ভৌত বিশ্বতত্ত্ব |
---|
ধারাবাহিকের অংশ |
মহাবিশ্ব হলো সেই অসীম বিস্তার যা মহাকাশ ও সময়ের সমষ্টি এবং তাদের উপাদানগুলি নিয়ে গঠিত। এটি সমস্ত অস্তিত্ব, প্রতিটি মৌলিক পারস্পরিক ক্রিয়া, ভৌত প্রক্রিয়া, এবং ভৌত ধ্রুবককে আবদ্ধ করে, এবং এর ফলে সমস্ত প্রকারের শক্তি ও পদার্থ, এবং তারার গঠন তৈরি করে, সেগুলি অতিপারমাণবিক কণা থেকে সম্পূর্ণ ছায়াপথ পর্যন্ত বিস্তৃত। মহাবিস্ফোরণ তত্ত্ব অনুসারে, মহাকাশ ও সময় একসাথে প্রায় ১৩.৭৮৭±০.০২০ বিলিয়ন বছর আগে উদ্ভূত হয়েছিল, এবং মহাবিশ্ব তারপর থেকে অবিরাম প্রসারিত হচ্ছে। আজ, মহাবিশ্ব এমন বয়স ও আকারে প্রসারিত হয়েছে, যা কেবল অংশবিশেষে পর্যবেক্ষণমূলক হিসেবে পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্ব হিসেবে পরিচিত, যা বর্তমান দিনে প্রায় ৯৩ বিলিয়ন আলোকবর্ষ ব্যাসের। তবে, সম্পূর্ণ মহাবিশ্বের মহাকাশিক আকার, যদি থাকে, তা এখনও অজানা।
|
মহাবিশ্বের ধারণা প্রাচীন যুগ থেকেই মানুষের চিন্তা-ভাবনায় এক রহস্যময় বিষয় হিসেবে উপস্থিত ছিল। প্রাচীন গ্রিক এবং ভারতীয় দার্শনিকরা প্রথম যে বিশ্বতত্ত্বের মডেলগুলি তৈরি করেছিলেন, সেগুলি ছিল ভূকেন্দ্রিক, যেখানে পৃথিবীকে মহাবিশ্বের কেন্দ্রে স্থাপন করা হয়েছিল। কালের পরিক্রমায়, আরও নির্ভুল জ্যোতির্বিজ্ঞানীয় পর্যবেক্ষণ নিকোলাস কোপার্নিকাসের মতো জ্যোতির্বিদদের সৌরকেন্দ্রিক মতবাদ গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করে, যেখানে সূর্যকে সৌরজগতের কেন্দ্রে রাখা হয়। আইজাক নিউটন কোপার্নিকাসের কাজের উপর তার সার্বজনীন মহাকর্ষ সূত্র নির্মাণ করেছিলেন, এবং ইয়োহানেস কেপলারের গ্রহীয় গতিসূত্র এবং ট্যুকো ব্রাহের পর্যবেক্ষণগুলির উপর ভিত্তি করে তিনি তার তত্ত্ব গড়ে তোলেন। এই বিজ্ঞানীদের অবদান আধুনিক মহাবিশ্ব বিজ্ঞানের ভিত্তি স্থাপন করেছে এবং যা মহাবিশ্বের বোঝার উপায়কে পরিবর্তন করেছে।
মহাকাশ পর্যবেক্ষণের অগ্রগতি আমাদের এই অনুধাবনে পৌঁছে দিয়েছে যে, সূর্য আমাদের আকাশগঙ্গা ছায়াপথের অগণিত তারাদের মধ্যে মাত্র একটি। এই ছায়াপথটি আবার পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বের অসংখ্য ছায়াপথের একটি। প্রতিটি ছায়াপথে অসংখ্য তারা রয়েছে, এবং অনেক তারার চারপাশে গ্রহণ্ডলী বিদ্যমান। মহাবিশ্বের বৃহত্তম মাপের স্কেলে, ছায়াপথগুলি সমস্ত দিকে সমানভাবে বিস্তার করে, যা থেকে বোঝা যায় যে মহাবিশ্বের কোনো প্রান্ত বা কেন্দ্র নেই। ছোট মাপের স্কেলে, ছায়াপথগুলি স্তবক এবং মহাস্তবকে বিন্যাস করে, যা মহাকাশে বিশাল শূন্যস্থান তৈরি করে। বিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভের আবিষ্কারগুলি থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে মহাবিশ্বের একটি শুরু ছিল এবং সেই থেকে এটি অবিরাম প্রসারিত হচ্ছে।
প্রাচীন কালে মহাবিশ্বকে ব্যাখ্যা করার জন্য নানাবিধ বিশ্বতত্ত্বের আশ্রয় নেওয়া হত। পুরাতন গ্রিক দার্শনিকরাই প্রথম এই ধরনের তত্ত্বে গাণিতিক মডেলের সাহায্য নেন এবং পৃথিবী কেন্দ্রিক একটি মহাবিশ্বের ধারণা প্রণয়ন করেন। তাদের মডেলে পৃথিবীই মহাবিশ্বের কেন্দ্রে অবস্থিত এবং পৃথিবীকে কেন্দ্র করে সমস্ত গ্রহ, সূর্য ও নক্ষত্ররা ঘুরছে। গ্রীকদের এই মডেলে মহাবিশ্বের মোট আয়তন বর্তমানে জ্ঞাত বৃহস্পতি গ্রহের কক্ষপথের মধ্যেই ছিল। তারা ভেবেছিলেন আকাশের তারারা আমাদের থেকে খুব বেশি দূরে অবস্থিত নয়।
বেশ কয়েক জন জ্যোতির্বিদ পৃথিবীকেন্দ্রিক মহাবিশ্বের ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করলেও যতদিন না চৌদ্দশো শতকে কোপের্নিকাস সৌরকেন্দ্রিক মহাবিশ্বকে যৌক্তিক ভাবে তার বইয়ে উপস্থাপনা করলেন ততদিন পৃথিবীকেন্দ্রিক ধারণা মানুষের মনে দৃঢ়ভাবে গেঁড়ে ছিল। পরবর্তীকালে নিউটনের গতি ও মহাকর্ষ সংক্রান্ত গভীর ধারণা পর্যবেক্ষণের সাথে সৌরকেন্দ্রিক জগতের সামঞ্জস্য নির্ধারণ করে। ধীরে ধীরে জ্যোতির্বিদরা আবিষ্কার করেন সূর্যের মতই কোটি কোটি তারা দিয়ে একটি ছায়াপথ গঠিত। কয়েক শত বছর বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল সমগ্র মহাবিশ্ব মানে শুধুমাত্র আমাদের এই ছায়াপথ ছায়াপথটিই। ১৯২০র দশকে উন্নত দুরবীনের কল্যাণে জ্যোতির্বিদরা আবিষ্কার করলেন ছায়াপথের বাইরে অন্য ছায়াপথদের। [১][২]
সেই কোটি কোটি ছায়াপথদের মধ্যে ছায়াপথের মতই কোটি কোটি নক্ষত্রদের অবস্থান। সেই সমস্ত ছায়াপথদের থেকে আগত আলোর বর্ণালি বিশ্লেষণে বোঝা গেল সেই ছায়াপথগুলি আমাদের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। [৩]
এর সহজতম ব্যাখ্যা হল ছায়াপথদের মধ্যে স্থানের প্রসারণ হচ্ছে এবং প্রতিটি ছায়াপথই অন্য ছায়াপথ থেকে দূরে সরছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা হল সুদূর অতীতে সমস্ত ছায়াপথগুলি বা তাদের অন্তর্নিহিত সমস্ত পদার্থই একসাথে খুব ঘন অবস্থায় ছিল এবং কোন মহা বিস্ফোরণের ফলে বস্তুসমূহ একে অপর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। এই বিস্ফোরণের নাম দেওয়া হল বিগ ব্যাং। ১৯৬০এর দশকে বিজ্ঞানীরা বিগ ব্যাংএ সৃষ্ট উষ্ণ বিকিরণের শীতল অবশেষের সন্ধান পেলেন।[৪] এই তরঙ্গ বিগ ব্যাং ঘটনার প্রায় ৪০০,০০০ বা চার লক্ষ বছর পরে, বস্তু ঘনত্বের হ্রাসের পর, মুক্ত হয়েছিল। এই মাইক্রোওয়েভ বিকিরণ মহাবিশ্বের প্রতিটি জায়গাতেই পাওয়া যায়। এক অর্থে বলা যায় এই তরঙ্গ দৃশ্যমান মহাবিশ্বের শেষ প্রান্ত থেকে আসছে। বিংশ শতাব্দীর শেষে এসে জ্যোতির্বিদরা আবিষ্কার করলেন মহাবিশ্বের প্রসারণ ত্বরাণ্বিত হচ্ছে।[৫] এই আবিষ্কারটি বিশ্বতত্ত্বের কিছু প্রশ্নের উত্তর দিল।
বিগ ব্যাং মডেল অনুযায়ী মহাবিশ্বের শুরু হয়েছিল একটা ভীষণ ঘন ও উষ্ণ দশা থেকে। এই সময় বা অবস্থাকে প্ল্যাঙ্ক ইপোখ বলে অভিহিত করা যায়। সেই সময় থেকে মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ হয়ে চলেছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা শুরুর খুব অল্প সময়ের মধ্যেই (১০−-৩২ সেকেন্ডের মধ্যেই) মহাবিশ্বের অতি স্ফিতী (inflation) হয় যা কিনা দেশ বা স্থানের প্রতিটি অংশে প্রায় একই তাপমাত্রা স্থাপন করতে সাহায্য করে।[৬] এই সময়ে সুসম ঘনত্বের মাঝে হ্রাস-বৃদ্ধির ফলে ভবিষ্যত ছায়াপথ সৃষ্টির বীজ তৈরি হয়। মহাকর্ষ শক্তি মাধ্যমে সম্প্রসারণের বিরূদ্ধে বস্তুজগতকে আকর্ষিত করে ছায়াপথ সৃষ্টির পেছনে কৃষ্ণ বা অন্ধকার বস্তুর বিশেষ ভূমিকা আছে। অন্যদিকে মহাবিশ্বের বর্তমান প্রসারণের মাত্রার ত্বরণের জন্য কৃষ্ণ বা অন্ধকার শক্তি বলে একটি জিনিসকে দায়ী করা হচ্ছে। তাত্ত্বিক ভাবে কৃষ্ণ বস্তু মহাকর্ষ ছাড়া অন্য বলগুলোর সাথে (তড়িৎ-চুম্বকীয়, সবল ও দুর্বল) খুব অল্পই বিক্রিয়া করে সেইজন্য ডিটেকটর দিয়ে তাকে দেখা মুশকিল। বর্তমান মহাবিশ্বের মূল অংশই হচ্ছে কৃষ্ণ শক্তি, বাকিটা কৃষ্ণ বস্তু। আমরা চোখে বা ডিটেকটর মাধ্যমে যা দেখি তা মহাবিশ্বের মাত্র ৫ শতাংশের কম। এই মডেলে মহাবিশ্বের বর্তমান বয়স ১,৩৭৫ কোটি বছর। এই মহাবিশ্বের দৃশ্যমান অংশের "এই মুহূর্তের" ব্যাস প্রায় ৯,৩০০ কোটি আলোকবর্ষ। যেহেতু মহাবিশ্বের প্রতিটি বিন্দু প্রতিটি বিন্দু থেকে প্রতি মুহূর্তে আরো দ্রুত সরছে, মহাবিশ্বের ব্যাস ১,৩৭৫ × ২ = ২,৭৫০ কোটি আলোক বছরের চাইতে বেশি। দেশ বা স্থানের প্রতিটি বিন্দু বহু দূরের কোন বিন্দুর তুলনায় আলোর গতির উর্ধে ভ্রমণ করে, যতক্ষণ না সেই বিন্দুগুলির মাঝে তথ্য আদানপ্রদান না হচ্ছে এই গতি বিশেষ বা সাধারণ আপেক্ষিকতার কোন নিয়ম ভঙ্গ করে না।
মহাবিশ্বের আকার বিশাল। বর্তমান বিশ্বতত্ত্বের মডেল অনুযায়ী মহাবিশ্বের বর্তমান বয়স ১,৩৭৫ কোটি বছর। এই মহাবিশ্বের দৃশ্যমান অংশের "এই মুহূর্তের" ব্যাস প্রায় ৯,৩০০ কোটি আলোকবর্ষ। যেহেতু মহাবিশ্বের প্রতিটি বিন্দু প্রতিটি বিন্দু থেকে প্রতি মুহূর্তে আরো দ্রুত সরছে, মহাবিশ্বের ব্যাস ১,৩৭৫ x ২ = ২,৭৫০ কোটি আলোকবর্ষের চাইতে বেশি। দেশ বা স্থানের প্রতিটি বিন্দু বহু দূরের কোন বিন্দুর তুলনায় আলোর গতির উর্ধে ভ্রমণ করে, যতক্ষণ না সেই বিন্দুগুলির মাঝে তথ্য আদানপ্রদান না হচ্ছে এই গতি বিশেষ বা সাধারণ আপেক্ষিকতার কোন নিয়ম ভঙ্গ করে না। কাজেই পৃথিবীকে কেন্দ্র করে মহাবিশ্বকে যদি একটা গোলক কল্পনা করা হও তবে তার ব্যাসার্ধ হবে প্রায় ৪,৬০০ কোটি আলোকবর্ষ। যদিও সেই দূরত্ত্বে অবস্থিত ছায়াপথ থেকে এই মুহূর্তে যে বিকিরণ বার হচ্ছে তা আমরা কখনই দেখতে পাব না।
জ্যোতির্বিদরা মনে করছেন দৃশ্যমান মহাবিশ্বে প্রায় ১০ হাজার কোটি (১০+১১) ছায়াপথ আছে। এই ছায়াপথগুলো খুব ছোট হতে পারে, যেমন মাত্র ১ কোটি তারা সংবলিত বামন ছায়াপথ অথবা খুব বড় হতে পারে, দৈত্যাকার ছায়াপথগুলিতে ১০০ হাজার কোটি নক্ষত্র থাকতে পারে (আমাদের ছায়াপথের ১০ গুণ বেশি)। দৃশ্যমান মহাবিশ্বে আনুমানিক ৩ x ১০+২৩টি নক্ষত্র থাকতে পারে।[৭]
বর্তমানের মহাজাগতিক মডেল অনুযায়ী মহাবিশ্বের মূল উপাদান মূলতঃ কৃষ্ণ বা অন্ধকার শক্তি। ধরা হচ্ছে যে এই শক্তি সারা মহাবিশ্বে ছড়িয়ে আছে এবং মহাবিশ্বের প্রসারণের পিছনে মূল ভূমিকা পালন করছে। কৃষ্ণ শক্তির পরিমাণ যেখানে ৭৪% ভাগ ধরা হয়, মোট বস্তুর পরিমাণ সেখানে ২৬%। কিন্তু এই বস্তুর মধ্যে ২২% কৃষ্ণ বস্তু ও ৪% দৃশ্যমান বস্তু। কৃষ্ণ বস্তুর অস্তিত্ব পরোক্ষভাবে ছায়াপথর ঘূর্ণন, ছায়াপথপুঞ্জ, মহাকর্ষীয় লেন্সিং, ইত্যাদি পর্যবেক্ষণ মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছে। কৃষ্ণ বস্তু যেহেতু মহাকর্ষ ছাড়া অন্য কোন বলের সংঙ্গে পারতপক্ষে কোন মিথষ্ক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে না, সেই জন্য তাকে সরাসরি পর্যবেক্ষণ করা কঠিন।
মহাবিশ্বের সংঙ্গে আমাদের পরিচয় দৃশ্যমান বস্তুর আঙ্গিকে। পরমাণু ও পরমাণু দ্বারা গঠিত যৌগ পদার্থ দিয়ে এই দৃশ্যমান বিশ্ব গঠিত। পরমাণুর কেন্দ্রে নিউক্লিয়াস প্রোটন ও নিউট্রন দিয়ে গঠিত। প্রোটন ও নিউট্রনকে ব্যারিয়ন বলা হয়। ব্যারিয়ন তিনটি কোয়ার্ক কণা দিয়ে গঠিত। অন্যদিকে দুটি কোয়ার্ক কণা দিয়ে গঠিত কণাদের মেজন বলা হয়। অন্যদিকে লেপটন কণা কোয়ার্ক দিয়ে গঠিত নয়। সবেচেয়ে পরিচিত লেপটন কণা হচ্ছে ইলেকট্রন। প্রমিত মডেল বা স্ট্যান্ডার্ড মডেল কোয়ার্ক, লেপটন ও বিভিন্ন বলের মিথষ্ক্রিয়ায় সাহায্যকারী কণাসমূহ (যেমন ফোটন, বোজন ও গ্লুয়োন) দিয়ে তৈরি। বর্তমানের কণা পদার্থবিদ্যাকে ব্যাখ্যা করতে এই মডেল সফল হয়েছে।
সূর্য আমাদের নিকটবর্তী নক্ষত্র। সূর্য থেকে আলো আসতে ৮ মিনিট মত সময় লাগে, কাজেই সূর্যের দূরত্ত্ব হচ্ছে আনুমানিক ৮ আলোক মিনিট। আমাদের সৌর জগতের আকার হচ্ছে ১০ আলোক ঘন্টার মত। সূর্যের পরে আমাদের নিকটবর্তী তারা হচ্ছে ৪ আলোক বর্ষ দূরত্বে। নিচের চিত্রে ১৪ আলোক বর্ষের মধ্যে অবস্থিত সমস্ত তারাদের দেখানো হয়েছে।
গ্যালাকটিক বারের মহাকর্ষীয় প্রভাবের বাইরে, আকাশগঙ্গা ছায়াপথের ডিস্কে আন্তঃনাক্ষত্রিক মাধ্যম এবং তারার গঠন চারটি সর্পিল বাহুতে সংগঠিত। [৮] সর্পিল বাহুগুলো সাধারণত গ্যালাকটিক বার থেকে উচ্চ ঘনত্বের আন্তঃনাক্ষত্রিক গ্যাস এবং ধূলিকণার থাকে। এটি H II অঞ্চল এবং আণবিক মেঘ দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে।[৯]
নিচের ছবিতে ছায়াপথ ছায়াপথর বাহুসমূহ দেখানো হয়েছে। সূর্য থেকে ছায়াপথর কেন্দ্রের দূরত্ব প্রায় ৩০,০০০ আলোক বর্ষ। ছায়াপথর ব্যাস ১০০,০০০ বা এক লক্ষ আলোক বর্ষ। কেন্দ্রের উল্টোদিকের অংশকে আমরা দেখতে পাই না।
নিচের চিত্রে ছায়াপথের ৫ মিলিয়ন বা ৫০ লক্ষ আলোকবর্ষের মধ্যে অবস্থিত ছায়াপথগুলো দেখানো হয়েছে। এই স্থানীয় ছায়াপথ দলের মধ্যে বড় তিনটি সর্পিল ছায়াপথ - ছায়াপথ, অ্যান্ড্রোমিডা বা M31 এবং M33 একটি মহাকর্ষীয় ত্রিভুজ তৈরি করেছে। অ্যান্ড্রোমিডা ছায়াপথ আমাদের নিকটবর্তী বড় ছায়াপথ। এর দূরত্ব হচ্ছে ২.৫ মিলিয়ন বা ২৫ লক্ষ আলোকবর্ষ। স্থানীয় দলের মধ্যে বেশির ভাগ ছায়াপথই বড় ম্যাজিল্লান মেঘের মত অনিয়মিত ছায়াপথ।
ডান দিকের চিত্রে স্থানীয় ছায়াপথ দল থেকে স্থানীয় ছায়াপথ মহাপুঞ্জের অন্যান্য দলের দূরত্ত্ব দেখানো হয়েছে। এই মহাপুঞ্জের কেন্দ্র কন্যা ছায়াপথ দল হওয়াতে তাকে কন্যা মহাপুঞ্জ বা মহাদল বলা হয়। কন্যা ছায়াপথ পুঞ্জ আমাদের থেকে প্রায় ৬৫ মিলিয়ন বা ৬.৫ কোটি আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। এই ধরনের মহাপুঞ্জগুলো ফিতার আকারের মত। সাবানের বুদবুদ দিয়ে এই ধরনের ছায়াপথপুঞ্জ গঠনের মডেল করা যায়। দুটো বুদবুদের দেওয়াল যেখানে মেশে সেখানেই যেন ছায়াপথর ফিতা সৃষ্টি হয়েছে।
নিচের চিত্রে আমাদের ৫০০ মিলিয়ন বা ৫০ কোটি আলোকবর্ষের মধ্যে অবস্থিত প্রধান ছায়াপথপুঞ্জ ও ছায়াপথ দেওয়াল দেখানো হচ্ছে। এই চিত্রে বুদবুদগুলোর মাঝের শূন্যতা (void) খুব ভাল করেই বোঝা যাচ্ছে। কন্যা ছায়াপথ মহাপুঞ্জসহ ৫০ মেগাপার্সেকের (৫০ মিলিয়ন পার্সেক বা ১৬৩ মিলিয়ন আলোকবর্ষ)মধ্যে সমস্ত পদার্থ ৬৫ মেগাপার্সেক দূরের নর্মা পুঞ্জের (Abell 3627)দিকে ৬০০ কিমি/সেকেন্ডে ছুটে যাচ্ছে। বৃহত্তর স্কেলে ছায়াপথ সৃষ্টির জন্য ব্যারিয়ন ধ্বনি স্পন্দন (Baryon Acoustic Oscillation) যথেষ্ট সফল হয়েছে। এই মডেল অনুযায়ী ছায়াপথ পুঞ্জ মোটামুটি ১০০ মেগাপার্সেক (~৩০০ মিলিয়ন আলোকবর্ষ)স্কেলে বা স্থান জুড়ে সৃষ্টি হবে। স্লোয়ান ডিজিটাল স্কাই সার্ভের ডাটাতে ব্যারিয়ন স্পন্দন ২০০৫এ ধরা পড়ে।[১০]
|doi=
এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য)। বিবকোড:2009PASP..121..213C।