মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স ফ্লাইট ৩৭০ (এমএইচ৩৭০/এমএএস৭০) একটি নিয়মিত যাত্রীবাহী বিমান ফ্লাইট যা মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর থেকে চীনের বেইজিং যাওয়ার পথে আকাশ থেকে হারিয়ে যায়। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের ৮ই মার্চ তারিখে মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্স পরিচালিত বোয়িং ৭৭৭-২০০ইআর বিমানটি কুয়ালালামপুর থেকে উড্ডয়নের ঘণ্টাখানেক বাদে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। বিমানটিতে ১৫টি দেশের ১২ জন কর্মী ও ২২৭ জন যাত্রীসহ মোট ২৩৯ জন যাত্রী ছিলেন যাদের অধিকাংশই চীনা। ২৪ মার্চ তারিখ পর্যন্ত এর হদিশ করা যায় নি বা কোথাও কোনো ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হয় নি। তবে বিভিন্ন পদ্ধতিতে অনুসন্ধান তৎপরতা অব্যাহত আছে। ১৬ মার্চে তদন্তকারীরা জানিয়েছিলেন যে সম্ভবত বিমানটি ছিনতাই হয়েছিল।[১] ২৪ মার্চ তারিখে মালয়েশিয় সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয় যে, (সম্ভবত) ভারত মহাসাগরের দক্ষিণাংশে বিমানটি আকাশ থেকে পড়ে যায় এবং এর যাত্রীরা কেউ বেঁচে নেই।[২]
বিমানটি উড্ডয়নের এক ঘণ্টার কিছু কম সময় পরে কুয়ালামপুর বিমান বন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের সাথে যোগাযোগ করেছিল। উড্ডয়নের এক ঘণ্টা পরই ভিয়েতনামের দক্ষিণে কামাউ-এর আকাশসীমায় প্রবেশের পর বিমানটির সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ কক্ষের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
শুরুতে ১২টিরও বেশি দেশ সম্মিলিতভাবে মালাক্কা প্রণালী ও দক্ষিণ চীন সাগরে মোট ২৭,০০০ বর্গ ন্যাটিকেল মাইল (৯৩,০০০ বর্গকিলোমিটার; ৩৬,০০০ বর্গমাইল) এলাকাজুড়ে নিখোঁজ বিমানটির খোঁজে অনুসন্ধান চালিয়েছে।[৩][৪] প্রাথমিকভাবে ভিয়েতনামকে প্রাধান্য দিয়ে অনুসন্ধান পরিচালনা করা হলেও ১১ই মার্চ ভিয়েতনামে বিমানটির খোঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা কমে আসে ও অনুসন্ধানকারীরা বিমানটি ভূমিতে অবতরণ করেছে কিনা তা অনুসন্ধান শুরু করে। ১২ই মার্চ কর্তৃপক্ষ মালাক্কা প্রনালীর উত্তর-পশ্চিমের আন্দামান সাগরে অনুসন্ধান শুরু করে।[৫][৬][৭][৮]
১৩ই মার্চ, যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তার বলেন যে তারা অনুসন্ধান কাজ কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত ফ্লাইট পথ ভারত মহাসাগরেও বিস্তৃত করতে আশাবাদী। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের তদন্তকারীরা বিশ্বাস করেন বিমানটি মালয় উপদ্বীপ ঘুরে পশ্চিম দিকে যেতে পারে[৯][১০] এবং তারা আরো বলেন, বিমানটি রাডার থেকে প্রথম নিখোঁজ হওয়ার পর আরো ৪/৫ ঘণ্টা আকাশে উড়ে থাকতে পারে।[১১][১২]
১৫ই মার্চ, মালয়েশিয়ান প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক একটি সংবাদ সম্মেলনের ঘোষণা দেন এবং তিনি স্যাটেলাইট এবং রাডার তথ্যের উপর ভিত্তি করে বলেন, বিমানটি কেউ ভেবেচিন্তে রাডার থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘প্লেনটি দিক পরিবর্তন করে মালয়েশিয়ার উপর দিয়েই ভারতের দিকে অগ্রসরের চেষ্টা করে। প্লেনের ভেতরে অবস্থানরত যেকেউ এই কাণ্ড ঘটিয়েছে।’ তিনি আরো বলেন বিমানটি নিখোঁজ হওয়ার পর সম্ভবত আরো সাত ঘণ্টা আকাশে উড়েছিল। দক্ষিণ চীন সাগর ও থাইল্যান্ড উপসাগরে অনুসন্ধান তৎপরতা বন্ধ করা হয়েছিল।[১৩][১৪] ১৬ মার্চ তারিখে অনুসন্ধানে অংশগ্রহণকারী দেশের সংখ্যা বাংলাদেশ সহ ২৮শে উন্নীত হয়। শেষ পর্যন্ত মালয়েশিয় সরকার ঘোষণা করে যে উড্ডয়নের এক ঘণ্টা পর আকাশ থেকে হারিয়ে যাওয়া বিমানটি সমুদ্রে পড়ে এবং বিধ্বস্ত হয়। বহু তল্লাশী করেও সমুদ্রের তলদেশে নিখোঁজ বিমানের কোন ধ্বংসাবশেষ চিহ্নিত করা যায় নি।
বিমানটি নিখোজেঁর দুই মাসের অল্প কিছু সময় পর যুক্তরাজ্যভিত্তিক সাংবাদিক নাইজেল ক্যাথর্ন তার ফ্লাইট এমএইচ৩৭০: দ্য মিস্ট্রি নামক গ্রন্থে দাবী করেন যে যুক্তরাষ্ট্র-থাইল্যান্ড যৌথ সামরিক মহড়া কালে ওই বিমানটি গুলিবিদ্ধ হয়।[১৫] প্রায় একই সময়ে মালয়েশিয় নেতা মাহাথির বিন মোহাম্মদ সন্দেহ প্রকাশ করেন যে বিমানটি নিখোঁজ হওয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইয়ের যোগসূত্র থাকতে পারে।[১৬]
ফ্লাইটটি কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৮ই মার্চ স্থানীয় সময় ০০:৪১-এ (১৬:৪১ ইউটিসি, ৭ই মার্চ) উড্ডয়ন করে ও পূর্ব নির্ধারিত স্থানীয় সময় ০৬:৩০-এ (২২:৩০ ইউটিসি, ৭ই মার্চ) বেইজিং রাজধানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরন করার কথা ছিল। বিমানটি রাডার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার সময় এটি তার নির্ধারিত উচ্চতা ৩৫,০০০ ফুট (১০,৭০০ মি) উপর দিয়ে যাচ্ছিল ও বিমানটির গতি ছিল ৪৭১ নট (৫৪২ মা/ঘ; ৮৭২ কিমি/ঘ)। ৮ই মার্চ স্থানীয় সময় ০১:৩০ মিনিটে (১৭:৩০ ইউটিসি, ৭ই মার্চ) বিমানটির সর্বশেষ অবস্থান ছিল ৬°৫৫′১৫″ উত্তর১০৩°৩৪′৪৩″ পূর্ব / ৬.৯২০৮৩° উত্তর ১০৩.৫৭৮৬১° পূর্ব / 6.92083; 103.57861, এ অবস্থানে বিমানটি সামান্য পূর্বদিকে তার গতিপথ পরিবর্তন করে। যেখানে বিমানটির সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছিল সেখান থেকে উত্তর দিকে ভিয়েতনাম আকাশসীমায় প্রবেশর পর হো চি মিন সিটির এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের সাথে যোগাযোগ করবে বলে আশা করা হয়েছিল।[২১][২২] ৯ই মার্চ দ্য নিউ স্ট্রেইটস টাইমসের প্রতিবেন অনুযায়ী, ভিয়েতনাম আকাশ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের অনুরোধে অন্য একটি বিমানের ক্যাপ্টেন স্থানীয় সময় ১:৩০ এর পর এমএইচ৩৭০-এর পাইলটের পাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিল। ক্যাপ্টেনের ভাষ্যমতে তিনি যোগাযোগ স্থাপনে সক্ষম হয়েছিলেন কিন্তু তিনি শুধু মাত্র আধা-আধা ও নিশ্চল শ্বদ শুনতে পাচ্ছিলেন।[২৩]
মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স ০৭:২৪ মিনিটে একটি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করে জানায় তারা বিমানটির সাথে ০২:৪০ মিনিটে যোগাযোগ হারিয়েছে ও অনুসন্ধান এবং উদ্ধার অপারেশন শুরুর ঘোষণা দেয়।[২৪] পরবর্তিতে জানানো হয়, সাবাঙ এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল ০১:২২ মিনিটে বিমানটির সাথে যোগাযোগ হারায় এবং মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সকে ০২:৪০ মিনিটে বিষয়টি নিশ্চিত করে। রাডার স্ক্রিন থেকে বিমানটি উধাও হওয়ার পূর্বে এর কোন কর্মী বা বিমানে অবস্থানরত কোন যাত্রীর কাছ থেকেই কোন ধরনের বিপদ সংকেত, খারাপ আবহাওয়া অথবা যান্ত্রিক ত্রুটির খবর পাওয়া যায়নি।[১৩]
১১ই মার্চ এয়ারলাই এক সংবাদ প্রতিবেদনে দাবি করে, “বিমানটি থেকে কোন বিপদ সংকেত ও কোন ধরনের বেতার যোগাযোগ করা হয়নি।”[২৫] এয়ারলাইনের তথ্যানুসারে এর সকল বিমানসমূহ বিমান যোগাযোগ অ্যাড্রেসিং এবং প্রতিবেদ সিস্টেমের (এসিএআরএস) সাথে যুক্ত, যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিমানের বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ করতে সক্ষম।[২৫] মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্স বিমানটিতে এসিএআরএস প্রযুক্তি ছিল কিনা এ ধরনের প্রশ্নে মন্তব্য করা থকে বিরত থেকেছে।[২৬]
বিমানটি ধ্বংস হয়ে গেছে নিশ্চিত হওয়ার পর এর ধ্বংসাবশেষ বিশেষ করে ব্ল্যাক বক্স বা ফ্লাইট রেকর্ডার উদ্ধারের কার্যক্রম চলতে থাকে। এপ্রিলের (২০১৪) প্রথম সপ্তাহে অস্টেলিয় সরকারি সূত্রে জানানো হয় যে তাদের অনুসন্ধানী জাহাজ সাগরের তলদেশে ব্ল্যাকবক্স থেকে সিগন্যাল পেয়েছে এবং তারা এর অবস্থান সমপর্কে নিশ্চিত। [২৭]
পরবর্তী যোগাযোগ
নিউ সায়েন্টিস্ট-এর প্রতিবেদন অনুসারে, বিমানটি নিখোঁজ হওয়ার প্রথমদিকে দুটি এসিএআরএস প্রতিবেদন স্বয়ংক্রিয়ভাবে যুক্তরাজ্যের এর ইঞ্জিন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান রোলস-রয়েস গ্রহণ করেছিল।[২৮]ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল যুক্তরাষ্ট্রে সরকারের বরাত দিয়ে জানায়, রোলস-রয়েস বিমানটির সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরবর্তী পাঁচ ঘণ্টায় ৩০ মিনিট পরপর বিমানের সংকেত পাচ্ছিলেন; এতে বলা হয় বিমানটির সংকেত প্রেরণকারী যন্ত্র অফলাইনে যাওয়ার পূর্বে কমপক্ষে চার ঘণ্টা এটি বার্তা প্রেরণ করেছিল।[২৯] মালয়েশিয়ার যোগাযোগমন্ত্রী পরের দিন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এই প্রতিবেদন সঠিক নয়; বিমানটি দ্বিতীয় রাডার থেকে নিরুদ্দেশ হওয়ার পূর্বে সর্বশেষ ০১:০৭ মিনিটে বার্তা প্রেরণ করেছিল।[২৯][৩০] পরবর্তীতে রয়র্টাস এর প্রতিবেদনে বলা হয়, বার্তা গ্রহণের মানে এটা নাও হতে পারে যে বিমানটি তার ফ্লাইট অব্যহত রেখেছিল, সম্ভবত বিমানটির ট্রাবলশুটিং মেইনটেইনেন্স সিস্টেম থেকে পিংস গ্রহণ করা হয়েছিল। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল পরবর্তীকালে তাদের প্রতিবেদন থেকে রোলস-রয়েসের উৎস বাতিল করে দেয় এবং প্রতিবেদনে বলা হয়, বোয়িং ৭৭৭ বিমানের স্যাটেলাইট যোগাযোগ সংকেত বিশ্লেষণ করে দেখা যায় এটি স্যাটেলাইট থেকে স্যাটেলাইটে সংযোগ স্থাপনে সক্ষম ও এসকল বার্তা সাধারণত কোন তথ্য-উপাত্ত ধারণ করে না।[১১] ১৩ই মার্চ হুয়াইট হাউজের প্রেস সচিব বলেন, নতুন কিছু তথ্যের ভিত্তিতে সম্ভবত অনুসন্ধান কাজ ভারত মহাসাগরেও বৃদ্ধি করা হবে।[৩১] পেন্টাগনের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবিসি নিউজকে বলেন, আমাদের কাছে কিছু তথ্য রয়েছে যে প্লেনটি ভারত মহাসাগরেও বিধস্থ হতে পারে।[১০] এছাড়াও কোম্পানির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা বলেন, বিমান নিখোঁজ হলেও এর পিং সংকেত বার্তা কক্ষে পাঠাতে পারে, খুব সম্ভবত পিংস শনাক্ত করে বিমানের অবস্থান নির্ণয় করা যেতে পারে।[৩২][৩৩]
আনুমানিক পথ
১১ই মার্চ প্রতিবেদনে বলা হয় সামরিক একটি রাডারে বিমানটি ধরা পরে ও এটি গতি পরিবর্তন করে পশ্চিমদিকে যায় এবং পালাউ পেরাকে মালয়েশিয় রাডার থেকে বিচ্ছন্ন হওয়ার পূর্বে ৭০ মিনিট আকাশে ছিল।[৩৪][৩৫] বিমানটি পরবর্তীতে ট্র্যক করে দেখা যায় বিমানটি কিছুটা নিম্ন উচ্চতায় মালয়েশিয়া হয়ে মালাক্কা প্রণালীর দিকে যায়। এই অবস্থানটি ছিল, বিমানটি সাধারণ রাডার থেকে বিচ্ছন্ন হওয়ার অনুমানিক ৫০০ কিমি (৩১১ মাইল) দূরে।[৩৬] পরের দিন রয়াল মালয়েশিয়ার বিমানবাহিনীর প্রধান এ দাবি থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন এবং বলেন এটি কোনভাবেই অন্য দিকে নেওয়ার কারণ নেই।[৩৭][৩৮] ভিয়েতনামের ডেপুটি যোগাযোগমন্ত্রী পাম কে থেই এর তথ্যানুসারে, “আমরা বিমানটির সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার দিন যখন এটি পশ্চিম দিকে দিক পরিবর্তন করে তখন মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলাম কিন্তু তারা কোন প্রতুৎত্তর দেন নি।”[৩৯] তদন্তকাজে সহয়তাকারী যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন রাডার উপাত্ত বিবেচনা করে বলেন, যে তথ্য-উপাত্ত এটিই নির্দেশ করছে বিমানটি দিক পরিবর্তন করে পশ্চিম দিকে মালয় উপদ্বীপের দিকে ঘুরে যায়। রয়টার্স ও নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, দিক পরিবর্তন করে পশ্চিমে যাওয়া মনে বিমানটি কোন অভিজ্ঞ পাইলটের নিয়ন্ত্রণে ছিল,[১২][৪০][৪১] টাইমসের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বিমানটি বেশ কয়েকবার তার উচ্চতা পরিবর্তন করে।[৪০]
যদিও ব্লুমবার্গ নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, সর্বশেষ রাডারের সংকেত দেখে মনে করা হয় বিমানটির অবস্থান তখন ১,০০০ মাইল (১,৬০০ কিমি.) দূরে অস্ট্রেলিয়ার পের্থে ছিল।[৪২] ১৫ই মার্চ মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেন সর্বশে সংকেত যা মালয়েশিয়ার স্থানীয় সময় ০৮:১১ মিনিটে গৃহীত হয়; এটি সম্ভবত উত্তরে কাজাখস্তানের মত উত্তরের কোন অবস্থান থেকে এসেছে।[৪৩] নাজিব ব্যাখা করে বলেন সংকেতের উৎসের স্থানাঙ্ক সম্ভাব্য দুটি জায়গা থেকে আসতে পারে: উত্তর দিকে সর্বোচ্চ কাজাখস্তান ও তুর্কমেনিস্তান সীমান্ত থেকে থাইল্যান্ড পর্যন্ত এবং দক্ষিণে ইন্দোনেশিয়া থেকে দক্ষিণ ভারত মহাসগর।[৪৪]
অনুসন্ধান তৎপরতা
অবস্থান
তদন্তকে প্রারম্ভিক অনুসন্ধানের প্রচেষ্টা একাধিক মিথ্যা দিকে নিয়ে যায়। ভিয়েতনাম নৌবাহিনীর একজন এডমিরাল বলেন, বিমানটির সাথে থাইল্যান্ড উপসাগরে রাডারের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছিল।[১৩][৪৫] ৮ই মার্চ ভিয়েতনাম উপকূলে পানিতে তেলের স্তর দেখা যায় ও ৯ই মার্চ পরবর্তীকালে পরীক্ষণে প্রমাণিত হয় এগুলো কোন বিমানের জ্বালানি নয়।[৪৬][৪৭] ৯ই মার্চ থুচাউ দ্বীপের ৮০ কিমি. (৫০ মাইল) দক্ষিণে তথাকথিত বিমানের ধ্বংসবশেষ পাওয়া যায় কিন্তু পরবর্তীতে দেখা যায় এগুলোও ফ্লাইট ৩৭০-এর নয়।[৪৮]
পরবর্তীতে রয়াল থাই নৌবাহিনী মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকে অনুরোধ পেয়ে অনুসন্ধান কার্যক্রম থাইল্যান্ড উপসাগর ও দক্ষিণ চীন থেকে থাইল্যান্ডের সীমানায় আন্দামান সাগরে স্থানান্তরিত করে। কারণ তদন্তে পাওয়া গিয়েছিল, বিমানটি সম্ভবত দিক পরিবর্তন করেছিল ও আন্দামান সাগরের দিকে গিয়েছিল।[৪৯] রয়াল মালয়েশিয়ার বিমান বাহিনীর প্রধান রোডজালি দাউদ দাবি করেন যে, সামরিক রাডারে সংরক্ষিত সংকেত অনুসারে বিমানটির এর নির্দিষ্ট ফ্লাইটের দিক পরিবর্তন করে, পুনরায় ফিরে আসার সম্ভবনা নেই।[৫০][৫১] অনুসন্ধান সীমানাটি এর সর্বশেষ নিশ্চিত অবস্থান থোচাও-এর দক্ষিণে প্রাথমিক ২০ নটিক্যাল মাইল (৩৭ কিমি; ২৩ মা) থেকে[৫২] ১০০ নটিক্যাল মাইল (১৯০ কিমি; ১২০ মা) পর্যন্ত বিস্তৃত করা হয়; পরে মালয় পেনিনসুলাসহ মালাক্কা প্রণালী, মালয়েশিয়ার পূর্ব দিকে থাইল্যান্ড উপসাগর ও মালাক্কার সাথে মালয়েশিয়ার পশ্চিম উপকূল পর্যন্ত অনুসন্ধান করা হয়েছে।[৪][৫৩][৫৪]
১২ই মার্চ কর্তৃপক্ষ মালাক্কা প্রণালীর উত্তর-পশ্চিমে অন্দামান সাগরেও অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করে ও মালয়েশিয়ার সরকার উক্ত সামুদ্রিক এলাকায় অনুসন্ধানের জন্য ভারতের সাহায্য চায়।[৫৫] চীন তিন দিন পূর্বের গ্রহণ করা কিছু স্যাটেলাইট চিত্র প্রকাশ করে, এতে দেখা যায় তিনটি বস্তু সাগরের পানিতে ভাসছে ও বস্তুগলো ২৪ বাই ২২ মিটার (৭৯ ft × ৭২ ft); স্থানাঙ্ক ৬°৪২′ উত্তর১০৫°৩৮′ পূর্ব / ৬.৭° উত্তর ১০৫.৬৩° পূর্ব / 6.7; 105.63।[৫৬][৫৭] যাইহোক, ধারণা করা অঞ্চলে কোন ধরনের ভাসমান বস্তু পাওয়া যায়নি।[৫৮][৫৯] ভিয়েতনাম কর্তৃপক্ষ অনুসারে, এলাকাটি ভিয়েতনাম ও অন্য দেশের দ্বারা পুনরায় অনুসন্ধান করা হয়েছিল।[৬০][৬১] ডিজিটালগ্লোব নামে একটি স্যাটেলাইট ইমেজিং কোম্পানি অনুসন্ধান এলাকার পাওয়া সকল ছবিই[৬২] প্রকাশ দেয় ও যে কেউকে, যদি কোন চিত্র সম্পর্কে কোন ধারণ থাকে যা অনুসন্ধানে সাহায্য করবে তা জানানোর অনেুরোধ করা হয়।[৬৩]
দুর্ঘটনায় সাড়া দিয়ে, মালয়েশিয়ার সরকার তার বেসামরিক বিমান পরিবহন বিভাগ, বিমান বাহিনী, নৌবাহিনী, এবং মেরিটাইম ইমারজেন্সি এনফোর্সমেন্ট একত্রে অনুসন্ধানে নিয়োজিত করে ও পাঁচটি শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কাছে ও প্রতিবেশী দেশগুলোর কাছে আন্তর্জাতিক সাহায্যের অনুরোধ করে।[৬৪][৬৫] বিভিন্ন দেশ তাদের নিজ নিজ জলসীমায় তাদের অনুসন্ধান কাজ শুরু করে। দুই দিনের মধ্যেই, দেশগুলো তাদের যৌথ অনুসন্ধান প্রকল্পে ৩৪টি বিমান ও ৪০টি জাহাজ যুক্ত করতে সক্ষম হয়,[৪][৫][৫৪] নির্দিষ্ট অঞ্চলে অনুসন্ধান চালনা করে। কাতার সাহায্যের প্রস্তাব দেয়, ব্রিটিশ ও ফ্রান্স এয়ার-ক্র্যশ ইনভেস্টিগেটিং এজেন্সিগুলো - এয়ার এক্সিডেন্টস ইনভেস্টিগেসন ব্রাঞ্চ (এএআইবি) এবং বিইএ তদন্তে সহয়তার প্রস্তাব দেয়।[৬৬][৬৭][৬৮] কমপ্রিহেন্টিসভ নিউক্লিয়ার-টেস্ট-ব্যান ট্রিটি সংস্থার প্রস্তুতিমূলক কমিশন ফ্লাইট ৩৭০ থেকে সৃষ্ট যে কোন ধরনের বিস্ফোরণ থেকে সৃষ্ট শ্ব থেকে এর অবস্থান বের করার চেষ্টা করে কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়।[৬৯] মালয়েশিয়া ছাড়াও অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ, ব্রুনাই, চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, নিউজিল্যান্ড, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র ও ভিয়েতনাম বিভিন্নভাবে অনুসন্ধানে অংশগ্রহণ করে।[৭০] অংশগ্রহণকারী যান্ত্রিক সম্পদসমূহ:
মালয়েশিয়া: সিএএসএ/আইপিটিএন সিএন-২৩৫, বিচক্রাফ্ট বি২০০টি কিং এয়ার, লকহিড সি-১৩০ হারকিউলিস ও বোমবার্দির গ্লোবাল এক্সপ্রেস নির্দিষ্ট পন্থী বিমান; অগাস্টাওয়েস্টল্যান্ড এডব্লিউ১০৯ ও ইউরোকপ্টার ইসি৭২৫ হেলিকাপ্টার।[৭১] নৌবাহিনী ও মালয়েশিয়ান মেরিটাইম ইমারজেন্সির জাহাজ।[৭১][৭২][৭৩] সাইবার জয়ার পালাউ মেরান্তির জাতীয় দুর্যোগ কন্ট্রোল সেন্টার (এনডিসিসি) অনুসন্ধান সমন্বয় করছে।[৭৪]
অস্ট্রেলিয়া: বিমান বাহিনীর লকহীড পি-৩সি কালপুরুষ সামুদ্রিক চৌকি বিমান।[৭৫]
চীন: উভচর পরিবহন ডকস কানলান সেন ও জিংজেং সেন, হেলিকাপ্টার, চিকিৎসা কর্মকর্তা, চালক, ও মেরিন, জীবন বাঁচান এবং ডুবো সনাক্তকরণ যন্ত্রপাতি;[৭৮] টাইপ ০৫২সি ডিস্ট্রয়ার,[৭৯] কোস্ট গার্ড ও উদ্ধারকারী ভেসেল, চালক ও সেলভ্যাজার। সামরিক উপগ্রহও যুক্ত।[৮০]
ভারত: আন্দামান ও নিকোবর কমান্ড থেকে পৃষ্ঠ এবং বায়ুবাহিত সম্পদ: নেভি জাহাজ আইএনএস সারেউ, আইএনএস কেসারি ও আইএনএস কুম্বিল; কোস্ট গার্ড ভেসেল আইসিজিএস কনকলতা বড়ুয়া, আইসিজিএস বাইখাজি কামা ও আইসিজিএস সাগর; নেভি বোয়িং পি-৮১ নেপচুন, ডোরনিয়ার ডো ২২৮ টপুলেভ টু ১৪২
সামুদ্রিক নজরদারি বিমান;[৮১][৮২][৮৩] এয়ার ফোর্স সি-১৩০ হারকিউলিস[৮৪][৮৫] ও মিল মি-১৭।[৮৫] রুকমিনি নাভেল স্যাটেলাইট।[৮৫][৮৬] ভারতীয় মূল ভূখন্ডের দিকে অনুসন্ধান এলাকার প্রসার ঘটানো হয়, পূর্ব নৌ কমান্ড থেকে অতিরিক্ত সম্পদ কাজে লাগানো হয়।[৮১]
ইন্দোনেশিয়া: রণতরিবিশেষ এবং দ্রুত টহল জাহাজ;[৮৭] পিসি-৪০ ধরনের দ্রুত নজরদারি ভেসেল; আইপিটিএন এনসি-২১২ সামুদ্রিক নজরদারি বিমান।[৮৮]
জাপান: পি-৩ ওরিন, সি-১৩০ হারকিউলিস বিমান ও একটি দুর্যোগ ত্রাণ টিম গঠিত যারা জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, কোস্ট গার্ড, জাপানের আন্তর্জাতিক সহয়তা সংস্থার কর্মকর্তাদের সাথে সমন্বয় করে চলছে।[৮৯]
ফিলিপাইন: নেভি জাহাজ বিআরপি গ্রেগরিও দেল পিলার, বিআরপি এমিলিও জ্যাকিনটো ও বিআরপি এপোলিনারিও মাবিনি; বিমান বাহিনীর একটি ফক্কর এফ২৭ ও নৌবাহিনীর একটি ব্রিটেন নরম্যান বিমান; এবং নৌবাহিনীর একটি অগাস্টাওয়েস্টল্যান্ড এডব্লিউ১০৯ পাউয়ার হেলিকাপ্টার। একটি হ্যামিলটন-ক্লাস কাটার ভেসেল ও একটি সি-১৩০ হারকিউলিস সতর্ক অবস্থানে রাখা হয়।[৯১][৯২][৯৩][৯৪][৯৫]
সিঙ্গাপুর: বিমান বাহিনীর সি-১৩০ হারকিউলিস;[৯৬][৯৭] নৌ ফ্রিগেটের একটি সিকোরস্কাই এস ৭০বি সীহক হেলিকাপ্টার; ও একটি চালকসহ একটি সাবমেরিন উদ্ধার তৎপরতায় নিয়োজিত জাহাজ; ভিক্টোরি-ক্লাস কোরভ্যাটে;[৯৮] ১৪ই মার্চ থেকে বিমান বাহিনীর ফক্কর-৫০ নজরদারি বিমান।[৯৯]
দক্ষিণ কোরিয়া: নৌ পি-৩ ওরিন ও বিমান বাহিনীর সি-১৩০ হারকিউলিস বিমান।[১০০]
তাইওয়ান: বিমান বাহিনীর সি-১৩০ হারকিউলিস বিমান, ফ্রিগেট আরওসিএস তিআন দেন, ও কোস্ট গার্ড ভেসেল।[১০১]
থাইল্যান্ড: ডোরনিয়ার ডো ২২৮, অগাস্টাওয়েস্টল্যান্ড সুপার ল্যানেক্স হেলিকাপ্টার ও টহল জাহাজ এইচটিএমএস পাত্তানি। অন্য জাহাজগুলোও সতর্ক রাখা হয়েছে।[১০২][১০৩][১০৪]
ভিয়েতনাম: এন্টানভ এন-২৬, সিএএসএ সি-২১২ এভিওকার, দে হাভিলল্যান্ড কানাডা ডিএইচসি-৬ টুইন ওটর, মিল মাই-১৭১, ও নৌবাহিনী থেকে জাহাজ, কোস্ট গার্ড, মৎস জাহাজ কন্ট্রোল, ও সামুদ্রিক অনুসন্ধান এবং উদ্ধার সমন্বয় সেন্টার।[১০৯][১১০]
সহযোগিতা
হিশামুদ্দিন হুসাইন, মালয়েশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী যিনি একই সাথে দেশটির ভারপ্রপ্ত পরিবহন মন্ত্রী, তিনি অনুসন্ধানে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর মধ্যে পারস্পারিক সমস্যার সম্ভাবনা নাকচ করে দেন। বিভিন্ন সূত্রেমতে একই সাথে কয়েকটি দেশ যৌথভাবে অনুসন্ধান পরিচালনা করলেও ভৌগোলিক কারণে তাদের মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান নিয়ে সমস্যা থাকতে পারে। কিন্তু মন্ত্রী বলেন, দেশগুলোর মধ্যে আঞ্চলিক দ্বন্দ্ব থাকলেও প্রকৃত বিশ্বাসের বিষয় জড়িত ছিল ও তথ্য উপাত্ত ভাগাভাগি করে নেওয়ার পরিস্থিতি ছিল।[১১১][১১২]আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদেরমতে, সার্বভৌমত্ব, স্বায়ত্তশাসন, নিরাপত্তা, গোয়েন্দা প্রভৃতি মিলিয়ে বহুপাক্ষিক অনুসন্ধান কার্যক্রম জঠিল হয়ে উঠেছে।[১১১][১১২] একজন চীনা একাডেমিকের পর্যবেক্ষণ অনুসারে এটি বহুপাক্ষিক যৌথ অনুসন্ধান ছিল না, প্রতিটি দেশ স্বাধীনভাবে অনুসন্ধান চালিয়েছে।[১১২]
মালয়েশিয়া প্রথমদিকে এর সামরিক রাডারের তথ্য-উপাত্ত অত্যন্ত গোপনীয়তার কথা বলে প্রকাশ করতে অস্বীকৃতি জানায় কিন্তু পরবর্তিতে তারা প্রকাশে রাজি হয়।[১১১][১১২] নিরাপত্তা বিশেষঞ্জরা মনে করেন, অন্যদের সামরিক রাডারের তথ্যে প্রবেশ করতে দেওয়া নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে। উদাহরণস্বরুপ, কোন একটি রাডারের ছবি তোলার ক্ষমতা নির্ভর করে তাদের রাডার কতটা শক্তিশালী তার উপর কেউ কেউ মনে করেন, হয়ত কোন দেশ সংশ্লিষ্ট বিমানটির ছবি তাদের রাডারে পেয়েছে কিন্তু নিজেদের নিরাপ্তার স্বার্থে সেটা কারো সাথে ভাগাভাগি করছে না।[১১১] অন্যদিকে দক্ষিণ চীন সাগরে টহলরত সাবমেরিনগুলোও সম্ভবত পানিতে কোন ধরনের তথ্য পেয়ে থাকতে পারে কিন্তু এটি প্রকাশ করা মানে সাবমেরিনের অবস্থান নিশ্চিত করা ও তাদের ক্ষমতা সম্পর্কে অন্যকে জানানো। যাইহোক, গার্ডিয়ানের তথ্যানুসারে যৌথঅনুসন্ধানের প্রতি সম্মান জানিয়ে ভিয়েতনাম কর্তৃপক্ষ তাদের আকাশসীমায় অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে চীনা বিমান ঢুকতে দিয়েছে।[১১২]
মালয়েশিয়া এয়ারলাইনস ফ্লাইটের নিবন্ধিত তালিকা অনুসারে ২২৭ জন যাত্রী ও ১২ জন কর্মীর নাম ও জাতীয়তা প্রকাশ করেছে।[১১৫]
কর্মী
সকল কর্মীই মালয়েশিয়ার নাগরিক। ফ্লাইটটির পাইলট ছিলেন পেনাগ অঞ্চলের ৫৩ বছর বয়সী জাহারি আহমেদ শাহ; তিনি মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সে ১৯৮১ সালে যোগদান করেন ও তার ১৮,৩৬৫ ঘণ্টা বিমান চালানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে।[১১৬] এছাড়াও তিনি নতুন পাইলটদের পরীক্ষার পরীক্ষকও ছিলেন।[১১৭]
কো-পাইলট ২৭ বছর বয়সী ফকির আব্দুল হামিদ ২০০৭ সাল থেকে মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের কর্মী ছিলেন ও তার ২,৭৬৩ ঘণ্টা বিমান চালনার অভিজ্ঞতা ছিল।[১১৮][১১৯] প্রশিক্ষণ শেষ করে তিনি মাত্রই বোয়িং ৭৭৭-২০০০ এ স্থানান্তরিত হন।[১১৯]
যাত্রী
২২৭ জন যাত্রীর দুই-তৃতীয়ংশই চীনা নাগরিক, তাদের মধ্যে ১৯ জনের একটি শিল্পী দল সাথে ৬ জন পারিবারিক সদস্য ও ৪ জন স্টাফ কুয়ালালামপুরে তাদের লিপিবিদ্যা প্রদর্শনী শেষে দেশে ফিরছিলেন; ৩৮ জন যাত্রী মালয়েশিয়ার। বাকী যাত্রীরা ১৩টি ভিন্ন ভিন্ন দেশের নাগরিক।[১২০] মোট যাত্রীর মধ্যে ২০ জন ছিলেন টেক্সাসাসের অস্টিন ভিত্তিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ফ্রিস্কেল সেমিকন্ডাক্টরের গবেষক/বিশেষজ্ঞ। ২০ জনের মধ্যে ১২ জন মালয়েশিয়ার ও ৮ জন চীনের নাগরিক।[১২১][১২২]
মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের দেখাশোনার জন্য স্বেচ্ছাসেবকদের একটি দল পাঠিয়েছে।[১২৩] সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয় ফ্লাইটের যাত্রীদের মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে আনা, তাদের স্বাস্থ্যের খোঁজখবর, থাকার ব্যবস্থা ও প্রয়োজনীয় পরমর্মের জন্যই স্বেচ্ছাসেবকদের দলটি কাজ করছে।[১২৪] সর্বমোট চীন থেকে যাত্রীদের ১১৫ জন স্বজন কুয়ালালামপুরে এসেছে।[১২৫] অন্য পরিবারের সদস্যরা চীন থেকেই ঘটনা পর্যবেক্ষণ করছে, কারণ তাদের ভয় মালয়েশিয়া যাওয়ার পর তারা আরো ভেঙ্গে পড়বেন।[১২৬] এয়ারলাইন কর্তৃপক্ষ প্রত্যেক যাত্রীর স্বজনদের সমবেদনা স্বরুপ $৫,০০০ মার্কিন ডলার করে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে,[১২৭] কিন্তু স্বজনরা পরিস্থিতি অগ্রহণযোগ্য হিসেবে নিয়েছে ও এয়ারলাইন কর্তৃপক্ষকে প্রস্তাবটি পুনরায় বিবেচনার কথা বলেছে।[১২৮]
কার্যকারণ তত্ত্ব
৮ই মার্চ তারিখে বিমানটি হারিয়ে যাওয়ার পর থেকে এর নেপথ্য কারণ সম্পর্কে নানাবিধ তত্ত্ব প্রদান করা হয়েছে। প্রথম প্রশ্ন ছিল বিমানটি যাত্রাপথে দুর্ঘটনায় নিপতিত হয়ছিল কি-না। যদি দুঘর্টনা হয়ে তাকে তাহলে নেপথ্য কারণ কী? একটি ঘটনা বাদ দিলে মালয়েশিয়ান এয়ার সিস্টেমের নিরাপত্তা রেকর্ড খুবই ভালো। তদুপরি হারিয়ে যাওয়ার সময় বিমানটি মাটি থেকে ৩৫ হাজারেরও বেশি উচ্চতায় উড়ছিল; এই উচ্চতায় প্রাকৃতিক দুর্ঘটনা স্বাভাবিক নয়। তবে কোন বিস্ফোরণ হলে বা বিমানের বহিরাঙ্গিক খোলসটি ফেটে গেলে ওরকম উচ্চতায়ও বিমান ধ্বংস হতে পারে। এরকমও ভাবা হয়েছিল উড়োজাহাজটির চালক নিজেই কোন কারণে বিমানটিকে ধ্বংস করে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন কি-না।
বিমানটি পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করার পর ভারত মহাসাগর অভিমুখে দিকবদল করে ৪/৫ ঘণ্টা আকাশে উড়েছিল তদন্তক্রমে এরকম তথ্য লাভের পর অনুমান করা হয় যে বিমানটি ছিনতাই হয়েছে।[১]
যবনিকা
২৪ মার্চ ২০১৪ তারিখে মালয়েশিয় সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয় যে, (সম্ভবত) ভারত মহাসাগরের দক্ষিণাংশে বিমানটি আকাশ থেকে পড়ে যায় এবং এর যাত্রীরা কেউ বেঁচে নেই। ভূ-উপগ্রহ কর্তৃক ধৃত চিত্র-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া গেছে যে জলপতনের আগে বিমানটি সরলরৈখিক পথে টানা ৭ ঘণ্টা ভারত মহাসাগরের দক্ষিণাংশে - মানচিত্রে অনেকটাই বাংলাদেশের অবস্থান থেকে নিম্নাভিমুখী - উড্ডয়নরত ছিল। তবে জলপতনের ঠিক আগে বিমানটির অবস্থান সঠিক কী ছিল তা নির্ণয় করা সম্ভব হয় নি। তবে জলপতন এলাকার সন্নিহিত জলরাশিতে ভাসমান কিছু ধ্বংসাবশেষ পরিলক্ষিত হয়েছে।[২] বিমানটি ধ্বংস হয়ে গেছে নিশ্চিত হওয়ার পর এর ধ্বংসাবশেষ, বিশেষ করে ব্ল্যাক বক্স বা ফ্লাইট রেকর্ডার, উদ্ধারের কার্যক্রম চলতে থাকে। এপ্রিলের (২০১৪) প্রথম সপ্তাহে অস্টেলিয় সরকারি সূত্রে জানানো হয় যে তাদের অনুসন্ধানী জাহাজ সাগরের তলদেশে ব্ল্যাকবক্স থেকে সিগন্যাল পেয়েছে এবং তারা এর অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত।[২৭] শেষাবধি কিছুই খুজেঁ পাওয়া যায় নি; সমুদ্রের তল দেশে ব্যাপক অনুসন্ধান চালানো হয় কিন্তু বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার কোনোরূপ নিশ্চিত ইঙ্গিত বা ধ্বংসাবশেষ চিহ্নিত করা যায় নি। অত:পর মালযেশিয় সরকার এই মর্মে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে বিমানটি গভীর সমুদ্রে নিপতিত হয়ে ধ্বংস হয়ে গেছে, যাত্রীরা কেউ বেঁচে নেই। তবে বিমানটি নিখোঁজের প্রায় ৭১ দিন পর যুক্তরাজ্যভিত্তিক সাংবাদিক নাইজেল ক্যাথর্ন তার '''''ফ্লাইট এমএইচ৩৭০: দ্য মিস্ট্রি''''' (ইং: Flight MH370 : The Mystery) নামক গ্রন্থে দাবী করেন যে চিন সাগরে যুক্তরাষ্ট্র-থাইল্যান্ড যৌথ সামরিক মহড়া কালে ওই বিমানটি গুলিবিদ্ধ হয়েছিল।[১৫] প্রায় একই সময়ে মালয়েশিয় নেতা মাহাথির মোহাম্মদ সন্দেহ প্রকাশ করেন যে বিমানটি নিখোঁজ হওয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইয়ের যোগসূত্র থাকতে পারে।[১৬]
পদটীকা ও তথ্যসূত্র
টীকা
↑The manifest released by Malaysia Airlines lists an Austrian and an Italian. These have since been identified as two Iranian nationals who boarded Flight 370 using stolen passports.[১১৪]
↑"MH370 Passenger Manifest"(পিডিএফ) (সংবাদ বিজ্ঞপ্তি)। Malaysia Airlines। ৮ মার্চ ২০১৪। ৮ মার্চ ২০১৪ তারিখে মূল(পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ মার্চ ২০১৪।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)