পূর্ণ নাম | এল’এস্তাদি কাম্প ন্যু |
---|---|
প্রাক্তন নাম | এস্তাদিও দেল এফসি বার্সেলোনা (১৯৫৭–২০০০) |
স্থানাঙ্ক | ৪১°২২′৫১″ উত্তর ২°০৭′২২″ পূর্ব / ৪১.৩৮০৮৭° উত্তর ২.১২২৮০২° পূর্ব |
মালিক | ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনা |
পরিচালক | ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনা |
ধারণক্ষমতা | ১২১,৭৪৯ (১৯৮০–১৯৯৩) ১১৫,০০০ (১৯৯৩–১৯৯৯) ৯৮,৭৭২ (২০০৫–২০১০) ৯৯,৩৫৪ (২০১০–২০১২) ৯৯,৭৮৬ (২০১২–)[২] (৯৬,৬৩৬ উয়েফা প্রতিযোগিতায়)[১] |
উপরিভাগ | ঘাস ১০৫ × ৬৮ মিটার (১১৪ × ৭৭ গজ)[১] |
নির্মাণ | |
নির্মিত | ১৯৫৪–১৯৫৭ |
উদ্বোধন | ২৪ সেপ্টেম্বর ১৯৫৭[১] |
পুনঃসংস্কার | ১৯৯৫, ২০০৮ |
সম্প্রসারণ | ১৯৮২ |
স্থপতি | আরদিয়ান বেকাজ ইয়োসেপ সতেরাস লরেঞ্জো গ্রাসিয়াস-বারবোন |
ভাড়াটে | |
১৯৯২ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক |
কাম্প ন্যু (কাতালান: kamˈnɔw, নতুন মাঠ, যা ন্যু কাম্প নামেও পরিচিত[৩][৪]) একটি ফুটবল স্টেডিয়াম, যা স্পেনের বার্সেলোনা শহরে অবস্থিত। এটি ১৯৫৭ সাল থেকে ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনার ঘরের মাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এর দর্শক ধারণ ক্ষমতা ৯৯,৩৫৪।[৫]
এটি ইউরোপের বৃহত্তম এবং বিশ্বের ত্রয়োদশ বৃহত্তম স্টেডিয়াম। এই স্টেডিয়ামে অসংখ্য আন্তর্জাতিক খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। যার মধ্য রয়েছে দুইটি চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ফাইনাল। এছাড়া ১৯৯২ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের ফুটবলও এই স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়।
কাম্প ন্যু-এর নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৯৫৪ সালের ২৮ মার্চ। পরিকল্পনা অনুযায়ী এস্তাদি দেল এফসি বার্সেলোনা নাম দেওয়ার কথা থাকলেও, অধিক জনপ্রিয় কাম্প ন্যু নামই ব্যবহার করা হত। ১৯৫০ সালে, বার্সেলোনা চুক্তি করে কুবালার সাথে, যাকে বার্সেলোনার ইতিহাসে অন্যতম সেরা খেলোয়াড় বলা হয়। তিনি একটি বড় স্টেডিয়াম নির্মাণের জন্য অধিক প্রেরণা প্রদান করেন।[৬][৭][৮]
বার্সেলোনার গভর্নর ফিলাইপ একিডো কলুঙ্গা এর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। সেসময় প্রায় ৬০,০০০ বার্সা সমর্থক সেখানে উপস্থিত ছিলেন। নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হতে সময় লাগে তিন বছর এবং মোট ব্যয় হয় ২২৮ মিলিয়ন স্পেনীয় পেসেতা। যা ছিল মূল বাজেটের ৩৩৬ শতাংশ।[৮] স্টেডিয়ামটি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা হয় ১৯৫৭ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর। স্টেডিয়ামের উদ্বোধনী প্রীতি খেলায় লেজিয়া ওয়ারসওকে ৪–২ ব্যবধানে হারায় বার্সেলোনা।
১৯৭২ সালের মে মাসে, কাম্প ন্যুতে কাপ উইনার্স কাপের ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয়; এতে মুখোমুখি হয় রেঞ্জার্স এবং ডায়নামো মস্কো। খেলায় রেঞ্জার্স ৩–২ ব্যবধানে জয় লাভ করে। ১৯৭০ এর দশক বার্সেলোনার জন্য একটি সন্ধিক্ষন ছিল। ১৯৭৩ সালে তারা ইয়োহান ক্রুইফের সাথে চুক্তি করে। এর দুই বছর পর স্টেডিয়ামে বৈদ্যুতিক স্কোরবোর্ড স্থাপন করা হয়।
১৯৮২ বিশ্বকাপের প্রস্তুতি হিসেবে ১৯৮০ সালে স্টেডিয়ামের সম্প্রসারণ করা হয়। ফলে স্টেডিয়ামের মোট ধারণক্ষমতা দাঁড়ায় ১১৫,০০০। প্রত্যেকটি ইটে সামান্য অর্থের বিনিময়ে সমর্থকদের নিজেদের নাম অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ প্রদান করে বার্সেলোনা অর্থ সংগ্রহ করে। এই পরিকল্পনাটি সমর্থকদের মধ্যে জনপ্রিয়তা অর্জন করে এবং অসংখ্য সমর্থক এই অর্থ পরিশোধ করেন। পরে এটি বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়, যখন মাদ্রিদের সংবাদ মাধ্যম প্রচার করে যে স্টেডিয়ামের একটি ইটে রিয়াল মাদ্রিদের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট এবং ফ্রাংকো সমর্থক স্যান্তিয়াগো বের্ণ্যাব্যু’র নাম লেখা রয়েছে।[৯][১০][১১]
১৯৮২ সালের ১২ মে, স্টেডিয়ামে প্রথম গুরুত্বপূর্ণ খেলা অনুষ্ঠিত হয়; উইনার্স কাপের ফাইনালে মুখোমুখি হয় বার্সেলোনা এবং স্ট্যান্ডার্ড লিগে। প্রায় ৮০,০০০ দর্শকের সামনে ২–১ ব্যবধানে জয় পায় বার্সেলোনা।
কাম্প ন্যু ১৯৮২ বিশ্বকাপে ব্যবহৃত স্টেডিয়ামগুলোর মধ্যে অন্যতম। ১৩ জুন, এই স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। অনুষ্ঠানের পর বিশ্বকাপের প্রথম খেলায় মুখোমুখি হয় ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা এবং বেলজিয়াম। খেলায় বেলজিয়াম ১–০ ব্যবধানে জয় লাভ করে।[১২]
বিভিন্ন সময়ে স্টেডিয়ামের ধারণক্ষমতা ব্যাপকভাবে ভিন্নতা পেয়েছে। উদ্বোধনের সময় এর ধারণক্ষমতা ১০৬,১৪৬ থাকলেও, ১৯৮২ বিশ্বকাপের পূর্বে সম্প্রসারণ করা হলে এর ধারণ ক্ষমতা দাঁড়ায় ১২১,৭৪৯।
বার্সেলোনা ছাড়াও কাম্প ন্যু কাতালান জাতীয় দলের মাঠ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়েছে। কাম্প ন্যুতে তাদের সর্বশেষ খেলা ছিল আর্জেন্টিনার বিপক্ষে। ২০০৯ সালের ২২ ডিসেম্বর, ঐ প্রীতি খেলায় কাতালোনিয়া ৪–২ ব্যবধানে জয় লাভ করে।[১৩] স্টেডিয়ামটি অন্যান্য ফুটবল ইভেন্টের জন্য প্রায়শই ব্যবহৃত হয়। ১৯৮৯ সালের ২৫ মে, ইউরোপীয়ান কাপের ফাইনালে মুখোমুখি হয় এসি মিলান এবং স্তেউয়া বুকুরেস্তি। খেলায় মিলান ৪–০ ব্যবধানে জয় লাভ করে।[১৪] ১৯৯২ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে ফুটবলের ফাইনালসহ কিছু খেলা এই স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। এই খেলাগুলোর প্রস্তুতি হিসেবে পূর্ববর্তী রুফ-লাইনের উপরে দুইটি অতিরিক্ত স্তর স্থাপন করা হয়।
১৯৯৩–৯৪ মৌসুমে স্টেডিয়ামে কিছু পরিবর্তন সাধিত হয়। এসময় পিচটিকে ২.৫ মিটার নিচু করা হয়, নিরাপত্তার জন্য যে ফাঁকা স্থান ছিল যা মাঠ থেকে গ্যালারিকে পৃথক করত তা সরিয়ে ফেলা হয়। ১৯৯৮–৯৯ মৌসুমের মধ্যে নতুন আলোক ও সাউন্ড সিস্টেম এবং নতুন প্রেস বক্সসহ আরও কিছু পরিবর্তন সাধিত হয়।
১৯৯৯ সালের চ্যাম্পিয়নস লীগ ফাইনাল এই স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। এতে মুখোমুখি হয় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এবং বায়ার্ন মিউনিখ। খেলায় ইউনাইটেড ২–১ ব্যবধানে জয়ী হয়।[১৫]
২০০০ সালে, স্টেডিয়ামের নাম নির্ধারনের জন্য সমর্থকদের মধ্যে ভোটের আয়োজন করা হয়। মোট ২৯,১০২টি ভোটের মধ্যে ‘‘কাম্প ন্যু’’ নামটি পায় ১৯,৮৬১টি (৬৮.২৫%) ভোট। এভাবে এস্তাদি দেল এফসি বার্সেলোনা নামটি পরিবর্তন করে নতুন অফিসিয়াল নাম দেওয়া হয় কাম্প ন্যু।
১৯৯৮–৯৯ মৌসুমে, এর সেবা এবং বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে এটিকে পাঁচ-তারা স্টেডিয়ামের মর্যাদা দেওয়া হয়।[১৬] যদিও, ২০১০ সালের আইন অনুযায়ী উয়েফা শীর্ষ ভেনুগুলোর কোন তালিকা প্রকাশ করেনা।
কাম্প ন্যু স্টেডিয়ামে এফসি বার্সেলোনা জাদুঘরও রয়েছে। যা কাতালোনিয়ার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রদর্শিত জাদুঘর, যেখানে প্রতি বছর প্রায় ১.২ মিলিয়ন দর্শনার্থী ভ্রমণ করে।[১৭]
স্টেডিয়ামটির পুননির্মাণের মাধ্যমে পঞ্চাষতম বার্ষিকী উদ্যাপনের জন্য ক্লাব কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে। স্টেডিয়ামের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি এবং অত্যন্ত দৃশ্যমান শহুরে পরিবেশ সৃষ্টি করাই এর উদ্দেশ্য ছিল। ক্লাবের ইচ্ছা ছিল স্টেডিয়ামের ধারণ ক্ষমতা ১৩,৫০০ বাড়ানোর। তাদের পরিকল্পনা ছিল স্টেডিয়ামটিকে ধারণ ক্ষমতার দিক থেকে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম স্টেডিয়ামে পরিনত করা।
২০০৭ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর, ব্রিটিশ স্থপতি নরম্যান ফস্টার এবং তার প্রতিষ্ঠানকে কাম্প ন্যু এর পুননির্মাণের জন্য নির্বাচিত করা হয়। আনুমানিক ব্যয় ধরা হয় ২৫০ মিলিয়ন ইউরো। পুননির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান দিতে, ক্লাবের পরিচালনা পর্ষদ তাদের সাবেক প্রশিক্ষন মাঠ (মিনি ইস্তাদি) বিক্রয়ের অনুমোদন দেয়। এই প্রকল্পটি ২০০৯ সালে শুরু এবং ২০১১–১২ মৌসুমে শেষ করার পরিকল্পনা করা হয়।[১৮] কিন্তু ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক সংকট এবং পরবর্তীতে জমিজমার মূল্য পতনের ফলে প্রশিক্ষন মাঠের বিক্রয় এবং অনুরূপভাবে পুননির্মাণ প্রকল্প স্থগিত করা হয়। ২০১০ সালের মে মাসে, সান্দ্রো রসেল, যিনি সেসময় বার্সেলোনার প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ছিলেন, মিনি ইস্তাদির বিক্রয়ের সম্ভাবনা নাকচ করে দেন এবং ২০১০ সালের ৩০ জুন তার নির্বাচন কার্যকরভাবে কাম্প ন্যু এর পুননির্মাণ প্রকল্প স্থগিত করে দেয়।[১৯][২০]
ফুটবল ছাড়াও কাম্প ন্যু আরও অনেক কাজে ব্যবহৃত হয়েছে। বিভিন্ন বড় বড় কনসার্টও অনুষ্ঠিত হয়েছে এই স্টেডিয়ামে।
১৯৮২ সালের ১৭ নভেম্বর, পোপ জন পল ২ এই স্টেডিয়ামে প্রায় ১২১,০০০ দর্শকের সামনে একটি ধর্মসভার জন্য লিগার্টি উদ্যাপন করেন।[২১]
১৯৮৩ সালে জুলিও ইগলেসিয়াস ৬০,০০০ দর্শকের সামনে একটি কনসার্ট সঞ্চালন করেন যাকে সবচেয়ে সুষ্ঠুভাবে সমন্বিত কনসার্ট হিসেবে বিবৃত করা হয়।[২২]
অন্যান্য বড় বড় কনসার্টগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্রুস স্প্রিংস্টিনের ১৯৮৮ সালের ৩ আগস্ট টানেল অফ লাভ এক্সপ্রেস ট্যুরের সময়কার কনসার্ট এবং ২০০৮ সালের ১৯ ও ২০ জুলাই তার ম্যাজিক ট্যুরের কনসার্ট। ১৯৮৮ সালের ১০ সেপ্টেম্বর, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এই স্টেডিয়ামে একটি চ্যারিটি কনসার্টের আয়োজন করে। ১৯৯৭ সালের ১৩ জুলাই, থ্রি টেনর্সের একটি কনসার্ট আয়োজিত হয়।
ইভেন্ট এবং ভাড়াটে | ||
---|---|---|
পূর্বসূরী দুই লেগের ফাইনাল |
ইন্টার-সিটিজ ফেয়ার্স কাপ ফাইনাল ভেনু ১৯৬৪ |
উত্তরসূরী ইস্তাদিও কমিউন্যাল তিউরিন |
পূর্বসূরী কারাসকাকিস স্টেডিয়াম পিরেয়াস |
উয়েফা কাপ উইনার্স কাপ ফাইনাল ভেনু ১৯৭২ |
উত্তরসূরী কাফ্টাঞ্জগলিও স্টেডিয়াম থিসালোনিকা |
পূর্বসূরী রেইনস্তেদিওন দিউসেলদর্ফ |
উয়েফা কাপ উইনার্স কাপ ফাইনাল ভেনু ১৯৮২ |
উত্তরসূরী নিয়া ইউলেভি গথেনবার্গ |
পূর্বসূরী নেকারস্টেডিওন স্টুটগার্ট |
ইউরোপীয়ান কাপ ফাইনাল ভেনু ১৯৮৯ |
উত্তরসূরী প্রাটারস্টেডিওন ভিয়েনা |
পূর্বসূরী অলিম্পিক স্টেডিয়াম সিউল |
গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক ফুটবল ছেলেদর ফাইনাল (কাম্প ন্যু) ১৯৯২ |
উত্তরসূরী স্যানফোর্ড স্টেডিয়াম এথেন্স, জর্জয়া |
পূর্বসূরী অ্যামস্টেরডাম এরিনা অ্যামস্টেরডাম |
উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনাল ভেনু ১৯৯৯ |
উত্তরসূরী স্তেদ দি ফ্রানস প্যারিস |