ছন্ন (পালি: छन्न) বা ছন্দক (সংস্কৃত: छन्दक) সিদ্ধার্থ গৌতমের সারথি ছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি বৌদ্ধ সংঘে যোগদান করে অর্হত হন।
ছন্ন শাক্য প্রজাতন্ত্রের প্রধান শুদ্ধোধনের একজন পরিচারিকার পুত্র ছিলেন। প্রথম জীবনে দুঃখ ও কষ্ট থেকে দূরে প্রাসাদের বিলাসপূর্ণ জীবনযাপনের পর উনত্রিশ বছর বয়সেশুদ্ধোধনের পুত্র সিদ্ধার্থ গৌতম তার সারথি ছন্নকে নিয়ে[১] প্রাসাদ থেকে প্রথমবার ভ্রমণে বেরোন।[২][২][৩] পথে তিনি একজন বৃদ্ধ মানুষ[৪], একজন অসুস্থ মানুষ[১], একজন মৃত মানুষ[১] ও একজন সন্ন্যাসীকে দেখতে পান।[৫] সাংসারিক দুঃখ কষ্টে সম্পূর্ণ অনভিজ্ঞ সিদ্ধার্থ তার সারথি ছন্নকে এঁদের প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করলে, ছন্ন তাকে বুঝিয়ে বলেন যে সকল মানুষের নিয়তি যে তারা একসময় বৃদ্ধ, অসুস্থ হয়ে মৃত্যুমুখে পতিত হবে।[১] মুণ্ডিতমস্তক পীতবর্ণের জীর্ণ বাস পরিহিত সন্ন্যাসী সম্বন্ধে ছন্ন তাকে বলেন, যে তিনি মানুষের দুঃখের জন্য নিজ গার্হস্থ্য জীবন ত্যাগ করেছেন, তিনিই সন্ন্যাসী।[৫] এই নূতন অভিজ্ঞতায় বিষাদগ্রস্ত সিদ্ধার্থ বাধর্ক্য, জরা ও মৃত্যুকে জয় করার জন্য বদ্ধপরিকর হয়ে একজন সন্ন্যাসীর জীবনযাপনের সিদ্ধান্ত নেন। সংসারের প্রতি বীতরাগ সিদ্ধার্থ এক রাত্রে ঘুমন্ত স্ত্রী, নবজাত পুত্র, পরিবারকে নিঃশব্দ বিদায় জানিয়ে প্রিয় অশ্ব কন্থক ও সারথি ছন্নকে নিয়ে প্রাসাদ ত্যাগ করেন। প্রাসাদ থেকে বেরিয়ে বনের শেষ প্রান্তে পৌঁছে রাজবস্ত্র ত্যাগ করে তলোয়ার দিয়ে তার লম্বা চুল কেটে মুণ্ডিতমস্তক হন। এরপর ছন্নের অনুরোধকে উপেক্ষা করে তাকে বিদায় জানিয়ে সিদ্ধার্থ রাজগৃহের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।[৬][৭] ছন্ন সিদ্ধার্থের অলঙ্কার ও রাজনস্ত্র নিয়ে কপিলাবস্তু ফিরে এলে উদ্বিগ্ন শুদ্ধোধন সিদ্ধার্থের খোঁজে সৈন্য পাঠাতে চাইলে ছন্ন সিদ্ধার্থের স্থির প্রতিজ্ঞার কথা স্মরণ করে তাকে বারণ করেন।
পরবর্তীকালে সিদ্ধার্থ গৌতম বুদ্ধত্ব লাভ করে শুদ্ধোধনের আমন্ত্রণে কপিলাবস্তু শহরে এলে ছন্ন তাকে অনুসরণ করে সংসার ত্যাগ করে সংঘজীবনে যোগ দেন। কিন্তু পূর্বজীবনে গৌতম বুদ্ধের প্রিয়পাত্র হওয়ায় তিনি ভিক্ষুজীবনে তার অহঙ্কার ত্যাগ করতে অসমর্থ হন। কোশাম্বী রাজ্যের ঘোষিতাশ্রমে তিনি একটি অপরাধ করে অস্বীকার করায় গৌতম বুদ্ধ উখ্খেপনিয়-কম্ম আরোপ করে তার সংঘজীবনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। পরে ছন্ন তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলে তাকে সংঘ জীবনে ফিরিয়ে আনা হয়।[৮] ধম্মপদত্থকথা অনুসারে, গৌতম বুদ্ধের বারংবার সাবধানবাণী সত্ত্বেও সারিপুত্ত ও মোগ্গলনের সঙ্গে ছন্ন দুর্ব্যবহার করার কারণে গৌতম বুদ্ধ ছন্নের জন্য ব্রহ্মদণ্ড নামক নৈতিক শাস্তি করার জন্য আনন্দকে নির্দেশ দেন। গৌতম বুদ্ধের মৃত্যুর পর প্রথম বৌদ্ধ সঙ্গীতি আহ্বান করা হলে, সেখানে ছন্নের ওপর ব্রহ্মদণ্ড আরোপ করে তাকে সংঘ থেকে বহিষ্কার করা হয়। এই সংবাদে ছন্ন অনুতপ্ত হয়ে অর্হত হিসেবে গণ্য হন।[৯]:৩১
|তারিখ=
(সাহায্য)