দ্য কমেডি অফ এররস (ইংরেজি: The Comedy of Errors) হল উইলিয়াম শেকসপিয়র রচিত প্রথম নাটকগুলির অন্যতম। তাঁর কমেডিগুলির মধ্যে এটিই সংক্ষিপ্ততম এবং সর্বাধিক হাস্যরসোদ্দীপক। এই নাটকের হাস্যরসের প্রধান উৎস ভাঁড়ামি ও পরিচয়-বিভ্রান্তি এবং সেই সঙ্গে যমক ও শব্দক্রীড়ার ব্যবহার। শেকসপিয়র রচিত এই দ্য কমেডি অফ এররস ও দ্য টেম্পেস্ট নাটক দু’টিতেই কেবল অ্যাসিস্টটলীয় সময়-ঐক্যের নীতিটি (অর্থাৎ, নাটকীয় ঘটনাবস্তুর সময়কাল অনধিক চব্বিশ ঘণ্টা) অনুসৃত হয়েছে। সমগ্র বিশ্বে এই নাটকটি একাধিক অপেরা, মঞ্চ প্রযোজনা, চলচ্চিত্র ও মিউজিক্যাল থিয়েটারে অভিযোজিত হয়েছে। নাটকটির প্রথম মঞ্চায়নের পরবর্তী শতাব্দীগুলিতে নাটকটির শিরোনামটি "একের পর এক করে যাওয়া একাধিক ভুলের ফলে উদ্ভূত উপহাসাত্মক ঘটনা বা ঘটনাক্রম" ("an event or series of events made ridiculous by the number of errors that were made throughout") অর্থে জনপ্রিয় ইংরেজি শব্দকোষে একটি বাগধারা হিসাবে স্থান পায়।[১]
গ্রিক শহর ইফিসাসের প্রেক্ষাপটে রচিত দ্য কমেডি অফ এররস নাটকটিতে জন্মের পর দুর্ঘটনাচক্রে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়া দুই জোড়া অভিন্ন যমজ ভাইয়ের কাহিনি বর্ণিত হয়েছে। সাইরাকিউসের অ্যান্টিফোলাস তাঁর ভৃত্য সাইরাকিউসের ড্রোমিওকে নিয়ে ইফিসাসে উপস্থিত হন। এই শহরেই বাস করতেন তাঁদের যমজ ভাই ইফিসাসের অ্যান্টিফোলাস ও তাঁর ভৃত্য ইফিসাসের ড্রোমিও। সাইরাকিউসবাসীরা সেই দুই যমজ ভাইয়ের বন্ধু ও পরিবারবর্গকে আক্রমণ করলে পরিচয় বিভ্রান্তির পরিপ্রেক্ষিতে একের পর এক অঘটন ঘটতে শুরু করে। ফলে অন্যায় মারধর, একটি প্রায়-প্রলুব্ধকরণ, ইফিসাসের অ্যান্টিফোলাসের গ্রেফতারি এবং ব্যভিচার, চুরি, পাগলামি ও ভূতে পাওয়ার মিথ্যা অভিযোগ আনয়নের মতো ঘটনা ঘটে যায়।
১৮৬৯ সালে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর দ্য কমেডি অফ এররস নাটকটি ভ্রান্তিবিলাস নামে বাংলায় আখ্যায়িকার আকারে অনুবাদ করেন। এই অনুবাদে তিনি মূল নাটকের পাত্রপাত্রী ও স্থাননামগুলির পরিবর্তে ভারতীয় ব্যক্তিনাম ও স্থাননাম ব্যবহার করেন। গ্রন্থটি বাংলাতেও অত্যন্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করে। ১৯৬৬ সালে এটি চলচ্চিত্রায়িতও হয়।[২]
ইফিসাসের আইন অনুযায়ী, সাইরাকিউসের বণিকেরা সেই শহরে প্রবেশ করতে পারেন না। তাই সাইরাকিউসের প্রবীণ বণিক ইজিয়নকে শহরে পাওয়া গেলে তাঁকে শাস্তির মুখে পড়তে হয়। এক হাজার মার্ক জরিমানা ধার্য হল তাঁর। তিনি ইফিসাসের ডিউক সোলিনাসের কাছে নিজের জীবনের দুঃখময় কাহিনি শোনালেন। যৌবনে ইজিয়ন বিবাহ করেছিলেন এবং তাঁর দুই যমজ পুত্রের জন্ম হয়েছিল। সেই দিনই কর্মহীনা দরিদ্র এক নারীও দুই যমজ পুত্রের জন্ম দেন। ইজিয়ন নিজের পুত্রদের জন্য ক্রীতদাস হিসাবে সেই দু’টি ছেলেকে কিনে নিলেন। এই ঘটনার কিছুদিন পরেই তিনি সপরিবারে সমুদ্রযাত্রা করেন এবং সমুদ্রে এক ঝড়ের সম্মুখীন হন। এক ছেলে ও একজন ক্রীতদাসকে নিয়ে ইজিয়ন প্রধান মাস্তুলটি জাপটে ধরলেন। অন্যদিকে তাঁর স্ত্রী অন্য দুই শিশুকে সঙ্গে নিলেন। এক ব্যক্তি তাঁর স্ত্রীকে নিজের নৌকায় তুলে নিলেন এবং অপর এক ব্যক্তি ইজিয়নকে উদ্ধার করেন। এরপর ইজিয়ান আর স্ত্রী ও তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে থাকা ছেলেগুলিকে খুঁজে পাননি। তাঁর পুত্র অ্যান্টিফোলাস এখন প্রাপ্তবয়স্ক। তিনিও তাঁর ভৃত্য ড্রোমিওকে নিয়ে সাইরাকিউসে এসেছিলেন ভাইয়ের সন্ধানে। অ্যান্টিফোলাস ফিরছেন না দেখে ইজিয়নকেই আসতে হল তাঁদের খোঁজে।
তাঁর কথা শুনে ডিউক দুঃখ পান এবং জরিমানা দেওয়ার জন্য ইজিয়নকে এক দিন সময় দেন।
সেই দিনই ভাইয়ের সন্ধানে অ্যান্টিফোলাস ইফিসাসে উপস্থিত হলেন। তিনি ড্রোমিওকে কিছু টাকা দ্য সেন্ট্যুর নামে এক সরাইখানায় জমা রাখতে পাঠালেন। তার কিছুক্ষণ পরেই ইফিসাসের ড্রোমিও অ্যান্টিফোলাসের সামনে এসে উপস্থিত হলেন এবং টাকার কথাটা সম্পূর্ণ অস্বীকার করে বলল যে, অ্যান্টিফোলাসের স্ত্রী অপেক্ষা করছেন; তাই তিনি যেন রাতের খাবার খেতে বাড়িতে আসেন। ভৃত্য অভব্যের মতো মজা করছে ভেবে অ্যান্টিফোলাস ইফিসাসের ড্রোমিওকে মারধর করলেন।
ইফিসাসের ড্রোমিও তাঁর গৃহকর্ত্রী আড্রিয়ানার কাছে ফিরে এসে জানালেন যে, তাঁর "স্বামী" বাড়ি ফিরতে অস্বীকার করেছেন, এমনকি তাঁকে চিনতেও চাননি। স্বামীর চরিত্র নিয়ে আড্রিয়ানার আগেই সন্দেহ জন্মেছিল। এই সংবাদে তিনি নিজের সন্দেহের ব্যাপারে নিশ্চিত হলেন।
এদিকে সাইরাকিউসের অ্যান্টিফোলাসের সঙ্গে সাইরাকিউসের ড্রোমিওর দেখা হল। ড্রোমিও অভব্যতার কথা অস্বীকার করল। অ্যান্টিফোলাস তাকে মারতে শুরু করলেন। হঠাৎ আড্রিয়ানা ছুটে এলেন এবং সাইরাকিউসের অ্যান্টিফোলাসের কাছে প্রার্থনা করলেন তাঁকে ছেড়ে না যাওয়ার জন্য। সাইরাকিউসবাসীরা এই অদ্ভুত ঘটনাগুলিকে বুঝতে পারল না। তারা এটিকে জাদুটোনার ঘটনা মনে করল। সঙ্গে এও মন্তব্য করল যে, ইফিসাসে তো জাদুকরী নেই। অ্যান্টিফোলাস ও ড্রোমিও গোলমাল এড়াতে সেই অপরিচিতার সঙ্গেই চলে গেলেন। একজন রাতের খাবার খেতে বসলেন এবং অন্য জন দরজায় পাহারা দিতে লাগল।
ইফিসাসের অ্যান্টিফোলাস বাড়ি ফিরলেন। কিন্তু দরজায় পাহারায় থাকা সাইরাকিউসের ড্রোমিও তাঁকে বাড়িতে ঢুকতে বাধা দিলে তিনি রেগে উঠলেন। তিনি দরজা ভাঙতে গেলেন। কিন্তু তাঁর বন্ধুরা তাঁকে গোলমাল করতে বারণ করলেন। তখন তিনি ঠিক করলেন, বাড়িতে না ঢুকে এক রাজ-গণিকার বাড়িতে নৈশাহার সারবেন।
বাড়ির ভিতর সাইরাকিউসের অ্যান্টিফোলাস বুঝতে পারলেন, তিনি তাঁর "স্ত্রী"র বোন স্মিরনার লুসিয়ানার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েছেন। তাঁর মনোযোগ পেয়ে লুসিয়ানাও আত্মশ্লাঘা বোধ করতেন। কিন্তু একই সঙ্গে অ্যান্টিফোলাসের কথাগুলির অনৈতিক দিকটিও তাঁকে ভাবিত করে তুলল। লুসিয়ানা বেরিয়ে যাওয়ার পর সাইরাকিউসের ড্রোমিও ঘোষণা করল যে, তিনি আবিষ্কার করেছেন তাঁর এক স্ত্রী আছে – নেল নামে এক কদাকার পাচিকা। সাইরাকিউসের অ্যান্টিফোলাস ও ড্রোমিও স্থির করলেন, যত শীঘ্র সম্ভব পালাবেন। ড্রোমিও যাত্রার পরিকল্পনা করতে গেল। এদিকে সাইরাকিউসের অ্যান্টিফোলাসের সঙ্গে দেখা হল অ্যাঞ্জেলো নামে এক স্বর্ণকারের। অ্যাঞ্জেলো দাবি করলেন অ্যান্টিফোলাস একটি হারের বায়না দিয়েছিলেন। জোর করেই অ্যান্টিফোলাসের হাতে হারটা ধরিয়ে দিয়ে অ্যাঞ্জেলো বললেন, পরে এসে তিনি দাম নিয়ে যাবেন।
ইফিসাসের অ্যান্টিফোলাস ইফিসাসের ড্রোমিওকে একটি দড়ি কিনতে পাঠান, যাতে তিনি তাঁকে বাড়িতে না ঢুকতে দেওয়ার জন্য তাঁর স্ত্রীকে প্রহার করতে পারেন। তারপর তাঁর সঙ্গে অ্যাঞ্জেলোর দেখা হয়। অ্যাঞ্জেলো তাঁকে হারের দামটি চুকিয়ে দিতে বলেন। অ্যান্টিফোলাস হারটি পাওয়ার কথা অস্বীকার করলে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁকে যখন নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন সাইরাকিউসের ড্রোমিও সেখানে উপস্থিত হয়। অ্যান্টিফোলাস ড্রোমিওকে অ্যাড্রিয়ানার কাছে পাঠান জামিনের অর্থ সংগ্রহের জন্য।
এই ঘটনার পর সাইরাকিউসের ড্রোমিও ভুল করে জামিনের জন্য আনীত অর্থ তুলে দেয় সাইরাকিউসের অ্যান্টিফোলাসের হাতে। রাজগণিকা লুকিয়ে অ্যান্টিফোলাসের উপর নজরদারি করছিল। সে এসে বলে অ্যান্টিফোলার তার আংটির বিনিময়ে হারটি তাকে দেবেন বলে কথা দিয়েছিলেন। সাইরাকিউসবাসীরা তা দিতে অস্বীকার করেন ও পালিয়ে যান।
রাজগণিকা ঠিক করল, সে অ্যাড্রিয়ানাকে বলবে যে তাঁর স্বামী পাগল হয়ে গিয়েছে। ইফিসাসের ড্রোমিও দড়ি নিয়ে গ্রেফতার হওয়া ইফিসাসের অ্যান্টিফোলাসের কাছে আসে। অ্যান্টিফোলাস প্রচণ্ড রেগে যান। অ্যাড্রিয়ানা, লুসিয়ানা ও রাজগণিকা পিঞ্চ নামে এক জাদুকরকে নিয়ে আসেন। পিঞ্চ ইফিসাসবাসী অ্যান্টিফোলাস ও ড্রোমিওর ভূত তাড়ানোর চেষ্টা করে। তাঁদের বেঁধে অ্যাড্রিয়ানার বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। তরবারি হাতে সাইরাকিউসবাসীরা প্রবেশ করেন। সবাই তাঁদের ইফিসাসবাসী ভ্রমে মনে করেন যে, কোনওভাবে বাঁধন ছিন্ন করে তাঁরা পালিয়ে এসেছেন প্রতিশোধ নিতে। ভয় পেয়ে সবাই পালিয়ে যায়। হুকুমবরদারকে নিয়ে অ্যাড্রিয়ানা আবার উপস্থিত হন। তাঁরা সাইরাকিউসবাসীদের বেঁধে ফেলার চেষ্টা করেন। তাঁরা আশ্রয় গ্রহণ করেন স্থানীয় আশ্রমে। সেখানে আশ্রমাধ্যক্ষা দৃঢ়তার সঙ্গে তাঁদের রক্ষা করেন।
হঠাৎ আশ্রমাধ্যক্ষা সাইরাকিউসবাসী যমজদ্বয়কে নিয়ে প্রবেশ করেন। সবাই সারাদিনের বিভ্রান্তিজনক ঘটনার স্বরূপ বুঝতে শুরু করেন। শুধুমাত্র সেই যমজদ্বয়েরই মিলন ঘটে না, সেই সঙ্গে জানা যায় আশ্রমাধ্যক্ষা স্বয়ং ইজিয়নের পত্নী ব্যাবিলনের এমিলিয়া। ডিউক ইজিয়নকে ক্ষমা করে দেন। সবাই আশ্রমে প্রবেশ করেন পরিবারের পুনর্মিলন উদ্যাপন করতে।
১৫৯৪ সালের ১০ জুন এই নাটকটি প্লটাসের মেনেকমি নাটকের একটি আধুনিকীকৃত অভিযোজনা। এই ধ্রুপদি নাটকটির উইলিয়াম ওয়ার্নার অনুবাদ স্টেশনার্স কোম্পানির রেজিস্টারের অন্তর্ভুক্ত হয়ে ১৫৯৫ সালে প্রকাশিত হয়। অনুবাদটি উৎসর্গিত হয়েছিল লর্ড চেম্বারলেইন’স মেনের পৃষ্ঠপোষক লর্ড হান্সডনের উদ্দেশ্যে। অনুমান করা হয়, শেকসপিয়র বইটি প্রকাশের আগেই অনুবাদটির পাণ্ডুলিপি দেখে থাকবেন। তবে প্লটাসের রচনা গ্রামার স্কুলের ছাত্রদের পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত ছিল বলে তাঁর পক্ষে নাটকটি মূল লাতিনে জানাও অসম্ভব নয়।
এই নাটকে ফ্রান্সে উত্তরাধিকার-সংক্রান্ত যুদ্ধের সাময়িক উল্লেখ পাওয়া যায়। যা নাটকের রচনাকাল ১৫৮৯ থেকে ১৫৯৫ সালের মধ্যবর্তী যে কোনও সময়কে নির্দেশ করে। চার্লস হুইটওয়ার্থ ঐতিহাসিক নথিপত্র ও সেই সময় শেকসপিয়র কর্তৃক রচিত অন্যান্য নাটকের পাঠগত সাদৃশ্যের ভিত্তিতে বলেছেন যে, দ্য কমেডি অফ এররস লিখিত হয়েছিল "১৫৯৪ সালের শেষার্ধ্বে"।[৩] তবে ১৬২৩ সালে ফার্স্ট ফোলিও প্রকাশের আগে এটি প্রকাশিত হয়নি।
কয়েক শতাব্দী ধরে গবেষকেরা দ্য কমেডি অফ এররস নাটকে বিষয়বস্তুগত গভীরতার অল্পতাই খুঁজে পেয়েছেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] যদিও হ্যারল্ড ব্লুম বলেন যে, এই নাটকটি "কমেডি শিল্পে শেকসপিয়রের অসাধারণত্বের পরিচায়ক"।[৪] নাটকটির প্রশংসা করতে গিয়ে তিনি বলেন, "ঘটনাক্রম, উপক্রমিক চরিত্রচিত্রণ ও রচনাশৈলীর ক্ষেত্রে এতটাই দক্ষতা, বাস্তবিক অর্থে চমৎকারিত্বের যে, এটির কাছে তিনটি হেনরি দ্য সিক্সথ নাট্যাবলি এবং তুলনামূলকভাবে দুর্বল কমেডি দ্য টু জেন্টলমেন অফ ভেরোনা অনেকটাই ম্লান হয়ে যায়।"[৫] স্ট্যানলি ওয়েলসও বলেন যে, এটিই শেকসপিয়রের প্রথম নাটক যেটিতে "রচনাশৈলীর চমৎকারিত্ব প্রদর্শিত হয়েছে"।[৬] নাটকটি অষ্টাদশ শতাব্দীর মঞ্চে বিশেষ জনপ্রিয়তা পায়নি। কারণ, ডেভিড গ্যারিক প্রমুখ অভিনেতা কর্তৃক চমকপ্রদভাবে উপস্থাপিত হতে পারে, এমন কোনও চরিত্র এই নাটকে ছিল না।
একটি বিশেষ কারণে এই নাটকে উল্লেখযোগ্য। অষ্টাদশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে কোনও কোনও সমালোচক সমালোচনার ফরাসি ধ্রুবক অর্থাৎ খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীতে অ্যারিস্টটল কর্তৃক নির্দিষ্ট ধ্রুপদি নাট্য-ঐক্যের প্রতি আলোচ্য নাটকের আনুগত্যের বিচারে নাটকের মূল্যায়ন করতেন। শেকসপিয়রের দ্য কমেডি অফ এররস ও দ্য টেম্পেস্ট নাটক দু’টিই কেবল এই ধ্রুবকের মানসম্মত।[৭]
অবশ্য আইনের অধ্যাপক এরিক হেইনজ দাবি করেন যে, এই নাটকে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য এতে ধারাবাহিকভাবে উল্লিখিত সামাজিক সম্পর্কগুলি, যা সেই সম্পর্কের সামন্ততান্ত্রিক রূপের আড়ালে সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় আদি আধুনিক ইউরোপের ধনতান্ত্রিক শক্তির বিরুদ্ধে সংঘাতে নেমেছিল।[৮]
দ্য কমেডি অফ এররস নাটকের দু’টি আদি মঞ্চায়ন নথিভুক্ত হয়েছিল। এই দু’টির মধ্যে একটির উল্লেখ পাওয়া যায় গেস্টা গ্রেয়োরাম (দ্য ডিডস অফ গ্রে) গ্রন্থে। ১৫৯৪ সালের ২৮ ডিসেম্বর গ্রে’স ইন হলে "অপকৃষ্ট ও সাধারণ ব্যক্তিবর্গের একটি কোম্পানি"র ("a company of base and common fellows") দ্বারা মঞ্চস্থ হয়। দ্বিতীয়টি দশ বছর বাদে ১৬০৪ সালের ২৮ ডিসেম্বর "ইনোসেন্টস” ডে" উপলক্ষ্যে রাজপ্রাসাদে অভিনীত হয়।[৯]
শেকসপিয়রের অন্যান্য অনেক নাটকের মতো দ্য কমেডি অফ এররস নাটকটিও বহুবার অভিযোজিত ও পুনর্নির্মিত হয়েছে। বিশেষত অষ্টাদশ শতাব্দী থেকে এই ধরনের কাজ হয়ে আসছে। দর্শকরাও এগুলির বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
দ্য কমেডি অফ এররস নাটকটি একাধিকবার মিউজিক্যালে অভিযোজিত হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই সেই সব ক্ষেত্রে প্রাচীন ধারার সংগীতের সঙ্গে লঘু সংগীতের মিশ্রণ ঘটেছে। এই অভিযোজনাগুলির মধ্যে রয়েছে একটি ভিক্টোরীয় মিউকিক্যাল কমেডি (আর্টস থিয়েটার, কেমব্রিজ, ইংল্যান্ড, ১৯৫১), ব্রেখটিয়ান ফোক অপেরা (আর্টস থিয়েটার, লন্ডন, ১৯৫৬), এবং একটি টু-রিং সার্কাস (ডেলাকর্ট থিয়েটার, নিউ ইয়র্ক, ১৯৬৭)।
সম্পূর্ণ মৌলিক মিউজিক্যাল অভিযোজনাগুলির অন্যতম:
১৮৬৯ সালে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর শেকসপিয়রের এই নাটক অবলম্বনে ভ্রান্তিবিলাস নামে একটি আখ্যায়িকা রচনা করেন। বিদ্যাসাগরের এই রচনাটি ছিল বাংলার নবজাগরণের যুগে এদেশে শেকসপিয়র ও রোম্যান্টিক সাহিত্যিকদের রচনা প্রচারের একটি অঙ্গ।[২১][২২]
১৯৪০ সালে "দ্য কমেডি অফ এররস" নাটকের ছায়া অবলম্বনে দ্য বয়েজ ফ্রম সাইরাকিউস নামে একটি মিউজিক্যাল চলচ্চিত্র মুক্তি পায়। এই ছবিতে অ্যান্টিফোলাস ও ড্রোমিও ভ্রাতৃদ্বয়ের চরিত্রে অভিনয় করেন যথাক্রমে অ্যালান জোনস ও জো পেনার।[২৩]
এরপর বিগ বিজনেস (১৯৮৮) ছবিটি ছিল "দ্য কমেডি অফ এররস" নাটকের একটি আধুনিক পুনর্নির্মাণ। এই ছবিতে যমজ ভ্রাতৃদ্বয়ের পরিবর্তে শেকসপিয়রের নাটকের ধাঁচেই যমজ ভগিনীদ্বয়কে দেখানো হয়েছিল। এই যমজ ভগিনীদ্বয়ের ভূমিকায় অভিনয় করেন বেটে মিডলার ও লিলি টমলিন।[২৪]
ভারতে এই নাটকটি অবলম্বনে আটটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে:
It is noteworthy that The Comedy of Errors and Shakespeare's last play, The Tempest, are the only two plays that strictly adhere to the classical unities.
এই নিবন্ধটি একটি প্রকাশন থেকে অন্তর্ভুক্ত পাঠ্য যা বর্তমানে পাবলিক ডোমেইনে: চিসাম, হিউ, সম্পাদক (১৯১১)। "Shakespeare, William"। ব্রিটিশ বিশ্বকোষ। 24 (১১তম সংস্করণ)। কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস। পৃষ্ঠা 772–797। (See p. 778; section Dramas.)