ব্যক্তিগত তথ্য | ||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
পূর্ণ নাম | লেভ ইভানোভিচ ইয়াশিন | |||||||||||||||||||
জন্ম | ২২ অক্টোবর ১৯২৯ | |||||||||||||||||||
জন্ম স্থান | মস্কো, সোভিয়েত ইউনিয়ন | |||||||||||||||||||
মৃত্যু | ২০ মার্চ ১৯৯০ | (বয়স ৬০)|||||||||||||||||||
মৃত্যুর স্থান | মস্কো, সোভিয়েত ইউনিয়ন | |||||||||||||||||||
উচ্চতা | ১.৮৯ মিটার (৬ ফুট ২ ইঞ্চি) | |||||||||||||||||||
মাঠে অবস্থান | গোলরক্ষক | |||||||||||||||||||
জ্যেষ্ঠ পর্যায়* | ||||||||||||||||||||
বছর | দল | ম্যাচ | (গোল) | |||||||||||||||||
১৯৫০-১৯৭০ | ডায়নামো মস্কো | ৩২৬ | (০) | |||||||||||||||||
জাতীয় দল | ||||||||||||||||||||
১৯৫৪-১৯৭০ | সোভিয়েত ইউনিয়ন | ৭৮ | (০) | |||||||||||||||||
অর্জন ও সম্মাননা
| ||||||||||||||||||||
* কেবল ঘরোয়া লিগে ক্লাবের হয়ে ম্যাচ ও গোলসংখ্যা গণনা করা হয়েছে |
লেভ ইভানোভিচ ইয়াশিন (রুশ: Лев Ива́нович Я́шин; জন্ম: ২২ অক্টোবর, ১৯২৯ - মৃত্যু: ২০ মার্চ, ১৯৯০) সাবেক সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের মস্কোয় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত রুশ ফুটবলার ছিলেন। সর্বদাই কালো পোশাক পরিধান ও খেলায় উজ্জ্বীবনীর শক্তির বহিঃপ্রকাশ ঘটায় ব্ল্যাক অক্টোপাস, ব্ল্যাক স্পাইডার, ব্ল্যাক প্যান্থার প্রভৃতি ডাকনামে তিনি পরিচিতি পান। বিশ্ব ফুটবলের ইতিহাসে তাকে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ গোলরক্ষক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।[১] ১৯৬৩ সালে একমাত্র গোলরক্ষক হিসেবে তিনি বর্ষসেরা ইউরোপীয় ফুটবলার হিসেবে ঘোষিত হয়েছিলেন। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন জাতীয় ফুটবল দলের অন্যতম খেলোয়াড় ইয়াশিন ঘরোয়া ফুটবলে ডায়নামো মস্কো’র পক্ষেও খেলেছেন। অন্যতম গোলরক্ষক হিসেবে গোল সীমারেখায় দূর্দান্ত ক্রীড়া মনোভাব, দৃষ্টিনন্দন উপস্থিতি, গোল রক্ষায় কৃতিত্ব প্রদর্শনের জন্য স্মরণীয় হয়ে আছেন।[২] এছাড়াও তিনি সোভিয়েত ইউনিয়ন ফুটবল ফেডারেশনের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।
মস্কোর একটি শ্রমিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ইয়াশিন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সময়কালীন সময়ে ১২ বছর বয়সে যুদ্ধে সহায়তাকল্পে কারখানায় তাকে জোরপূর্বক কাজ দেয়া হয়। তারপর তাকে মস্কোর সামরিক কারখানায় কাজ করার জন্য প্রেরণ করা হয়। তৎকালীন সোভিয়েত গোলরক্ষক আলেক্সি টাইগার খোমিচ তার ক্রীড়ানৈপুণ্যে মুগ্ধ হয়ে সম্ভাব্য উত্তরাধিকারীরূপে ইয়াশিনকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে গড়ে তোলেন। খোমিচ তার ক্লাবের সহ-খেলোয়াড়, প্রতিপক্ষ ও মন্ত্রণাদাতার ভূমিকায় ছিলেন। এছাড়াও, ইয়াশিনের অভ্যন্তরীণ প্রতিপক্ষ গোলরক্ষক ছিলেন ওয়াল্টার সানায়া যিনি ১৯৫৩ সালে ক্লাব ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। এরপর ১৯৫০ সালে ডায়নামো দলের আমন্ত্রণে ডায়নামো মস্কো যুব দলের পক্ষে ফুটবলে এক প্রীতি খেলার মাধ্যমে অভিষেক ঘটে তার। ঐ খেলায় তিনি একটি গোলও করেন। ঐ বছর তিনি কেবলমাত্র লীগের দুই খেলায় অংশ নিয়েছিলেন। বড়দের দলে ১৯৫৩ সালে অংশগ্রহণ করেন। এ দলে তিনি ১৯৭১ সালে অবসর-পূর্ব পর্যন্ত অবস্থান করেন। অবস্থানকালীন সময়ে ডায়নামো পাঁচবার ইউএসএসআর ফুটবল চ্যাম্পিয়নশীপের শিরোপা ও তিনবার ইউএসএসআর কাপ শিরোপা জয় করে। স্থির প্রতীজ্ঞাবদ্ধ থাকায় সংরক্ষিত খেলোয়াড় হিসেবে ডায়নামোতে অবস্থান করতে থাকেন। এই ফাঁকে ইয়াশিন মস্কো’র ডায়নামো ক্লাবে আইস হকি’র গোলি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৫৩ সালে তিনি ইউএসএসআর আইস হকি কাপ জয়ে ভূমিকা রাখেন ও গোলরক্ষক হিসেবে ইউএসএসআর আইস হকি চ্যাম্পিয়নশীপে দলকে তৃতীয় স্থান এনে দেন।
সোভিয়েত ইউনিয়ন জাতীয় ফুটবল দলে ১৯৫৪ সালে অভিষিক্ত হন লেভ ইয়াশিন ও ৭৪তম খেলোয়াড়রূপে জাতীয় দলের সদস্য হন।[৩] এ সময়েও সোভিয়েত দল আন্তর্জাতিক ফুটবলে প্রভূত উন্নতি সাধন করে। অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত ১৯৫৬ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে সোভিয়েত ফুটবল দলকে স্বর্ণপদক জয়ে সহায়তা করেন। এছাড়াও, ১৯৬০ সালে প্রথমবারের মতো ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশীপ বিজয়ে অন্যতম ভূমিকা রাখেন।[৪] তিনি তার সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে সর্বমোট ১৫১টি পেনাল্টি রক্ষা করেন।[৪][৫]
বিশ্বকাপ ফুটবলে সোভিয়েত দলের পক্ষে ইয়াশিন চারবার অংশগ্রহণ করেন। সোভিয়েত দলের নেতৃত্বও দিয়েছেন তিনি। তার সুযোগ্য নেতৃত্বে সোভিয়েত দল ১৯৫৮ ও ১৯৬২ সালে কোয়ার্টার-ফাইনালে উত্তীর্ণ হয়। এছাড়াও, তার দল ১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপে চতুর্থ স্থান অধিকার করেছিল। বিশ্বকাপে তিনি সর্বমোট ১২ খেলায় অংশগ্রহণ করেন ও চারবার কোন গোল হজম করেননি।
সুইডেনে অনুষ্ঠিত ১৯৫৮ সালের বিশ্বকাপে ইয়াশিন তার ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের সুযোগ পান। তার দল কোয়ার্টার-ফাইনালে উত্তীর্ণ হয়। গ্রুপ-পর্বে এ বিশ্বকাপ বিজয়ী দল ব্রাজিলের বিপক্ষে ২-০ ব্যবধানে হারলেও তিনি গোল সংখ্যা বৃদ্ধিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছিলেন।[৬] এ বিশ্বকাপে তিনি সেরা তারকাদের দলের সদস্যরূপে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
১৯৬২ বিশ্বকাপে দুইবার আঘাতপ্রাপ্তি স্বত্ত্বেও আরও একবার দলকে কোয়ার্টার-ফাইনালে নিয়ে যান। কিন্তু স্বাগতিক চিলির কাছে পরাজিত হয়ে তার দল প্রতিযোগিতা থেকে বিদায় নিতে বাধ্য হয়।[৭] এ প্রতিযোগিতায় ইয়াশিন অতিমানবীয় ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করলেও কিছু কিছু অমার্জনীয় ভুলও করেছেন। কলম্বিয়া’র বিপক্ষে ৪-১ ব্যবধানে এগিয়ে থাকা স্বত্ত্বেও ফিফা বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথম ও একমাত্র গোল হিসেবে কর্নার কিক থেকে মার্কোস কলের সরাসরি বাঁকানো গোলও হজম করেন। খেলাটি ৪-৪ ড্র হলে ফরাসি দৈনিক আই’ইকুইপ ইয়াশিনের খেলোয়াড়ী জীবন শেষ হয়েছে বলে তুলে ধরে।[৮]
১৯৬২ বিশ্বকাপে তার নিষ্প্রভতা স্বত্ত্বেও অদ্যাবধি একমাত্র গোলরক্ষক হিসেবে ইয়াশিন ১৯৬৩ সালের বালোঁ দর পুরস্কার জয় করেন।[২] ঐ বছর এফএ কাপের শতবর্ষ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে অনুষ্ঠিত খেলায় বহিঃবিশ্ব একাদশের হয়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেন। ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত খেলায় তিনি বেশকিছুসংখ্যক শ্বাসরূদ্ধকর ও অবিশ্বাস্য গোল রক্ষা করেন। ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ফিফা বিশ্বকাপে ইয়াশিনের নেতৃত্বে সোভিয়েত দল তাদের সেরা ক্রীড়া প্রদর্শন করে ও চতুর্থ স্থান অর্জন করে। সর্বদাই পরামর্শ দিতে অভ্যস্ত ইয়াশিন মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিত ১৯৭০ সালের বিশ্বকাপে দলকে কোয়ার্টার ফাইনালে নিয়ে যান।
১৯৭১ সালে মস্কোতে অনুষ্ঠিত নিজস্ব শেষ খেলায় অংশগ্রহণ করেন লেভ ইয়াশিন। মস্কোর লেনিন স্টেডিয়ামে প্রায় এক লক্ষ সমর্থকের উপস্থিতিতে ফিফা স্মারক খেলায় পেলে, ইউসেবিও এবং ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ারের ন্যায় প্রমূখ ফুটবল তারকা উপস্থিত ছিলেন।[২]
১৯৬৭ সালে দেশ ও দশের জন্য অসাধারণ সেবা প্রদান করায় সোভিয়েত ইউনিয়নের সর্বোচ্চ পুরস্কার অর্ডার অব লেনিন উপাধিতে ভূষিত হন ইয়াশিন।[২] অবসর-পরবর্তী সময়কালে কোচের দায়িত্বেও ছিলেন তিনি। ১৯৯৪ সালে ফিফা বিশ্বকাপ সর্বকালের সেরা দলেও তিনি অন্যতম সদস্যরূপে মনোনীত হন। এ বছরই ফিফা বিশ্বকাপের চূড়ান্ত খেলায় সেরা গোলরক্ষক নির্বাচনে লেভ ইয়াশিন পুরস্কার প্রবর্তন করে। এছাড়াও, ১৯৯৮ সালে ফিফা কর্তৃক সংঘটিত ভোটে বিংশ শতকের বিশ্ব দলের সদস্যও ছিলেন লেভ ইয়াশিন। ২০০২ সালে গঠিত বিশ্বকাপ ফুটবলের ইতিহাসে ফিফা স্বপ্নের দলে তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৯৬৩ সালে একমাত্র গোলরক্ষক হিসেবে ইউরোপীয় বর্ষসেরা ফুটবলার হিসেবে তিনি অন্তর্ভুক্ত হন।[২] আইএফএফএইচএস কর্তৃক তিনি বিংশ শতকের শ্রেষ্ঠ গোলরক্ষকের মর্যাদা লাভ করেন।[৯] ওয়ার্ল্ড সকার ম্যাগাজিন কর্তৃক বিংশ শতকের ১০০ সেরা খেলোয়াড়দের একজন হিসেবে তাকে অন্তর্ভুক্ত করে। অনেক ধারাভাষ্যকারদের মতে তিনি এখনও ফুটবলের ইতিহাসে সেরা গোলরক্ষক হিসেবে রয়েছেন। এ প্রেক্ষাপটেই তাকে ফিফা বিশ্বকাপর সর্বকালের দল ও ফিফা স্বপ্নের দলের মতো বিশ্বের অধিকাংশ সর্বকালের দলের সদস্যরূপে চিত্রিত করা হয়েছে।[১০]