণে বেশ কয়েকটি সমতল মহাসড়ক কিছু সময় আটকা পড়েছিল।
এছাড়াও এ অঞ্চলের অধিকাংশ রেলওয়ে এই ভূমিকম্পের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভয়াবহ এই ভূমিকম্পের পর ওসাকা-কোবে রেলপথের মাত্র ৩০% রাস্তা যান চলাচলের জন্য সচল ছিল। 'কোবে র্যাপিড রেললাইনের' ডাইকাই স্টেশনটি ধসে পড়ে, যা জাতীয় রুট ২৮-এর কিছু অংশকে নিমজ্জিত করে দেয়। শিনকানসেন উচ্চ গতির রেল লাইন ট্র্যাকের উপর অবস্থিত মজবুত কংক্রিট পাইলের অভ্যন্তরে কাষ্ঠ-সমর্থক ভেঙ্গে পড়েছে বলে অনুমান করা হয়, যার ফলে সমগ্র লাইনটি বন্ধ করে দেয়া হয়। তবে, ভূমিকম্পের পর রেলপথ দ্রুত সচল করা হয়, যা এক মাসে ৮০% কার্যক্ষম হয়ে উঠে।
কৃত্রিম দ্বীপসমূহ, যেমন আধুনিক রোক্কো আইল্যান্ড এবং বিশেষ করে কোবে'র পোর্ট আইল্যান্ড, মাটির তরলীকরণের ফলে গুরুতর ক্ষতির সম্মুখীন হয়; ভূপৃষ্ঠের মধ্য দিয়ে ভাঙ্গনের পানি এবং এই দ্বীপগুলোতে বন্যা প্রথমে সমুদ্র থেকে এসেছিল বলে ধারণা করা হয়, তবে দ্বীপগুলি নির্মাণের জন্য একসময় কঠিন মৃত্তিকার তরল পদার্থ ব্যবহৃত হয়েছে। যাইহোক, নবনির্মিত কৃত্রিম দ্বীপকে সহায়তাকারী কানসাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি উল্লেখযোগ্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় নি, কারণ এটি উপকেন্দ্র থেকে অনেক দূরে অবস্থিত ছিল এবং এটি সর্বশেষ মানদণ্ড অনুযায়ী নির্মিত হয়েছিল। ভূমিকম্পের উপকেন্দ্রের কাছাকাছি অবস্থিত নির্মাণাধীন আকাশী কাইকো সেতু ততটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি কিন্তু সক্রিয় টেকটনিক ফল্ট বরাবর অনুভূমিক স্থানচ্যুতির কারণে পুরো এক মিটার দৈর্ঘ্যে বৃদ্ধি পায় বলে প্রতিবেদনে উঠে আসে।
জাপানের বাইরে এই ভূমিকম্পকে সাধারণত কোবে ভূমিকম্প নামে ডাকা হয়। জাপানে, এই ভূমিকম্প বিপর্যয় আনুষ্ঠানিকভাবে দ্য গ্রেট হানশিন-আওয়াজি ভূমিকম্প দুর্যোগ (阪神・淡路大震災 হানশিন-আওয়াজি ডাইশিনসাই) নামে পরিচিত, যা সংক্ষেপে গ্রেট হানশিন ভূমিকম্প দুর্যোগ (阪神大震災 হানশিন ডাইশিনসাই) নামে পরিচিত। হানশিন মূলত ওসাকা এবং কোবের মধ্যবর্তী অঞ্চলকে বুঝায়। বৈজ্ঞানিক সাহিত্যে এটি ১৯৯৫-এর দক্ষিণ হিয়োগো প্রশাসনিক অঞ্চলের ভূমিকম্প (平成7年 (১৯৯৫ 年) 兵庫県南部地震 হেইসেই ৭ নেন (১৯৯৫ নেন) হিয়োগো-কেন নুনবু জিশিন) নামে পরিচিত, যেটি জাপান আবহাওয়া সংস্থা কর্তৃক নির্বাচিত একটি নাম যা প্রধান ভূকম্পনের এক সপ্তাহ পর নামকরণ করা হয়।
এই ভূমিকম্পের ফলে পৃথিবীর ষষ্ঠ বৃহত্তম কনটেইনার বন্দরটি এবং কোবের শিল্প উৎপাদনের প্রায় ৪০% উৎসসমূহের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।[১৬]
ভূমিকম্পের ভয়াবহতার কারণে জাপানি স্টক মার্কেটে ব্যাপক দরপতন ঘটে, ভূমিকম্পের পরের দিন নিক্কি ২২৫ সূচক নেমে ১,০২৫ পয়েন্টে চলে আসে। নিক লীজনের কর্মকাণ্ডেরর ফলে ব্যারিংস ব্যাংক পতন এই আর্থিক ক্ষতির তাৎক্ষণিক কারণ ছিল, যা জাপানি এবং সিঙ্গাপুরীয়দের বিপুল পরিমাণ অর্থের দিকে আলোকপাত করেছিল। জাপানের "হারানো দশক" এর আলোচনাসমূহ পরিষ্কারভাবে অর্থনৈতিক বিশ্লেষণের দিকে নজর দেয় এবং জাপানি অর্থনীতিতে ভূমিকম্পের প্রভাবকে অবহেলা করে, যেটি তখনকার সময়ে মন্দার ফলে ইতোমধ্যে ঘটে গিয়েছিল।
একটি বৃহৎ উৎপাদন কেন্দ্রে পতন হওয়া সত্ত্বেও, স্থানীয় অর্থনীতি খুব দ্রুত চাঙ্গা হয়ে উঠে।[১৬] যদিও ঐ পর্যায়ে বন্দরের সুবিধা অর্ধেকেরও কম পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল, তবে বন্দরের মাধ্যমে বছরে আমদানি শুল্কের পরিমাণ পুরোপুরি ফেরত পাওয়া গিয়েছিল এবং রপ্তানিও ছিল প্রায় কাছাকাছি যেখানে তা দুর্যোগ ছাড়া থাকত।[১৬] ভূমিকম্পের ১৫ মাসেরও কম সময় পর, ১৯৯৬ সালের মার্চ মাসে, বৃহত্তর কোবের উৎপাদন সক্ষমতা প্রাক-ভূমিকম্প স্তরের ৯৮% পৌঁছে যায়।[১৬]
জাপানের সমস্ত স্বেচ্ছাসেবীদের দ্বারা এই ভূমিকম্পের শিকার ব্যক্তিদের সাহায্য করার জন্য কোবেতে একত্রিত হওয়া জাপানের স্বেচ্ছাশ্রমের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল ছিল। ১৯৯৫ সালের বছরটিকে প্রায়ই স্বেচ্ছাশ্রমের উত্থানের একটি সন্ধিক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যা জনমানুষের উদ্যোগের একটি উৎকৃষ্ট রূপ।
১৯৯৫ সালের ডিসেম্বরে, সরকার ১৭ জানুয়ারিকে একটি জাতীয় "দুর্যোগ প্রতিরোধ ও স্বেচ্ছাসেবক দিবস" ঘোষণা করে এবং ১৫ থেকে ২১ জানুয়ারির সপ্তাহটিকে একটি জাতীয় "দুর্যোগ প্রতিরোধ ও স্বেচ্ছাসেবক সপ্তাহ" ঘোষণা করে, যা স্বেচ্ছাসেবীদের দুর্যোগ প্রস্তুতি এবং ত্রাণ প্রচেষ্টাকে উৎসাহিত করার জন্য বক্তৃতা, সেমিনার এবং অন্যান্য আয়োজনের জন্য ডিজাইন করা হয়।[১৭]
ভূমিকম্পটি জাপানের দুর্যোগ প্রতিরোধ কর্তৃপক্ষের জন্য একটি বড় জাগরণ বাণী হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। জাপান সেতুগুলিতে রাবার ব্লক সংজোযন করে এবং অধিকতর দূরবর্তী ভবনগুলির সমান্তরাল ক্ষতি প্রতিরোধ করার জন্য পুনর্নির্মাণ করে। ভূমিকম্পটির পর জাতীয় সরকার তার বিপর্যয়ের প্রতিক্রিয়া নীতি পরিবর্তন করে, যার ফলে ২০০৪ সালের চুয়েৎ্শু ভূমিকম্পের প্রতিক্রিয়া উল্লেখযোগ্যভাবে দ্রুততর এবং আরো কার্যকর করা গিয়েছিল। একটি নির্দিষ্ট মাত্রার ভূমিকম্প প্রতিক্রিয়ার জন্য ভূ আত্ম-প্রতিরক্ষা বাহিনীকে স্বয়ংক্রিয় ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল, যা কয়েক মিনিটের মধ্যে তাদের নিইগাতা প্রশাসনিক অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ার অনুমতি দেয়। এছাড়াও অগ্নি প্রতিক্রিয়ায় নিয়ন্ত্রণ করার জন্য একইভাবে স্থানীয় অগ্নি বিভাগ থেকে টোকিও এবং কিয়োটোর একটি কেন্দ্রীয় কমান্ড বেসের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছিল।[১৮]
পরিবহন অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতির প্রতিক্রিয়া এবং দুর্যোগ এলাকায় জরুরি প্রতিক্রিয়ার ফলস্বরূপ 'ভূমি, অবকাঠামো ও পরিবহন মন্ত্রণালয়' বিশেষ দুর্যোগ প্রতিরোধক রুট নির্ধারণ করে এবং যাতে করে এগুলো অন্য ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি থেকে যতটা সম্ভব টিকে থাকে সেজন্য সড়ক ও পার্শ্ববর্তী ভবনগুলিকে দৃঢ় করতে কাজ শুরু করে।[১৯] হিউগো প্রশাসনিক অঞ্চলের সরকার পরবর্তী বছরে ভূমিকম্প-সহনশীল আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ এবং পাবলিক পার্কসমূহে যোগান দেয়ার জন্য লক্ষ লক্ষ ইয়েন বিনিয়োগ করে।[২০]
কোবে আলোক উৎসব একটি প্রতিযোগিতা যা প্রতি ডিসেম্বরে প্রায় দুই সপ্তাহজুড়ে অনুষ্ঠিত হয়। মোটোমাছিতে অবস্থিত ডাইমারু দোকানের সামন থেকে হিগাশি য়ুয়েনছি পার্ক (কোবের নগর হলের নিকটবর্তী) পর্যন্ত একটি রাস্তা বহুবর্ণের বাতি সমেত খিলান দ্বারা সজ্জিত করা হয় যা ইতালীয় সরকার প্রদান করে। ভূমিকম্পের বার্ষিকী উপলক্ষ্যে স্মরণীয় অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে, প্রতি বছর ১৭ জানুয়ারির প্রথম ঘণ্টায় বৃহত আকারে "1.17" সংখ্যাটি হিগাশি য়ুয়েনছি পার্কে প্রদর্শিত হয়।
ভূমিকম্প পরবর্তী প্রথম তিন মাসে ত্রাণ তৎপরতায় প্রায় ১২ লক্ষ স্বেচ্ছাসেবক জড়িত ছিল। ডায়ি এবং ৭-ইলেভেন এর মত খুচরা বিক্রেতারা তাদের বিদ্যমান সরবরাহ নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে প্রভাবিত এলাকায় সরবরাহের জন্য প্রদান করে, যখন এনটিটি এবং মোটোরোলা আক্রান্তদের বিনামূল্যে টেলিফোন সেবা প্রদান করে। এমনকি ইয়ামাগুচি-গুমি ইয়াকুজা সিন্ডিকেট বিপদগ্রস্ত লোকেদের খাদ্য ও জরুরি ত্রাণ বিতরণে জড়িত ছিল।[২১]
স্থানীয় হাসপাতালসমূহে চিকিৎসার চাহিদা মেটানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে, কারণ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা থেকে সরবরাহকারী এবং সাহায্যকারীদের ফিরে আসার সড়কপথ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল। বিপুল সংখ্যক মানুষকে স্থান স্বল্পতা ও অধিক লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ার কারণে করিডোরে অপেক্ষা করতে বাধ্য করা হয়েছিল। কিছু লোককে প্রতীক্ষা-কক্ষে এবং করিডরে থাকতে হয়েছিল।
পুনরুদ্ধার প্রচেষ্টাকে গতিশীল রাখাঁর জন্য সরকার হানশিন এক্সপ্রেসওয়ে নেটওয়ার্ককের বেশিরভাগ সড়কপথ প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বেসরকারী যানবাহন চলাচলের জন্য বন্ধ করে রাখত এবং বাস, ট্যাক্সি এবং অন্যান্য মনোনীত যানবাহনগুলিকে সীমিত হারে পরিবহন করতে দিত।[২২] গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বিভাগ হওয়া স্বত্তেও হালকা রেল ব্যবস্থকে চলমান রাখা হয়েছিল, শাটল বাসগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত অংশের কাছাকাছি স্টেশনগুলিতে পৃষ্ঠপোষক স্থানান্তর করার জন্য কমিশন দেয়া হয়েছিল।[২৩]
সূত্র