হেডিয়ান অধিযুগ ৪৬০ - ৪০০ কোটি বছর আগে | |
-৪৫০ — – -৪০০ — – -৩৫০ — – -৩০০ — – -২৫০ — – -২০০ — – -১৫০ — – -১০০ — – -৫০ — – ০ — স্কেল: কোটি বছর |
হেডিয়ান ( /ˈheɪdiən/) হল পৃথিবীর ইতিহাসের প্রথম অধিযুগ, যার পরবর্তী অধিযুগের নাম আর্কিয়ান। আন্তর্জাতিক স্তরবিদ্যা কমিশন নির্ধারিত কালপঞ্জি অনুযায়ী হেডিয়ান অধিযুগের সূত্রপাত হয় আজ থেকে আনুমানিক ৪৬০ কোটি বছর আগে পৃথিবীর জন্মের মাধ্যমে, এবং সমাপ্তি ঘটে ৪০০ কোটি বছর আগে।[১] ভূতাত্ত্বিক প্রেস্টন ক্লাউড ১৯৭২ খ্রিঃ পৃথিবীতে প্রাপ্ত আদিমতম পাথরেরও পূর্ববর্তী সময়কালকে চিহ্নিত করতে হেডিয়ান শব্দটি প্রথম প্রচলন করেন। ডব্লিউ. ব্রায়ান হার্ল্যান্ড পরবর্তীকালে প্রায় সমার্থক আরও একটি শব্দ চালু করেন: প্রিস্কোয়ান। এগুলোর পূর্ববর্তী নথিপত্রে অধিযুগটিকে স্রেফ প্রি-আর্কিয়ান বলে অভিহিত করা হত। ২০১৫ খ্রিঃ পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ায় ৪১০ কোটি বছর প্রাচীন পাথরে এমন কিছু কার্বনজাত খনিজের সন্ধান পাওয়া যায় যেগুলোকে "জৈব অবশেষ" বলে চিহ্নিত করা হয়।[২][৩]
হেডিয়ান অধিযুগের নামকরণ হয়েছে গ্রিক পুরাণের পাতালের দেবতা হেডিসের নামানুসারে।[৪] সমসাময়িক পৃথিবীর "নারকীয়" পরিস্থিতির জন্য এই নাম দেওয়া হয়েছে; সদ্যোজাত পৃথিবী তখন অত্যন্ত গরম ছিল, এছাড়া ছিল নিরবচ্ছিন্ন ও প্রবল আগ্নেয়োচ্ছ্বাস। ভূপৃষ্ঠ ছিল আংশিকভাবে গলিত ও প্রায়ই অন্যান্য সৌরজাগতিক বস্তুর (গ্রহাণু ইত্যাদি) সাথে পৃথিবীর সংঘর্ষ লেগে থাকত।
এই অধিযুগের খুব কম প্রমাণই আজ পর্যন্ত ভূপৃষ্ঠে টিকে থাকতে পেরেছে বলে এর কোনও আনুষ্ঠানিক উপবিভাজন সম্ভব হয় না। অবশ্য চান্দ্র ভূতাত্ত্বিক সময় হেডিয়ানের সমসাময়িক অনেকখানি সময়ের সাথে সমাপতিত হয় বলে চাঁদের ভূতাত্ত্বিক সময়ের উপবিভাগগুলোকে পৃথিবীর হেডিয়ান অধিযুগের পরিপ্রেক্ষিতেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
চান্দ্র উপবিভাগগুলো হল:
সম্প্রতি একটি বিকল্প সময়রেখার প্রস্তাব করা হয়েছে যেখানে হেডিয়ানেরও আগে কেওটিয়ান ও প্রাক্-নেফেলিয়ান এই দুটি অধিযুগের কথা বলা হয়েছে, আর হেডিয়ানকে দুটি করে যুগ সংবলিত তিনটি মহাযুগে ভাগ করা হয়েছে। প্যালিওহেডিয়ান মহাযুগের অন্তর্গত দুই যুগ হল হেফাস্টিয়ান (৪৫০ থেকে ৪৪০ কোটি বছর আগে) ও জ্যাকোবিয়ান (৪৪০ থেকে ৪৩০ কোটি বছর আগে)। মেসোহেডিয়ান মহাযুগের অন্তর্গত কানাডিয়ান (৪৩০ থেকে ৪২০ কোটি বছর আগে) ও প্রোক্রাস্টিয়ান যুগ (৪২০ থেকে ৪১০ কোটি বছর আগে)। নিওহেডিয়ানের বিভাগ দুটি হল অ্যাকাস্টান (৪১০ থেকে ৪০০ কোটি বছর আগে) ও প্রমিথিয়ান যুগ (৪০০ থেকে ৩৯০ কোটি বছর আগে)।[৫]
বিংশ শতাব্দীর শেষ দশকে ভূতাত্ত্বিকরা গ্রীনল্যান্ড, উত্তর-পশ্চিম কানাডা ও পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া থেকে হেডিয়ান অধিযুগের কিছু শিলা উদ্ধার করেন।
পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার ন্যারিয়ার নীস অঞ্চলের জ্যাক হিল্স থেকে প্রাপ্ত রূপান্তরিত বেলেপাথর কংগ্লোমারেটে ৪৩৫.৪ ± ০.৮ কোটি বছরের পুরোনো জারকন কেলাস পাওয়া গেছে।[৬] এই জারকন অবশ্য গভীরতর ও প্রাচীনতর আরেকটি জারকন স্তরের বহিরাবরণ, এবং গভীর স্তরটির বয়স ৪৪০ কোটি বছরের কাছাকাছি[৭]—পৃথিবীর জন্মের আনুমানিক সময়ের ২০ কোটি বছর কম।
পৃথিবীর গঠনকারী উপাদানের মধ্যে অনেকখানি জল থাকার কথা।[৮] সদ্যোজাত অবস্থায় পৃথিবীর ভর কম থাকার কারণে এই বিপুল পরিমাণ প্রাথমিক জলরাশির অনেকটাই অণুর আকারে অভিকর্ষের বাধা কাটিয়ে মহাশূণ্যে বিক্ষিপ্ত হয়ে যায়। হাইড্রোজেন ও হিলিয়ামের মত হালকা গ্যাসগুলো আজ অবধি এইভাবে বায়ুমণ্ডল থেকে বিক্ষিপ্ত হয়ে চলেছে।
আদিম পৃথিবীর কিছু অংশ চাঁদ সৃষ্টিকারী সংঘর্ষের পর গলে গিয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। অবশ্য পৃথিবীর বর্তমান রাসায়নিক গঠন পরীক্ষা করলে বোঝা যায় সমগ্র গ্রহটি গলে যায়নি।
[৯]
কিন্তু এই সংঘর্ষের ফলে পৃথিবীর মোট ভরের একটি বড় অংশ বাষ্পীভূত হয়ে যায় ও গ্রহের চারদিকে একটি গরম শিলা-বাষ্পীয় বায়ুমণ্ডল সৃষ্টি করে। এই শিলা-বাষ্প দুই হাজার বছরের মধ্যে জমাট বেঁধে গেলে অতি উচ্চ CO
২ ও সেইসঙ্গে হাইড্রোজেন ও জলীয় বাষ্পযুক্ত বায়ুমণ্ডল বজায় থাকে। গ্রহের উপরিভাগের তাপমাত্রা ২৩০ °সে (৪৪৬ °ফা) হওয়া সত্ত্বেও তরল জলের সমুদ্রের অস্তিত্ব ছিল, কারণ সমসাময়িক কার্বন ডাইঅক্সাইড সমৃদ্ধ বায়ুমণ্ডলের চাপ ছিল বর্তমান বায়ুচাপ অপেক্ষা ২৭ গুণ বেশি। ঐ চাপে জল অত্যধিক উষ্ণতাতেও তরল থাকে। শীতলীভবন চলতে থাকার ফলে ক্রমশ নিম্নস্খলন ও সমুদ্রে দ্রবীভূত হয়ে বায়ুমণ্ডল থেকে অধিকাংশ কার্বন ডাইঅক্সাইড অপসৃত হয়, তবে ভূগাঠনিক শক্তির অতিসক্রিয়তার জন্য বিভিন্ন গ্যাসের মাত্রা ঘন ঘন ওঠানামা করতে থাকে।[১০]
জারকন কেলাসের চর্চা থেকে জানা গেছে আজ থেকে ৪৪০ কোটি বছর আগেও তরল জলের অস্তিত্ব ছিল।[১১][১২][১৩] তরল জলের উপস্থিতির জন্য বায়ুমণ্ডলের উপস্থিতি জরুরী। শীতল আদিম পৃথিবী তত্ত্ব এই বিষয়ের উপর ভিত্তি করে ৪৪০ কোটি বছর আগে থেকে ৪০০ কোটি বছর আগে পর্যন্ত সময়কালকে বোঝার চেষ্টা করে।
২০০৮ এর সেপ্টেম্বরে অস্ট্রেলিয়ায় পাওয়া জারকন কেলাসের উপর একটি গবেষণা থেকে জানা যায়, ৪০০ কোটি বছর আগেও পাত সঞ্চরণ ক্রিয়াশীল ছিল।[১৪][১৫] এই সিদ্ধান্ত সঠিক হলে পৃথিবীর উষ্ণ গলিত অবস্থা থেকে প্রথম বার শীতল হওয়ার সময় দাঁড়াবে আজ থেকে আনুমানিক ৪০০ কোটি বছর আগে। পাত সঞ্চরণ ও সমুদ্রের জল বাতাস থেকে বিপুল পরিমাণ কার্বন ডাইঅক্সাইড শুষে নেয়, ফলে বায়ুমণ্ডলের গ্রীনহাউস প্রভাব হ্রাস পেয়ে অপেক্ষাকৃত নিম্ন তাপমাত্রা, ভূত্বকে কঠিন শিলার গঠন, এমনকি হয়তো প্রাণের আবির্ভাবও সম্ভব হয়।[১৪][১৫]
(ইংরেজি)