পূর্ণ নাম | রিয়াল মাদ্রিদ ক্লাব দে ফুতবল[১] | |||
---|---|---|---|---|
ডাকনাম | লস ব্ল্যাঙ্কোস (সাদা) লস মেরেঙ্গুইস (মেরিনগুয়ে) লস ভাইকিঙ্গস (ভাইকিং)[২] | |||
সংক্ষিপ্ত নাম | Real, RM, RMA, RMD | |||
প্রতিষ্ঠিত | ৬ মার্চ ১৯০২ (মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব হিসেবে)[৩] | |||
মাঠ | সান্তিয়াগো বার্নাব্যু স্টেডিয়াম মাদ্রিদ, স্পেন | |||
ধারণক্ষমতা | ৮১,০৪৪[৪] | |||
প্রেসিডেন্ট | ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ | |||
প্রধান কোচ | কার্লো আনচেলত্তি | |||
লিগ | লা লিগা | |||
২০২২–২৩ | ২য় | |||
ওয়েবসাইট | ক্লাব ওয়েবসাইট | |||
| ||||
রিয়াল মাদ্রিদের সক্রিয় বিভাগসমূহ | ||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
|
রিয়াল মাদ্রিদের নিষ্ক্রিয় বিভাগসমূহ | ||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
|
রেয়াল মাদ্রিদ ক্লুব দে ফুতবল (স্পেনীয় উচ্চারণ: ; "রয়্যাল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব") হচ্ছে একটি স্পেনীয় পেশাদার ফুটবল ক্লাব, যেটি রিয়াল মাদ্রিদ নামে অধিক পরিচিত এবং এটিকে সংক্ষিপ্তভাবে শুধুমাত্র রিয়াল বলা হয়। স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে এই ক্লাবটির অবস্থান।[৫] এটি বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে সফল ক্লাব।[৬][৭] এই ক্লাবের একটি সফল বাস্কেটবল শাখা রয়েছে। সাদা টি-শার্ট ও শর্টস এবং নীল মোজা হচ্ছে এই ক্লাবের প্রধান পোশাক।
১৯০২ সালের ৬ই মার্চে, মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব হিসেবে এই ক্লাবটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে। প্রতিষ্ঠার শুরু হতেই এই ক্লাবটি তাদের ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে সাদা রঙের পোশাক পরিধান করছে। রিয়াল শব্দটি স্পেনীয় শব্দ রয়্যাল হতে আগত। ১৯২০ সালে ত্রয়োদশ আলফনসো-এর পরিহিত রাজকীয় মুকুট এই ক্লাবের প্রতীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ক্লাবটি ১৯৪৭ সাল হতে ৮১,০৪৪ ধারণক্ষমতাসম্পন্ন মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে তাদের সকল হোম ম্যাচ খেলছে। অধিকাংশ ইউরোপীয় ক্রীড়া ক্লাবের বিপরীতে, রিয়াল মাদ্রিদের সদস্যগণ (সসিওস) তাদের ইতিহাস জুড়ে এই ক্লাবটির মালিকানায় ছিল এবং এটি পরিচালনা করেছে।
২০১৯ সালে রিয়াল মাদ্রিদ ফোর্বস দ্বারা প্রকাশিত ফোর্বস সবচেয়ে মূল্যবান ফুটবল ক্লাবের তালিকায় স্থান পায়, যেখানে প্রকাশ করা হয় যে এই ক্লাবটির মোট মূল্য আনুমানিক €৩.৮ বিলিয়ন ($৪.২ বিলিয়ন)। ২০১৭–১৮ মৌসুমে ক্লাবটি দালোয়েত দ্বারা প্রকাশিত সবচেয়ে বেশি আয়কারী ফুটবল ক্লাবের তালিকায় ১ম স্থান অধিকার করে, যেখানে ক্লাবটির বার্ষিক আয় ছিল আনুমানিক €৭৫০.৯ মিলিয়ন।[৮][৯][১০] ক্লাবটি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সমর্থিত দলগুলোর মধ্যে একটি।[১১] রিয়াল মাদ্রিদ লা লিগার ৩ প্রতিষ্ঠাতা সদস্যের মধ্যে একটি যারা ১৯২৯ সাল হতে শুরু হওয়া লা লিগার ইতিহাসে কখনোই শীর্ষ বিভাগ হতে অবনমিত হয়নি (বাকি দুই সদস্য হলো অ্যাথলেটিক বিলবাও ও বার্সেলোনা)। এই ক্লাবটি ফুটবলে চলমান সবচেয়ে দীর্ঘ দ্বন্দ্ব ধারণকারী ক্লাব, বিশেষ করে বার্সেলোনার সাথে এল ক্লাসিকো এবং আতলেতিকো মাদ্রিদের সাথে মাদ্রিদ ডার্বি।
১৯৫০-এর দশকে রিয়াল মাদ্রিদ স্পেনে এবং ইউরোপীয় প্রতিযোগিতায় নিজেদের একটি অপ্রতিরোধ্য শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। উক্ত সময়ে তারা টানা ৫ বার ইউরোপিয়ান কাপ জয়লাভ করে এবং ৭ বার এই প্রতিযোগিতার ফাইনালে খেলে। এই সাফল্য তারা স্পেনীয় লিগেও ধরে রেখেছিল, যেখানে তারা ৭ বছরের মধ্যে ৫ বার ট্রফি ঘরে তুলতে সক্ষম হয়েছিল। উক্ত সময়ের আলফ্রেদো দি স্তেফানো, ফেরেন্তস পুশকাস, ফ্রান্সিস্কো হেন্তো, রেমোঁ কোপার সমন্বিত দলটিকে অনেকে ফুটবলের সর্বকালের সেরা দল হিসেবে বিবেচনা করেন।[১২][১৩] ঘরোয়া ফুটবলে, রিয়াল এপর্যন্ত ৬৪টি শিরোপা জয়লাভ করেছে; যার মধ্যে রেকর্ড পরিমাণ ৩৩টি লা লিগা শিরোপা, ১৯টি কোপা দেল রে শিরোপা, ১০টি স্পেনীয় সুপার কাপ শিরোপা, ১টি কোপা এভা দুয়ার্তে শিরোপা এবং ১টি কোপা দে লা লিগা শিরোপা রয়েছে।[১৪] ইউরোপীয় এবং বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতায়, রিয়াল সর্বমোট ২৭টি শিরোপা জয়লাভ করেছে; যার মধ্যে রেকর্ড পরিমাণ ১৪টি ইউরোপিয়ান কাপ/উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা, ২টি উয়েফা কাপ শিরোপা এবং ৪টি উয়েফা সুপার কাপ শিরোপা রয়েছে। আন্তর্জাতিক ফুটবলে, তারা রেকর্ড পরিমাণ ৭টি ক্লাব বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ জয়লাভ করেছে।[নোট ১]
২০০০ সালের ১১ই ডিসেম্বর তারিখে, রিয়াল মাদ্রিদ ফিফা শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ক্লাবের স্বীকৃতি অর্জন করে[১৬] এবং ২০০৪ সালের ২০শে মে তারিখে, ফিফা শতবার্ষিক অর্ডার অফ মেরিট লাভ করে।[১৭] ২০১০ সালের ১১ই মে তারিখে, ক্লাবটি ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অফ ফুটবল হিস্টোরি অ্যান্ড স্ট্যাটিসটিক্স দ্বারা ২০শ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ক্লাবে ভূষিত হয়। ২০১৭ সালের জুন মাসে, রিয়াল মাদ্রিদ উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে টানা ২ বার শিরোপা জয়লাভ করে এবং পরবর্তীতে ২০১৮ সালের মে মাসে, একমাত্র দল হিসেবে তারা টানা ৩ বার শিরোপা জয়ের কৃতিত্ব অর্জন করে; যার মাধ্যমে তারা উয়েফা ক্লাব র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষস্থানে বজায় থাকে।[১৮][১৯]
রিয়াল মাদ্রিদের ইতিহাসে একে বেশ কয়েকটি ডাকনামে ডাকা হয়েছে। একটি ছিল লস মেরেঙ্গুয়েস, মেরিঙ্গু নামে একটি সাদা খাবার থেকে এই নামকরণ করা হয়েছে। পরবর্তীতে আসে লস ব্লাঙ্কোস। এই দুটি নাম ক্লাবটির সাদা পোশাকের প্রতিনিধিত্ব করে। ১৯৭০-এর দশকে রিয়ালের আরেকটি ডাকনাম, লস ভাইকিংস জনপ্রিয়তা পায়, উত্তর ইউরোপের বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়কে দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল বলে এই নামটি দেওয়া হয়েছিল। সাম্প্রতিক সময়ে গণমাধ্যমে দলটি লস গ্যালাক্তিকোস বা মহাতারকা নামে পরিচিত;[২০] স্পেনীয় ব্যবসায়ী ফ্লোরেন্তিনো পেরেজের সভাপতিত্বে বিশ্বের বেশ কয়েকজন দামী তারকা এই ক্লাবটিতে খেলেছে বলে এই নামকরণ হয়েছে।
আঠারো শতাব্দীতে ইন্সতিতুসিওন লিব্রে দে এন্সেনিয়াঞ্জার শিক্ষাবিদ এবং শিক্ষার্থী, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকদের দ্বারা মাদ্রিদে ফুটবল খেলা প্রচারের মাধ্যমে রিয়াল মাদ্রিদ প্রতিষ্ঠার ভিত্তি গড়ে উঠে। ১৮৯৭ সালে, তারা (সোসিয়েদাদ) স্কাই ফুটবল নামে একটি সংঘ প্রতিষ্ঠিত করেন, যেটি লা সোসিয়েদাদ (সমাজ) নামেই অধিক পরিচিত। এটি সেসময়ের মাদ্রিদভিত্তিক খেলাধুলার একমাত্র সংঘ ছিল, যেটি প্রতি রবিবার সকালে মনক্লোয়ায় খেলত। ১৯০০ সালে, এই সংঘের কয়েকজনের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হওয়ার ফলে তারা স্কাই ফুটবল হতে বিভক্ত হয়ে গিয়ে নুয়েভা সোসিয়েদাদ দে ফুটবল (ফুটবলের নতুন সমাজ) নামে নতুন একটি ক্লাব গঠন করে। বিভক্ত হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে একজন ছিলেন হুলিয়ান পালাকিওস, যিনি রিয়াল মাদ্রিদের প্রথম সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও বিভক্ত হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন দুই ভাই হুয়ান পাদ্রোস এবং কার্লোস পাদ্রোস, যারা পরবর্তীতে রিয়াল মাদ্রিদের সভাপতিত্বের দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯০১ সালে, এই নতুন ক্লাবের নাম পরিবর্তন করে মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব রাখা হয়। পরবর্তীতে, ১৯০২ সালে পুনর্গঠনের পর স্কাই ফুটবল সংঘটি নাম পরিবর্তন করে নিউ ফুট-বল ক্লাব রাখে।[২১][২২][২৩] ১৯০৬ সালের ৬ই মার্চ তারিখে, হুয়ান পাদ্রোসের সভাপতিত্বে একটি নতুন বোর্ড নির্বাচিত হওয়ার পর, মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে।[৩]
প্রতিষ্ঠার ৩ বছর পর, ১৯০৫ সালে, স্পেনীয় কাপের ফাইনালে অ্যাথলেটিক বিলবাওকে হারিয়ে মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব তাদের ইতিহাসে প্রথম শিরোপা জয়লাভ করেছিল। ১৯০৯ সালের ৪ঠা জানুয়ারি, ক্লাবটির তৎকালীন সভাপতি আদোলফ মেলেন্দেজ স্পেনীয় এফএ-এর সাথে একটি ভিত্তি চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে ক্লাবটিকে রয়্যাল স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশনের একটি প্রতিষ্ঠাতা সদস্যে পরিণত করেন। বেশ কয়েকটি মাঠে খেলার পর ১৯১২ সালে ক্লাবটি "কাম্পো দে ও'দোনেল"-এ স্থানান্তরিত হয়েছিল।[২৪] ১৯২০ সালে, ত্রয়োদশ আলফনসো দ্বারা রিয়াল উপাধি লাভ করার পর, ক্লাবটির নাম পরিবর্তন করে রিয়াল মাদ্রিদ রাখা হয়।[২৫]
১৯২৯ সালে, সর্বপ্রথম স্পেনীয় ফুটবল লিগ আয়োজন করা হয়। উক্ত মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদ পুরো লিগ জুড়ে শীর্ষস্থানে অবস্থান করেছিল, কিন্তু সর্বশেষ ম্যাচটি অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের কাছে হেরে যায়; যার ফলে বার্সেলোনা উক্ত মৌসুমের শিরোপা জয়লাভ করে এবং রিয়াল মাদ্রিদ ২য় স্থান অর্জন করে।[২৬] রিয়াল মাদ্রিদ সর্বপ্রথম ১৯৩১–৩২ মৌসুমে লা লিগা শিরোপা জয়লাভ করে এবং পরের মৌসুমেও তারা শিরোপাটি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছিল, এর ফলে তারা প্রথম ক্লাব হিসেবে টানা ২ বার লা লিগা শিরোপা জয়ের কৃতিত্ব অর্জন করে।[২৭]
১৯৩১ সালের ১৪ই এপ্রিল তারিখে, দ্বিতীয় স্পেনীয় গণতন্ত্রের আবির্ভাবের ফলে ক্লাবটি তার রিয়াল উপাধি হারিয়ে ফেলে এবং পুনরায় মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব নামে ফিরে যায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ও ক্লাবটি ফুটবল খেলা চালিয়ে যায়। ১৯৪৩ সালের ১৩শে জুন তারিখে, কোপা দে জেনারেলিসিমোর (জেনারেল ফ্রাঙ্কোর সম্মানের কোপা দেল রে'র নাম এরূপ রাখা হয়েছিল) সেমি-ফাইনালের দ্বিতীয় লেগে বার্সেলোনাকে ১১–১ গোলে হারিয়েছিল।[২৮] খেলা শেষে বার্সেলোনার খেলোয়াড়গণ অভিযোগ করেছিল যে তাদেরকে মাদ্রিদের পুলিশ ভয় দেখিয়েছিল,[২৯] পুলিশের সাথে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা পরিচালকও ছিলেন যিনি তাদেরকে বলেছিলেন যে "তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন কেবলমাত্র তাদেরকে এই দেশে বসবাসের অনুমতি দেওয়ার কারণে শাসকদের মহত্ত্বের মাধ্যমে খেলছে"।[৩০] তারা আরও জানান যে, মাদ্রিদের ভক্তরা বার্সেলোনার তৎকালীন চেয়ারম্যান এনরিকে পিনিয়েরোকে লাঞ্ছিত করেছে।[৩১] যদিও, ফিফা এবং উয়েফা এই অভিযোগগুলোর কোনটির সত্যতা খুঁজে পায়নি এবং তারা মনে করে যে উক্ত ম্যাচের ফলাফল বৈধ ছিল। স্পেনীয় সাংবাদিক ও লেখক হুয়ান কার্লোস পাসামন্তেস জানান যে, বার্সেলোনার খেলোয়াড় জোসেপ ভায়ে ম্যাচের পূর্বে স্পেনীয় নিরাপত্তা বাহিনীর প্রবেশের অভিযোগটি অস্বীকার করেন।[৩২] এর পরিবর্তে, উক্ত ম্যাচের প্রথম অর্ধ সম্পন্ন হওয়ার পর, বার্সেলোনা তৎকালীন কোচ হুয়ান হোসে নোগুয়েস এবং বার্সেলোনার সকল খেলোয়াড় রিয়াল মাদ্রিদ কঠোর ফুটবল খেলার ধরন এবং রিয়াল মাদ্রিদের ভক্তদের আগ্রাসনের প্রতি ক্ষুব্ধ ছিল।[৩২] এর জন্য তারা দ্বিতীয় অর্ধের জন্য মাঠে যেতে চায়নি, এমতাবস্থায় মাদ্রিদের পুলিশ প্রধান এসে তার পরিচয় প্রদান করেন এবং বার্সেলোনা দলকে মাঠে যেতে নির্দেশ প্রদান করেন।[৩২]
১৯৪৫ সালে, সান্তিয়াগো বার্নাব্যু ইয়েস্তে রিয়াল মাদ্রিদের সভাপতি হন।[৩৩] বার্নাব্যুর সভাপতিত্বে, স্পেনের গৃহযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর ক্লাবটি তাদের নিজস্ব মাঠ এস্তাদিও সান্তিয়াগো বার্নাব্যু ও তাদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র সিউদাদ দেপোর্তিভা সংস্কার করেন। উপরন্তু, ১৯৫০-এর দশকে সাবেক "রিয়াল মাদ্রিদ অপেশাদার" খেলোয়াড় মিগুয়েল মালবো রিয়াল মাদ্রিদের যুব একাডেমী কান্তেরা প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন, যেটি বর্তমানে লা ফাব্রিকা নামে পরিচিত। ১৯৫৩ সালের শুরুর দিকে, তিনি রিয়াল মাদ্রিদ ক্লাবে স্পেনের বাহির হতে বিশ্বমানের খেলোয়াড়দের দলে অন্তর্ভুক্ত করার একটি নতুন কৌশল শুরু করেন; সে সময় দলে অন্তর্ভুক্ত খেলোয়াড়দের মধ্যে আলফ্রেদো দি স্তেফানো ছিলেন অন্যতম।[৩৪]
১৯৫৫ সালে, এল'একুইপে-এর একজন ক্রীড়া সাংবাদিক ও সম্পাদক, গাব্রিয়েল হানোত দ্বারা প্রস্তাবিত একটি ধারণার ওপর ভিত্তি করে বার্নাব্যু, বেদ্রিগনান এবং গুজতভ সেবেস ইউরোপের চ্যাম্পিয়ন দলগুলোকে নিয়ে একটি প্রতিযোগিতা আরম্ভ করেছিল, যেখানে ক্লাবগুলো নিমন্ত্রণের মাধ্যমে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেত; এই প্রতিযোগিতাটি বর্তমানে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ নামে পরিচিত।[৩৫] বার্নাব্যুর নেতৃত্বে, তিনি রিয়াল মাদ্রিদকে স্পেনীয় এবং ইউরোপীয় ফুটবলে একটি শক্তিশালী ক্লাব হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করেছিলেন। ১৯৫৬ সাল হতে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত টানা ৫ বছর রিয়াল মাদ্রিদ ইউরোপিয়ান কাপ জয়লাভ করতে সক্ষম হয়েছিল, যার মধ্যে ১৯৬০ সালে, হাম্পদেন পার্কে অনুষ্ঠিত ফাইনালে এইন্ত্রাখট ফ্রাঙ্কফুর্টের বিরুদ্ধে ৭–৩ গোলে জয়টি উল্লেখযোগ্য।[৩৪] টানা ৫ বছর যাবত সাফল্য অর্জনের পর, রিয়াল মাদ্রিদকে স্থায়ীভাবে ইউরোপিয়ান কাপের আসল শিরোপাটি প্রদান করা হয় এবং উয়েফা ব্যাজ অফ অনার পরিধান করার অধিকার দেওয়া হয়।[৩৬]
১৯৬৬ সালে, বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেল্সের হেসল স্টেডিয়ামে আয়োজিত ফাইনালে সার্বীয় ক্লাব পার্তিজান বেলগ্রেডকে ২–১ গোলে হারিয়ে ৬ষ্ঠ বারের মতো ইউরোপিয়ান কাপ জয়লাভ করেছিল। উক্ত মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদ স্পেনের খেলোয়াড়দের ঘিরে সম্পূর্ণ দল গঠন করেছিল, ইউরোপিয়ান কাপের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এমন ঘটনা ঘটেছিল।[৩৭] উক্ত দলটি ইয়ে-ইয়ে নামে পরিচিত ছিল। দ্য বিটলসের ৪জন সদস্য মার্কার প্রচ্ছদে উপস্থিত হওয়ার পর, দ্য বিটলসের শি লাভস ইউ (সে তোমাকে ভালোবাসে) গানের একটি অংশ "ইয়াহ, ইয়াহ, ইয়াহ" হতে "ইয়ে-ইয়ে" নামকরণ করা হয়েছিল।[৩৮] ইয়ে-ইয়ে প্রজন্মটি ১৯৬২ এবং ১৯৬৪ সালে ইউরোপিয়ান কাপের ফাইনাল খেলেছিল, যেখানে তারা রানার-আপ হয়েছিল।[৩৭] ১৯৭০-এর দশকে, রিয়াল মাদ্রিদ ৫টি লিগ চ্যাম্পিয়নশিপ এবং ৩টি স্পেনীয় কাপ জ্যলাভ করেছিল।[৩৯] ১৯৭১ সালে, রিয়াল মাদ্রিদ প্রথমবারের মতো উয়েফা কাপ উইনার্স কাপের ফাইনাল খেলেছিল, যেখানে তারা ইংরেজ ক্লাব চেলসির কাছে ২–১ হেরেছিল।[৪০] ১৯৭৮ সালের ২রা জুলাই, আর্জেন্টিনায় অনুষ্ঠিত ১৯৭৮ ফিফা বিশ্বকাপের সময় ক্লাবটির সভাপতি সান্তিয়াগো বার্নাব্যু ইয়েস্তে মৃত্যুবরণ করেন। এর ফলে উক্ত প্রতিযোগিতার সময় ফিফা তার সম্মানে ৩ দিনের শোক পালন করেছিল।[৪১] পরের বছর, রিয়াল মাদ্রিদ তাদের সাবেক সভাপতির সম্মানে ত্রফেও সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর প্রথম সংস্করণ আয়োজন করেছিল।
১৯৮০ সালের শুরুর দিকে, স্থানীয় এক দল তারকা খেলোয়াড়ের আবির্ভাবের পূর্ব পর্যন্ত রিয়াল মাদ্রিদ লা লিগায় তাদের লড়াই হারিয়ে ফেলেছিল, তাদের আগমনের মাধ্যমে রিয়াল মাদ্রিদ পুনরায় সাফল্যের দেখা পায়।[৪২][৪৩] এই প্রজন্মকে স্পেনীয় ক্রীড়া সাংবাদিক হুলিও সেসার ইগলেসিয়াস লা কিন্তা দেল বুইত্রে (শকুনির দল) নামকরণ করেন, এই নামটি উক্ত দলের একজন সদস্য এমিলিও বুত্রাগেনিয়োর ডাকনাম থেকে নেওয়া হয়েছিল। বুত্রাগেনিয়ো ছাড়া উক্ত দলের অন্যান্য সদস্যরা ছিলেন: মানুয়েল সানচিস, মার্তিন ভাজকেজ, মিচেল এবং মিগেল পারদেজা। এই দলের পাঁচজনই রিয়াল মাদ্রিদের যুব একাডেমী হতে ফুটবল শিক্ষা সম্পন্ন করেছিলেন।[৪২][৪৩] "লা কিন্তা দেল বুইত্রে" (১৯৮৬ সালে পারদেজা রিয়াল জারাগোজায় যোগদান করার ফলে এই দলটিতে ৪জন সদস্য অবশিষ্ট ছিল) এবং বেশ কয়েকজন উল্লেখযোগ্য খেলোয়াড় যেমন: গোলরক্ষক ফ্রাঞ্চিস্কো বুয়ো, রাইট-ব্যাক মিগেল পোরলান নোগেরা ও মেক্সিকান স্ট্রাইকার উগো সানচেজের সাথে, ১৯৮০-এর দশকের দ্বিতীয়ার্ধে, রিয়াল মাদ্রিদ স্পেনে এবং ইউরোপে নিজেদের অন্যতম সেরা দল হিসেবে গড়ে তুলেছিল। উক্ত সময়ে তারা ২টি উয়েফা কাপ শিরোপা, টানা ৫টি স্পেনীয় চ্যাম্পিয়নশিপ শিরোপা, ১টি স্পেনীয় কাপ এবং ৩টি স্পেনীয় সুপার কাপ শিরোপা জয়লাভ করেছিল।[৪২][৪৩] ১৯৯০-এর দশকের শুরুর দিকে, মার্তিন ভাজকেজ, এমিলিও বুত্রাগেনিয়ো এবং মিচেলের ক্লাব ছাড়ার মাধ্যমে "লা কিন্তা দেল বুইত্রে" দলটি ভেঙ্গে যায়।
১৯৯৬ সালে, তৎকালীন সভাপতি লরেঞ্জ সাঞ্জ সাবেক ইতালীয় মধ্যমাঠের খেলোয়াড় ফাবিও কাপেলোকে রিয়াল মাদ্রিদের কোচ হিসেবে নিযুক্ত করেন। যদিও তিনি মাত্র ১ মৌসুম রিয়াল মাদ্রিদের কোচ ছিলেন, কিন্তু উক্ত মৌসুমে তিনি রিয়াল মাদ্রিদকে লা লিগা শিরোপা জয়লাভ করতে সাহায্য করেন। তার অধীনে রোবের্তো কার্লোস, প্রেদ্রা মিয়াতোভিচ, দাভোর শুকার এবং ক্লেরান্স সেদর্ফের মতো খেলোয়াড় পূর্বে রিয়াল মাদ্রিদে বিদ্যমান রাউল, ফার্নান্দো হিয়েরো, ইবান সামরানো এবং ফের্নান্দো রেদোন্দোর সাথে অন্তর্ভুক্ত হন; এর মাধ্যমে রিয়াল মাদ্রিদ নিজেদের দলকে আরো শক্তিশালী করতে তুলেছিল। এর ফলস্বরূপ, রিয়াল মাদ্রিদ প্রায় ৩২ বছর পর তাদের ৭ম ইউরোপিয়ান কাপ শিরোপা জয়লাভ করতে সক্ষম হয়েছিল; ১৯৯৮ সালে, জার্মান ম্যানেজার ইয়ুপ হাইঙ্কেসের অধীনে ফাইনালে প্রেদাগ মিয়াতোভিচের করা একমাত্র গোলের বিনিময়ে তারা ইয়ুভেন্তুসের বিরুদ্ধে ১–০ জয়লাভ করেছিল।[৪৪]
১৯৯৯ সালে, রিয়াল মাদ্রিদ ভক্তদের মধ্যে জনপ্রিয়তার অভাব এবং লরেঞ্জ সাঞ্জের সাথে কলহ সৃষ্টি হওয়ার ফলে কাপেলোকে পদচু্যত করা হয়।[৪৫] এর ফলে একই বছরের নভেম্বর মাসে, রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক মধ্যমাঠের খেলোয়াড় ভিসেন্তে দেল বস্ককে কোচের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। দেল বস্কের দলটি কাপেলোর দল হতে সম্পূর্ণ ভিন্ন ছিল। উক্ত দলে রাউল, ইকার ক্যাসিয়াস, ফের্নান্দো মোরিয়েন্তেস এবং গুতির মতো তরুণ প্রতিভা, প্রিমিয়ার লিগ হতে আগত স্টিভ ম্যাকম্যানাম্যান ও নিকোলা আনেলকা এবং স্থানীয় প্রতিভা মিচেল সালগাদো ও ইবান এলগুয়েরার মতো নতুন প্রতিভা এবং ফার্নান্দো হিয়েরো ও রোবের্তো কার্লোসের মতো অভিজ্ঞ খেলোয়াড় ছিল। রিয়াল মাদ্রিদের কোচ হিসেবে দেল বস্কের প্রথম মৌসুমেই, রিয়াল মাদ্রিদ ৮ম বারের মতো উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়লাভ করেছিল; উক্ত ম্যাচে মোরিয়েন্তেস, ম্যাকম্যানাম্যান এবং রাউলের করা গোলের মাধ্যমে ভালেনসিয়াকে ৩–০ গোলে হারিয়ে দিয়েছিল।[৪৬] এই জয়টিকে রিয়াল মাদ্রিদের ইতিহাসের আরেকটি সফলতম অধ্যায়ের সূচনা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।[৪৭]
২০০০ সালের জুলাই মাসে, ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ রিয়াল মাদ্রিদের ১৫তম সভাপতি নির্বাচিত হন।[৪৮] তিনি ক্লাবটির €২৭০ মিলিয়নের ঋণ পরিশোধ করার এবং ক্লাবটিকে সকল প্রকারের আধুনিক সুযোগ সুবিধা প্রদান করার অঙ্গীকার করেন।[৪৯] যাহোক, পেরেজের নির্বাচনী প্রচারণার প্রাথমিক প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে তিনি রিয়ালের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনার খেলোয়াড় লুইস ফিগোকে রিয়াল মাদ্রিদে যোগদান করিয়েছিলেন।[৪৯] পরবর্তী বছর, ক্লাবটি তাদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পুনর্নির্মাণ করেছিল এবং গ্রীষ্মে প্রচুর অর্থ খরচ করে বিশ্বের সেরা তারকাদের দলে অন্তর্ভুক্ত করে গ্যালাক্তিকোস গঠন করেছিল; যেখানে জিনেদিন জিদান, রোনালদো, লুইস ফিগো, ডেভিড বেকহ্যাম এবং ফাবিও কান্নাভারোর মতো তারকা খেলোয়াড় ছিল।[৫০] এটি একটি বিতর্কের বিষয় যে, উক্ত সময়ে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে দল গঠন করা সফল হয়েছিল কি-না; কেননা উক্ত দল নিয়ে রিয়াল মাদ্রিদ শুধুমাত্র ২০০২ সালে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা, আন্তর্মহাদেশীয় কাপ ও ২০০৩ সালে লা লিগা শিরোপা জয়লাভ করেছিল এবং পরবর্তী তিন মৌসুম তারা কোন প্রধান শিরোপা জয়লাভ করতে সক্ষম হয়নি।[৫১]
২০০৩ সালে, লা লিগা শিরোপা জয়ের কয়েকদিন বিতর্কের সৃষ্টি হয়। ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ দ্বারা তৎকালীন কোচ ভিসেন্তে দেল বস্ককে পদচ্যুত করার মাধ্যমে সর্বপ্রথম বিতর্কের সৃষ্টি হয়।[৫২] অতঃপর এক ডজনের মতো খেলোয়াড় ক্লাব ছেড়ে চলে যায়, যাদের মধ্যে রিয়ালের অধিনায়ক ফার্নান্দো হিয়েরো অন্যতম। একই সময় মধ্যমাঠের খেলোয়াড় ক্লদ্ মাকেলেলে ক্লাবের সর্বনিম্ন বেতনপ্রাপ্ত খেলোয়াড় হওয়ার প্রতিবাদে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে যোগদান করতে অস্বীকৃতি যান, পরবর্তীতে তিনি চেলসিতে যোগদান করেছিলেন।[৫৩] এই বিষয় নিয়ে জিদান বলেছিলেন, "ফুটবলের একটি সাধারণ নিয়ম রয়েছে: কখনোই জয়ী দলে পরিবর্তন করতে নেই"।[৫৪] অতঃপর রিয়াল মাদ্রিদ কার্লোস কুইরোজকে তাদের নতুন কোচ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিল, যার অধীনে রিয়াল বেতিসের বিরুদ্ধে কষ্টার্জিত জয়ের মাধ্যমে ঘরোয়া লিগ শুরু করেছিল।[৫৪]
২০০৫–০৬ মৌসুমটি বেশ কয়েকটি প্রতিশ্রুতিমূলক নতুন চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল; তাদের মধ্যে হুলিও বাপতিস্তা (€২৪ মিলিয়ন), রবিনিয়ো (€৩০ মিলিয়ন) এবং সার্জিও রামোস (€২৭ মিলিয়ন) অন্যতম।[৫৫] তারপরও, রিয়াল মাদ্রিদ উক্ত মৌসুমটি ভালোভাবে শুরু করতে ব্যর্থ হয়েছিল; তার মধ্যে ২০০৫ সালের নভেম্বর মাসে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে বার্সেলোনার কাছে ০–৩ গোলে হার উল্লেখযোগ্য।[৫৬] পরের মাসে, রিয়ালের তৎকালীন কোচ ভান্দেরলেই লুক্সেমবুর্গো পদচ্যুত হয়েছিল এবং তার পরিবর্তে হুয়ান রামোন লোপেজ কারো রিয়ালের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন।[৫৭] অতঃপর রিয়াল মাদ্রিদ অল্প সময়ের জন্য জয়ের গতি পেয়েছিল যেটি কোপা দেল রে-র কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগ রিয়াল জারাগোজার কাছে ৬–১ গোলে হারার মাধ্যমে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছিল।[৫৮] এর পরপরই, আর্সেনালের কাছে সামগ্রিকভাবে ১–০ গোলে হারার মাধ্যমে রিয়াল মাদ্রিদ টানা চতুর্থবারের মতো উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ হতে বাদ পরে গিয়েছিল। ২০০৬ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারি, ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ পদত্যাগ করেছিলেন।[৫৯]
২০০৬ সালের ২রা জুলাই, রামোন কালদেরন রিয়াল মাদ্রিদের সভাপতি নির্বাচিত হন। এর পরপরই, তিনি ফাবিও কাপেলোকে নতুন কোচ হিসেবে এবং প্রেদ্রা মিয়াতোভিচকে নতুন হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন। উক্ত মৌসুমে, রিয়াল মাদ্রিদ চার বছর পর লা লিগা শিরোপা জয়লাভ করতে সক্ষম হয়েছিল; এই সফল মৌসুমের পরও ফাবিও কাপেলোকে পদচ্যুত করা হয়েছিল।[৬০] রিয়াল মাদ্রিদ ১৭ই জুন তারিখে মায়োর্কাকে হারিয়ে শিরোপা জয়লাভ করেছিল; উক্ত দিনে অপর দুই শিরোপা প্রত্যাশী বার্সেলোনা এবং সেভিয়া যথাক্রমে তারাগোনা এবং ভিয়ারিয়ালের বিরুদ্ধে খেলেছিল। প্রথমার্ধ শেষে, রিয়াল মাদ্রিদ ০–১ গোলে পিছিয়ে ছিল, অন্যদিকে ন্যু এস্তাদি দে তারাগোনায় অনুষ্ঠিত খেলায় বার্সেলোনা ০–৩ গোলে এগিয়ে ছিল। তবে দ্বিতীয়ার্ধে মাহামাদু দিয়ারা একটি এবং হোসে আন্তোনিও রেয়েসের জোড়া গোলে রিয়াল মাদ্রিদ ৩–১ গোলে ম্যাচ এবং শিরোপা জয়লাভ করেছিল।[৬১]
২০০৯ সালের ১লা জুন তারিখে, ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ রিয়াল মাদ্রিদের সভাপতি হিসেবে পুনরায় ফিরে আসেন।[৬২] পেরেজ দ্বিতীয় মেয়াদে আসার পরপরই তার গালাক্তিকোস নীতি অনুসরণ করতে থাকেন। তিনি ২০০৯ সালে ব্রাজিলীয় মধ্যমাঠের খেলোয়াড় কাকাকে এসি মিলান হতে প্রায় £৫৬ মিলিয়নের বিনিময়ে দলে ভিড়িয়েছিলেন; যেটি উক্ত সময়ের রেকর্ড ভাঙ্গা স্থানান্তর ফী ছিল।[৬৩] একই সাথে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড হতে পর্তুগিজ ফুটবলার ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোকে £৮০ মিলিয়নের বিনিময়ে দলে অন্তর্ভুক্ত করে পুনরায় রেকর্ড ভেঙেছিলেন।[৬৪]
২০১০ সালের মে মাসে, পর্তুগিজ ম্যানেজার জোসে মরিনহো রিয়াল মাদ্রিদের ম্যানেজার হিসেবে যোগদান করেছিলেন।[৬৫][৬৬] ২০১১ সালের এপ্রিল মাসে, ফুটবল ইতিহাসে প্রথমবারের মতো মাত্র ১৮দিনের মধ্যে চারটি এল ক্লাসিকো অনুষ্ঠিত হয়েছিল। যার প্রথম ম্যাচটি ছিল ১৭ই এপ্রিলে লিগ ম্যাচ (যেটি ১–১ গোলে ড্র হয়েছিল যেখানে উভয় ক্লাব পেনাল্টিতে গোল করেছিল), দ্বিতীয় ম্যাচটি ছিল কোপা দেল রে-এর ফাইনাল (যেটি ১–০ গোলে মাদ্রিদ জয়লাভ করেছিল) এবং ২৭শে এপ্রিল ও ২রা মে আয়োজিত বিতর্কিত দুই-লেগ বিতর্কিত চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনালে বার্সেলোনা ৩–১ ব্যবধানে জয়লাভ করেছিল।[৬৭]
২০১১–১২ লা লিগা মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদ লা লিগার ইতিহাসের রেকর্ড পরিমাণ ৩২তম শিরোপা জয়লাভ করেছিল, যেখানে তারা বেশ কয়েকটি ক্লাব রেকর্ড গড়েছিল। উক্ত মৌসুমের ৩৮ ম্যাচের ৩২টিতে জয়লাভ করে রিয়াল মাদ্রিদ সর্বমোট ১০০ পয়েন্ট অর্জন করেছিল; উক্ত মৌসুমে তাদের গোল ব্যবধান ছিল +৮৯, যেখানে তারা ১২১টি গোল করেছিল।[৬৮] একই মৌসুমে, স্পেনীয় লিগের ইতিহাসে দ্রুততম খেলোয়াড় হিসেবে ১০০ গোলের মাইলফলকে পৌঁছেছিলেন ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো। তিনি মাত্র ৯২টি ম্যাচে ১০১ গোল করে ক্লাবের কিংবদন্তি খেলোয়াড় ফেরেন্তস পুশকাসকে পেছনে ফেলেছিলেন, যিনি ১০৫ ম্যাচে ১০০টি করতে সক্ষম হয়েছিলেন। রোনালদো এক মৌসুমে ৬০টি গোল করার মাধ্যমে নতুন ক্লাব রেকর্ড গড়েছিলেন এবং প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে এক মৌসুমে লা লিগার অন্যান্য ১৯টি দলের সব দলের বিরুদ্ধে গোল করেছিলেন।[৬৯][৭০]
রিয়াল মাদ্রিদ ২০১২–১৩ মৌসুমে স্পেনীয় সুপার কাপ জয়লাভ করেছিল, যেখানে তারা বার্সেলোনাকে অ্যাওয়ে গোলের নিয়মে হারিয়েছিল, তবে লিগে তারা দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছিল। উক্ত মৌসুমের গ্রীষ্মে স্থানান্তরের মূল আকর্ষণ ছিল প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব টটেনহ্যাম হটস্পার হতে মধ্যমাঠের খেলোয়াড় লুকা মদরিচের আগমন; তিনি £৩৩ মিলিয়নের বিনিময়ে রিয়াল মাদ্রিদে যোগদান করেছিলেন। ২০১৩ কোপা দেল রে ফাইনালে অতিরিক্ত সময়ে আতলেতিকো মাদ্রিদের কাছে হারের পর, পেরেজ ঘোষণা করেন যে, "পারস্পরিক চুক্তি"র ভিত্তিতে উক্ত মৌসুম শেষে মরিনহো ম্যানেজারের দায়িত্ব ছেড়ে চলে যাবেন।[৭১][৭২]
২০১৩ সালের ২৫শে জুন তারিখে, মরিনহোর প্রস্থানের পর কার্লো আনচেলত্তিকে তিন বছরের চুক্তিতে রিয়াল মাদ্রিদের নতুন ম্যানেজার পদে এবং জিনেদিন জিদানকে তার সহকারী ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।[৭৪] ২০১৩ সালের ১লা সেপ্টেম্বর তারিখে, টটেনহ্যাম হটস্পার হতে ওয়েলসের আক্রমণভাগের খেলোয়াড় গ্যারেথ বেলকে প্রায় €১০০ মিলিয়নের বিনিময়ে দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল; এটি রিয়াল মাদ্রিদের ক্ষেত্রে একটি বহু-প্রতীক্ষিত স্থানান্তর ছিল।[৭৫] এই ক্লাবে আনচেলত্তির প্রথম মৌসুমেই, রিয়াল মাদ্রিদ কোপা দেল রে জয়লাভ করতে সক্ষম হয়েছিল; ফাইনালে দি মারিয়া এবং বেলের করা গোলের মাধ্যমে বার্সেলোনাকে ২–১ গোলে হারিয়ে শিরোপাটি জয়লাভ করেছিল।[৭৬] ২০১৪ সালের ২৪শে মে তারিখে, রিয়াল মাদ্রিদ ২০১৪ উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে তাদের শহরের অন্য আরেক দল আতলেতিকো মাদ্রিদকে হারিয়ে ২০০২ সালের পর প্রথম ইউরোপীয় শিরোপা[৭৭] এবং প্রথম দল হিসেবে দশটি ইউরোপিয়ান কাপ/চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা জয়ী দলে পরিণত হয়েছিল; এই অর্জনটি "লা দেসিমা" নামে পরিচিত।[৭৮]
২০১৪ উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের পর, রিয়াল মাদ্রিদ কোস্টা রিকান গোলরক্ষক কেইলর নাভাস, জার্মান মধ্যমাঠের খেলোয়াড় টনি ক্রুস ও কলম্বীয় আক্রমণাত্মক মধ্যমাঠের খেলোয়াড় হামেস রদ্রিগেজকে দলে অন্তর্ভুক্ত করেছিল।[৭৯] ক্লাবটি ২০১৪ উয়েফা সুপার কাপে সেভিয়াকে হারিয়ে তাদের ৭৯তম শিরোপা জয়লাভ করেছিল।[৮০] ২০১৪ গ্রীষ্মকালীন স্থানান্তরের শেষ সপ্তাহে রিয়াল মাদ্রিদ তাদের দুইজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় জাবি আলোনসোকে বায়ার্ন মিউনিখে ও আনহেল দি মারিয়াকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে বিক্রি করে দিয়েছিল। তবে এই সিদ্ধান্তটি অনেক সমালোচিত ভয়েছিল, দলের তারকা খেলোয়াড় ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো বলেছিলেন,"আমি দায়িত্বে থাকলে হয়তো কাজগুলো ভিন্নভাবে হতো"। দলের তৎকালীন কোচ কার্লো আনচেলোত্তি স্বীকার করেন, "আমাদেরকে আবার শূন্য থেকে শুরু করতে হবে"।[৮১][৮২]
২০১৪–১৫ লা লিগা মৌসুমের শুরুতে খারাপ প্রদর্শনের পর, রিয়াল মাদ্রিদ টানা ২২ ম্যাচ জয়লাভ করে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছিল, যেখানে বার্সেলোনা এবং লিভারপুলের বিরুদ্ধে জয় ছিল। পূর্বের রেকর্ডটির অধিকারী ছিল ২০০৫–০৬ মৌসুমে ফ্রাংক রাইকার্ডের "বার্সা", যেখানে তারা টানা ১৮টি ম্যাচ জয়লাভ করেছিল।[৮৩] ২০১৫ সালের উদ্বোধনী ম্যাচে ভালেনসিয়ার কাছ ২–১ গোলে হারের মাধ্যমে টানা ২২ ম্যাচ জয়ের ধারাটি সমাপ্ত হয়েছিল, রিয়াল মাদ্রিদ টানা ২৪ জয়ের বিশ্ব রেকর্ডের সমান হতে মাত্র ২ ম্যাচ জয় কম ছিল।[৮৪] উক্ত মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদ পুনরায় চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা (ইয়ুভেন্তুসের কাছে হেরে) এবং কোপা দেল রে জয়লাভ করতে ব্যর্থ হয়; একই সাথে লিগ শিরোপা জয়লাভ করতেও ব্যর্থ হয়, যেখানে তারা বার্সেলোনার নিচে ২য় স্থান অর্জন করেছিলেন। এই অসফল মৌসুম শেষের কিছুদিন পর, ২০১৫ সালের ২৫শে মে তারিখে, আনচেলত্তিকে বরখাস্ত করা হয়েছিল।[৮৫]
২০১৫ সালের ৩রা জুন তারিখে, রাফায়েল বেনিতেজ রিয়াল মাদ্রিদের সাথে তিন বছরের এক চুক্তি স্বাক্ষর করার মাধ্যমে নতুন ম্যানেজার হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন।[৮৬] ম্যাচদিন ১১-এ সেভিয়ার কাছে ৩–২ গোলে পরাজিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত রিয়াল মাদ্রিদ লিগে অপরাজিত ছিল। এরপর বার্সেলোনার বিপক্ষে মৌসুমের প্রথম "ক্লাসিকো"য় ০–৪ গোলে হেরেছিল। কোপা দেল রে ৩২ দলের পর্বের প্রথম লেগে কাদিজের বিরুদ্ধে অযোগ্য খেলোয়াড় দেনিস চেরিশেভকে খেলিয়েছিল, যেখানে ৩–১ গোলে জয়লাভ করেছিল, কিন্তু অযোগ্য খেলোয়াড় হিসেবে চেরিশেভকে খেলানোর ফাইল দ্বিতীয় লেগ বাতিল হয়ে গিয়েছিল এবং প্রতিযোগিতায় রিয়াল মাদ্রিদকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছিল।[৮৭] সমর্থকদের সাথে অ-জনপ্রিয়তা, খেলোয়াড়দের সাথে অসন্তোষ এবং শীর্ষ দলগুলোর বিরুদ্ধে ভালো ফলাফল না পাওয়ার অভিযোগে ২০১৬ সালের ৪ঠা জানুয়ারিতে, বেনিতেজকে তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল।[৮৮]
২০১৬ সালের ৪ঠা জানুয়ারি তারিখে, বেনিতেজের প্রস্থান ঘোষণা করার পাশাপাশি সাবেক রিয়াল মাদ্রিদ খেলোয়াড়, ফরাসি ফুটবলার এবং রিয়াল মাদ্রিদের তৎকালীন সহকারী ম্যানেজার জিনেদিন জিদানকে প্রধান ম্যানেজারের পদে উন্নীত করা হয়েছিল।[৮৯] জিদানের অধীনে, ২০১৫–১৬ লা লিগায় বার্সেলোনা হতে মাত্র ১ পয়েন্টের ব্যবধানে ২য় স্থান অধিকার করেছিল।[৯০] ২০১৬ সালের ২৮শে মে তারিখে, রিয়াল মাদ্রিদ ১১তম উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা জয়লাভ করেছিল, এর ফলে তারা এই প্রতিযোগিতায় সর্বাধিক শিরোপা জয়ের রেকর্ড অক্ষুণ্ণ করেছিল; রিয়াল মাদ্রিদের এই সাফল্যকে "লা উনোদেসিমা" হিসেবে অভিহিত করা হয়েছিল।[৯১]
২০১৬–১৭ মৌসুমে, জিদানের অধীনে রিয়াল মাদ্রিদ সর্বপ্রথম পূর্ণ মৌসুম শুরু করেছিল; তারা ২০১৬ উয়েফা সুপার কাপ জয়লাভের মধ্য দিয় তাদের এই মৌসুম শুরু করেছিল।[৯২] ২০১৬ সালের ১০ই ডিসেম্বর তারিখে, রিয়াল মাদ্রিদ তাদের টানা ৩৫ ম্যাচ অপরাজিত ছিল, যেটি ক্লাবের একটি নতুন রেকর্ড ছিল।[৯৩] ২০১৬ সালের ১৮ই ডিসেম্বর তারিখে, রিয়াল মাদ্রিদ ২০১৬ ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনালে জাপানি ক্লাব কাশিমা এন্টলারকে ৪–২ গোলে পরাজিত করে।[৯৪] ২০১৭ সালের ১২ই জানুয়ারি তারিখে, সেভিয়ার সাথে ৩–৩ গোলে ড্র করার মাধ্যমে রিয়াল মাদ্রিদ টানা ৩৫ ম্যাচ অপরাজিত থেকেছিল, এর মাধ্যমে পূর্ববর্তী মৌসুমে বার্সেলোনার তৈরি সকল প্রতিযোগিতায় টানা ৩৯ ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ডটি ভেঙ্গে দিয়েছিল।[৯৫] এর তিনদিন পর, লা লিগার এক ম্যাচে সেভিয়ার কাছে ১–২ গোলে হেরে তাদের অপরাজিত থাকার ধারাটি থেমে গিয়েছিল।[৯৬] একই বছরের মে মাসে, রিয়াল মাদ্রিদ ২০১৬–১৭ লা লিগা জয়লাভ করেছিল, যেটি তাদের ইতিহাসে ৩৩তম লা লিগা এবং ২০১২ সালের পর প্রথম শিরোপা ছিল।[৯৭] ৩রা জুন তারিখে, রিয়াল ২০১৬–১৭ উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে ইয়ুভেন্তুসকে ৪–১ গোলে হারিয়ে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন লিগের ইতিহাসে প্রথম দল হিসেবে এবং ইউরোপীয় প্রতিযোগিতায় ১৯৮৯ ও ১৯৯০ সালে ইন্টার মিলানের জয়ের পর প্রথম দল হিসেবে টানা ২ বার শিরোপা জয়ের গৌরব অর্জন করে।[৯৮][৯৯] এই শিরোপাটি রিয়াল মাদ্রিদের ১২তম এবং গত ৪ বছর ২য় উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা ছিল; এই সাফল্যকে "লা দুওদেসিমা" হিসেবে অভিহিত করা হয়েছিল।[১০০] ট্রফি জয়ের দিক থেকে ২০১৬–১৭ মৌসুমটি রিয়াল মাদ্রিদের ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ মৌসুম ছিল।[১০১]
রিয়াল মাদ্রিদ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে ২–১ গোলে হারিয়ে ২০১৭ উয়েফা সুপার কাপ জয়লাভ করেছিল।[১০২] এর পাঁচ দিন পর, রিয়াল মাদ্রিদ ২০১৭ স্পেনীয় সুপার কাপের প্রথম লেগে বার্সেলোনাকে ২–০ গোলে হারিয়েছিল; এর ফলে বার্সেলোনার টানা ২৪ এল ক্লাসিকোয় গোল করার রেকর্ড ভেঙ্গে গিয়েছিল। অতঃপর দ্বিতীয় লেগে ৩–১ গোলে জয়লাভ করে সামগ্রিকভাবে ৫–১ গোলে জয়ী হয়ে রিয়াল মাদ্রিদ ২০১৭ সালের স্পেনীয় সুপার কাপ জয়লাভ করেছিল।[১০৩] ১৬ ডিসেম্বর ২০১৭ তে,রিয়াল ব্রাজিলীয় ক্লাব গ্রেমিওকে ২০১৭ ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনালে ১-০ গোলে হারায় এবং প্রথম ক্লাব হিসেবে এই শিরোপা ধরে রাখে।[১০৪] ২০১৮ সালে, রিয়াল মাদ্রিদ টানা তৃতীয়বার উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়লাভ করেছিল, এর ফলে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে প্রথম ক্লাব হিসেবে টানা তিনবার এবং ১৯৭০-এর দশকে বায়ার্ন মিউনিখের পর ইউরোপীয় প্রতিযোগিতায় প্রথম ক্লাব হিসেবে টানা তিনবার শিরোপা জয়লাভ করেছিল। ৩১শে মে তারিখে, ফাইনাল জয়ের মাত্র ৫ দিন পর, জিদান রিয়াল মাদ্রিদ ম্যানেজার হিসেবে তার পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছিলেন। তিনি পদত্যাগের কারণ হিসেবে জানান যে, এই ক্লাবে "পরিবর্তনের প্রয়োজন" রয়েছে।[১০৫][১০৬]
২০১৮ সালের ১২ই জুন তারিখে, রিয়াল মাদ্রিদ তৎকালীন স্পেন জাতীয় দলের প্রধান কোচ হুলেন লোপেতেগিকে তাদের পরবর্তী ম্যানেজারের দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। একই সাথে ঘোষণা করা হয়েছিল যে তিনি ২০১৮ ফিফা বিশ্বকাপের পর আনুষ্ঠানিকভাবে রিয়াল মাদ্রিদের ম্যানেজারের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন, তবে স্পেন জাতীয় দল বিশ্বকাপের একদিন পূর্বে লোপেতেগিকে বরখাস্ত করে দিয়েছিল এবং জানায় যে লোপেতেগি তাদের সাথে কোন প্রকার যোগাযোগ না করেই রিয়াল মাদ্রিদের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। তিনি ক্লাবের সাথে তাদের তথ্য না জানিয়ে চুক্তির সাথে আলোচনা করেছেন।[১০৭][১০৮][১০৯] প্রায় €১০০ মিলিয়নের বিনিময়ে ইতালীয় ক্লাব ইয়ুভেন্তুসের কাছে রোনালদোকে বিক্রয়ের পর, রিয়াল মাদ্রিদ ২০১৮ সালের গ্রীষ্মে আগ্রাসীভাবে তাদের দলকে সাজানোর কাজ শুরু করেছিল।[১১০]
রিয়াল মাদ্রিদের খারাপ খেলার ধরন এবং ক্রমাগত হারের ফলে, লোপেতেগিকে পদচ্যুত করা করেছিল। তার পরিবর্তে দলের ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করছেন সাবেক কাস্তিয়া ম্যানেজার সান্তিয়াগো সোলারি।[১১১] ২০১৮ সালের ২২ ডিসেম্বর ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদ আল আইনকে ৪-১ ব্যবধানে পরাজিত করে। তাদের জয়ের মাধ্যমে, রিয়াল মাদ্রিদ চারটি শিরোপা নিয়ে ক্লাব বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ শিরোপা বিজয়ী হয়ে ওঠে। তারা সাতবারের জন্য বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয় কারণ ফিফা ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের পূর্বসূরি হিসাবে ফিফা ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপকে স্বীকৃতি দেয়।এই জয়ের মাধ্যমে তারা একটানা তিনবারের জন্য ক্লাব বিশ্বকাপ জয় করে,যা আগে কখনো কেউ পারে নি।[১১২] ১১ মার্চ ২০১৯ তারিখে, সান্তিয়াগো সোলারির পরিবর্তে আবারো জিনেদিন জিদানকে প্রধান প্রশিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।[১১৩][১১৪]
১২ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে, ২০১৯–২০ স্পেনীয় সুপার কাপের ফাইনালে পেনাল্টিতে আতলেতিকো মাদ্রিদকে হারিয়ে নিজেদের ১১তম স্পেনীয় সুপারকাপ শিরোপা জয় করে।[১১৫] ২০২০ সালের মার্চ মাসে কোভিড–১৯ মহামারীর কারণে লিগ ৩মাস বিরতি থাকে। জুনে প্রত্যাবর্তনের পর পর টানা দশটি জয় দ্বারা তাদের ৩৪ তম লিগ শিরোপা লাভ করে।[১১৬]
সর্বপ্রথম কুলচিহ্নটি একটি সাদামাদা নকশা ছিল, যেখানে ক্লাবের তৎকালীন নাম মাদ্রিদ ক্লাব দে ফুতবল হতে তিনটি বর্ণ এমএসএফ (MCF) ছিল; এই কুলচিহ্নটির রঙ ছিল গাঢ় নীল। ১৯০৮ সালে, এই কুলচিহ্নের প্রথম পরিবর্তন করা হয়েছিল। সে সময় বর্ণগুলো একটি বৃত্তের ভিতরে আরও সুস্পষ্ট আকার ধারণ করে।[১১৭] ১৯২০ সাল পর্যন্ত পেদ্রো পারাগেসের আমলে কুলচিহ্নের আকৃতিতে পরবর্তী কোন পরিবর্তন আনা হয়নি। অতঃপর, ত্রয়োদশ আলফনসো এই ক্লাবকে রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করেছিলেন যার ফলে ক্লাবটি "রিয়াল মাদ্রিদ" নাম পায়, যার অর্থ "রাজকীয়।[১১৮] এর ফলে, ত্রয়োদশ আলফনসোর পরিহিত রাজকীয় মুকুট এই ক্লাবের প্রতীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল এবং ক্লাবটি রিয়াল মাদ্রিদ ক্লাব দে ফুতবল হিসেবে নিজেদের শৈলীকৃত করেছিল।[১১৭]
১৯৩১ সালে রাজতন্ত্র বিলোপের ফলে, সকল ক্লাব হতে রাজকীয় প্রতীক (রাজকীয় কুলচিহ্ন এবং রিয়াল উপাধি) বাদ দেওয়া হয়। কাস্তিল অঞ্চলের নিষ্প্রভ মুলবেরি ব্যান্ড দ্বারা রিয়ালের মুকুটটি প্রতিস্থাপিত হয়েছিল।[২৭] ১৯৪১ সালে গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার দুই বছর পর, কুলচিহ্নের "রিয়াল করোনা" বা "রাজকীয় মুকুট" পুনরুদ্ধার করা হয়েছিল, সেসময় কাস্তিলের শামুকের ডোরাটিও বজায় ছিল।[৩৩] উপরন্তু, সোনালি রঙকে প্রাধান্য দিয়ে পুরো কুলচিহ্ন তৈরি করা হয়েছিল এবং ক্লাবকে আবার রিয়াল মাদ্রিদ ক্লাব দে ফুতবল নামে ডাকা হয়।[১১৭] ২০০১ সালে, কুলচিহ্নের সবচেয়ে সাম্প্রতিক সংশোধন করা হয়, যখন ক্লাবটি ২১ শতকের জন্য নিজেদের আরও ভালভাবে প্রতিষ্ঠা করতে এবং তার কুলচিহ্নটিকে আরও মানসম্মত করে তুলতে চেয়েছিল। এই পরিবর্তনের মাধ্যমে মুলবেরি ডোরাটিকে পরিবর্তন করে আরও নীলাভ করে তোলা হয় নীল ছায়াছবি পরিবর্তন ছিল।[১১৭]
১৯০২-১৯১১
|
১৯১১-১৯২৫
|
১৯২৫-১৯২৬
|
১৯২৬-১৯৩১
|
১৯৩১-১৯৫৪
|
১৯৫৪-১৯৫৫
|
১৯৫৫–বর্তমান
|
রিয়াল মাদ্রিদ তার ক্লাবের ইতিহাস জুড়ে হোম পোশাকের জন্য সাদা শার্ট ব্যবহার করে আসছে। তবে, ক্লাবের ইতিহাসে এমন একটি মৌসুম ছিল যেসময় ক্লাবটি হোম পোশাকের জন্য সাদা শার্ট অথবা সাদা শর্টস ব্যবহার করেনি। এস্কোবাল এবং কেসাদার যখন ইংল্যান্ড ভ্রমণে গিয়েছিলেন, তখন সেখানে তারা লন্ডন-ভিত্তিক ক্লাব করিন্থিয়ানের (উক্ত সময়ে এই ক্লাবটি তাদের সুরুচিপূর্ণতা এবং খেলাধুলায় দক্ষতার জন্য অধিক জনপ্রিয় ছিল) খেলোয়াড়দের এক বৈচিত্রময় পোশাক পরিধান করতে লক্ষ্য করেন। অতঃপর তারা দুজনে মাদ্রিদে ফিরে এসে, ইংরেজ দলের প্রতিলিপি করার জন্য রিয়াল মাদ্রিদের খেলোয়াড়দের কালো শর্টস পরিধান করার এক উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন; কিন্তু এই উদ্যোগটি মাত্র এক মৌসুম স্থায়ী হয়েছিল। মাদ্রিদে বার্সেলোনার কাছে ১–৫ গোলে এবং কাতালোনিয়ায় বার্সেলোনার কাছে ২–০ গোলে হারের মাধ্যমে কাপ প্রতিযোগিতা হতে বাদ পরার পর, তৎকালীন সভাপতি এই কালো কিটকে "দুর্ভাগ্যের প্রতীক" হিসেবে আখ্যা দিয়ে রিয়াল মাদ্রিদে পুনরায় সাদা কিটে ফিরিয়ে আনেন।[১১৯] ১৯৪০-এর দশকের প্রথম দিকে, তৎকালীন ম্যানেজার পুনরায় কিটে পরিবর্তন আনেন; সেসময় তিনি শার্টে বোতাম সংযোজন করেন এবং শার্টের বাম পাশে কুলচিহ্ন স্থাপন করেন (যেটি বর্তমান পর্যন্ত বিদ্যমান)। ১৯৪৭ সালের ২৩শে নভেম্বর তারিখে, মেত্রোপলিতানো স্টেডিয়ামে আতলেতিকো মাদ্রিদের বিরুদ্ধে ম্যাচে, রিয়াল মাদ্রিদ প্রথম স্পেনীয় ক্লাব হিসেবে সংখ্যাযুক্ত শার্ট পরিধান করেছিল।[৩৩] ১৯৬০-এর দশকের দিকে, ইংরেজ ক্লাব লিডস ইউনাইটেড রিয়াল মাদ্রিদের প্রভাবশালী যুগের অনুকরণ করে তাদের শার্টের রঙ স্থায়ীভাবে সাদা রঙে পরিণত করেছিল (যা বর্তমান পর্যন্ত বিদ্যমান)।[১২০]
রিয়াল মাদ্রিদের ঐতিহ্যগত অ্যাওয়ে রং হচ্ছে সম্পূর্ণ নীল বা সম্পূর্ণ বেগুনী। প্রতিরূপ কিট বাজারের আবির্ভাব পর থেকে, ক্লাবটি লাল, সবুজ, কমলা এবং কালোসহ বিভিন্ন রঙের ডিজাইনসহ শার্ট তৈরি করেছে। ক্লাবের পোশাকটি আডিডাস দ্বারা নির্মিত হয়, যার সাথে ১৯৯৮ সাল হতে রিয়াল মাদ্রিদ চুক্তিবদ্ধ।[১২১][১২২] রিয়াল মাদ্রিদের শার্টের প্রথম পৃষ্ঠপোষক ছিল জানুসি, যারা ১৯৮২–৮৫ পর্যন্ত ক্লাবের সাথে জড়িত ছিল। অতঃপর ১৯৯২ সালে টেকার সাথে দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি স্বাক্ষর করার পূর্বে পারমালেত, রেনি পিকট এবং ওতায়সা রিয়াল মাদ্রিদের পৃষ্ঠপোষকতা করেছিল।[১২৩][১২৪] ২০০১ সালে, টেকার সাথে রিয়াল মাদ্রিদের চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর, এক মৌসুমের জন্য ক্লাবের ওয়েবসাইটের প্রচারণার জন্য রিয়ালমাদ্রিদ.কম-এর লোগো ব্যবহার করা হয়েছিল। অতঃপর, ২০০২ সালে, সিমেন্স মোবাইলের সাথে রিয়াল মাদ্রিদের একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এবং ২০০৬ সালে, ক্লাবের শার্টে বেনকিউ-সিমেন্সের লোগো প্রদর্শিত হয়েছিল।[১২৫] বেনকিউ-সিমেন্সের অর্থনৈতিক সমস্যার পর, ২০০৭ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বিউইন.কম রিয়াল মাদ্রিদের শার্টের পৃষ্ঠপোষক ছিল।[১২৬][১২৭] ২০১৩ সালে, ফ্লাই এমিরেটস রিয়াল মাদ্রিদের শার্টের পৃষ্ঠপোষক হয়ে ওঠে এবং ২০১৭ সালে, ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর €৭০ মিলিয়নের বিনিময়ে ক্লাবটি উক্ত প্রতিষ্ঠানের বিমানের সাথে তাদের পৃষ্ঠপোষকতা বর্ধিত করে।[১২৮] ২০১৫ সালে, মাদ্রিদ আডিডাসের সাথে £৮৫০ মিলিয়নের (€১ বিলিয়ন) বিনিময়ে নতুন করে ১০ বছরের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করে, যেখানে ধারণা করা হয়ে যে প্রতি মৌসুমে £৫৯ মিলিয়ন (€৬৪ মিলিয়ন) উপার্জিত হবে।[১২৯]
সময় | উৎপাদন সহায়ক | পোশাক পার্টনার |
---|---|---|
১৯৮০-১৯৮২ | অ্যাডিডাস | — |
১৯৮২-১৯৮৫ | জানুসি | |
১৯৮৫-১৯৮৯ | হামেল | পারমালেত |
১৯৮৯–১৯৯১ | রেনি পিকট | |
১৯৯১–১৯৯২ | ওতায়সা | |
১৯৯২–১৯৯৪ | টেকা | |
১৯৯৪–১৯৯৮ | কেলমে | |
১৯৯৮–২০০১ | অ্যাডিডাস[১৩০][১৩১][১৩২] | |
২০০১–২০০২ | রিয়ালমাদ্রিদ.কম[১৩৩] | |
২০০২–২০০৫ | সিমেন্স মোবাইল | |
২০০৫–২০০৬ | সিমেন্স | |
২০০৬–২০০৭ | বেনকিউ-সিমেন্স | |
২০০৭–২০১৩ | বিউইন | |
২০১৩– | এমিরেটস |
ধারণক্ষমতা | ৮১,০৪৪ |
---|---|
আয়তন | ১০৭ মি × ৭২ মি (৩৫১ ফু × ২৩৬ ফু)[১৩৪] |
নির্মাণ | |
কপর্দকহীন মাঠ | ২৭ অক্টোবর ১৯৪৪ |
উদ্বোধন | ১৪ ডিসেম্বর ১৯৪৭ |
স্থপতি | ম্যানুয়েল মুনোজ,লুইজ আলেমানি,আন্তোনিও লামেলা |
বিভিন্ন মাঠের নিজেদের হোম ম্যাচ খেলার পরে, রিয়াল মাদ্রিদ ১৯১২ সালে কাম্পো দে ও'দোনেলে স্থানান্তরিত হয়, যেখানে তারা ১১ বছর সময় ধরে নিজেদের হোম ম্যাচ আয়োজন করেছিল।[১৩৫] উক্ত সময়ের পর, মাদ্রিদ এক বছরের জন্য কাম্পো দে সিউদাদ লিনিয়ালে স্থানান্তরিত হয়েছিল, উক্ত স্টেডিয়ামের দর্শকের জন্য একটি ছোট স্থান ছিল যার মধ্যে একসাথে ৮,০০০ জন দর্শক খেলা উপভোগ করতে পারত। অতঃপর, রিয়াল মাদ্রিদ এস্তাদিও চামার্তিন নামক স্টেডিয়ামে নিজেদের হোম ম্যাচের আয়োজন করে; উক্ত স্টেডিয়ামটি ১৯২৩ সালের ১৭ই মে তারিখে নিউক্যাসেল ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে ম্যাচের মাধ্যমে উদ্বোধন করা হয়েছিল।[১৩৬] এই স্টেডিয়ামে একসাথে ২২,৫০০ দর্শক খেলা দেখার সুযোগ ছিল; এই স্টেডিয়ামেই রিয়াল মাদ্রিদ তার প্রথম স্পেনীয় লিগ শিরোপা জয় উদ্যাপন করেছিল।[২৬] বেশ কিছু সাফল্য অর্জনের পর, ১৯৪৩ সালে নির্বাচিত সভাপতি সান্তিয়াগো বার্নাব্যু সিদ্ধান্ত নেন যে, এস্তাদিও চামার্তিন ক্লাবের হোম ম্যাচগুলো আয়োজনের জন্য পর্যাপ্ত এবং এরই ফলস্বরূপ ১৯৪৪ সালের ২৭শে অক্টোবর তারিখে ক্লাবের জন্য নতুন একটি স্টেডিয়ামের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল এবং ১৯৪৭ সালের ১৪ই ডিসেম্বর তারিখে সেটি উদ্বোধন করা হয়।[৩৩][১৩৭] এটি বর্তমানে সান্তিয়াগো বার্নাব্যু স্টেডিয়াম হিসেবে পরিচিত, যদিও এটি ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত এটি অন্য আরেক নামে পরিচিত ছিল।[৩৪] রিয়াল মাদ্রিদ এবং পর্তুগিজ ক্লাব বেলেনেন্সেসের মধ্যকার ম্যাচটি ছিল সান্তিয়াগো বার্নাব্যু-এ অনুষ্ঠিত সর্বপ্রথম ম্যাচ এবং উক্ত ম্যাচটি লস ব্ল্যাঙ্কোসরা ৩–১ গোলে জয়লাভ করেছিল এবং উক্ত ম্যাচের প্রথম গোলটি করেছিলেন সাবিনো বারিনাগা।[৩৩]
এই স্টেডিয়ামের ধারণক্ষমতা প্রায়শই পরিবর্তন করা হয়েছে, ১৯৫৩ সালে সম্প্রসারণের পর এর ধারণক্ষমতা ১২০,০০০-এ পৌঁছেছিল।[১৩৮] অতঃপর, আধুনিকীকরণের কারণে বেশ কয়েকবার এর ধারণক্ষমতা হ্রাসও পেয়েছে (মৌসুমে উয়েফা নিয়ম অনুসারে উয়েফা প্রতিযোগিতায় কোন দর্শক দাঁড়িয়ে খেলা দেখতে পারবে না, তাই ১৯৯৮–৯৯ মৌসুমে এই স্টেডিয়াম হতে দাঁড়িয়ে খেলা দেখার স্থান অপসারণ করা হয়েছে), যা কিছুটা সম্প্রসারণের মাধ্যমে সমতায় আনা হয়েছে।[১৩৮] সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর ধারণক্ষমতা হচ্ছে ৮১,০৪৪ জন। ২০১৮ সালে, তৎকালীন সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ এই স্টেডিয়ামে একটি সঙ্কোচময় ছাদ যোগ করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেন।[১৩৯] স্টেডিয়ামে সর্বোচ্চ উপস্থিতির দিক থেকে, বরুসিয়া ডর্টমুন্ড, বার্সেলোনা এবং ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের পর চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে।[১৪০][১৪১][১৪২][১৪৩]
এপর্যন্ত বার্নাব্যু ১৯৬৪ উয়েফা ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল, ১৯৮২ ফিফা বিশ্বকাপ ফাইনাল, ১৯৫৭, ১৯৬৯ এবং ১৯৮০ সালের ইউরোপীয়ান কাপ ফাইনাল এবং ২০১০ উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালের মতো ম্যাচ আয়োজন করেছেন।[১৪৪] এই স্টেডিয়ামের নিজস্ব মাদ্রিদ মেট্রো রয়েছে, যেটি ১০ লাইন বিশিষ্ট এবং একে সান্তিয়াগো বার্নাব্যু নামে ডাকা হয়।[১৪৫] ২০০৭ সালের ১৪ই নভেম্বর তারিখে, বার্নাব্যু উয়েফা কর্তৃক এলিট ফুটবল স্টেডিয়ামের স্বীকৃতি অর্জন করে।[১৪৬]
২০০৬ সালের ৯ই মে তারিখে, মাদ্রিদে রিয়াল মাদ্রিদের প্রশিক্ষণকেন্দ্র হিসেবে আলফ্রেদো দি স্তেফানো স্টেডিয়াম উদ্বোধন করা হয়। উক্ত স্টেডিয়ামের উদ্বোধনী ম্যাচে রিয়াল মাদ্রিদ স্তাদ দ্য রেঁমসের মুখোমুখি হয়েছিল; এটি ১৯৫৬ সালের ইউরোপিয়ান কাপ ফাইনালের পুনঃখেলা ছিল, যেখানে সার্জিও রামোস, আন্তোনিও কাসসানো (২), রবের্তো সোলদাদো (২) এবং হোসে মানুয়েল জুরাদোর করা গোলের বিনিময়ে রিয়াল মাদ্রিদ ৬–১ গোলে ম্যাচটি জয়লাভ করতে সক্ষম হয়েছিল। মাদ্রিদের বাইরে বালদেবেবাসে অবস্থিত ক্লাবের এই প্রশিক্ষণকেন্দ্রেটি বর্তমানে সিউদাদ রিয়াল মাদ্রিদের অংশ। এই স্টেডিয়ামটি বর্তমানে রিয়াল মাদ্রিদের সংরক্ষিত দল রিয়াল মাদ্রিদ কাস্তিয়ার নিজস্ব স্টেডিয়াম হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যার ধারণক্ষমতা হচ্ছে ৫,০০০। রিয়াল মাদ্রিদের কিংবদন্তি খেলোয়াড় আলফ্রেদো দি স্তেফানোর নামে এই স্টেডিয়ামের নামকরণ করা হয়েছে।[১৪৭] সান্তিয়াগো বার্নাব্যু স্টেডিয়ামের পুনর্নির্মাণ কাজের জন্য ২০২০ সালের ১৪ জুন থেকে, নিজেদের মাঠে ২০১৯-২০ লা লিগার বাকি ম্যাচগুলো খেলতে মূল দল এই মাঠটি ব্যবহার করে।[১৪৮][১৪৯]
রিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব বিংশ শতাব্দীর সফলতম ক্লাব। যুগে যুগে অনেক মহাতারকা এখানে খেলেছেন। তবে রিয়াল মাদ্রিদের যুব প্রকল্প থেকে উঠে আসা খেলোয়াড় রাউল গোনসালেস আর সকলকে ছাড়িয়ে গেছেন; তিনি ১৯৯৪ হতে ২০১০ পর্যন্ত রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে রেকর্ড পরিমাণ ৭৪১টি ম্যাচ খেলেছেন। গোলরক্ষক হিসেবে সর্বোচ্চ এবং দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন রিয়াল মাদ্রিদের যুব প্রকল্প লা ফ্যাব্রিকার খেলোয়াড় ইকার ক্যাসিয়াস, যিনি রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে ৭২৫টি খেলেছেন এবং ৭১০টি ম্যাচ খেলে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন রক্ষণভাগের খেলোয়াড় মানুয়েল সানচিস।[১৫০] একই সাথে জাতীয় দলের হয়ে ১২৭টি ম্যাচ খেলে রিয়াল মাদ্রিদের সর্বাধিক আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা খেলোয়াড় হলেন ইকার ক্যাসিয়াস।
রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে সবচেয়ে বেশি গোল করার রেকর্ডধারী হচ্ছেন ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো, তিনি রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে সর্বমোট ৪৫০টি গোল করেছেন।[১৫১][১৫২] রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে ২০০টিরও অধিক গোল করা খেলোয়াড়রা হলেন: আলফ্রেদো দি স্তেফানো (১৯৫৩–৬৪), সান্তিয়ানা (১৯৭১–৮৮), ফেরেন্তস পুশকাস (১৯৫৮–৬৪), উগো সানচেজ (১৯৮৫–৯২), করিম বেনজেমা (২০০৯–বর্তমান) এবং রাউল গোনসালেস (১৯৯৪-২০১০) (যিনি ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর পূর্বে সর্বোচ্চ গোলদাতা ছিলেন)। লা লিগায় রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে রেকর্ড পরিমাণ ৩১১টি গোল করার পাশাপাশি, ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো লা লিগার এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোল (২০১৪–১৫ মৌসুমে ৪৮টি গোল) করার রেকর্ডও গড়েছেন। ২০০৫ সালের পূর্বে, ইউরোপীয় প্রতিযোগিতায় ৫৮ ম্যাচে ৪৯টি গোল করে রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে সর্বাধিক গোলদাতা ছিলেন দি স্তেফানো, তার এই রেকর্ডটি প্রায় ৪ দশক যাবত অটুট ছিল। কিন্তু ২০০৫ সালে, দি স্তেফানোর এই রেকর্ডটি রাউল গোনসালেস ভেঙ্গে দেন, কিন্তু এই রেকর্ড বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। পরবর্তীতে, ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো রাউল গোনসালেসের রেকর্ডটি ভেঙ্গে দেন, তিনি বর্তমানে ইউরোপীয় প্রতিযোগিতায় রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে ১০৫টি গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা। ২০০৩ সালের ৩রা ডিসেম্বর তারিখে, আতলেতিকো মাদ্রিদের বিরুদ্ধে খেলায় রিয়াল মাদ্রিদের ব্রাজিলীয় আক্রমণভাগের খেলোয়াড় রোনালদো ক্লাবের ইতিহাসে সরচেয়ে দ্রুততম (১২ সেকেন্ড) গোলটি করেন।[১৫৩]
বর্তমানে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর আনুষ্ঠানিকভাবে ধারণক্ষমতা ৮১,০৪৪ হলেও, ২০০৬ সালে স্পেনীয় ফুটবল প্রতিযোগিতা কোপা দেল রের এক ম্যাচে দর্শক সংখ্যা হয় ৮৩,৩২৯ জন; যা বর্তমান পর্যন্ত ক্লাবের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।[১৫৪] ২০০৭–০৮ মৌসুমে, রিয়াল মাদ্রিদ গড় উপস্থিতি ছিল ৭৬,২৩৪; যা উক্ত মৌসুমে ফুটবল প্রতিযোগিতায় সর্বোচ্চ ছিল।[১৫৫] রিয়াল মাদ্রিদ স্পেনীয় ফুটবলেও বেশ কয়েকটি রেকর্ড গড়েছে: সর্বাধিক ঘরোয়া শিরোপা জয় (২০১৬–১৭ মৌসুম পর্যন্ত ৩৩টি) এবং টানা একাধিক মৌসুমে শিরোপা জয় (১৯৬০–৬৫ এবং ১৯৮৫–৯০ পর্যন্ত টানা ৫টি)।[১] টানা ১২১ ম্যাচ অপরাজিত (১৯৫৭ সালের ১৭ই ফেব্রুয়ারি হতে ১৯৬৫ সালের ৭ই মার্চ পর্যন্ত) থাকার মাধ্যমে রিয়াল মাদ্রিদ লা লিগায় সর্বাধিক ম্যাচ অপরাজিত থাকা দলের রেকর্ড ধারণ করে।[১৫৬]
ক্লাবটি রেকর্ড পরিমাণ ১৩ বার ইউরোপিয়ান কাপ/উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়লাভ করেছে[১৫৭] এবং সর্বাধিক সেমিফাইনাল (২৮ বার) খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। ২০১৬ সালের এপ্রিল মাস অনুযায়ী, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ১২০টি (বাছাইপর্বের গোলসহ ১২০টি) গোল করে উক্ত প্রতিযোগিতায় সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতায় পরিণত হন, যার মধ্যে রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে ১০৫টি গোল করেন। ১৯৫৫–৫৬ মৌসুম হতে ১৯৬৯–৭০ মৌসুম পর্যন্ত রেকর্ড পরিমাণ টানা ১৫ বার ইউরোপিয়ান কাপ প্রতিযোগিতায় (উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ নামান্তরের পূর্বে) অংশগ্রহণ করে।[১৫৮] ক্লাবের মাথের রেকর্ডগুলোর মধ্যে ২০১৪–১৫ মৌসুমে সকল প্রতিযোগিতায় টানা ২২ ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ড অন্যতম, এটি স্পেনীয় রেকর্ড হওয়ার পাশাপাশি বিশ্বরেকর্ডের চতুর্থ স্থান অধিকারীও।[১৫৯] একই মৌসুমে ক্লাবটি চ্যাম্পিয়নস লিগে টানা ১০টি জয়ের মাধ্যমে যুগ্ম রেকর্ড গড়ে।[১৬০] ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে, ক্লাবটি টানা ৭৩তম ম্যাচে গোল করার মাধ্যমে ব্রাজিলীয় ক্লাব সান্তোসের রেকর্ডের সমান করে।[১৬১]
২০০৯ সালের জুন মাসে, ক্লাবটি ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর স্থানান্তরের জন্য ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সাথে €৯৪ মিলিয়ন (£৮০ মিলিয়ন) অর্থ প্রদানের সম্মতির মধ্য দিয়ে ফুটবলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ স্থানান্তর ফি-এর রেকর্ড ফি গড়ে।[১৬২][১৬৩] ২০০১ সালে, ইয়ুভেন্তুস থেকে রিয়াল মাদ্রিদ থেকে জিনেদিন জিদানের স্থানান্তরের জন্য €৭৭.৫ মিলিয়ন (১০০ বিলিয়ন লোর) ফি প্রদান করেছিল, যেটি উক্ত সময়ের সর্বোচ্চ স্থানান্তর ফি ছিল। ২০০৯ সালের জুন মাসে, €৬৭ মিলিয়ন (£৬৫ মিলিয়ন) ফি-এর বিনিময়ে এসি মিলান হতে কাকার স্থানান্তরের মধ্য দিয়ে জিদানের রেকর্ডটি ভেঙ্গে দিয়েছিল। পরবর্তীতে, ২০১৩ সালে টটেনহ্যাম হটস্পার হতে €১০০ মিলিয়ন অর্থের বিনিময়ে গ্যারেথ বেলের স্থানান্তরটি তৎকালীন বিশ্ব রেকর্ড হয়েছিল; যেটি বর্তমান পর্যন্ত রিয়াল মাদ্রিদের সর্বোচ্চ স্থানান্তর অর্থ ব্যয়।[১৬৪] ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে, বেলের স্থানান্তর সম্পর্কিত নথি ফাঁস হওয়ার মাধ্যমে জানা যায় যে, তার স্থানান্তরের একেবারে নির্ভুল পরিমাণ ছিল €১০০,৭৫৯,৪১৮।[১৬৫] ২০১৬ সালের ১০ই জুলাই তারিখে, ইয়ুভেন্তুসের কাছে ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোকে £১০০ মিলিয়নের বিনিময়ে বিক্রয় করে দেয়, যেটি ক্লাবের ইতিহাসে সর্বোচ্চ স্থানান্তর অর্থ আয়।[১৬৬]
র্যাংক | দল | পয়েন্ট |
---|---|---|
১ | রিয়াল মাদ্রিদ | ১৪৬.০০০ |
২ | এফসি বার্সেলোনা | ১৩৮.০০০ |
৩ | বায়ার্ন মিউনিখ | ১২৮.০০০ |
৪ | আতলেতিকো মাদ্রিদ | ১২৭.০০০ |
৪ | ইয়ুভেন্তস | ১২৪.০০০ |
প্রত্যেক মৌসুমে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে আয়োজিত বেশিরভাগ হোম ম্যাচের জন্য স্টেডিয়ামের প্রায় ৬৫,০০০টি আসন মৌসুমি টিকিট ধারকরা গ্রহণ করে থাকে, যা মোট আসনের ৭০ ভাগেরও বেশি।[১৬৮] মৌসুমি টিকিট ধারক হওয়ার জন্য প্রথমে একজন সোসিও অথবা ক্লাবের সদস্য হতে হবে। ক্লাবের সদস্যদের পাশাপাশি, স্পেন এবং সমগ্র বিশ্ব জুড়ে প্রায় ১,৮০০-এর অধিক পেনিয়াস (ক্লাবের সাথে সম্পৃক্ত সমর্থক গোষ্ঠী) রয়েছে। রিয়াল মাদ্রিদের নিজস্ব স্টেডিয়াম বার্নাব্যুতে নিয়মিত ৭৪,০০০-এর অধিক দর্শক খেলাধুলা উপভোগ করেন, যা স্পেনীয় ফুটবলে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সর্বকালীন দর্শক উপস্থিতি। রিয়াল মাদ্রিদ বিশ্বব্যাপী সর্বাধিক সমর্থিত দলগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি দল; ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে, রিয়াল মাদ্রিদ প্রথম ক্রীড়া দল (এবং প্রথম প্রতিষ্ঠান) হিসেবে ফেসবুকে ১০০ মিলিয়ন ভক্তের মাইলফলক স্পর্শ করে।[১৬৯][১৭০]
"সেমিফাইনালে আমাদের প্রতিমারাকেশের সমর্থকদের ভালোবাসা লক্ষ্য করেছি মনে হচ্ছিল যে আমরা আমাদের ঘরের মাঠে খেলছি। এটি এই ক্লাবের মহিমাকে প্রদর্শন করে। মাদ্রিদ হচ্ছে ঈশ্বর এবং সমগ্র বিশ্বের দল।"
–২০১৪ ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনালের প্রতিপক্ষ সান লোরেনজোর প্রতি পোপ ফ্রান্সিসের আনুগত্য প্রসঙ্গে রিয়াল মাদ্রিদকে "ঈশ্বরের দল" হিসেবে উল্লেখ করে সার্জিও রামোস।[১৭১]
রিয়াল মাদ্রিদের বেশ কিছু হার্ডকোর সমর্থক রয়েছে, যারা নিজেদেরকে উলত্রাস সুর অথবা শুধুমাত্র উলত্রাস হিসেবে পরিচয় প্রদান করেন; তারা সকলে চরম ডানপন্থী রাজনীতির জন্য অধিক পরিচিত, যারা বার্সেলোনার হার্ডকোর সমর্থক দল বোইশোস নোইসের সদৃশ নয়েসের মতো। উলত্রাস সুর অন্য আরেকটি ডানপন্থী দল, লাৎসিয়োর ইরিদুসিবিলির সাথে একটি জোট গঠন করেছে এবং বামপন্থী গোষ্ঠীদেরর সাথে নিজেদের সম্পর্ক আরও দৃঢ় করেছে। বেশ কয়েকবার, তারা বিরোধীদের প্রতি বৈষম্যমূলক নির্যাতন করেছে এবং উয়েফা তাদের এই কৃতকর্মের জন্য তদন্ত করেছে।[১৭২][১৭৩] ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ সভাপতির দায়িত্বে উপনিত হয়ে উলত্রাস সমর্থকদের বার্নাব্যু-এ প্রবেশে নিষিদ্ধ করেন এবং উক্ত আসনগুলো সাধারণ জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেন। এই সিদ্ধান্তটি বার্নাব্যু-এর কিছু বিশ্বস্ত সমর্থকের কাছে একটি বিতর্কিত সিদ্ধান্ত ছিল, যদিও এই সিদ্ধান্তটি খেলার প্রাণবন্ত পরিবেশের ক্ষতিসাধন করবে।[১৭৪][১৭৫] এই সিদ্ধান্তের পর থেকে উলত্রাস গোষ্ঠী বার্নাব্যু-এর বাইরে বিক্ষোভ প্রকাশ করে এবং এই সিদ্ধান্ত বাতিল করে পুনরায় তাদের সম্পূর্ণ গোষ্ঠীকে মাঠে প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার দাবি জানায়।[১৭৬]
একটি জাতীয় লিগে দুইটি সবচেয়ে শক্তিশালী দলের মধ্যে প্রচন্ড প্রতিদ্বন্দ্বিতা সাধারনত থাকেই। লা লিগায় এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা বার্সেলোনা এবং রিয়াল মাদ্রিদের মধ্যে, যা এল ক্ল্যাসিকো নামে পরিচিত। জাতীয় প্রতিযোগিতার শুরু থেকেই দল দুইটি স্পেনের প্রতিদ্বন্দ্বি দুই রাজ্য কাতালুনিয়া এবং কাস্তিলের প্রতিনিধিত্ব করে আসছে। এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা দুই রাজ্যের মধ্যকার রাজনৈতিক এবং সংস্কৃতিক উত্তেজনাকেও প্রতিফলিত করে।
প্রিমো দে রিভেরা এবং ফ্রান্সিস্কো ফ্রাংকোর একনায়কতন্ত্রের সময় (১৯৩৯–১৯৭৫), স্পেনে সবধরনের আঞ্চলিক সংস্কৃতি দমিয়ে রাখা হয়েছিল। স্পেনীয় ভাষা ব্যতীত অন্য সকল ভাষা সরকারিভাবে নিষিদ্ধ ছিল।[১৭৭][১৭৮] কাতালান জনগনের স্বাধীন হওয়ার ইচ্ছার প্রতীক বহন করার মাধ্যমে বার্সেলোনা কাতালানদের কাছে হয়ে ওঠে, ‘‘একটি ক্লাবের চেয়েও বেশি কিছু (Més que un club)’’। লেখক ম্যানুয়েল ভাজকুয়েজ মনতালবানের তথ্য অনুসারে, কাতালানদের পরিচয় প্রদর্শনের সবচেয়ে ভালো উপায় ছিল বার্সেলোনায় যোগ দেওয়া। ফ্রাংকো বিরোধী গোপন কোন আন্দোলনের চেয়ে এটি ছিল কম ঝুঁকিপূর্ণ এবং এটি তাদেরকে তাদের মতপার্থক্য প্রকাশ করার সুযোগ তৈরি করে দিত।[১৭৯]
অন্যদিকে, রিয়াল মাদ্রিদকে দেখা যায়, সার্বভৌমত্ব কেন্দ্রীকরণ এবং ব্যবস্থাপনা পর্যায়ে ফ্যাসিবাদী শাসন প্রনয়নের প্রতিমূর্তিরূপে।[১৮১][১৮২] যদিও স্পেনীয় গৃহযুদ্ধের সময় রিয়াল মাদ্রিদের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রাফায়েল স্যানচেজ গুয়েরার মত কিছু সদস্যকে ফ্রাংকো সমর্থকদের কারণে পালিয়ে যেতে হয়েছিলো।
১৯৫০ এর দশকে, আলফ্রেডো দি স্তেফানোর ট্রান্সফার নিয়ে ওঠা বিতর্ক দুই দলের প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে আরও বাড়িয়ে তোলে, যিনি শেষপর্যন্ত রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেন এবং পরবর্তীতে তাদের সাফল্যের মূল চাবিকাঠি হয়ে ওঠেন।[১৮৩] ১৯৬০ এর দশকে, তাদের এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা ইউরোপীয় পর্যায়ে পৌছায়, যখন তারা ইউরোপীয় কাপের নক-আউট পর্বে দুইবার মুখোমুখি হয়।[১৮৪]
২০০২ সালে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের একটি ম্যাচকে স্পেনীয় প্রচারমাধ্যম শতাব্দীর সেরা ম্যাচ হিসেবে অভিহিত করে।সেই ম্যাচে মাদ্রিদের জয় প্রায় ৫০০ মিলিয়ন মানুষ দেখেছিলো।[১৮৫] দুই দলের খেলায় প্রায় সময় অনেক বিদ্রুপকারী স্মরণীয় গোল উদ্যাপন করা হয়।[১৮৬] যার মধ্যে ১৯৯৯ সালে রাউলের একটি উল্লেখযোগ্য।সেই ম্যাচে রাউল গোল করে মুখে আঙ্গুল দিয়ে প্রায় ১ লাখ বার্সেলোনা সমর্থককে চুপ করিয়ে দেয়।[১৮৭]
ক্লাবের নিকটতম প্রতিবেশী হল আতলেতিকো মাদ্রিদ, উভয় ফুটবল দল ও ভক্তদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা লক্ষ্য করা যায়। ১৯০৩ সালে তিন বাস্ক শিক্ষার্থীদের দ্বারা আতলেতিকো প্রতিষ্ঠিত হলেও,১৯০৪ মাদ্রিদ এফসি-এর ভিন্নমতাবলম্বী সদস্যরা এতে যোগদান করে। এই দলটি স্পেনীয় বিমান বাহিনীর ফুটবল দল (নাম পরিবর্তন করে এল আতলেতিকো অ্যাভিসিওনন করা হয়) ফুটবল দলের সাথে একত্রিত যাওয়ার পরে আরও উত্তেজনা বেড়ে যায় এবং রিয়ালের ইউরোপীয় সাফল্যের আগে ১৯৪০-এর দশকে আতলেতিকো ফ্রাঙ্কোর শাসনের পছন্দের দল হিসেবে বিবেচিত হয়।[১৮৮][১৮৯] উপরন্তু,রিয়াল সমর্থকরা প্রাথমিকভাবে মাঝারি ও উচ্চতর শ্রেণি থেকে এসেছিল,আর আতলেতিকোর সমর্থকরা শ্রমিক শ্রেণী থেকে এসেছিলো।বর্তমানে যদিও এই পার্থক্যগুলি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অস্পষ্ট।১৯৭২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সাবেক মাঠ চামার্তিনে তারা প্রথমবারের মতো একে অপরের সাথে মুখোমুখি হয়। এটি প্রথম আনুষ্ঠানিক ডার্বি এবং যেখানে রিয়াল ২-১ গোলে জিতেছিলো।
১৯৫৯ সালে এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা আন্তর্জাতিক নজরে আসে যখন ইউরোপীয় কাপের সময় দুইটি ক্লাব সেমি-ফাইনালে মুখোমুখি হয়।রিয়াল বার্নাব্যুতে প্রথম লেগে ২-১ গোলে জিতেছিল, যখন আতলেতিকো মেট্রোপলিটোনোতে ১-০ তে জিতেছিল।সমতা হওয়ায় আরেকটি খেলা হয় যা রিয়াল ২-১ এ জিতেছে।রিয়ালের মাদ্রিদ সাবেক কোচ হোসে ভিলালংঙ্গারের নেতৃত্বে ১৯৬০ এবং ১৯৬১ সালে কোপা দেল জেনারেলিমিমো ফাইনালে দুইবার পরাজিত করে আতলেতিকো কিছুটা প্রতিশোধ লাভ করে।[১৯০]
১৯৬১ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত রিয়াল লা লিগাকে আধিপত্য বিস্তার করে, ওইসময় শুধুমাত্র আতলেতিকো ১৯৬৬, ১৯৭০, ১৯৮৩ এবং ১৯৭৭ সালে লিগ শিরোপা জিতে কিছুটা গুরুতর প্রতিযোগিতা করে। ১৯৬৫ সালে বার্নাব্যুতে আট বছর ধরে অপরাজিত থাকা রিয়ালকে প্রথম দল হিসেবে আতলেতিকো পরাজিত করে। সাম্প্রতিক সময়ে আতলেতিকোর বিপক্ষে রিয়াল মাদ্রিদের রেকর্ড খুব অনুকূল।[১৯১] ১৯৯৯ সালের পর থেকে আতলেতিকোর শহর প্রতিদ্বন্দ্বীদের সাথে প্রথম জয় পায় ২০১৩ সালের মে মাসে কোপা দেল রেয়ের একটি খেলায়। ২০১৪-১৪ সালে রিয়াল এবং আতলেতিকো উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে মুখোমুখি হয়।এই প্রথম ফাইনালে একই শহর থেকে দুটি ক্লাব খেলে। রিয়াল মাদ্রিদের অতিরিক্ত সময় ৪-১ ব্যবধানে জয়ী হয়।[১৯২] ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে, রিয়েলকে ১৪ বছর পর ভিসেন্তে ক্যালদেরনে পরাজিত হয়।[১৯৩] ২৮ মে ২০১৬ তারিখে, রিয়াল ও আতলেতিকো মিলানে চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা পুনরুদ্ধারের জন্য আবারো মুখোমুখি হয়, যাতে পেনাল্টি শুটআউটে রিয়াল জয় লাভ করে।[১৯৪]
রিয়াল মাদ্রিদ ও অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের মধ্যে একটি ক্ষুদ্রতর প্রতিদ্বন্দ্বিতা বিদ্যমান।যা এল ভিয়েহো ক্লাসিক বা পুরাতন দ্বৈরথ নামে পরিচিত।[১৯৫] বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে রিয়াল মাদ্রিদ ও অ্যাথলেটিক বিলবাও প্রভাবশালী দল ছিলো।এই দুই দল ১৯০৩ সালের প্রথম কোপা দেল রে এর ফাইনাল খেলেছে।[১৯৬][১৯৭] ১০ ডিসেম্বর ২০১১ সালে এল ক্লাসিকো এই প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে পিছনে ফেলার আগে,যার আগে এটাই স্পেনে সবচেয়ে বেশি খেলা ম্যাচ ছিলো।[১৯৮]
অ্যাথলেটিক বিলবাও শুধুমাত্র স্থানীয় খেলোয়াড়দের ব্যবহার করার নীতিটি মেনে চলে।[১৯৯] তারপরও তারা রিয়াল মাদ্রিদের মতো ক্লাবের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী,যারা দীর্ঘকাল ধরেই সেরা প্রতিভা অর্জনের জন্য বিশ্বকে পরিভ্রমণ করে। ১৯৮৪ সাল থেকে সিংহরা কোনও বড় ট্রফি সংগ্রহ করেনি এবং ২০০৫-০৬ থেকে ২০১৬-১৭ পর্যন্ত দলগুলির মধ্যে ২৬ টি ম্যাচের মধ্যে মাত্র দুটি জিতেছে।[১৯৫][২০০][২০১] তবে, তাদের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক তাৎপর্যের কারণে এই ম্যাচগুলি অত্যন্ত জোরালোভাবে লড়াই হয়ে থাকে।এই ম্যাচগুলোতে বার্সেলোনা / কাতালোনিয়া প্রতিদ্বন্দ্বিতার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির কিছু সাদৃশ্য রয়েছে,যেহেতু অ্যাথলেটিক বাস্ক অঞ্চলের বৃহত্তম ক্লাব।[২০২]
রিয়াল মাদ্রিদ ও জার্মানির বায়ার্ন মিউনিখ উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের সবচেয়ে সফল দুইটি ক্লাব।রিয়াল মাদ্রিদ ১৩ বার চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছে,অন্যদিকে বায়ার্ন মিউনিখ জিতেছে ৫ বার।যদিও এই দুই দল কখনো ফাইনালে একে অপরের সাথে খেল নি,তারপরও এটি চ্যাম্পিয়নস লিগের সবচেয়ে খেলে থাকা ম্যাচের মধ্যে অন্যতম।এই দুই দল ইউরোপীয় কাপ/চ্যাম্পিয়নস লিগে মুখোমুখি হয়েছে মোট ২৬ বার(১২ বার রিয়াল মাদ্রিদ জয়ী, ১১ বার বায়ার্ন মিউনিখ জয়ী ও বাকি ৩ বার ড্র হয়েছে)।[২০৩] চ্যাম্পিয়নস লিগে রিয়াল মাদ্রিদের ঘরের মাঠে সবচেয়ে বড় হার বায়ার্ন মিউনিখের কাছেই।২৯ ফেব্রুয়ারি ২০০০ সালে রিয়াল মাদ্রিদ ২-৪ গোলে হারে।[২০৪] রিয়াল মাদ্রিদ সমর্থকরা প্রায় বায়ার্নকে বেস্তুিয়া নেগ্রা (কালো দানব) বলে উল্লেখ করে থাকে।
ইউরোপে সবচেয়ে বেশি খেলে থাকা আরেকটি ম্যাচ হলো রিয়াল মাদ্রিদ বনাম ইতালীয় ক্লাব ইয়ুভেন্তসের মধ্যকার খেলাটি।উভয় দল একে অপরের বিপক্ষে ২১ বার খেলেছে।যার মধ্যে রিয়ালের জয় ১০ টি ও ইয়ুভেন্তসের ৯ টি এবং বাকি ২ টি ড্র।যার মধ্যে রিয়াল গোল দিয়েছে ২৬টি ইয়ুভেন্তস দিয়েছে ২৫টি।[২০৫][২০৬][২০৭]
ফ্লোরেন্তিনো পেরেজের প্রথম সভাপতিত্ব কালে(২০০০-২০০৬) রিয়াল মাদ্রিদ পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী পেশাদার ক্লাব হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে।[২০৮] ২০০১ সালে ক্লাবটি অনুশীলন স্থানের কিছু পরিমাণ জায়গা সিটি অফ মাদ্রিদের কাছে পরিত্যাগ করে এবং বাকিটুকু চারটি কর্পোরেশনের (রেপসোল ইউপিএফ, মুতুয়া অটোমোভিলিস্তে দে মাদ্রিদ, স্যাসের ভায়েয়েরমোসো এবং ওএইচএল) কাছে বিক্রি করে দেয়।যার ফলে ক্লাবের ঋণ শোধ হয়ে যায় এবং জিনেদিন জিদান,লুইস ফিগো,ডেভিড বেকহাম,রোনালদোর মতো সবচেয়ে দামী খেলোয়াড়দের কেনার মতো সুযোগ তৈরি হয়।এর আগে ক্লাবের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থানান্তর করা হয়,যা তার মূল্য বাড়িয়ে দেয়।[৫১] এই বিক্রিতে অতিরিক্ত অর্থ দানের অভিযোগে ইউরোপীয় কমিশন তদন্ত করে,পরে যার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।[২০৯]
বার্সেলোনা , অ্যাথলেটিক বিলবাও ও ওসাসুনার পাশাপাশি রিয়াল মাদ্রিদ একটি নিবন্ধিত সংস্থা হিসাবে সংগঠিত হয়। এর মানে হল রিয়াল মাদ্রিদ তার সমর্থকদের মালিকানাধীন যারা ক্লাব সভাপতি নির্বাচিত করে। ক্লাব সভাপতি ক্লাবে নিজস্ব অর্থ বিনিয়োগ করতে পারবেন না[২১০] এবং ক্লাবটি যা উপার্জন করে শুধুমাত্র তাই কেবল ব্যয় করতে পারে, যা মূলত পণ্যদ্রব্য বিক্রয়, টেলিভিশন স্বত্ত্ব এবং টিকিট বিক্রয় মাধ্যমে লাভ করা হয়। একটি লিমিটেড কোম্পানির মতো এই ক্লাবের শেয়ার কিনে নেওয়া সম্ভব নয়, কেবল সদস্য হওয়া যায়।[২১১] রিয়াল মাদ্রিদ সদস্যদের সোশিও বলা হয়।সদস্যরা প্রতিনিধিদের একটি সভা গঠন করে যা রিয়াল মাদ্রিদের নির্বাহী কমিটি[২১২]
ইংরেজ পরিচালক ড্যানি ক্যানন দ্বারা পরিচালিত গোল নামের চলচ্চিত্র সিরিজের ২য় কিস্তি গোল! ২: লিভিং দ্য ড্রিম...-এ (২০০৭) রিয়াল মাদ্রিদ প্রধান চরিত্রে উপস্থিত হয়েছিল। এই চলচ্চিত্রে নিউক্যাসেল ইউনাইটেডের সাবেক খেলোয়াড় সান্তিয়াগো মুনিয়েজের পরবর্তী জীবন অনুসরণ করে।রিয়াল মাদ্রিদ তাকে চিহ্নিত করে এবং ২০০৫–০৬ মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদ তাকে স্বাক্ষর করে। এই চলচ্চিত্রের পরিচালক রিয়াল মাদ্রিদে যোগদানের পর মুনিয়োজের জীবনে যেসকল পরিবর্তন সাধিত হয়েছে তা জোর দিয়ে তুলে ধরতে চেয়েছিলেন। এই চলচ্চিত্রের নির্মাণ উয়েফার পূর্ণ সহযোগিতায় সম্পন্ন হয়, যেখানে উয়েফা প্রকৃত খেলোয়াড়দের এই চলচ্চিত্রের বিশেষ চরিত্রে অভিনয়ের অনুমোদন দেয়। রিয়াল মাদ্রিদের যেসকল খেলোয়াড় উক্ত চলচ্চিত্রে উপস্থিত হয়েছিলেন তারা হলেন: ইকার ক্যাসিয়াস, জিনেদিন জিদান, ডেভিড বেকহ্যাম, রোনালদো, রোবের্তো কার্লোস, রাউল গোনসালেস, সার্জিও রামোস, রবিনিয়ো, মাইকেল ওয়েন, মিচেল সালগাদো, হুলিও বাপতিস্তা, স্টিভ ম্যাকম্যানাম্যান এবং ইবান এল্গুয়েরা। রিয়াল মাদ্রিদের খেলোয়াড় ছাড়াও অন্য যেসকল খেলোয়াড় উক্ত চলচ্চিত্রে উপস্থিত হয়েছিলেন তারা হলেন: রোনালদিনহো, থিয়েরি অঁরি, লিওনেল মেসি, স্যামুয়েল ইতো, আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা, পাবলো আইমার, ফ্রেড্রিক লুক্সুমবার্গ, সেস্ ফাব্রিগাস এবং সান্তিয়াগো কানিয়িসারেস। উক্ত চলচ্চিত্রে, মুনিয়োজের স্বাক্ষরের পর ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ এবং আলফ্রেদো দি স্তেফানো দুইজন কল্পিত খেলোয়াড় হিসেবে উপস্থিত হয়েছিলেন।[২১৩]
রিয়াল, দ্য মুভি হলো ২০০৫ সালের একটি আংশিক বৈশিষ্ট্যমূলক, আংশিক তথ্যমূলক চলচ্চিত্র যেটি রিয়াল মাদ্রিদের জন্য বিশ্বব্যাপী দর্শকের আবেগ প্রদর্শন করেছে। এই চলচ্চিত্রটির প্রযোজনা করেছে রিয়াল মাদ্রিদ এবং পরিচালনা করেছে স্পেনীয় পরিচালক বোরহা মানসো। এই চলচ্চিত্রে বিশ্ব জুড়ে ৫টি ভক্তের খন্ডগল্প এবং ক্লাবের জন্য তাদের ভালোবাসা উপস্থাপন করা হয়েছে। এই চলচ্চিত্রে কাল্পনিক অংশের সাথে রিয়াল মাদ্রিদ দলের সিউদাদ রিয়াল মাদ্রিদে অনুশীলন, খেলা এবং সাক্ষাৎকারের বাস্তব ভিডিও-ও পরিবেশন করা হয়েছে। যদিও এই চলচ্চিত্রটি সম্পূর্ণ দলকে উল্লেখ করেছে, কিন্তু ডেভিড বেকহ্যাম, জিনেদিন জিদান, রাউল গোনসালেস, লুইশ ফিগো, রোনালদো, ইকার ক্যাসিয়াস এবং রোবের্তো কার্লোসের মতো গ্যালাক্তিকোদের ওপরই অধিক গুরুত্বারোপ করেছে। এই চলচ্চিত্রটি মূলত স্পেনীয় ভাষায় নির্মিত হয়েছিল, কিন্তু পরবর্তীতে বিশ্বব্যাপী ভক্তদের জন্য বিভিন্ন ভাষায় প্রকাশ করা হয়েছে।
২০০২ সালে, রিয়াল মাদ্রিদের ইতিহাসের ওপর ফিল বল রচিত ওয়াইট স্টর্ম: ১০০ ইয়ার্স অফ রিয়াল মাদ্রিদ নামে একটি বই প্রকাশিত হয়। বইটি সর্বপ্রথম ইংরেজি ভাষায় রচিত হলেও পরবর্তীতে বেশ কয়েকটি ভাষায় অনুবাদ করা হয়। এই বইয়ে রিয়াল মাদ্রিদের প্রথম শতবার্ষিকতে ঘটিত সবচেয়ে সফল মুহূর্তগুলো উল্লেখ করা হয়েছে। ২০১১ সালে শেষার্ধে, রিয়াল মাদ্রিদ লেজেন্ডস শীর্ষক একটি ডিজিটাল সঙ্গীত অ্যালবাম প্রকাশ করে এবং "ইমনো দেল রিয়াল মাদ্রিদ" নামে ক্লাবের সঙ্গীতের একটি আধুনিক সংস্করণ প্রকাশ করে, যেটি অ্যালবামটির প্রথম গান হিসেবে প্রকাশ করা হয়েছিল।[২১৪]
রিয়াল মাদ্রিদ টিভি হচ্ছে একটি এনক্রিপ্ট করা ডিজিটাল টেলিভিশন চ্যানেল, যেটি রিয়াল মাদ্রিদ ক্লাব দ্বারা পরিচালিত হয় এবং শুধুমাত্র এই ক্লাব বিষয়বস্তু দেখানো হয়। এই চ্যানেলটি স্পেনীয় এবং ইংরেজি উভয় ভাষায় পাওয়া যায়। এই চ্যানেলটির সদর দপ্তর রিয়াল মাদ্রিদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ভালদেবেবাসের (মাদ্রিদ) সিউদাদ রিয়াল মাদ্রিদে অবস্থিত।
আলা মাদ্রিদ হলো একটি ত্রৈমাসিক পত্রিকা যা রিয়াল মাদ্রিদ ক্লাব সদস্য এবং মাদ্রিদিস্তা ফ্যান ক্লাব কার্ডধারীদের জন্য প্রকাশিত হয়।[২১৫] আলা মাদ্রিদ অর্থ হলো মাদ্রিদ এগিয়ে যাও।এটি ক্লাবের অফিসিয়াল স্তবসংগীত,যা প্রায়শই মাদ্রিদিস্তাদের (মাদ্রিদ ভক্ত) দ্বারা গাওয়া হয়ে থাকে।[২১৬] পত্রিকার প্রতিবেদনে আগের মাসে হওয়া খেলা,যুবদলগুলোর খবরাখবর,বিভিন্ন ঐতিহাসিক ম্যাচের আলোচনা ও বিভিন্ন খেলোয়াড়দের সাক্ষাতকার থাকে।[২১৫]
রিয়েল মাদ্রিদ ফুটবল ভিত্তিক ভিডিও গেমস, যেমন ফিফা এবং প্রো ইভোলিউশন সকার সিরিজের মধ্যে হাজির হয়েছে।একজন রিয়াল মাদ্রিদ খেলোয়াড় এসব গেমসের প্রচ্ছদপটে বহুবার ছিলো।
২০০৭ সালে, স্প্যানিশ গেম প্রকাশক ভার্জিন প্লে রিয়াল মাদ্রিদ ভিডিও গেমসের জন্য ক্লাবের সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত করে।চুক্তি অনুসারে মুক্তিপ্রাপ্ত একমাত্র গেম ছিলো (২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে ভার্জিন প্লে এর ব্যবসা গুটিয়ে ফেলার কারণে) রিয়াল মাদ্রিদ: দ্য গেম,যা এটোমিক প্ল্যানেট এন্টারটেনমেন্ট দ্বারা বিকশিত হয়েছিল এবং ২০০৯ সালের মে মাসে প্লেস্টেশন ২, প্লেস্টেশন পোর্টেবল, উইন্ডোজ, ডব্লিউআইআই এবং নিন্তেন্দো ডিএস এর জন্য ভার্জিন প্লে এর প্রকাশক বিভাগ V.2 Play এর অধীনে প্রকাশিত হয়েছিল। বিশেষ করে ইউরোপীয় অঞ্চলে ভার্জিন প্লে গেমটি প্রকাশ করেছিল।গেমটির খেলার ধরন ছিলো সিম্যুলেশন ও রোল-প্লেয়িং মিশ্রিত ক্যারিয়ার মোড ও আর্কাডে-স্টাইলের ফুটবল।
টীকা: পতাকা জাতীয় দল নির্দেশ করে যা ফিফার যোগ্যতার নিয়মের অধীনে নির্ধারিত হয়েছে। খেলোয়াড়দের একাধিক জাতীয়তা থাকতে পারে যা ফিফা ভুক্ত নয়।
|
|
টীকা: পতাকা জাতীয় দল নির্দেশ করে যা ফিফার যোগ্যতার নিয়মের অধীনে নির্ধারিত হয়েছে। খেলোয়াড়দের একাধিক জাতীয়তা থাকতে পারে যা ফিফা ভুক্ত নয়।
|
টীকা: পতাকা জাতীয় দল নির্দেশ করে যা ফিফার যোগ্যতার নিয়মের অধীনে নির্ধারিত হয়েছে। খেলোয়াড়দের একাধিক জাতীয়তা থাকতে পারে যা ফিফা ভুক্ত নয়।
|
|
অবস্থান | কর্মকর্তা |
---|---|
প্রধান কোচ | কার্লো আনচেলত্তি |
সহকারী কোচ | দাভিদে আনচেলত্তি |
টেকনিক্যাল সহকারী কোচ | ফ্রান্সেসকো মাউরি |
ফিটনেস কোচ | আন্তোনিও পিন্তুস |
গোলরক্ষক কোচ | লুইস ইয়োপিস |
সহকারী টেকনিক্যাল ফিটনেস কোচ | বেনিয়ামিনো ফালকো |
ক্রীড়া ভেষজবিজ্ঞানী | হোসে কার্লোস পারালেস |
টেকনিক্যাল এনালিস্ট | সিমিয়নে মন্টানারো |
অবস্থান | কর্মী |
---|---|
সভাপতি | ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ |
১ম সহকারী সভাপতি | ফার্নান্দো ফার্নান্দেজ তাপিয়াস |
২য় সহকারী সভাপতি | এডুয়ার্ডো ফার্নান্দেজ ডি ব্লাস |
সম্মানিত সভাপতি | খালি |
বোর্ড সচিব | এনরিক সানচেজ গঞ্জালেজ |
মহাপরিচালক | হোসে আনহেল সানচেজ |
সভাপতির কার্যালয়ের পরিচালক | ম্যানুয়েল রেদন্দো |
সামাজিক অঞ্চলের পরিচালক | হোসে লুইস সানচেজ |
Real Madrid won four titles for the first time in their 115-year history.
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়; History — Chapter 1 - From the Estrada Lot to the nice, little O’Donnel pitch
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়; History
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়; realmadrid22
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নিI believe in God and I respect the Pope. But this is football, after all. Real Madrid is God and the world's team.
|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য)
উয়েফা ইউরোপা লিগ উয়েফা কাপ হতে প্রসূত হয়েছে, যেটি সুইজারল্যান্ডের আর্নস্ট থমেন ইতালির ওত্তারিনো বারাসি এবং ইংল্যান্ডের স্যার স্ট্যানলি রুসের সাথে ধারণা করেছিলেন।