এই নিবন্ধে একাধিক সমস্যা রয়েছে। অনুগ্রহ করে নিবন্ধটির মান উন্নয়ন করুন অথবা আলাপ পাতায় বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করুন।
|
একপ্রকার জৈবিক তরল যা যৌনসঙ্গমের শেষ পর্যায়ে চরম সুখানুভূতি সৃষ্টির সঙ্গে পুরুষাঙ্গ হতে নি:সৃত হয়। শুক্রাণূ সমৃদ্ধ পুরুষের বীর্যে নারীর ডিম্ব নিষিক্ত হলে জরায়ুতে মানব ভ্রূণের সৃষ্টি হয়। কেবল যৌনসঙ্গম নয়, যৌনানন্দ লাভের জন্য হস্তমৈথুনের মাধ্যমেও বীর্যস্খলন করা হয়ে থাকে। এছাড়া স্বপ্নদোষ মাধ্যমে বীর্যপাত হয়ে থাকে।
বীর্য নানা নামে পরিচিত যার মধ্যে রয়েছে শুক্র, ধাতু বীর্যরস ইত্যাদি। বীর্য এক প্রকার অঘনীভূত, ঈষৎ ক্ষারীয়, আঠালো জেলির ন্যায় জৈব তরল যা সাধারণত স্পার্মাটোজোয়া ধারণ করার ক্ষমতা রাখে। এটি সাধারণত কোন জীব প্রজাতির পুরুষ কিংবা উভলিঙ্গ প্রাণির অন্ডকোষ থেকে উৎপন্ন হয় এবং ঐ প্রজাতির স্ত্রী লিঙ্গের প্রাণির জরাযুতে সৃষ্ট হওয়া ডিম্বাণু নিষিক্ত করার ক্ষমতা রাখে। মানুষের ক্ষেত্রে, বীর্যরসে স্পার্মাটোজোয়া ছাড়াও অন্যান্য একাধিক উপাদানের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। এসব উপাদানের মধ্যে প্রোটিওলাইটিক ও অন্যান্য এনজাইম এবং ফ্রুক্টোজের উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য। এই উপাদানগুলো মূলত দেহের বাইরে বা দেহাভ্যন্তরে স্পার্মাটোজোয়ার টিকে থাকা নিশ্চিত করে এবং এদেরকে ‘সাঁতরানোর’ বা চলাচলের জন্য একটি নিরাপদ মাধ্যমের যোগান দেয়।
শ্রোণীচক্রে অবস্থিত সেমিনাল ভেসিকল নামক অঙ্গ থেকে বীর্য উৎপন্ন হয়। যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বীর্য নিঃসরণ ঘটে তাকে বীর্যপাত বলে।
এছাড়াও বংশগতির উপাদান হিসেবে বীর্যের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য। বিভিন্ন বিরল জীব প্রজাতি কিংবা সংকরজাত প্রজাতি সংরক্ষণের জন্য ক্রায়োকনজার্ভেশন প্রক্রিয়ায়
প্রজাতির বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে, স্পার্মাটোজোয়া হয়ত অভ্যন্তরীণ বা বাহ্যিকভাবে ডিম্বাণু নিষিক্ত করতে পারে। বহিঃনিষেকের ক্ষেত্রে, স্পার্মাটোজোয়া স্ত্রী প্রাণির প্রজনন অঙ্গসমূহের বাইরে সরাসরি প্রত্যক্ষভাবে ডিম্বাণু নিষিক্ত করে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, স্ত্রী মাছেরা তাদের পোনা উৎপাদনকারী ডিমগুলো তাদের জলীয় বাসস্থানের পরিবেশে ছড়িয়ে দেয়। যেখানে সেগুলো পুরুষ মাছেদের দ্বারা নিষিক্ত হয়।
অপরদিকে অন্তঃনিষেকের সময়, নিষেক ঘটে স্ত্রী প্রাণির প্রজনন অঙ্গসমূহের অভ্যন্তরে। অন্তঃনিষেক তখনই ঘটে যখন, নির্দিষ্ট প্রজাতির কোন স্ত্রী প্রাণির সাথে ঐ একই প্রজাতির কোন পুরুষ প্রাণির সঙ্গম ঘটে এবং সঙ্গমের মাধ্যমে স্ত্রী প্রাণির প্রজনন অঙ্গসমূহের অভ্যন্তরে বীর্য প্রবেশ করে। উভচর, সরীসৃপ, মনোট্রিম ও পাখিসহ অধিকাংশ মেরুদন্ডী প্রাণিদের ক্ষেত্রেই, স্ত্রী ও পুরুষ উভয় প্রাণির ক্লোকার দৈহিক মিলনের মাধ্যমে সঙ্গম সম্পন্ন হয়ে থাকে।
বীর্যস্খলন সংঘটিত হওয়ার সময়, ইজেকুলেটরি ডাক্টস বা বীর্যস্খলনের নালীদ্বয়ের ভেতর দিয়ে শুক্রাণু প্রবাহিত হয় এবং সেমিনাল ভেসিকল দ্বয়, প্রোস্টেট গ্রন্থি এবং বাল্বোইউরেথ্রাল গ্রন্থিদ্বয়ের তরলের সঙ্গে বীর্য তৈরি করার জন্য মিশ্রিত হয়। সেমিনাল ভেসিকলদ্বয় ফ্রুক্টোজ ও অন্যান্য উপাদান সমৃদ্ধ একটি হালকা হলুদ বর্ণের চটচটে তরল উৎপন্ন করে যা মানববীর্যের উপাদানসমূহের মোট পরিমাণের শতকরা প্রায় ৭০ ভাগ।[১] প্রোস্টেট থেকে যে তরল নিঃসরণের প্রক্রিয়াটি ঘটে, তা ডাইহাইড্রোটেস্টোস্টেরনের প্রভাবে ঘটে থাকে। প্রোস্টেট নিঃসৃত এ তরলটি একটি সাদাটে বা কখনোবা স্বচ্ছ হালকা তরল পদার্থ হয়ে থাকে, যা বিভিন্ন প্রকারের প্রোটিওলাইটিক এনজাইম, সাইট্রিক এসিড, এসিড ফসফেটেজ এবং নানান প্রকারের লিপিড দ্বারা সমৃদ্ধ থাকে।[১] বাল্বোইউরেথ্রাল গ্ল্যান্ডদ্বয় মূত্রনালীর লুমেনের ভিতর দিয়ে যথাযথভাবে একটি তরল নিঃসৃত করে যেন তা সঠিকভাবে পিচ্ছিল হয়।[২]
"সেরেটলি কোষসমূহ", যারা শুক্রাণু উৎপাদনে সাহায্য করে এবং তাদের পুষ্টি সরবরাহ করে, সেগুলো সেমিনিফেরাস নালীসমূহের মধ্যে একটি তরল পদার্থ নিঃসরণ করে যা শুক্রানুকে শিশ্ননালীর ভেতর দিয়ে চালনা করতে সাহায্য করে। ডাক্টালি ইফারেন্টাস নালীদ্বয় মাইক্রোভিলাস ও লাইসমাল গ্র্যানিউল যুক্ত ঘন আকৃতির কোষ দ্বারা গঠিত থাকে যা ডাক্টাল ফ্লয়িড বা নালীস্থ তরলকে অন্যান্য তরল উপাদান শোষণ করানোর মাধ্যমে এতে আরও এক ধাপ পরিবর্তন আনে। বীর্য যখনই ডাক্টাস এপিডিডাইমিস নালীত্বকে প্রবেশ করে, ঠিক তখনই তরল পুণঃশোষণকারী পিনোসাইটোটিক ভেসেল সমৃদ্ধ প্রধান কোষসমূহ গ্লিসারোফসফোকোলিন নামক একটি পদার্থ নিঃসরণ করে যেটি দ্রুত বীর্যপতন রোধ করে বলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ধারণা করা হয়। সহকারী শিশ্ন নালিকাদ্বয়, সেমিনাল ভেসিকল, প্রোস্টেট গ্রন্থিদ্বয় এবংবাল্বোইউরেথ্রাল গ্রন্থিদ্বয়ই অধিকাংশ পরিমাণ বীর্যতরল প্রস্তুত করে।
মানব বীর্যে বিদ্যমান বিভিন্ন উপাদানের পরিমাণ ও গঠন নিম্নরূপঃ
গ্রন্থির নাম | আসন্ন শতাংশ | বিবরণ |
অন্ডকোষ | ২–৫% | গড়পড়তাভাবে প্রতিটি বীর্যপাতের সাথে, অন্ডকোষে উৎপন্ন হওয়া প্রায় ২০০ থেকে ৫০০ মিলিয়ন স্পার্মাটোজোয়া নির্গত হয়। যদি কোন পুরুষ ভ্যাসেক্টোমি করিয়ে থাকেন তাহলে তার বীর্যের সাথে কোন স্পার্মাটোজোয়াই নির্গত হবে না। |
সেমিনাল ভেসিকল | ৬৫–৭৫% | অ্যামিনো এসিড, সাইট্রেট, বিভিন্ন এনজাইম, ফ্লাভিনসমূহ, ফ্রুক্টোজ (প্রতি মি.লি. বীর্যে ২–৫ মি.গ্রা. ফ্রুক্টোজ থাকে[৩] যা শুক্রাণু কোষগুলোর শক্তির প্রধান উৎস হিসেবে শক্তির যোগান দেয়। বীর্য প্লাজমায় বিদ্যমান স্পার্মাটোজোয়া সম্পূর্ণরূপে শক্তির জন্য এসব স্যুগারের উপর নির্ভর করে।), ফসফোরাইলক্লোরিন, বিভিন্ন প্রোস্টাগ্লান্ডিন (যেগুলো বহিরাগত পুরুষ বীর্যের বিরুদ্ধে নারী দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার সক্রিয়তাকে অবদমিত করে।), বিভিন্ন প্রোটিন, ভিটামিন সি |
প্রোস্টেট | ২৫–৩০% | এসিড ফসফেটেজ, সাইট্রিক এসিড, ফাইব্রিনোলাইসিন, প্রোস্টেট নির্দিষ্ট অ্যান্টিজেন, বিভিন্ন প্রোটিওলাইটিক এনজাইম, দস্তা (সুস্থ্য পুরুষদের ক্ষেত্রে দস্তার (Zinc) পরিমাণ ১৩৫±৪০ মাইক্রোগ্রামের কাছাকাছি হয়ে থাকে।)[৪] দস্তা মূলত শুক্রাণু কোষগুলোতে ডিএনএ-ধারণকারী ক্রোমাটিন স্থিতিশীল করতে সাহায্য করে। দস্তা স্বল্পতার ফলে প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে, কারণ দস্তার অভাবে শুক্রাণুর ভঙ্গুরতা বৃদ্ধি পায়। এছাড়া, স্পার্মাটোজেনেসিস প্রক্রিয়ার উপরও দস্তা স্বল্পতার ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে।) |
বাল্বোইউরেথ্রাল গ্রন্থি | < ১% | গ্যালাক্টোজ, মিউকাস (শুক্রাণু কোষগুলোর সাঁতরে যাওয়ার জন্য কম সান্দ্রতাবিশিষ্ট প্রবাহ সৃষ্টির মাধ্যমে যোনিগহ্বরে এবং সার্ভিক্সের অভ্যন্তরে শুক্রাণু কোষগুলোর চলাচল বৃদ্ধি করে এবং বীর্যরসের বাইরে শুক্রাণুর বিস্তরণ রোধ করে। যার ফলে, বীর্য আঠালো জেলির মত বর্ণ ধারণ করে।), প্রাক-বীর্য, সিয়ালিক এসিড |
পদার্থসমূহ ও তাদের ধর্মাবলি | প্রতি ১০০ mL-এ | গড় আয়তনে (৩.৪ mL) |
---|---|---|
ক্যালসিয়াম (মি.গ্রা.) | ২৭.৬ | ০.৯৩৮ |
ক্লোরাইড (মি.গ্রা.) | ১৪২ | ৪.৮৩ |
সাইট্রেট (মি.গ্রা.) | ৫২৮ | ১৮.০ |
ফ্রুক্টোজ (মি.গ্রা.) | ২৭২ | ৯.২৫ |
গ্লুকোজ (মি.গ্রা.) | ১০২ | ৩.৪৭ |
ল্যাকটিক এসিড (মি.গ্রা.) | ৬২ | ২.১১ |
ম্যাগনেসিয়াম (মি.গ্রা.) | ১১ | ০.৩৭৪ |
পটাশিয়াম (মি.গ্রা.) | ১০৯ | ৩.৭১ |
প্রোটিন (গ্রা.) | ৫.০৪ | ০.১৭১ |
সোডিয়াম (মি.গ্রা.) | ৩০০ | ১০.২ |
ইউরিয়া (মি.গ্রা.) | ৪৫ | ১.৫৩ |
দস্তা (মি.গ্রা.) | ১৬.৫ | ০.৫৬১ |
বাফার ধারণক্ষমতা (β) | ২৫ | |
অভিস্রাব্যতা (mOsm) | ৩৫৪ | |
pH | ৭.৭ | |
সান্দ্রতা (cP) | ৩–৭ | |
আয়তন (mL) | ৩.৪ | |
গড় আয়তন হিসাবের সময় আয়তন মান উল্লেখযোগ্য তিন দশমিক স্থান পর্যন্ত কমিয়ে আনা হয়েছে। অন্য সব মান অপরিবর্তীত রয়েছে। |
বীর্য সাধারণত দেখতে মেঘলা সাদা অথবা কিছুটা ধূসর তরল। বীর্যপাতের সাথে সাথে এটি দেখতে গাঢ় এবং জেলীর মত ঈষৎ শক্ত। তবে পরবর্তী ১৫-৩০ মিনিটের মধ্যে বীর্য তরল এবং জলের মত পাতলা হয়ে যায়। জমে যাওয়ার কারণে বীর্য যোনিতে লেগে থাকে আর তরলীকরণ প্রক্রিয়া বীর্যকে ডিম্বাণু পর্যন্ত ভ্রমণের জন্য মুক্ত করে দেয়।
বীর্যপাতে উৎপাদিত বীর্যের পরিমাণ ভিন্ন ভিন্ন হয়। ৩০ টি গবেষণায় থেকে দেখা গেছে তা গড়ে ৩.৪ মিলিলিটার এবং সর্বোচ্চ ৪.৯৯ মিলি থেকে সর্বোনিম্ন ২.৩ মিলি হয়।
কিছু সম্পূরক খাবার বীর্যের পরিমাণ বাড়ায় বলে দাবি করা হয়েছে। তথাকথিত হারবাল ভায়াগ্রাসহ অন্যান্য সম্পূরক খাবারকে ওষুধ পরিচালনা বিভাগ অনুমতি দেয়নি এবং এসবের কোনোটাই বৈজ্ঞানিক ভাবে স্বীকৃত নয়। তবে বীর্যপাতের ফলে আমাদের শরীরের যে সাময়িক ভাবে বিদ্ধস্ত হয়ে যায় তার ক্ষতিপূরণ এর জন্য প্রোটিন যুক্ত খাবার খাওয়া উচিত
প্রজনন এর কেন্দ্রীয় ভূমিকা ছাড়াও, কিছু সমীক্ষায় বীর্য মানব স্বাস্থ্যের বিশেষ উপকারী প্রভাব থাকতে পারে দাবী করা হয়েছে :
অন্যান্য গবেষণায় বিরূপ প্রভাব দাবি:
সাম্প্রতিক একটি গবেষণা সুপারিশ করেছে যে, বীর্য মহিলাদের বিষণ্নতারোধী হিসাবে কাজ করে, তাই শারীরিকভাবে বীর্য গ্রহণ নারীদের বিষণ্নতা ভোগার সম্ভাবনা কমে যায়। আগে ধারণা করা হতো এটা ঘটে কারণ বীর্যের জটিল রাসায়নিক গঠন যাতে মেজাজ-পরিবর্তনকারী হরমোন (টেস্টোস্টেরন, ইস্ট্রোজেন, গুটিকা-উত্তেজক হরমোন, লুটিনাইজিং হরমোন, প্রোল্যাক্টিন এবং বিভিন্ন প্রোস্টাগ্লান্ডিন)।
এর ফলে নারী মনে উত্তেজনা ও পুরুষের প্রতি তার আকর্ষণ বাড়ে।