বৌদ্ধধর্ম |
---|
এর ধারাবাহিক নিবন্ধের অংশ |
অশ্বঘোষ (দেবনাগরী: अश्वघोष; əɕʋəgʰoːʂə) (সম্ভবত ৮০ খ্রিঃ - ১৫০ খ্রিঃ) কুষাণ সম্রাট কণিষ্কের সভাকবি ছিলেন। তিনি বুদ্ধচরিত শীর্ষক গ্রন্থটি রচনা করে ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন। সংস্কৃত সাহিত্যের উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক অশ্বঘোষ বৌদ্ধ মহাযান সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা রূপে কীর্তিত হয়ে থাকেন। সাধারণভাবে তাকে কালিদাসের পূর্বে শ্রেষ্ঠ সংস্কৃত ও প্রথম বৌদ্ধ নাট্যকার হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। ইনি সাকেত (অযোধ্যা) নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ঐতিহাসিক লামা তারানাথ History of Buddhism in India (Gya-gar-chos-‘byun) গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন অশ্বঘোষ সংঘগুহ্য নামক এক ব্রাহ্মণের পুত্র। মায়ের নাম সুবর্ণাক্ষী। পার্শ্ব বা তার শিষ্য পুণ্যযশা ছিলেন অশ্বঘোষের গুরু। কথিত আছে ইনি ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও পরবর্তী কালে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেন এবং তথাগতের বাণী প্রচারে জীবন উৎসর্গ করেন। বৌদ্ধ হিসাবে তিনি প্রথমে সর্বাস্তিবাদী ছিলেন। তার বিশেষ মতবাদ মৈত্রী, করুণা ও বুদ্ধভক্তির উপর প্রতিষ্ঠিত, যা প্রধানত মহাযান বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের জন্ম দেয়। তিনি কেবল একজন বৌদ্ধ দার্শনিক ছিলেন না, সঙ্গীত শাস্ত্রেও তার অগাধ পাণ্ডিত্য ছিল।
কিংবদন্তি অনুযায়ী, অশ্বঘোষ, রাজা কনিষ্কের সমসাময়িক অর্থাৎ খৃষ্টীয় প্রথম শতক তার আবির্ভাব কাল। খৃষ্টীয় পঞ্চম শতকে অশ্বঘোষ সম্পর্কে কিছু তথ্য চীনা ভাষায় পাওয়া যায়।
অশ্বঘোষ প্রাচীন ভারতে সরযু নদীর তীরে অবস্থিত সাকেত নগরে জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে এই অঞ্চলটি অযোধ্যা হিসেবে পরিচিত। জানা যায়, তিনি বুদ্ধধর্মে দীক্ষিত হওয়ার আগ পর্যন্ত এই জায়গাতেই বাস করতেন। অবশ্য তার বংশ পরিচয় সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায় না। শুধু জানা যায়, তার পিতা ছিলেন একজন সচ্ছল কুলীন ব্রাহ্মণ। প্রাচীন গ্রন্থের সূত্র ধরে ঐতিহাসিক লামা তারানাথ উল্লেখ করেছেন যে, তিনি সংঘগুহ্য নামক এক ধনী ব্রাহ্মণের পুত্র। অতি অল্পবয়সেই তিনি ত্রি-বিদ্যা ও কলাবিদ্যা সমাপ্ত করেছিলেন। তার মায়ের নাম ছিল সুবর্ণাক্ষী।[১]
প্রথম জীবনে তিনি ব্রাহ্মণ হলেও পরে ধর্মান্তরিত হয়ে বৌদ্ধ হন ও সাকেতের বলাকারাম বিহারের প্রধান পুরোহিত শ্রীমৎ ধর্মসেন মহাস্থবিরের কাছে গিয়ে উপসম্পদা গ্রহণ করেন। যতদূর জানা যায়, তিনি তার কাকা ভিক্ষু শুভগুপ্তকে দেখেই এ' বিষয়ে প্রথম আকৃষ্ট বোধ করেন।[১] পরে তিনি উচ্চতর বৌদ্ধ দর্শনের জ্ঞান লাভের জন্য মগধের পাটলিপুত্রে গমন করেন। সে সময় পাটলিপুত্রে প্রাকৃত ও পালি ভাষার পরিবর্তে সংস্কৃত ভাষারই প্রাধান্য বেশি ছিল এবং সেই সাথে ছিল মহাযান ধর্ম দর্শনের প্রবল জোয়ার। অশ্বঘোষও মহাযান বৌদ্ধধর্ম ও সংস্কৃত ভাষা - দুটিকেই অন্তর থেকে গ্রহণ করেছিলেন। পরে তিনি কুষান সাম্রাজ্যে চলে যান। তার অসীম ব্যক্তিত্ব, জ্ঞান এবং কবিত্বশক্তির কারণে কুষান সম্রাট কনিষ্ক তাকে রাজকবি পদে অভিষিক্ত করেন।
সংস্কৃত অলংকারশাস্ত্র অনুযায়ী বিচার করলে তার 'বুদ্ধচরিত'-কে মহাকাব্য বলা যেতেই পারে। পরবর্তীকালে অণুমিত হয় মহাকবি কালিদাসের উপর এই মহাকাব্যের ছায়াপাত ঘটেছে। সংস্কৃত ভাষায় কাব্যটির ১৭ টি সর্গ পাওয়া গেলেও চীনা ও তিব্বতী অনুবাদে এর ২৮টি সর্গ মিলেছে, যদিও এ বিষয়ে বিতর্কের অবকাশ রয়েছে। সংস্কৃতের মূল গ্রন্থটিতে বুদ্ধের প্রথম জীবন হতে ধর্মপ্রচারের আরম্ভ পর্যন্ত কাহিনী বর্ণিত হয়েছে, আবার চীনা-তিব্বতী অনুবাদে গৌতমের বোধিলাভের কাহিনী পর্যন্ত উল্লিখিত হয়েছে। অশ্বঘোষের দ্বিতীয় গ্রন্থ 'সৌন্দরানন্দ' , বুদ্ধদেবের জীবনের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনার সমবায়ে কাব্যটি রচিত। 'শারিপুত্র প্রকরণ' অশ্বঘোষ রচিত একটি নাটক, এছাড়াও অশ্বঘোষের নামে 'বজ্রসূচী', ও 'সূত্রালঙ্কার' নামক দুটি গ্রন্থ প্রচলিত আছে যা আচার্য অশ্বঘোষের দ্বারা রচিত কিনা তার সুনির্দিষ্ট কোন প্রমাণ নেই।
এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |