উল্লেখযোগ্য জনসংখ্যার অঞ্চল | |
---|---|
ইরকুৎস্ক ওব্লাস্ট, সাইবেরিয়া, রাশিয়ান ফেডারেশন |
ভৌগলিক সীমা | সাইবেরিয়া |
---|---|
সময় | উচ্চ পুরা প্রস্তর যুগ |
তারিখ | ২৪,০০০–১৫,০০০ বছর পূর্বে |
উত্তরসূরী | আফনতোভা গোরা |
মালটা-বুরেট সংস্কৃতি (Mal'ta–Buret' culture) হচ্ছে উচ্চ পুরা প্রস্তরযুগের (আনু. ২৪,০০০ থেকে ১৫,০০০ বছর পূর্বের) একটি প্রত্নতাত্ত্বিক সংস্কৃতি যা উত্তর আঙ্গারা নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে বৈকাল হ্রদের পশ্চিমাঞ্চলে বর্তমান রাশিয়ান ফেডারেশন এর সাইবেরিয়া অঞ্চলের ইরকুৎস্ক ওব্লাস্টে অবস্থিত। প্রত্নস্থলটির নামকরণ করা হয়েচে ইরকুৎস্ক ওব্লাস্টের উসলস্কি জেলার মালটা গ্রাম ও বোখানস্কি জেলার বুরেট গ্রামের নাম অনুসারে।
১৯২০ সালে মালটা গ্রামের কাছে একটি বালকের দেহাবশেষ আবিষ্কৃত হয়, যে আজ থেকে ২৪,০০০ বছর পূর্বে জীবিত ছিল। দেহাবশেষটি MA-1 নামে পরিচিত। ২০১৩ সালে MA-1 নিয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয় যা অনুসারে, এই বালকটি এমন একটি জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত ছিল যা সাইবেরীয়, আমেরিকান ভারতীয়, ও ব্রোঞ্জ যুগের ইউরেশীয় স্তেপ অঞ্চলের ইয়াম্নায়া ও বোটাই জনগোষ্ঠীর[১] জিনগত পূর্বপুরুষের সাথে সম্পর্কিত।[২][৩] বিশেষ করে আধুনিক কালের আদিবাসী আমেরিকান, কেট, মানসি ও সেলকাপদের মধ্যে এমন প্রচুর পূর্বপুরুষত্ব পাওয়া গেছে যা MA-1 এর সাথে সম্পর্কিত।[৪]
মালটা সংস্কৃতি সম্পর্কে যা যা জানা যায় তার বেশিরভাগই এসেছে রুশ প্রত্নতাত্ত্বিক মিখাইল গেরাসিমভ এর কাছ থেকে। আদালতসম্বন্ধীয় চেহারা পুনর্গঠন নামক নৃতাত্ত্বিক শাখায় অবদানের জন্য অধিক পরিচিত মিখাইল গেরাসিমভ ১৯২৭ সালে মালটায় খনক করে একটি বৈপ্লবিক আবিষ্কার করেন। সেই আবিষ্কারের পূর্বে উত্তর এশিয়ার উচ্চ পুরা প্রস্তরযুগীয় সমাজ সম্বন্ধে কিছুই জানা ছিল না। খনন ও গবেষণার উদ্দেশ্যে বাদবাকি কর্মজীবনে গেরাসিমভ মালটায় আরও দুইবার ভ্রহণ করেন।
মালটায় আধা-ভূগর্ভস্থ বাড়ি ছিল যার দেয়াল তৈরি করা হয় বড় বড় প্রাণীর হাড় দিয়ে আর ছাদ তৈরি হয় হরিণের শিং এর উপর পশুর চামড়া দিয়ে ঢেকে দিয়ে। এধরনের বাসস্থান বসবাসকারীদেরকে সাইবেরীয় কঠোর জলবায়ুর হাত থেকে রক্ষা করত।
যেসব প্রমাণ পাওয়া গেছে সেগুলো নির্দেশ করছে যে, মালটা হল পূর্ব সাইবেরিয়ার সব থেকে প্রাচীন প্রত্নস্থল, যদিও আপেক্ষিক কালনির্ণয় কিছু অনিয়ম দেখায়। সরঞ্জামাদি নির্মাণে ফ্লিন্ট পাথরে আঘাত (Flint knapping) এর ব্যবহার কিন্তু চাপ দিয়ে থাক করার (pressure flaking) অনুপস্থিতি, এবং প্রাথমিক ধরনের প্রস্তরগত সরঞ্জামের অনবরত ব্যবহার থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে তারা প্রাথমিক উচ্চ পুরা প্রস্তরযুগীয় ছিল। তবুও এদের মধ্যে স্ক্রেব্লো (বড় পার্শ্ব ছাটাইকারক বা side scraper) এরও অভাব দেখা গেছে যা অন্যান্য সাইবেরীয় প্রস্তরযুগীয় প্রত্নস্থলে দেখা যায়। এছাড়া এই সংস্কৃতিতে নুড়ি মজ্জা (pebble core), কিলকাকৃতি মজ্জা (wedge-shaped core), বিউরিন (প্রাগৈতিহাসিক মানুষের বাটালি বা ক্ষোদনযন্ত্র) এবং যৌগিক সরঞ্জাম কখনও পাওয়া যায়নি। এইসব বৈশিষ্ট্যের অভাবের কারণে, আর সেই সাথে এদের শৈল্পিক শৈলীর আশেপাশের কেবল একটি প্রত্নস্থলেই পাওয়া যাওয়া - এই দুই মিলিয়ে মালটা সংস্কৃতি হল সাইবেরিয়ার একটি অনন্য সংস্কৃতি।
উচ্চ প্রস্তরযুগে দুই ধরনের শিল্প ছিল: দেয়াল চিত্র বা ম্যুরাল শিল্প যা পূর্ব ইউরোপে বেশি দেখা যায়। আর হল বহনীয় শিল্প বা পোর্টেবল আর্ট যা ম্যামথের দাঁত বা হরিণের শিং-এ খোঁদাই করা হত। এটা পশ্চিম ইউরোপ থেকে, উত্তর ও মধ্য এশিয়া জুড়ে পাওয়া যায়। এই শৈল্পিক ধ্বংসাবশেষগুলোতে বাঁকা হাড়, ম্যামথ ও শিং জাতীয় বস্তুতে সাধারণত কোন বিশেষজ্ঞের হাতে খোদাই করা পাখি, মানব নারী এসব পাওয়া যায়। এই ধরনের শিল্পেরগুল হল মালটা সংস্কৃতির কৃতিত্ব
নারী দেহের ছোট মূর্তি ছাড়াও তারা পাখির ভাষ্কর্য বানিয়েছে, রাজহংস, রাজহংসী, হাঁস এঁকেছে। মালটা সংস্কৃতির লোকেরা যেসব ম্যামথ সংক্রান্ত বস্তু ব্যবহার করত তার সাথে ১৯শ ও ২০শ শতকের সাইবেরীয় শামানদের বস্তুসমূহের নৃকূলবিদ্যাগত তুলনা করে প্রস্তাব করা হয় যে, মালটা সংস্কৃতির সেই বস্তুগুলো হল পূর্ণ বিকশিত সামানবাদের সাক্ষ্য।
সেই সাথে, ম্যামথের দাঁতের ফলকে খোদাই করা চিত্র দেখা যায়। এদের একটি হল ম্যামথের ছবি, যার দাঁত, শুর ও মোটা পা খুব সহজেই চেনা যায়। শরীর বরাবর সরল রেখা বসিয়ে ম্যামথের পশমও এখানে খোদাই করা হয়েছে বলে মনে হয়। আরেকটি চিত্রে দেখা যায় তিনটি সাপ মাথা উঁচু করে আছে আর পাশ ফিরে চেয়ে আছে। বিশ্বাস করা হয় যে এই সাপগুলো কোবরাদের সদৃশ।
হয়তো ভেনাসের ক্ষুদ্র মূর্তিগুলোই পুরা প্রস্তরযুগীয় বহমান শিল্পসমূহের সর্বোত্তম উদাহরণ। মালটা আবিষ্কৃত হবার পূর্বে ভেনাসের ক্ষুদ্র প্রস্তরমূর্তিগুলো কেবল ইউরোপেই পাওয়া যেত, যেগুলো বানানো হত ম্যামথের দাঁত থেকে। এগুলো ছিল উচ্চমাত্রায় শৈলীকৃত, আর প্রায়ই এগুলোয় প্রসাধনের ব্যবহার হত, এবং এগুলোতে থাকত অনুপাতহীন বৈশিষ্ট্য (বিশেষ করে স্তন ও নিতম্বের ক্ষেত্রে)। বিস্তৃত পরিসরে বিশ্বাস করা হয় যে, এই বর্ধিত বৈশিষ্ট্যসমূহের দ্বারা উর্বরতাকে বোঝানো হত। মালটায় বিভিন্ন আকৃতির প্রায় ৩০টি ক্ষুদ্র নারী মূর্তি পাওয়া যায়। এগুলোর আকার ছিল বিভিন্ন ধরনের, সেগুলোতে ছিল ভাষ্কর্যের বাস্তবতাবাদ, কিন্তু তাতে নিখুঁৎভাবে পুনরাবৃত্তির অভাব ছিল। তবে সেগুলোতে নির্দিষ্ট চিহ্নগুলোর বিকাশ লক্ষ করা যায়।
প্রথম দৃষ্টিতে মনে হবে যে, মালটার ভেনাসের ক্ষুদ্র মূর্তিগুলো দুই ধরনের: অতিরঞ্জিত আকার নিয়ে পূর্ন শরীরের নারী, আর চিকন, সূক্ষ্ম আকারের নারী। কোনো কোনটি নগ্ন, আবার কোন কোনটিতে কিছু চিহ্ন দেখা যায় যেগুলো লোম বা পোশাককে নির্দেশ করে। ইউরোপের ভেনাস মূর্তিগুলোর মুখমণ্ডল খোদাই করা হয়নি, কিন্তু মালটার কোন কোন ভেনাস মূর্তিতে মুখমণ্ডল খোদাই করা হয়েছে। এখানকার বেশিরভাগ মূর্তিই দেখা যায় নিচের দিকে চোখা হয়ে যায়, আর তাই মনে করা হয় যে এটা করা হয় ভূমির সাথে এদেরকে গেঁথে রাখতে বা খাড়া করে রাখতে। মৃতদের আত্মাকে চিহ্নিত করার জন্যেও তাদেরকে ব্যবহার করা হতে পারে। সাইবেরিয়া সহ সারা পৃথিবী জুড়েই "আত্মা পুতুল"-কে ব্যবহার করা হয়েছে, সমসাময়িক অনেক মানুষও আত্মা-পুতুল সম্পর্কিত চর্চা করে থাকে।
পশ্চিমা বিশ্বে মালটার ক্ষুদ্র মূর্তিগুলো নিয়ে অনেক আগ্রহের সৃষ্টি হয়, কেননা এগুলো দেখে মনে হয় যে, এরা সেই সময়ের ইউরোপীয় নারীদের শরীরের আকারকে তুলে ধরে। মালটা এবং উচ্চ পুরা প্রস্তরযুগীয় ইউরোপের মধ্যে সাদৃশ্য তাদের সরঞ্জাম ও বসতিগুলোর মধ্যেও সাদৃশ্যের সাথে সমাপতিত হয়।
অন্যদিকে, কেউ যুক্তি দিতে পারে যে, একটি দল হিসেবে মালটার ভেনাসের ক্ষুদ্র মূর্তিগুলো পশ্চিম ও মধ্য ইউরোপের ভেনাসের ক্ষুদ্র মূর্তিগুলো থেকে ভিন্ন ছিল। যেমন, কোন সাইবেরীয় নমুনাতেই স্ফীত উদর দেখানো হয়নি যা অনেক ইউরোপীয় নমুনায় দেখানো হয়েছে। সেই সাথে মালটার অনেক ক্ষুদ্র মূর্তিতে স্তনেরও অভাব দেখা যায়, খুব কম মূর্তিতেই এমন স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় যা দিয়ে তাদেরকে নারী বলে সংজ্ঞায়িত করা যায়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেটা, সেটা হল মালটার ভেনাসের ক্ষুদ্র মূর্তিগুলোর প্রায় অর্ধেকের মধ্যে কিছু মুখমণ্ডলীয় খুঁটিনাটি দেখা যায়, যা ইউরোপের ভেনাসের ক্ষুদ্র মূর্তিগুলোতে নেই। এই মানুষগুলো আর তাদের সংস্কৃতির উদ্ভব কোথা থেকে হয়েছে তার নির্দিষ্ট উত্তর বের করা হয়তো সম্ভব হবে না।
২০১৬ সালের একটি জিনোমিক গবেষণা বলছে, মালটা জনগোষ্ঠীর সাথে ডলনি ভেস্টোনিস জনগোষ্ঠী ও গ্রাভেটিয়ান সংস্কৃতির কোন জিনগত সম্পর্ক নেই।[৫]
পুরা প্রস্তরযুগীয় সংস্কৃতির এই পূর্বতম চৌকোটি নিয়ে আলোচনা করে জোসেফ ক্যাম্পবেল সেখানে পাওয়া নিদর্শনগুলির প্রতীকী রূপগুলিতে মন্তব্য করেছেন:
MA-1 হচ্ছে বেসাল ওয়াই-ডিএনএ R* (R-M207*) এর একটি মাত্র উদাহরণ, অর্থাৎ হ্যাপ্লোগ্রুপ R* এর একটি মাত্র সদস্য। এটি হ্যাপ্লোগ্রুপ R1 ও R2 এর নয়, যেগুলো হল হ্যাপ্লোগ্রুপ R* এরই গৌণ সাবক্লেডসমূহ। MA-1 এর মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএটি হল হ্যাপ্লোগ্রুপ U এর একটি অমীমাংসিত সাবক্লেডের।[৭]
জিনতাত্ত্বিক সাহিত্যে প্রাচীন উত্তর ইউরেশীয় (Ancient North Eurasian বা ANE) নামটি একটি পূর্বপুরুষগত উপাদানকে প্রদান করা হয়েছে যা মালটা-বুরেট সংস্কৃতির জনগোষ্ঠীর সদৃশ জনগোষ্ঠীর উত্তরপুরুষ বা মালটা বুরেট সংস্কৃতির সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত জনগোষ্ঠীকে প্রতিনিধিত্ব করে।[৪] জিনগত উপাদান ANE এসেছে প্রাচীন দক্ষিণ ইউরেশীয় (Ancient South Eurasian বা ASE) থেকে।[৮][note ১]
MA1 এবং আফনতোভা গোরার সদৃশ মানব গোষ্ঠী আমেরিকার আদিবাসী, ইউরোপীয়, ককেশীয়, মধ্য এশীয়দের মধ্যে জিনগত অবদানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, সেই সাথে এটি জিনগত উপাদান মধ্যপ্রাচ্যে ক্ষুদ্র অবদান ও পূর্ব এশীয়দের মধ্যে কিছু অবদান রেখেছে।[৯] ল্যাজারিডিস প্রমুখ (২০১৬) উল্লেখ করেন, "ANE পূর্বপুরুষত্বের একটি ক্লাইন ইউরোপের পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত বিস্তৃত।"[১০] ২০১৬ সালের একটি গবেষণা অনুসারে, বিশ্বজুড়ে আধুনিক কালের কেটস, মানসি, আমেরিকার আদিবাসী ও সেলকাপদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে ANE পূর্বপুরুষত্ব দেখা যায়।[৪] এছাড়া প্রাচীন ব্রোঞ্জ যুগীয় স্তেপ সংস্কৃতি ইয়াম্নায়া সংস্কৃতি ও আফানাসেভো সংস্কৃতিতে এটি পাওয়া যায়।[৩] আমেরিকার আদিবাসীদের ১৪ থেকে ৩৮ শতাংশ পূর্বপুরুষত্ব মালটা বুরেট জনগোষ্ঠী থেকে এসে থাকতে পারে, যেখানে তাদের মধ্যে অন্যান্য জিনপ্রবাহ এসেছে একটি পূর্ব ইউরেশীয় উৎস্য থেকে।[২]
MA1 দুটো প্রাচীন উচ্চ পুরা প্রস্তরযুগীয় সাইবেরীয় ব্যক্তির সাথেও সম্পর্কিত যাদেরকে ইয়ানা নদীর পাশে পাওয়া গেছে, এদেরকে প্রাচীন উত্তর সাইবেরীয় (Ancient North Siberians বা ANS) বলে। সেই সাথে MA1 উচ্চ পুরাপ্রস্তরযুগীয় চীনের তিয়ানিউয়ান মানবের সাথেও সম্পর্কিত।[১১]
The Eneolithic Botai individuals are closer to each other in the PC space than to any other ancient or present-day individual, and are in proximity to the upper Paleolithic Siberians from the Mal’ta (MA-1) or Afontova Gora (AG3) archaeological sites
|biorxiv=
এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য)। ডিওআই:10.1038/nature19310। পিএমআইডি 27459054। পিএমসি 5003663 । বিবকোড:2016Natur.536..419L।